somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পশ্চিমাদেশগুলোর জলজ্যান্ত হিপোক্রেসি এবং রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধে আমার সমর্থন সংক্রান্ত কপচা #:-S :||

০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু বাদে অধিকাংশ পশ্চিমারাই দারুণ মাত্রায় হিপোক্রেট । এদের হিপোক্রেসির উদাহারণ দিতে হলে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে বহু ঘটনার উদাহারণে । আর এই হিপোক্রেসির বর্তমান জলজ্যান্ত উদাহারন দেখা যাচ্ছে চলমান রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধেও ।

গত ২/১ দিন আগে আমাকে একজন জিজ্ঞেস করে বসলো, চলমান এই রাশিয়া বনাম ইউক্রেন যুদ্ধে আমি ঠিক কোন পক্ষে আছি । আমি বললাম, আপাতত নিরপেক্ষই আছি । তখন প্রশ্নকর্তা মনে হলো, কিছুটা অবাক হলো । এই যে নিরীহ, নিরপরাধ ও নিরস্ত্র ইউক্রেনিয়ানবাসীদের উপর রাশিয়ার সর্বশক্তি প্রয়োগ, স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের উপর আগ্রাসী আচরণ, নিরপরাধ মানুষগুলোকে হত্যা, যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে শিশুদেরকেও বাদ না রাখা ইত্যাদি এত কিছুর পরও আমি নিরপেক্ষ!! তার মতে, ঐসব নিরীহ বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে চেয়ে তো অন্তত আমার ইউক্রেনকে সমর্থন করা উচিত । আমি এবার হেসে দিলাম। তাকে উল্টো প্রশ্ন করে বসলাম, সত্যি কি ব্যাপারটি এরকম? নাকি অন্যকিছু? তাহলে দেখে নিয়ে আসা যাক...

আমার সমর্থন এখনও নিরপেক্ষ কারণ আমি যুদ্ধ পছন্দ করি না, বিশেষ করে সবলের উপর আগ্রাসন তবুও কিছু পরিমাণে মেনে নেওয়া যায় কিন্তু দুর্বলের উপর আগ্রাসন মানাটা কষ্টকর, তবে যৌক্তিক কারণ থাকলে বিষয়টা কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন । আমাকে যদি সত্যিই সমর্থন করতে হতো, তবে আমি রাশিয়াকেই হয়তো সমর্থন করতাম । কারণ -

১) ইসরায়েলের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইহুদি দিয়ে শাসন করে এই ইউক্রেনই, অর্থাৎ তাদের সরকার ব্যবস্থায় বসা অধিকাংশই ইহুদি। আর ইহুদিদের একে অন্যের উপর টান তো লেজেন্ডারি পর্যায়ে । ফলশ্রুতিতে ফিলিস্তিনি (ইচ্ছা হলে পড়তে পারেন, প্যালেস্টাইন) দের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের পূর্ণ সমর্থনে আর কেউ থাকুক আর না থাকুক, এই ইউক্রেন সর্বদায় এক নাম্বারে ছিল এবং এখনও আছে । এখনও কিন্তু নানা সময় ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তমাখা নিথর শরীর দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিতে পারি না

২) ইরাকে পারমানবিক অস্ত্র লুকিয়ে রাখার বিরুদ্ধে অভিযানের নাম করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন, ধ্বংসযজ্ঞ, আর সমৃদ্ধশীল একটি রাস্ট্র থেকে ভঙ্গুর একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার মিশনে তাদের অন্যতম প্রধান মিত্র বন্ধু ছিল এই ইউক্রেন । ইউক্রেনের প্রায় ৫০০০ সৈন্য মার্কিন সৈন্যদের কাধে কাধ মিলিয়েই নিরীহ ইরাকিদের অবলীলায় নিথর বানিয়েছে

৩) এই তো মাত্র কয়েকদিন আগেই সিরিয়া, লেবানন ইত্যাদি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর আজকের এই দুর্দিনের পরিণতির পিছনে আসল কারন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের মিত্র বন্ধু, এই নিরীহ ইউক্রেন সবসময় সাথেই ছিল,। মাঝে মধ্যে অবাকই হতে হয়, এই ছোট্ট একটা দেশের এত আগ্রাসন । আমেরিকা না হয় ক্ষমতার জন্য আগ্রাসন চালাতো, কিন্তু তারা? জি, হ্যা, ঠিক ধরেছেন, খাঁটি ইসলাম বিরুদ্ধতা । তবু বাংলাদেশের মুসলিম নামধারী কিছু ব্যক্তিবর্গের ইউক্রেনের জন্য মায়াকান্না দেখে হাসবো না কাঁদবো, কনফিউজড হয়ে যাই

৪) আচ্ছা, মুসলিমদের কথা এবার বাদ দেই । আপনি কি জানেন, এই ইউক্রেন গত ৫ বছরে রাশিয়ান অভিবাসী প্রায় ১৪০০০ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কে তথ্য পাচারের অভিযোগ এনে এক প্রকার হত্যা করেছে ? না জানলে একটু চোখ কান খোলা রাখেন, জানতে পারবেন

৫) পিউর কমেডিয়ান থুক্কু সাবেক কমেডিয়ান এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আত্মত্যাগে তাকে খাঁটি দেশপ্রেমিকের উপাধি দিয়ে দেওয়ার আগে আপনাকে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট তথাকথিত স্বৈরাচারী পুতিনের কথাও শুনতে হবে । ন্যাটো নিয়ে আমেরিকা আর পশ্চিমারা যে রাশিয়ার সাথে স্রেফ মজা করেই চলেছে সেই ১৯৯০ সাল থেকে, সেই কাহিনি কি আপনার জানা? না জানলে সমস্যা নেই, এখানেও আমি আছি । ১৯৪৯ সালে মোট ১২ টি প্রতিষ্ঠাতা দেশ নিয়ে প্রথম প্রতিষ্ঠা হয় ন্যাটো (ন্যাটো কি, কি কাজ করে, কারা কারা এর সদস্য - এগুল দয়া করে গুগল করে জেনে নিবেন) । বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৩০ । ১৯৪৯ থেকে ২০২০, মোট ৭১ বছর, আমি এত লম্বা ইতিহাসে যাবো না, শুধু এতটুকু বলি, রাশিয়া কখনই এই ন্যাটোর সদস্য ছিল না, যদিও ন্যাটোর উদ্দেশ্যই ছিল বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোকে একটি জোটের আওতায় নিয়ে এসে একে অন্যকে সহায়তা প্রদান (ব্রাকেটে এও বলি, অন্য দেশগুলোকে হুমকি ধামকির মধ্যে রেখে নিজেদের মোড়ল অবস্থানে রাখা) । তো ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্যা সংখ্যা হয়ে যায় ১৪টি দেশ । রাশিয়া এর পর ন্যাটোকে বলে আর কোন দেশকে অন্তর্ভুক্তি না করতে, ন্যাটো কথা দেয় যে তারা আর কোন দেশকে সেই জোটে অন্তর্ভুক্তি করবে না । কিন্তু এই কথা দেওয়া ছিল মৌখিক, লিখিত না । পরবর্তীতে এই লিখিত যুক্তি নেই, তার মানে তারা কোনদিন কথা দেয়নি, এই মর্মে তারা আরও ৫ বার তাদের দেওয়া কথা ভঙ্গ করে এবং সেখান থেকেই সদস্য সংখ্যা এই ৫ বারে ১৪ থেকে ৩০ হয় । সর্বশেষ ইউক্রেনকেও ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে রাশিয়া একে নিজেদের সার্বভৌমত্বের উপর হুমকি ধরে নিয়েই এই আগ্রাসি সিদ্ধান্ত (পড়ুন, যুদ্ধ) নিয়েছে । আচ্ছা, নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে জেলেনস্কি যা করতে চাইছে, পুতিনও তো তাই করছে, তাহলে পার্থক্য কোথায় ?

৬) এবার আসি বাংলাদেশের সাথে এই দুই দেশের কূটনীতিক সম্পর্কের প্রশ্নে । প্রথমত, ইউক্রেনের কোন দূতাবাস বাংলাদেশে নেই। কিন্তু রাশিয়ার আছে । দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু তালিকা করলে, প্রথম সারিতেই থাকবে জাপান আর রাশিয়ার নাম, এখানে ইউক্রেনকে খুঁজে পাওয়াটা দুস্কর ।

ইত্যাদি ইত্যাদি

এখানে আমি কেবল ৬টি পয়েন্ট উল্লেখ করলাম । এই পয়েন্টগুলোকে বিবেচনায় আপনার কি মনে হলো, আমার কাকে সমর্থন করা উচিত? তবুও আমি বলবো, আমি কাউকেই সমর্থন করছি না কারণ আমি যুদ্ধ পছন্দ করি না (যদিও আমার মত চুনোপুঁটি কাকে সমর্থন করলো কি করলো তাতে কিছুই যায় আসে না) । এবার আসি একেবারে প্রথমে লেখা
সেই প্রথম বাক্যটিতে...

"কিছু বাদে অধিকাংশ পশ্চিমারাই দারুণ মাত্রায় হিপোক্রেট" । পশ্চিমা দেশগুলো এখন একযোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে । তাদের যুক্তি রাশিয়া নিরীহ আর তাদের চেয়ে কম শক্তির দেশের উপর অন্যায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। আচ্ছা তাহলে আমেরিকা কি করছে ? উদাহারন দিতে গেলে তো লিস্ট নিয়ে বসতে হবে । ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান তো ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছেই, আরও ইয়েমেন, তুরস্কসহ বাকি কিছু মুসলিম দেশগুলোতে ক্রমাগত হুমকি - ইহা কোন ধরনের মানবিক আগ্রাসন?

আচ্ছা, ইউক্রেনিয়ানবাসী নিজেদের দেশ বাচাতে অস্ত্র তুলে নিলে পশ্চিমাদের চোখে তারা হিরো আর আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনিবাসীরা একই কারনে অস্ত্র তুলে নিলে তারা পশ্চিমাদের চোখে ভিলেন কেন ? ধীরে ধীরে তো মনে হচ্ছে, আসলে পশ্চিমারা যাকে বা যাদেরকে খারাপ বলে, আদতে তারা খারাপই না, শুধু পশ্চিমারা তাদের জন্য নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারেনি বা পারছে না!!!

পরিশেষে শুধু বলবো, যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, যুদ্ধ মানেই শান্তির বিনাশ । যুদ্ধ সমাধান নয়, কিন্তু হিপোক্রেটরা যদি শুধু যুদ্ধের ভাষাকেই একমাত্র বুঝতে পারে, তবে সেটাকে যুদ্ধ না বলে কিছুক্ষেত্রে নিজেদের বাচানোও বলে । দেয়াল পিঠ ঠেকে গেলে যে কোন প্রাণীই তো হিংস্র হয়ে ওঠে, সেখানে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষই বা বাদ যাবে কিভাবে !!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের ট্যাক্স এর টাকা খরচ করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তারা কি আমাদের সেবা দিতে পারছে?

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬



আমার আব্বুর চাকরির সুবাধে বিভিন্ন জেলায় ঘুরা লাগে। তাই কমলাপুর ট্রেন স্টেশনও বহুবার গিয়েছি। আমরা গুলিস্থান থেকে ঢাকা টু দাউদকান্দি বাসে চরে ভবেরচর যাই। এখন কথা হচ্ছে কমলাপুর এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....

লিখেছেন আমি সাজিদ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

×