গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে মাইক্রোবাসের সাথে ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ১১ জন মৃত্যুর পর থেকে দেখছি একটি পোস্ট তুমুল ভাইরাল। আর সেটা হচ্ছে কোন গাড়ি যদি ট্রেন লাইনে উঠে যায় আর তৎক্ষণাৎ ট্রেন চলে আসে তবে প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায় আর চেষ্টা করেও ঐ মূহুর্তে গাড়ির ইঞ্জিন আর চালু করা সম্ভব হয় না। ফলে ঘটে যায় মারাত্মক দূর্ঘটনা।
এই ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া আর ইঞ্জিন চেষ্টা করেও চালু করতে না পারার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নিয়ে পোস্ট করে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছেন "জামান ফিরোজ" এবং পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বলে পরিচিতি পাওয়া "বলরাম ভৌমিক"। যদিও কোথাকার শিক্ষক, তা জানা যায়নি।
আচ্ছা যদি আমি বলি তাদের এই বিজ্ঞানসম্মত বলে চালিয়ে দেওয়া ব্যাখ্যা পুরোপুরি অযৌক্তিক আর বানোয়াট, তাহলে কি আমার দোষ হবে? হ্যা, একটু মনোযোগ আর ধৈর্য্য সহকারে বাকী লেখাটুকু পড়ার আহবান রইলো, তাতেই আসল বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যার খোলাসা হবে।
সাধারণ ট্রেনের চাকার ঘর্ষণে রেলপথে তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হয় না। দুটো ধাতুর ঘর্ষণে যদি কম্পণ সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে কোনাে একটি ধাতু যদি আগে থেকে চার্জড (আহিত) থাকে, তখনই। কেবল সামান্য মাত্রার তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে। যেমন ম্যাগলেভ ট্রেন, ইলেকট্রিক লােকোমােটিভ ট্রেনের ক্ষেত্রে ঘটে। তাও যে মাত্রার তরঙ্গ সৃষ্টি হবে তা কখনই একটি গাড়ির ইঞ্জিনকে থামিয়ে দেওয়ার মত শক্তিশালী নয়।
এখানে একটা মজার বিষয় হল, সূর্যের আলােও তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ। সূর্যের আলােতে তাে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয় না।
তাহলে রেলপথের উপর গাড়ি থামার আসল কারণ কী?
প্রথমত রেলপথের উপর হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ার ঘটনা কোনাে রেগুলার বিষয় নয়। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেলওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ৫,৬০০ রেললাইন এক্সিডেন্টের একটি জরিপ থেকে আমরা ৩ টি তথ্য তুলে ধরছি।
১. রেলপথের উপর অধিকাংশ গাড়ি থেমে যায় ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে। হাতে গােনা কিছু গাড়ির ইঞ্জিন দ্রুত রেলপথ পার হওয়ার সময় ঝাকি খেয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তখন বেশিরভাগ দূর্ঘটনা ঘটে।
২. ইঞ্জিনে গন্ডগােল দেখা না দিলেও, রেলপথের উপর গাড়ি থেমে গেলে অনেক ক্ষেত্রে ড্রাইভার প্যানিকড হয়ে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করতে ব্যর্থ হন।
৩. ৪ ভাগের ১ ভাগ দূর্ঘটনা ঘটে গাড়ির চাকা, প্লেট, বাম্পার কিংবা আনুষঙ্গিক অন্যান্য পার্ট লাইনে আটকে যাওয়ার জন্য। রেললাইনেই আটকাতে হবে, এমন কোনাে কথা নেই।
তাহলে কি বুঝা গেলো? জামান ফিরোজ হোক কিংবা বলরাম ভৌমিক, দুইজনের যে কোন একজনের দেওয়া ঐ তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গজনিত ব্যাখ্যা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তথ্যসূত্রহীন।
রেলপথে গাড়ি থেমে যাওয়ার ঘটনা খুব কমন নয় (কিন্তু কমন বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে) এটিকে ফলাও করে প্রচার করাই হচ্ছে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।
তথ্যসূত্র © বিজ্ঞানপ্রিয়