somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্লান্ত শালিক

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১....
কফির কাপে একটা মাছি পড়েছে! এখনো মরেনি, উড়ে যাবার চেষ্টা করছে। পারছে না।
আমি মুহুরিকে ডাকছি না, সে বুক সেলফ পরিস্কার করছে। অনেক দিন চেম্বারের বইগুলো পরিস্কার করা হয়নি, ধুলো জমে একাকার। আমার চেয়ারের পিছনের দিকের সেলফের বইগুলোর নিশ্চয়ই একই অবস্থা! DLR, ADC এর কয়েকটি পুরনো বই ছিড়ে গেছে! চেম্বারের সব বই-ই পরিস্কার করতে হবে। আমার মাথাব্যথা করছে, ঘুম পাচ্ছে।
আমি কফির কাপে চুমুক দিলাম! মাছিটা নেই, তবে কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে।

"কেন মিথ্যে বলছেন? মিথ্যে দিয়ে কেস জিততে পারবেন না। আপনি তখন বললেন, আপনার স্বামী ৩ বছর ধরে আপনার খোঁজ খবর নেয় না। অথচ এখন বলছেন, সেদিন আপনাকে মেরেছে।"
আমার ক্লাইন্ট কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলবেন,"স্যার, নইলে তো নারী নির্যাতনের মামলা করতে পারবো না।"
আমার মুহুরি রুমে উঁকি মারল,"স্যার, বাসা থেকে কল আসছে।"
"আচ্ছা, একটু পর।"
আমি মক্কেলের দিকে তাকিয়ে বললাম,"আমি মিথ্যা মামলা করবো না। আপনি আসতে পারেন।"
মুহুরি আবার উঁকি দিয়ে বলল,"স্যার, বাবুর স্কুল থেকে কল দিচ্ছে। খুবই জরুরি।"
"আচ্ছা, একটু অপেক্ষা করতে বল।"
হাসিমুখে মক্কেল একটা মোটা খাম এগিয়ে দিলেন,"স্যার, মামলাটা করে দেন। টাকা পয়সার কোন অভাব আমাদের নেই। আমরা কেবল মেয়ের জামাইকে জন্মের শিক্ষা দিতে চাই, পুলিশের রুলের বাড়ি খাওয়াতে চাই।"
"এই খামটা নিয়ে যান, গুন্ডা ভাঁড়া করেন। পুলিশকে টাকা দিন তারাই কাজই করে দিবে।"
উনি আরেকটা খাম এগিয়ে দিলেন,"স্যার, এবার বিবেচনা করে দেখেন।"
"কেন বিরক্ত করছেন, আমি মিথ্যা মামলা করবো না।"
মুহুরি আবার উঁকি দিল। উনার মুখে স্পষ্ট আতঙ্ক-উৎকন্ঠার ছাপ।
"স্যার, আপনাকে বাবুর স্কুলে যেতে হবে। বাবু ওর বন্ধুকে চাক্কু মেরে দিয়েছে।"
আমি মুহুরির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম।
"স্যার, ঠিকই শুনেছেন। বাবু ওর বন্ধুকে চাক্কু মেরেছে। আপনাকে ওর স্কুলে যেতে হবে এক্ষুনি।"

মক্কেল আতিপাতি সুরে জিজ্ঞেস করলেন,"স্যার, আপনার ছেলে কোন স্কুলে পড়ে? আমি এই অঞ্চলের বেসরকারি স্কুল এসোসিয়েশনের প্রধান। আমাকে বলুন, আমি সব ম্যানেজ করে দিচ্ছি। আপনি আমার মামলাটা নিন।"
আমি কিছু না বলে বেড়িয়ে পড়লাম।


২....
গাড়ি থেকে নেমে কোন বিশেষ কারণে আমি হাঁটতে পারছি না, আমার পা মাটির সাথে আটকে যাচ্ছে।বন্ধু কানে কানে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে, আমি শুনতে পাচ্ছি না। স্বচ্ছ কাচ-ঘেরা প্রিন্সিপালের বসার ঘরের সব দেখা যাচ্ছে। আমার দৃষ্টি সেদিকে।
শাবাব লাল সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আমার দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। রুমে আরও অনেক মানুষ-বড় ভাইয়া, আম্মা, ছোট ভাবী, কাকী, মিয়া ভাই, অচেনা আরও ৪/৫ জন; শাবাবের বন্ধুর বাবা-মা,লোকজন হবে। একজন মহিলা কাঁদছে, তিনি নিশ্চয়ই ছেলেটার মা!

আম্মা প্রিন্সিপালকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বাকিরা নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছেন। আম্মা কথা বললে বাকিদের কথা বলা নিষেধ।
আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। যা শুনতে পাচ্ছি তা হলো মাছির ভনভন, অথচ আমার চারপাশে কোন মাছি নেই! মিশু আমাকে জোরে ঝাকি দিল।
কেন দিল?
ও কথা বলেই যাচ্ছে আমি শুনতে পাচ্ছি না!

মিশু আমাকে এক কোণায় টেনে নিল। কোণার দেয়ালে একটা ছবি, প্রিন্সিপাল হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। কোন পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান মনে হচ্ছে। উনার হাতে একটা চাকু, যে ছেলেটা পুরস্কার নিতে এল তিনি তাকে চাকু মেরে দিলেন। একছিটে রক্ত আমার সাদা শার্টে এল। আমি লাফ দিয়ে সড়ে যেতে চাইলাম। মিশু আমাকে আটকে দিল।

"মিশু দেখ, ছবিটা চলছে।"
মিশু আমার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল।
এবার আমি ওর কথা শুনতে পেলাম।
"পাগল হয়েছিস, মাদারচোদ। নিজেকে সামলা। পারবি? আমার দিকে তাকা, পারবি?"
কথা বল, পারবি?
"না, পারবো না।"
"তবে চুপ করে থাকবি। একটা শব্দ করবি না।আমি সামলে নিচ্ছি।"

"শাবাব, সরি বল।"
"আমি বলবা না, ও আমাকে বাস্টার্ড বলেছে। বলেছে, আমার মা নেই, আমার মায়ের জায়গায় ফুপির নাম লিখা। ভাই-বোন বিয়ে করতে পারে না। তাই আমি জারজ সন্তান।"
এবার প্রিন্সিপাল কথা বললেন," শাবাব তাই বলে তুমি, চাকু দিয়ে পোছ দিবে?"
"হ্যা, দিব। যারা যারা আমাকে জারজ ডাকবে সবাইকে চাকু মারবো!"

৩.....
বসার ঘরে আমারা তিনজন-আমি, শাবাব আর মাঝি। মাঝি নৌকা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে নৌকা সরছে না। নীল আকাশে উড়ে যাচ্ছে একঝাক সাদা বক, সূর্যের লাল আলোয় বকগুলোকেও লাল মনে হচ্ছে। মাঝি নৌকা চালাচ্ছে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় ছবিটি জীবন্ত। তবুও নৌকা নড়ে না, একই জায়গায় থেমে থাকে। বকগুলোর নীড়ে ফেরা হয় না, ওরা সূর্য পিছনে রেখে উড়তে থাকে। ওখানে সময় স্থির! ছবিটি আমিই কিনেছিলাম, শাহবাগ থেকে। অথচ প্রতিবার মনে হয়, ছবিটা জীবন্ত!
এ বাড়িতে আমাদের সময়ও যাচ্ছে না। কখনো যেতেও চায় না। শাবাব হাসফাস করে। বসে থাকতে চায় না। এদিকওদিক চলে যায়। আবার মন খারাপ করে ফিরে আসে।

ভাইয়ার ছেলে, সাথীর মেয়েটা আর সানিয়ার শিশুপুত্র মাঝেমধ্যে উঁকি দেয়। কিন্ত কখনো কথা বলে না। শাবাবের সাথেও না। শাবাব ভিতরে গেলেও তার সাথে কেউ কথা বলে না।
তবুও প্রতি শুক্রবার আমি আর শাবাব এ বাড়িতে আসি। শাবাব আসতে চায়না, আমি জোর করে নিয়ে আসি। প্রতিবার আশ্বাস দিই, আজকে আম্মা কথা বলবেন। ওকে কাছে ডাকবেন! আম্মা গত ৫ বছরে কখনো শাবাবকে ডাকেননি, আমার সাথে কথা বলেন না। এই বাড়ির নিয়ম, মেহরাবের সাথে কথা বলা যাবে না। ওর সাথে যোগাযোগ করলে, তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। তার সাথে আম্মা কথা বলবেন না।

আম্মা আমার সামনেও আসেন না। দরজায় ভারী পর্দা দেয়া। এই বাড়ির সব পর্দা আমি পছন্দ করে কিনেছি, যাতে বাইরের মানুষ অন্দরমহল দেখতে না পারে। আজ এই পর্দা আমাকে আড়াল করে দিচ্ছে।
বাতাসে বাতাসে সরে গেলে মাঝেমধ্যে আম্মাকে দেখা যায়। অনেক ভালো লাগে। আম্মা ভাইয়ার ছেলেটাকে, সাথীর মেয়েটাকে খাওয়ান। ওরা খেতে চায় না, দৌড়ে এ ঘরে চলে আসে। আম্মা পিছনে পিছনে আসেন, আমার দিকে ফিরেও তাকান না। যেন আমি অদৃশ্য, The hollow man! আমার ছেলেটা আম্মার দিকে এগিয়ে যায়, আম্মার আঁচল ধরে বলে,"দীদা, আমি শাবাব!তুমি কেমন আছ?"
আম্মা ওর দিকেও তাকান না।

মাঝেমধ্যে ভেতর থেকে বিরিয়ানির ঘ্রাণ আসে। শাবাব ভেতরে চলে যায়। ওর কাকী, ফুপু, দীদার পেছন পেছন ঘোরে, হয়তো বিরিয়ানি চায়, মাঝেমধ্যে দেয়; আবার দেয়ও না। ছেলেটা ফিরে এসে কাঁদে, আমি কিছুই করতে পারি না।
তবুও প্রতি শুক্রবার এ বাড়িতে আসি। নিশ্চয়ই একদিন আম্মা আমাদের সাথে কথা বলবেন।
কবে? কে জানে?

"বাবা, চল চলে যাই।"
"আরেকটু বসি।"
"কেন? এখানে কেউ আমাদের পছন্দ করে না। কেউ না! আমরা এখানে কেন আসি?"
আমি শাবাবের হাত ধরে বললাম,"শাবাব, শোনো। এরা সবাই তোমার পরিবার। তোমার দীদা, কাকা-কাকী, ফুপু আর ভাই-বোন।সবাই আমাদের আপনজন।
"কিন্তু এরা বাজে, কেউ আমাদের সাথে কথা বলে না।"
"এরা আমার পরিবার, পরিবার বাজে হলেও পাল্টে দেয়া যায় না। মিলেমিশে থাকতে হয়।"
"কথা না বললে মিলে মিশে থাকবো কিভাবে?"
আমি কি বলবো, মাথায় আসে না।
এক দৃষ্টিতে নৌকা-মাঝির দিকে তাকিয়ে থাকি।
বড় ভাবী চা দিয়ে যান, চামচের টুং শব্দে আমার তদ্রা ভাঙ্গে।

শাবাব বলে,"বাবা, জেঠি কি বলে জানো, আমি নাকি বেজন্মা! আমার নাকি মা নেই। দীদা বলেন, আমি এতিম দেখে আমাকে কিছুই বলেন না, নইলে ঘাড় ধরে বের করে দিতেন। সেদিন ছেলেটাকে কেন চাকু মেরেছি জান, সে আমাকে বাস্টার্ড বলেছে। আমার আইডি কার্ডে মায়ের নাম নেই। সেখানে তো ফুপির নাম, সোনিয়া মেহেরিন সাথী। তুমি কি ফুপিকে বিয়ে করেছ। আমি গুগলে পড়েছি, ভাই-বোন বিয়ে হয় না! তুমি ফুপিকে কেন বিয়ে করলে? এজন্য আমাকে সবাই বাস্টার্ড বলে। আমার পকেটে চাকুটা আছে, যারা আমাকে বেজম্মা-বাস্টার্ড বলবে, আমি চাকু মেরে দিব।"

বাড়ির ভেতর থেকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে, আম্মার হাত কেটে গেছে। শাবাব চাকু মেরেছে!
আমি শাবাবের গাল চড় বসিয়ে দিলাম। শাবাব এক দৌড়ে গেট দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে গেল।
যাক! চলে যাক যে দিকে ইচ্ছে, এত যন্ত্রণা ভালো লাগে না।


৪....
আম্মা আমার বাসায়। একটু দূরে জায়নামাজে বসে এক হাতে তসবিহ তালাওয়াত করছেন, আরেক হাতে ব্যান্ডেজ প্যাচানো। আম্মার চোখেমুখে অপরাধবোধের ছাঁপ। মাঝেমধ্যে গজগজ করছেন,"তুই একটা ছেলে মানুষ; বিয়ে করবি, সংসার করবি, তা না!তর মা ছাড়া পুলা মানুষ করা লাগে। আমার কথা শুনলি না, পোলা অবার অইছে, তর কেন মানুষ করা লাগবো। কইলাম দিয়ে আয় মাগির কাছে, দিয়া আইলি না। ঐ মাগি তো ঠিকই সংসার করতাছে। এইদিগে তুই পরিবার, ভাই-বইন ছাড়া। আমি তরে আগেই কইছিলাম।"

কেয়া, মিশু, মিশুর বৌ, সোহেল, সাথী এসেছে। আম্মা, এরা সবাই শাবাবকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে; শাবাব খাবে না।
শাবাব দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছে। ওর চারপাশে গাছ-সাফিয়ালারা, মানিপ্ল্যান্ট, আর অপরাজিতা; অনেকটা ঝোপের মতো হয়ে গেছে। আমি অনেকদিন যত্ন নিই না। নীল অপরাজিতায় ছেয়ে গেছে বারান্দার গ্রিল, ফুল ঝরে পরে মেঝেতে শুকিয়ে আছে। মানিপ্ল্যান্টের পাতা বেশিরভাগই হলুদ হয়ে গেছে। কাজের লোক গাছে পানি দিচ্ছে, চুইয়ে পড়া পানিতে শাবাবের প্যান্ট ভিজে যাচ্ছে। ছেলের সেদিকে খেয়াল নেই! সে আঙুল দিয়ে মেঝেতে কিছু একটা আঁকিবুকি করছে। বিরবির করে কিছু বলছে, আমি বুঝতে পারছি না। ও বনসাইয়ের টবে মাথা ঠেকিয়ে গা এলিয়ে দিল। এতটুকু ছেলের কি ক্লান্তি নেই, ছেলেটা দুইদিন কিছুই খাচ্ছে না। সে তার মাকে দেখতে চায়!

আম্মা এলেন,"কিরে চিনি, চৌক্ষে দেহস! পুলার পেন ভিইজ্জা গেল।"
আম্মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন," আয় দাদা আমার সাথে, ম্যালা রাগ করছস। অহন কিছু খা।"
শাবাব আম্মার হাত জোরে সরিয়ে দিল। আম্মা ছেলের গালে চড় দিলেন। শাবাব আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। আমি কি করবো?
সে আবার তার খেলায় মনোযোগ দিল। আম্মা গজগজ করতে করতে সরে এলেন," মা ছাড়া পুলাপান এমনি বেদ্দপ অয়। কারও কতার দাম নাই। এই জিদ্দি পুলা তুই মানুষ করবি কেমনে?"
আমি চেয়ার থেকে উঠে ভেতরে চলে এলাম। খাবার টেবিলে একগাদা খাবার সাজানো, মাছি উড়ছে। দুইদিনে কেউ খাবার খায়নি। আমি চিনিকে ডেকে নোংরা টেবিল পরিস্কার করতে বললাম।

ভেতরের রুমে মিশু, সোহেল, কেয়া সবাই মিটিং করছে। আমাকে দেখে কথা বন্ধ।
আমি সংকোচে চলে এলাম। আমি কি করেছি?
আমার কোথাও জায়গা নেই! না ছেলের কাছে, না মা বা বন্ধুদের কাছে।
আমি একজনকে ভালোবাসি। তার পরিবার কিছুতেই উকিলের কাছে মেয়ে দিবে না। সে সিদ্ধান্ত নিল, এবরশন করিয়ে ফেলবে। আমি রাজি হলাম না, সন্তানের উপর আমার অধিকারও কম না! সিদ্ধান্ত হলো, বেবি আমার কাছে থাকবে, সে এর সাথে জড়িত থাকবে না। সে বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেল। আমি শিশুপুত্রকে লালনপালন করছি। এতে আমার অপরাধ কি?

মিশু আমাকে ডাকলো।
তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাবাবকে ওর মার সাথে দেখা করাবে। আমি সায় দিচ্ছি না, মিশুও না। একটা মেয়ে সব ছেড়ে ছুড়ে ভালো আছে, তাকে এর মধ্যে টানা কেন?
কেয়ার অকাট্য যুক্তি, শাবাবের জানতে হবে ওর মা আছে। ছেলে এখন অন্যকে আঘাত করছে, কয়দিন পর নিজেকে আঘাত করা শুরু করবে। আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারে, মানসিক রোগী হয়ে যেতে পারে। রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না!
কেয়া ইতিমধ্যেই পিয়ার সাথে কথা বলেছে, পিয়া হ্যা/না কিছুই বলেনি। কল কেটে দিয়েছে।
কেয়া পিয়ার ঠিকানা বের করেছে।

৫....
শাবাব একাই গোসল করে রেডি হয়েছে। কেয়া একবার কাছে গেলেও কোন লাভ হয়নি, সে কারও সাথে কথা বলছে না। কেয়ার ছেলে সময়ের সাথে টুকটাক কথা বলছে এই যা।
এই কয়েক বছর পিয়ার সাথে আমার কথা হয়নি, পিয়াও শাবাবের খোঁজ নেয়নি। হুট করে ওর কাছে শাবাবকে পাঠানো আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না।

আমি শাবাবের কাছে গেলাম।
"I don't need any help. I can manage myself."
"বাবা, আমার কথা শোন, তোমার কি প্রয়োজন কারও সাথে দেখা করার? কোন দরকার নেই!"
"Please baba, I insist. I will ask her a question."

Kudus'র পূর্ব দিকের দেয়াল বড় একটা বার্গারের ছবি। ছবি সামনের সিটে বসে আছে শাবাব আর পিয়া। শাবাব পিয়ার বিপরীত দিকে বসে আছে। একদৃষ্টে পিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, পিয়া বিষন্ন চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে। রাস্তার উল্টো দিকে একটা ঝারবাতির দোকান, কাচের ল্যাম্পশেডগুলো চকচক করছে।
টেবিলে তিনটা বার্গার, একটা মাছি উড়ছে। শাবাব বার্গার পছন্দ করে। ও পিয়ার থেকে চোখ সরাচ্ছে না। নীরবতা ভাঙল পিচ্চি মেয়েটা, পিয়ার মেয়ে।
"Mamma, You noticed he looks like you! Exactly like you." পিয়া প্রথমবার শাবাবের দিকে এক পলক তাকালো।

শাবাব প্রশ্ন করলো, "তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে কেন?স্কুলে সবাই আমাকে বাস্টার্ড বলে। সেদিন এইজন্যই আমি আমার বন্ধুকে চাকু মেরেছি।"
পিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে উত্তর দিল, "তুমি বড় হলে সব বুঝতে পারবে।"

"দিদা বলেন, মা ছাড়া পুলাপান পুন্টা হয়। তুমি থাকলে আমি ভালো হতে পারতাম!"
"তুমি ভালো ছেলে।"

"May be I was an unwanted child. তবে বাবাকে ছেড়ে গেলে কেন?"
"তুমি বড় হলে সব বুঝতে পারবে।"

"আমি এখনই বুঝতে চাই!বাবার তখন টাকা ছিল না বলে? দিদা, ফুপি এটাই বলেন।"
পিয়া কথা বলছে না, ওর বাচ্চা মেয়েটা খেলা থামিয়ে মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বলছে,"Mama, don't cry. Don’t cry....."

"আমাকে ফেলে যাবার পর আর দেখতে ইচ্ছে করেনি?"
"আমি তোমাকে ফেলে যাইনি, তোমার বাবার কাছে রেখে গিয়েছি। আম্মা বলেছেন, তুমি আমার ফেস পেয়েছ। তখন তোমাকে লুকিয়ে দেখতে এসেছিলাম তোমার স্কুলের সামনে।"

"তুমিতো জানো না, আমাকে কেউ পছন্দ করে না। সবাই কেমন করে! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড স্কুল থেকে চলে গেল। দিদাদের বাসায় কেউ আমার সাথে কথা বলে না, কারণ আমি বাস্টার্ড চাইল্ড!"
"সব ঠিক হয়ে যাবে। You will be fine, a nice gentle man. I know."

"তাই যদি জানতে আমাকে ছেড়ে গেলে কেন? আমি তোমার কাছে একটা জিনিস জানতে চাই। তুমি বাবার সাথে অনেক দিন ছিলে, তাকে চেন-জানো। বল, বাবা আমাকে কবে ফেলে যাবে?"
"কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবে না! শাবাব, তোমার বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে।তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না!"

"সবাই বলে, বাবা তোমাকেও খুব ভালোবাসতেন। কই তোমাকে ছাড়াই তো দিব্যি ভালো আছে, এখন মনেও করে না!"
পিয়া চুপ করে আছে, কিছু বলছে না।

পিয়া চেয়ার থেকে উঠে শাবাবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, বললো," তোমার বাবা তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না।"
"যে ছেলেকে তার মা ফেলে যেতে পারে......."

" তুমি বড় হলে সব বুঝতে পারবে।"
"আমি এখনি বুঝতে চাই!এক্ষুনি চাই!"

পিয়া পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে আস্তে আস্তে বাইরের দিকে হাটা শুরু করলো। শাবাব পিয়ার পেছন পেছন গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। কোন কথা বলল না।

পিয়া চলে গেলে আমি ছেলের কাছে গেলাম।
"শাবাব,......"
সে আমাকে থামিয়ে দিল, "Baba, I don’t wanna talk on this."
ছেলের কথার দৃঢ়তা আমাকে থামিয়ে দিল। আমি যত চেষ্টাই করি না কেন, আমি আসলে কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারি না-আম্মা, পিয়া, আমার ছেলে শাবাব, আমার বন্ধু কাউকে না! আমার ক্লান্তি লাগে, ভাত শালিকের মত ক্লান্তি। কতটুকু ক্লান্ত হলে ভাত শালিক সঙ্গী ছেড়ে যাবার পর আর সঙ্গী খোজে না?
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৫৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×