somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবারও পারিবারিক নৃশংসতা, আরেকটি হত্যাকান্ড, আত্মহত্যা বলে চালানোর প্রয়াস - এসব থামবে তখনই যখন কঠিন বিচার নিশ্চিত হবে :(

২৯ শে আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকে অনেকেই হয়তো সাবিকুন নাহার পপির মৃত্যু সংবাদ পরবর্তী ঘটনাসমূহ বিভিন্ন টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন । আমার ভার্সিটির জুনিয়র । আমরা পপি বলেই ডাকতাম । কেন জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না নিউজটা, মনে হচ্ছে হঠাৎ কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখবে কিংবা জানাবে, আসলে পপির খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেই বিপদ কেটে গেছে । কিন্তু হাসিখুশি একটি ছোট বোনকে সত্যিই হারিয়ে ফেললাম । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন । মেয়েটা জীবিত থাকতে পর্দা করতো, তাই সংগত কারণেই তার মুখমণ্ডল প্রদর্শন করা থেকে বিরত রইলাম । এছাড়া পপির একটি ৫ মাস বয়সী কন্যা সন্তান রয়েছে ।

গতকাল সকালে কে যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলো, পপি নাকি ঘুমের মধ্যেই মারা গেছে । কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা হতে হতেই আরও একটি আতংকিত হবার মত নিউজ পেলাম । তার শরীরে নাকি মারের দাগ, হাত ও আঙ্গুল নাকি ভেঙ্গে গেছে । তখনই বিষয়টা অস্বাভাবিক ঠেকতে লাগলো পরিচিত গন্ডিমহলের কাছে । ঘটনা কাল পর্যন্ত শুধু পরিচিত গন্ডির মধ্যে ছিল, আজকে সারা দেশ জেনে গেছে । তবে মিডিয়ায় যা জানা যায়নি, এমন কিছু জেনে সত্যিই গা শিউরে উঠেছে, পরক্ষণে রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে ।

ঘটনার পিছনের অনেক ঘটনা ঘাঁটলে বুঝা যাচ্ছে, এটা পরিস্কার হত্যাকান্ড । আর এই হত্যার পিছনে প্রত্যক্ষ হাত ছিল তার শাশুড়ির । ধারণা করা হচ্ছে, কন্যা সন্তান প্রসব, এ ছাড়া পপির বাড়িতে টাকা-পয়সার জন্য ক্রমাগত চাপ ইত্যাদি কারণগুলোর কারণে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের আক্রোশের শিকার প্রায়শই হতো পপি । পপির পরিবারের সদস্যের কথায় এমন কিছুরই ইঙ্গিত মিলেছে ।

এরই ধারাবাহিকতায় পপির স্বামী, শ্বাশুরি ও ননদ (উল্লেখ্য পপির শ্বশুর নেই) সবাই মিলে একটা নাটকের প্লট সাজায় । ওহ, বলা বাহল্য, পপির স্বামী, রায়হান পারভেজ, স্কয়ার ফার্মেসিউটিক্যাল কোম্পানিট্যাঁ প্রোডাকশন এক্সকিউটিভ । চাকুরীর সুবাদে পপির স্বামী ও পপি টাঙ্গাইল মির্জাপুরে বসবাস করতো । হত্যার ঘটনাস্থলও এখানেই । এবার নাটক নিয়ে বলি ।



পপি যে মারা যায়, এমন নিউজ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি গতকাল মানে ২৭ ই আগস্ট । এর আগের রাতের ঘটনা । পপির স্বামী রায়হান নাইট ডিউটির কথা বলে কর্মস্থলের জন্য চলে যায় । সে সময় বাসায় ছিল পপি, ওর শাশুড়ি আর ৫ মাস বয়সী ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটা । বাসাতেই সেমাইয়ের সাথে পপিকে মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ঔষুধ (যেটা আগে থেকে হাতুড়ি দিয়ে গুড়া করা ছিল) খাওয়ানো হয় । এরপর পপি অচেতন হয়ে পড়লে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে হত্যাচেস্টা করা হয় । যেন সবাইকে বলা যায় পপি নিজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে । কিন্তু সকাল পর্যন্ত পপি তবু বেচে ছিল । সেটা টের পেয়ে পপির শাশুড়ি এরপর ওকে নৃশংসভাবে গলা টিপে হত্যা করে । এমন জবানবন্দি পুলিশের উপস্থিতিতে কাশিয়ানি তে পপিদের বাড়িতে থেকে দেয় পপির শাশুড়ি । যদিও এখানে চালাকি করে পপির স্বামীর নাম একবারও নেননি ঐ মহিলা কিন্তু জানা যায়, সকালে পপির স্বামী ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে আসে । এখানে তার মদদ যে পুরোপুরি ছিল, এটা তার পপিকে হাসপাতালে নিতে গরিমসি কিংবা কাল বিলম্ব করা থেকেই প্রমাণ হয় ।

পপি মারা যাওয়ার আগেই পপির শ্বশুর বাড়ি থেকে ওর বাড়িতে জানানো হয় পপি মারাত্মক অসুস্থ । বলা বাহুল্য, পপি এপেন্ডিসাইটিসের রোগী । আগামী মাসে তার অপারেশন হওয়ার কথা ছিল । যাই হোক, এই খবর পাওয়া মাত্রই পপির পরিবার পপির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে উদ্দত হলে তার কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিয়ে জানানো হয়, পপি আর নেই । এরপর দুই পরিবারের আলোচনা হয় । পপিকে একটি চাদরে মুড়িয়ে একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে পপির শাশুড়ি ও স্বামী পপির বাড়ি কাশিয়ানি, গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে মির্জাপুর টাঙ্গাইল থেকে রওনা দেয় । পপির পরিবারের আগে থেকেই সন্দেহ ছিল এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নাও হতে পারে, কিন্তু সেটা তার ততক্ষন গোপন রাখে পপির শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে । অবশেষে কাশিয়ানিতে লাশ নিয়ে এলে আগে থেকে থাকা পুলিশ কর্তৃক পপির শাশুড়ি ও স্বামীকে তৎক্ষণাৎ আটক করা হয় ।

(কাশিয়ানী থানায় মামলা সংক্রান্ত সর্বশেষ আপডেট: কাশিয়ানী থানায় কোন মামলা হয় নাই। ঘটনাস্থল যেখানে সেই থানা ছাড়া মামলা হয় না। এটাই নিয়ম। গতকাল থানায় গেলে একজন এস আই প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে এবং ডেডবডি থানা হেফাজতে রাখে। জিডিমূলে লাশ পোস্টমর্টেম করার আবেদন করলে সকালে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়, সাথে একজন পুলিশ ছিল সে কাগজপত্র রেডি করে লাশ পোস্টমর্টেম করে পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এছাড়া যিনি সুরতহাল করছে তার কাছ থেকেই মূলত পপির শাশুড়ীর স্বীকারোক্তি, খুন কিভাবে হয়েছে যা লিখছেন সেটা তার কাছ থেকেই পাওয়া গেছে। পরে আসামী দুইজন কে আটক করে থানায় রাখা হয়। মির্জাপুর থানায় মামলা হইলে আসামী ও রিপোর্ট হ্যান্ডওভার করা হবে।)

বর্তমানে পপির স্বামী ও শ্বাশুড়ি (জানোয়ারগুলোর ছবি আমি এখানে এ্যাড করেছি । কেন জানি, জানোয়ারদেরও অনেক সময় নিস্পাপ মনে হয়) কাশিয়ানী থানায় আটক আছে । আদালতে মামলার কাজ শুরু হবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হস্তান্তর এর পর থেকে । পপির বাবা ও বড় ভাই হত্যার ঘটনাস্থল অর্থাৎ মির্জাপুর টাঙ্গাইলে মামলা করার জন্য গিয়েছে । সেখানে মামলা নিতে গরিমসি । অবশেষে আমাদের পপির ভার্সিটির কিছু সিনিয়রের হস্তক্ষেপে মামলা নিয়েছে ।



তবে আমি যেটা জানতে পেরেছিলাম যে পপির মৃত্যু পরবর্তী দেখা যায় যে হাত ও আঙ্গুল ভাঙ্গা, এটা পোস্টমর্টেম পরবর্তীতে প্রমাণ হয়নি । পপির থুতনিতে কিছু দাগ পাওয়া গেছে । ধারণা করা হচ্ছে, গলা টিপার সময় ধ্বস্তাধস্তির এক পর্যায়ে হাতের চুরিতে লেগে থুতনিতে কেটে যেতে পারে । তবে এটা ধারণা কেবল । আজকে বাদ মাগরিব বাদ পপির জানাযা হয়েছে । পপির পরিবার, পরিচিতমহলের পাশাপাশি পপির ভার্সিটির অনেক সিনিয়র জুনিয়র সেই জানাজায় অংশগ্রহণ করে । এরপর তাকে কবরস্থ করা হয় ।

আমরা আমাদের ছোট বোনের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই । যেভাবে হোক, এই অন্যায় আমরা মেনে নিবো না । এর জন্য যা করা লাগে বা যে পর্যন্ত যাওয়া লাগে দরকার পড়লে আমরা যাবো কিন্তু এমন যেন ভবিষ্যতে আর কারও সাথে ঘটার কথাও কেউ চিন্তা না করার সুযোগ পায় । আমার পপির ছোট বাচ্চাটার জন্য খারাপ লাগছে ক্রমাগত । ছোট মেয়েটার ভবিষ্যৎটাই এখন কেমন জানি ধোঁয়াশা । মহান আল্লাহ্‌ এই বাচ্চাটির উত্তম গতির পাশাপাশি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে আমাদের মনের আশা পূরণ করবেন, ইনশাল্লাহ্‌ । আমিন ।

আর পরিশেষে সবাইকে অনুরোধ করবো, পপির পরিবার বিশেষ করে পপির মেয়েটার এই দুঃসময়ে আপনাদের সকল দোয়ায় তাদেরকে রাখবেন
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৮
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×