ঢাকা গাজীপুর বিআরটিএ প্রকল্পের কাজ চলাকালীন উত্তরা জসিমউদ্দিন রোডের কাছেই আড়ং এর শো রুমের ঠিক সামনেই অপরিকল্পিত ভাবে কাজ চলাকালীন রাস্তা বন্ধ না রেখেই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার দরুণ এবং মাত্র ৮০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সহ্য করার উপযোগী একটি ক্রেন দিয়ে ১৫০ মেট্রিক টন ওজনের নবনির্মিত প্রকল্পের একটি গার্ডার তোলার সময় বেকায়দা ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে রাস্তায় চলাচলকারী একটি প্রাইভেট কারের উপর আছড়ে পড়ায় ঘটনাস্থলেই ঝড়ে পড়ে ৫টি তাজা প্রাণ।
কি নিদারুণ বর্বরতা, তাই না? আমরা প্রাণী হিসেবে জানি মৃত্যুর এক সেকেন্ডের কোন গ্যারান্টি নেই আর বাংলাদেশে বসবাসকারী একজন হিসেবে আমরা এও জানি এ দেশে মৃত্যুর গ্যারান্টি এর চেয়েও কম অর্থাৎ জিরোর কাছাকাছি। এখন এই ঘটনায় বিচার চাইবো কার?
ক্রেন অপারেটর?
প্রকল্প পরিচালক?
নাকি বাংলাদেশ সরকারে দায়িত্বরত কেউ?
আর বিচার চাইলে বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তাই বা কতটুকু? জানি না
কিন্তু একটা ব্যাপার আমার বার বার দৃষ্টি কাড়ছে। চটকদার খবর সংগ্রহ করতে (কিংবা তৈরি করতে) অভ্যস্ত সাংবাদিকগণেরা নিহত ৫ জনের নাম উল্লেখ করছেন, রুবেল, ফাহিমা, ঝর্ণা, জান্নাত এবং জাকারিয়া।
আমি একটা না অনেকগুলো নিউজ মিডিয়া ফলো করে দেখলাম যে, কোথাও নিহতদের নাম সম্মান নিয়ে বলা তো দূরের কথা, এমনকি পূর্ণ নামটাও ব্যবহার করা হয়নি।
রুবেল নামক ব্যক্তির পাশে বয়স লেখা আছে ৫০ এবং ফাহিমা নামক ভদ্রমহিলার পাশে বয়স লেখা আছে ৪০। ভদ্রমহোদয় এবং ভদ্রমহিলা যথাক্রমে এই দূর্ঘটনায় বেচে যাওয়া নবদম্পতি বর হৃদয় নামক ব্যক্তির বাবা এবং কনে রীনা নামক ভদ্রমহিলার মা। সম্পর্কে বেয়াই-বেয়াইন। এছাড়াও ফাহিমা ও রীনা নামক ভদ্রমহিলাদ্বয়ের নিকটাত্মীয় ঝর্ণা নামক ভদ্রমহিলার বয়স লেখা আছে ২৮।
তো রাস্তায় অসহায় মৃত্যু বলে কি আমাদের সাংবাদিকরা তাদেরকে রাস্তার মানুষ ধরে নিয়ে পাওনা সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠাবোধ করছেন? একবারও কি নিউজ করার সময় নিহতদের পূর্ণ নামের খোজ করা যেতো না? ধরলাম জান্নাত আর জাকারিয়া দুইজন শিশু কিন্তু পূর্ণবয়স্ক কাউকে শুধু ডাক নাম ধরে সম্বোধন করাটা তো এখানে শোভা পায় না!!
পরিশেষে মনে হচ্ছে, এ দেশে মানুষের দাম নেই। প্রথম কাতারে সরকার, এরপরের কাতারে উচ্চপর্যাইয়ের হর্তাকর্তাবৃন্দ, এরপর কাতারের সাংবাদিক, খেলোয়াড়, ১ম ও ২য় শ্রেণী, সবশেষ কাতারে হচ্ছে সাধারণ জনগণ এভাবে ধাপে ধাপে উপর থেকে নিচের দিকে পর্যায়ে পর্যায়ে মানুষের দাম কমে যাচ্ছে।
প্রায় সময় বিভিন্ন হেল্প সিকিং গ্রুপগুলোকে ঢু মারলে মানুষের আকুতি শুনি কিভাবে এ দেশ থেকে চলে গিয়ে অন্য দেশে সেটেল্ড হবার পরামর্শ চেয়ে। সেটা কেন হচ্ছে, আশা করি খুলে বলার প্রয়োজন নেই
বিঃদ্রঃ আমি সংগত কারণেই দুর্ঘটনার আসল ছবি শেয়ার করলাম না । সবাই শক্ত মনের হয় না
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:০৫