somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরীশ্বরবাদীদের ঈশ্বর ভাবনাঃ প্রসঙ্গ বিজ্ঞানবাদ

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Professor Al-Khalili reveals the science behind much of beauty and structure in the natural world and discovers that far from it being magic or an act of God, it is in fact an intrinsic part of the laws of physics. Amazingly, it turns out that the mathematics of chaos can explain how and why the universe creates exquisite order and pattern. http://www.bbc.co.uk/programmes/b00pv1c3
Click This Link
মন্তব্যঃ
আচ্ছা বুঝলাম, পদার্থিক ব্যপার-স্যপারগুলো যতটা মনে হয় ততটা সরল নয়; অনেক বেশী জটিল। বাহ্যতঃ ‘বিশৃংখল’ মনে হলেও প্রাকৃতিক জটিলতা বা ‘গাণিতিক-বিক্ষিপ্ততা’ও একধরনের সূত্র। প্রফেসর জিম আল-খলিলি’র মতে, ‘mathematics of chaos can explain how and why the universe creates exquisite order and pattern.’ এই মন্তব্য লেখক কর্তৃক অধুনা প্রচারিত ‘বিজ্ঞানবাদ’-এর পরিচয় হিসাবে এই উদ্ধৃতিটি যথার্থ। বিজ্ঞানবাদীদের মতে, না বুঝে ঈশ্বরবাদীরা এই ‘বাহ্যতঃ বিশৃংখলা বা অপরিমেয় জটিলতা’কে ম্যজিক বা ঈশ্বরের কর্ম মনে করে বিভ্রান্তির শিকার হয়।
বিজ্ঞানবাদীদের বিশ্বাস, সবকিছু প্রাকৃতিক নিয়মের ঘটে। তো, বেকুবরা ছাড়া কোন ঈশ্বরবাদী বা নিরীশ্বরবাদী এটিকে অস্বীকার করে না। সমস্যা প্রকৃতি-কে নিয়ে নয়। প্রকৃতি’র পরিচয় নিয়ে, প্রকৃতি’র কোন পূর্বতন আছে কি-না, তা নিয়ে। যদি বলা হয়, প্রকৃতি’র নিয়মের মাধ্যমে প্রকৃতিকে জানা যায়, তাহলে প্রকৃতি বলতে আমরা বুঝব প্রকৃতি’র নিয়মকে।
আপনি যদি মনে করেন, প্রকৃতির নিয়মাবলীর পূর্বতন কিছু নাই। প্রকৃতির নিয়মাবলী স্বয়ম্ভূ তাহলে এক কথা। আর যদি মনে করেন যে প্রকৃতি’র নিয়মাবলীর কোন উৎস আছে, তাহলে আপনি ধর্মীয় অর্থে ঈশ্বর বিশ্বাসী। আর যদি মনে করেন যে, প্রকৃতি তথা প্রকৃতির নিয়মাবলী চিরন্তন, সেগুলোর কোন জন্ম নাই মৃত্যুও নাই, অনন্য তাহলে আপনি ঈশ্বর-বিশ্বাসী নাহলেও প্রকৃতি-বিশ্বাসী, নিশ্চিতভাবে।
ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা ‘ঈশ্বর’ বলতে কী কী বুঝান বা বুঝে তার একটা তালিকা করেন। এবার আপনি একজন প্রকৃতি-বিশ্বাসী বা প্রকৃতিবাদী তথা বিজ্ঞানবাদী হিসাবে ‘প্রকৃতি’র কী কী বৈশিষ্ট্যে বিশ্বাস করেন তার একটা তালিকা করেন। দেখবেন, আপনার প্রকৃতির সাথে ঈশ্বরের পার্থক্য কয়েকটি, মিল প্রায় পুরোটাই।
ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা ঈশ্বরকে চেতন-সত্ত্বা মনে করেন, অ-ঈশ্বরবাদীরা প্রকৃতিকে চেতন-সত্ত্বা মনে করেন না। ঈশ্বর-বিশ্বাসী হিসাবে পরিচিতরা সাধারনতঃ ঈশ্বরকে তাঁদের ব্যক্তি-জীবনের ভাল-মন্দের সাথে জড়িত মনে করেন, অ-ঈশ্বরবাদীরা স্বভাবতঃই যেটি করেন না।
আচ্ছা, ঈশ্বর-বিশ্বাসীরা কেন ঈশ্বরকে চেতন-সত্ত্বা মনে করেন?? ঈশ্বরের কার্যাবলীর বা কার্যপ্রক্রিয়ার কারনে অবশ্যই। তো, অ-ঈশ্বরবাদীদের প্রকৃতি তাঁদের তত্ত্ব মোতাবেক অব্যাহতভাবে(কনসিসটেন্টলি), ‘নির্বাচন’ করে যাচ্ছে, কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু ‘তা’ কোন সত্ত্বা নয়, চেতন নয় !! কি আশ্চর্য !!!
নিরীশ্বরবাদীরা বলবেন, আমরা কত কিছু দেখি, যা ক্রিয়াশীল কিন্তু চেতনা সম্পন্ন সত্ত্বা নয়। হ্যাঁ, আমরা তা দেখি। হরহামেশা আমাদের চারপাশে, প্রকৃতিতে, আমাদের বানানে যন্ত্রে চেতনার অস্তিত্বছাড়া ক্রিয়াশীল বস্তু দেখি। যেমন এই কম্পিউটার যা দিয়ে আমি লিখছি। বস্তুবাদীদের এ সংক্রান্ত তত্ত্ব হচ্ছে ফাংশানালিজম, বিহেভিয়্যারিজম ও হালজামানার কম্পিউটেশনাল থিওরী অফ মাইন্ড।
এসব বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে বিস্তারিত আলোচনা করার অবকাশ থাকলেও এখানে অতিসংক্ষেপে শুধু ‘বুদ্ধিমান’দের এ টুকু বলতে চাই যে, এসব যান্ত্রিকতার পেছনে কোন সচেতন সত্ত্বা না থাকলেও এদেরকে যন্ত্র তথা অ-সত্ত্বা হিসাবে চিহ্নিত করার জন্য আমরা, বুদ্ধিমান, সচেতন সত্ত্বা’রা আছি। তাহলে যান্ত্রিক জগতের পেছনেও কি তেমন কোন বুদ্ধিসম্পন্ন, চেতনাসম্পন্ন সত্ত্বা আছে? অন্ততঃ থাকতে কোন যৌক্তিক অসুবিধা আছে কি?

অ-ঈশ্বরবাদীরা বলবেন, না, এ ধরনের কোন সত্ত্বা আদৌ নেই। থাকলে তা দেখা যায় না কেন? তাঁদের মতে, যা পরীক্ষণে পাওয়া যায় না তা নাই। পরীক্ষণ ও যাচাইকরনের স্বরূপ ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের কি দুরাবস্থা হয়েছে তা নিয়ে পৃথকভাবে আর একদিন লিখবো, আশা করি।
আমরা যদি ধরে নেই যে, ঈশ্বর-এর কোন চেতন-সত্ত্বা নাই, তাহলে কী অ-ঈশ্বরবিশ্বাসীরা কি ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপন করবেন? না। কারন, তাঁরাতো অলরেডি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন !!!! যাকে তাঁরা প্রকৃতি বলেন।
প্রকৃতি নামের এই বস্তু-ঈশ্বরকে আরাধনা করার দরকার নাই। অস্বীকার করারও পথ নাই। তাঁদের এই বস্তু-ঈশ্বর এমন একজন দার্শনিক-খোদা যিনি ব্যক্তি-মানুষের ব্যক্তিগত বা সামাজিক জীবনে ‘হস্তক্ষেপ’ করেন না। এখানেই হলো ঈশ্বরবাদীদের সাথে কথিত নিরীশ্বরবাদী বিরোধ।
নিরীশ্বরবাদীরা মূলতঃ ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট ঈশ্বরকে (যাকে আমরা ব্যক্তি-ঈশ্বর বলতে পারি) অস্বীকার করে আর ভাবতে থাকে তাঁরা ঈশ্বরবিশ্বাস হতে মুক্ত।

যিনিই কোন না কোন পরম-এ বিশ্বাস করেন, তিনিই আস্তিক। হতে পারে, তিনি প্রচলিত ধর্মীয় অর্থে ঈশ্বরবিশ্বাসী নন। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে ঈশ্বরবিশ্বাসী, হতে পারে তিনি ঈশ্বর, খোদা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিশব্দ ব্যবহার না করে প্রকৃতি, অনন্ত (যেমন অনন্ত বস্তু), সীমাহীন (যেমন সীমাহীন সময়) ইত্যাদি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একজন নাস্তিক বলেছেন, আচ্ছা, আমরা যে সব স্বতঃসিদ্ধকে মানি, সেগুলোকে কি আপনি বলবেন যে আমরা ঈশ্বর হিসাবে মানি? উদাহরণ হিসাবে তিনি ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধসমূহের কথা বলেছিলেন। উনাকে বলেছিলাম, না, স্বতঃসিদ্ধ জাতীয় ব্যপারগুলোকে আমরা ঈশ্বর হিসাবে মানি না, আপনারা মানেন হিসাবে দাবীও করি না। সেগুলোকে আমরা আপনারা সবাই ঈশ্বরের কাজ বা নীতি (Godly) হিসাবে মানি। কারন সেগুলো সংশ্লিষ্ট সকল যুক্তি ও প্রমাণের ‘উৎস’। আপনার ঈশ্বরের কাজকে স্বীকার করেন, কিন্তু ঈশ্বরকে অস্বীকার করেন। আপনারা কাজকে স্বীকার করেন, অস্বীকার করার কোন পথ না থাকায়। কিন্তু কর্তাকে স্বীকার করেন না, যখন যখন সম্ভব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আই.ডি. নিয়ে বন্যা আহমেদের বিবর্তনের পথ ধরে থেকে শুরু করে স্যাম হ্যরিসন, রিচার্ড ডকিন্স সব নামকরা নিরীশ্বরবাদীদের লেখা ও ভিডিও আমি কালেকশন করেছি, পড়েছি, পড়ছি ও দেখছি। ইনাদের বুঝের সমস্যা কোথায়, উপস্থাপিত যুক্তির দূর্বলতা কোথায় এসব নিয়েও অদূর ভবিষ্যতে লেখার আশা রাখি।

প্রকৃতিই হলো বিজ্ঞানবাদী তথা নাস্তিকদের ঈশ্বর। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিজ্ঞানচর্চার মাধ্যমে প্রকৃতি হতে আমরা সব পেতে পারি। প্রকৃতির উর্ধে আর কিছু নাই। আস্তিকদের ঈশ্বরের মতো প্রকৃতি তথা ‘বস্তু’ স্বয়ম্ভূ। প্রকৃতির এই নাস্তিক্যবাদী সর্বময়তা তাঁদের দৃষ্টিতে স্বতঃপ্রমাণিত(অবভিয়াস)।
ভাল, তবে একজন ঈশ্বরবাদী মনে করবে, প্রকৃতির এই প্রকৃতি ও ক্ষমতার উৎস হলো ঈশ্বর। প্রকৃতিকে আল্লাহ সৃষিট করেছেন। অবশ্য এক বর্ণনা মতে, ঈশ্বর প্রকৃতিতে প্রকাশিত। বিশেষ করে সময়ের সাথে আল্লাহ নিজেকে একাত্ম করে বলেছেন, তোমরা কাল বা সময়কে গালি দিওনা; আমিই কাল। (হাদীসটি সহি। হাদীসে কুদসী।)

উপরের আলোচনায় মনে হতে পারে, জ্ঞানতাত্ত্বিক দিক থেকে নাস্তিকতা একটা বিরোধপূর্ণ মতবাদ। তাঁরা এমন বস্তুতে বিশ্বাস করে যা সকল অ-বস্তুগত বৈশিষ্টাবলী ধারন করে। তাঁরা এমন প্রকৃতিতে বিশ্বাস করে যা জ্ঞানতাত্ত্বিক ঈশ্বরের সকল গুণাবলীর অধিকারী।
তো, এই যাচাই ও বিজ্ঞান নিয়ে যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদীদের প্রসঙ্গ নিয়ে অন্যকোন পোস্টে আলোচনা করার আশা করছি।
বাই দ্য ওয়ে, বিজ্ঞানবাদ বা বিজ্ঞানবাদীতা’র ইংরেজী টার্ম কি হতে পারে? আই এ্যম নট শিওর ….
৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×