somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মানচিত্রের গল্প ও অফটপিকের কিছু কথা

০৭ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গল্প বলেই শুরু করি।

একটা ৮-৯ বছরের বাচ্চা একটা কাগজের মানচিত্র নিয়ে খেলছে। খেলতে খেলতে সে মানচিত্রটা ছিড়ে ফেলেছে। তার বাবা এটা দেখে তো খুব রাগ করল। ছেলেটাকে বলল, তুমি মানচিত্রটি ছিড়লে কেন? এখন তোমাকে আধঘণ্টা সময় দিচ্ছি, তুমি যেভাবে পার মানচিত্রটা জোড়া দাও। ছেলে তো পড়ল মহা বিপাকে।

আধঘণ্টা পর বাবা এসে দেখে ছেলেটা ঠিকই মানচিত্রটা জোড়া দিয়ে ফেলেছে। বাবা তো অবাক! বাবা জিজ্ঞেস করল, তুমি তো মানচিত্রটা চেনো না, তুমি এটা জোড়া দিলে কিভাবে? ছেলে বলে, বাবা, আমি মানচিত্র জোড়া দেই নি, মানচিত্রের পেছনে একটা মানুষের ছবি ছিল, আমি সেই ছবিটা জোড়া দিয়েছি, মানচিত্র এমনিতেই জোড়া লেগে গেছে।

গল্প শেষ। এবার আমি আমার মূল টপিকে ফিরে আসি। অনেকেই বলে আমি তো চুনোপুঁটি, আমি দেশের কাজে কিভাবে লাগতে পারি। তাদের জন্যে উপরের গল্পটা। আমার কথা হচ্ছে তুমি নিজে নিজেকে গড়ে তোল, দেখবে দেশটা ঠিকই গড়ে উঠেছে।

আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি নিজেকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। আমি দিন-রাত পড়াশুনা করবো, একাডেমিকালি ভালো ফলাফল করবো, কিন্তু আমার ভিতরে মানবিক গুনাবলি পরিস্ফুটিত হবে না, তাহলে সে শিক্ষার আদৌ কি কোনো মূল্য আছে? মনিষী প্রমথ চৌধুরী বলেছেন-

“শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল্যবোধের পরিবর্তন।”

জ্ঞানের কথা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার কথায় ফিরে আসি।

আমি শুধু পড়াশুনা করেই যাব, আর আমার চোখের সামনে দিয়ে অন্যায় হয়ে যাবে আর, আমি তার প্রতিবাদ করবো না তা হলে তো আমার পড়াশুনাই বৃথা। আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শুধু ভুলই করিনি, আমি অপরাধ করেছি। সরকার আমার পেছনে চার বছরে ৭-৮ লাখ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, আমি আমার দেশকে কি দিচ্ছি? আমি এ সিটটিতে ভর্তি হওয়ার কারনে আর একটা ছেলে বঞ্চিত হয়েছে।

আবার মানচিত্রের গল্পে ফিরে আসি। আমি যদি আমার নৈতিক শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে জেতে না পারি, তাহলে মানচিত্রের পেছনের মানুষটাকে আমি জোড়া দিতে পারব না। তার চোখদুটোকে আমি অন্ধ করে ফেললাম। সে তার সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অপরাধ কিছুই দেখতে পারবে না। এতে দেশের মানচিত্র ফুটো হয়ে যাবে। বাংলাদেশ তো আর এমনি এমনি দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় নি।

ভিসি স্যার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করালে দেশের ক্ষতি হয়, আমি একটা ক্লাস না করলে দেশের ক্ষতি হয়, ফুড ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা ১১ মাস ক্লাস না করলে দেশের ক্ষতি হয়, কিন্তু আমি যদি নৈতিকতা না শিখি তাহলে কি দেশের ক্ষতি হয় না? কোনটা বড়, ১ ঘণ্টার একটা ক্লাস না করা নাকি ২৫-৩০ বছরের কর্মজীবনে দুর্নীতি করে যাওয়া। দেশের বড় ক্ষতি কে করছে, আমি, যে একটা ক্লাস না করে অপরাধ করেছি নাকি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যারা আমাকে নৈতিকতার শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত করছে? দেশের এত বড় ক্ষতি করার পর তারা বিবেকের কাছে কি জবাব দেবে? নাকি বিবেক নামক বস্তুটার সাথে তাদের পরিচয় নেই?

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অনিয়ম দেখলে আমার খারাপ লাগে। প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি কিছু বললেই ওই একই প্রশ্ন-

“তোমার আইডি কত?”

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০০ ছাত্রের মধ্যে ১ বছরে ৫২ জনের বহিষ্কার। বাংলাদেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রেকর্ড আছে কিনা আমার জানা নেই। প্রশাসন তার অযোগ্যতা ঢাকার জন্য বহিষ্কারাদেশ দিয়েই যাচ্ছে। এই নোটটার জন্য আমার উপর বহিষ্কারাদেশ চলে এসে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। তবুও বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা বাঁধতেই হবে।

যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু করার থাকে না সেখানে তাকে নাকি ঘৃণা করতে হয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারি, তাদেরকে অন্তত সমর্থন না দেই, ঘৃণা করতে শিখি। আমারতো মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেক না থাকলেও আমাদের আছে। আমরা বিবেকের এ দায় এড়াব কিভাবে?
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×