পূর্বকথাঃ
প্রায় তিনবছর আগের কথা, এইচএসসি পাশ করে সবে আমেরিকায় এসেছি! ভর্তি হতে সময় লাগবে তাই তখন শুধু কাজের চিন্তায় ব্যস্ত। কিভাবে একটা ভালো কাজ পাওয়া যায়! এমন সময় এলাকার মসজিদে (আমার বাসা থেকে মাত্র তিন ব্লক দূরে) একটা চাকরি বিষয়ে পরীক্ষা হলো। আমি সেই পরীক্ষায় টপ করলাম। পরিচয় হলো, মসজিদ কমিটির একজনের সাথে। তিনি আমাকে অনেক উৎসাহ দিলেন। বললেন, “তুমি নটর ডেম থেকে মাত্র পাশ করে এসেছো। আমাদের কমিউনিটির সাথে কাজ করো, মসজিদের জন্য কাজ করো।“ আমারো ভালো লাগলো। দুইটা কারণেঃ এক, ভালো একটা কাজ পাওয়া যেতে পারে, দুই, মসজিদের সাথে থাকলে ইসলামের সাথেও থাকা হবে!-- আমি নিয়মিতই মসজিদে যেতাম। ওখানকার লোকদের কথাবার্তায় দেখতাম স্পষ্ট একটা জামাতপন্থীভাব। সবসময়েই বাংলাদেশবিরোধী কথাবার্তা! পরের শবে বরাত অথবা ক্বদরের রাতে ইমাম সাহেব দোয়া করলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান জালেম সরকার দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সহ সকল আলেম-ওলামাদের বন্দী করে রেখেছে। তুমি তাদের মুক্ত কর।“ মোনাজাত শুনে আমি আঁতকে উঠলাম! আমি ‘না না’ করে উঠেছিলাম। মনে আছে! এরপর থেকে আর ওই মসজিদে পারতপক্ষে যাই না। দূরের মসজিদে যাই। মসজিদ কমিটির লোকটির সাথে দেখা হলে আমি এড়িয়ে যেতাম। আমার কথা স্পষ্ট! আমি আমার ধর্ম ‘ইসলাম’ ভালোবাসি,
নিউ ইয়র্কে বাংলা ব্লগ দিবস পূর্বপ্রস্তুতিঃ
সারাদেশেই বাংলা ব্লগ দিবস আয়োজন করা হচ্ছে। ‘নীরব নিলয়ের’ পোস্ট দেখলাম নিউ ইয়র্কেও সে ব্লগ দিবস করতে চায়! আমি নিজেও খুব উৎসাহ দেখালাম। বিপ্লবের সাথেও পরিচয় হলো। আমরা একসাথে বসে প্ল্যান করবার উদ্যোগ নিলাম। সেখানে পরিচয় হলো রাফা ভাই এবং আরীফ হোসাইনের সাথে। প্রথমেই আমার আরীফ ভাইয়ের একটা ব্যাপারে খটকা লাগলো! তিনি ‘এখন সময়’ পত্রিকায় কাজ করেন। মনে হলো, জাফর ইকবাল স্যারের একটা ভিডিও এর কথা। যেখানে “দিগন্ত টিভির সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিবেন বলে স্যার সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি।“ প্রথমে আরীফ হোসাইন তার অফিস “এখন সময়”-এ ব্লগ দিবস করার প্রস্তাব দিলেন। যেটি রাফা ভাইয়ের প্রবল আপত্তির মুখে না হয়ে যায়। আমি নিজেও আপত্তি করেছিলাম। বিপ্লবের সাথে ফোনে অনেকক্ষণ এ বিষয়ে কথা হয়েছিলো। “এখন সময়” হলো পুরোপুরি জামাতপন্থী পত্রিকা। তবে, ‘নিলয়’ ছেলেটাকে খুব ভালো লাগলো। মাত্র ক্লাস ১১ তে পড়ে একটা ছেলে। এত্তো উৎসাহ! তখন যদি ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করতে পারতাম।
মূল অনুষ্ঠানঃ
২২ তারিখ আমার কাজ থেকে প্রায় তিনঘণ্টা আগে বেরুলাম (টাকা মাইর দিয়ে), শুধু ব্লগ দিবসে থাকব বলে। আগে আগে পৌঁছে গেলাম। পরিচয় হলো মাসুম ভাই, মামুন ভাই, মেহেদী ভাই এদের সাথে! আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমেই কুরআন তেলাওয়াত। তারপর জাতীয় সংগীত! আমরা যখনই জাতীয় সংগীত গাইছিলাম তখনই ৫জন মানুষ একসাথে আমাদের অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়। আমি তাদের দেখেই চিনতে পারি! এদের একজন মসজিদ কমিটির সেই মানুষটি, যিনি আমাকে মসজিদে কাজ করার জন্যে ডেকেছিলেন! আমাকে দেখেই তিনি চিনলেন। আরেকজনকেও চিনলাম যাকে মসজিদে জামাআতপন্থী কথা বলতে দেখেছি। আমি দেখেই চুপসে গেলাম। আমাদের অনুষ্ঠানতো “সকল যুদ্ধাপরাধী ও তার দোসর বর্জিত হবার কথা!” সবাই যখন একসাথে ছবি তুলতে দাঁড়ালো আমি বিপ্লবের হাত থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিলাম, বললাম “তুমি দাঁড়াও, আমি তুলে দিচ্ছি।“ আমার উদ্দেশ্য ছিল, “জামাতপন্থীদের সাথে এক ছবিতে না থাকার। তবু বিপ্লবের জোরাজুরিতে এক কোণায় দাঁড়ালাম। তখন দেখলাম রাফা ভাইও কোণায় দাঁড়াচ্ছেন। তারা যখন কেক কাটছিলো, আমি সরে আসলাম। রাফা ভাইও সরে আসলেন। রাফা ভাই প্রথমে বললেন, “মিনহাজ, একদম ঠিক হইলো না। এরা জামাআতী পুরা।“ আমি বললাম, “আপনি তাহলে ধরতে পেরেছেন! আমিও চিনেছি। আসলেই একদম ঠিক হলো না। এখন কি করা যায়, বলুন তো?” রাফা ভাই বললেন, “মিনহাজ, আমি ৭৫ ডলার দিয়ে এই কেকটা এনেছি, জামাতদের খাওয়ানোর জন্যে না!” আমি বললাম, “চলেন বাইরে যাই!” আমি আর রাফা ভাই দুইজনে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলাম। ফুড কোর্টের বাইরে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুইজনে অনেক হাপিত্যেশ করছিলাম। রাফা ভাই বলছিলেন যে, এদের মধ্যে একজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন! ছাগু ব্লগার নইম! আরও একজনকে চিনেন যিনি জামাত করেন! দেখলাম আমার চেনা লোকটির কথাই তিনি বলছেন! নিজেদের খুব খারাপ লাগছিলো। কি করব এখন! তখন বিপ্লব বাইরে এলো। এসে বলল, “ভাই, আপনারা বাইরে কেন? আপনারা আমাদের সাথে আয়োজন করলেন। আপনারা বাইরে কেন?” আমি বললাম, “বুঝতে পারছো না? এরা সবাই জামাআতি ব্লগার!” বিপ্লবও শকড হলো! আমরা গিয়ে কিভাবে তাদের বের হয়ে যেতে বলি চিন্তা করলাম। রাফা ভাই প্রথমে আসলেন না। বললেন, উনার এদের সাথে কথা বলার রুচি নেই। বিপ্লব গিয়ে সর্বপ্রথম তাদের বললেন, “আপনারা কেউ আমাকে কনফার্ম করেননি আসার ব্যাপারে, সুতরাং আপনারা এখানে থাকতে পারবেন না!” নিলয় পাশ থেকে বলে উঠলো, “কেন, আমরা তো বলিনি কনফার্ম করার কথা! কেন উনারা থাকতে পারবেন না?!” ইসস, তখনও যদি বুঝতাম! আমরা সবাই নিলয়কে একেবারেই মাসুম বাচ্চা ধরে নিয়েছিলাম!
এই হলো সেদিনের ব্লগ দিবসের ঘটনা! আমি আমাকে-আমাদের নিয়ে গর্বিত যে, আমরা একেবারে সরাসরি তাদের মুখের উপর তর্ক করে তাদেরকে বর্জন করে, আমাদের অনুষ্ঠান ঠিকভাবে করতে পেরেছি! নীরব নিলয়কেই শুধু চিনতে পারিনি। তাকে চেনা একেবারেই সম্ভব ছিল না, আগে থেকে না জানলে!
এরপরে রাতে বাসায় এসে দেখি নতুন কাহিনী! আমার কাজিন আপু ফোন দিলো, এবং আমাকে প্রথম কথা বললো, “তুই এখানে পড়ালেখা করতে এসেছিস, মিটিং করিস কী? কি ঝামেলা করেছিস?” আমি আকাশ থেকে পড়লাম। কি হয়েছে? জানলাম যে, এলাকার সেই লোকটি আমার মামার বাসায় গিয়ে মামীকে পেয়ে বলে এসেছে, “মিনহাজ, আমাকে একটা অনুষ্ঠানে সবার সামনে অপমান করেছে, আমাকে একটা মিটিং থেকে বের করে দিয়েছে। যদি আপনারা কোন ব্যবস্থা না নেন, তাহলে আমি অন্যভাবে একশন নিব!” আমাকে মামী আমাকে বললেন সাবধানে থাকতে। আমি যেন কোন ঝামেলায় না জড়াই! ওই লোক নাকি আমার বাবার ফোন নাম্বারও চেয়েছে। মামী দেন নাই। এই হলো ঘটনা। আমার বাবা জানার পরেও আমার ব্যাপারে চিন্তিত হলেন। আমাকে বারণ করছেন আমি যেন কোন ঝামেলায় না জড়াই। বাবা-মার চিন্তা যা থাকে আরকি! আপনারা আমার জন্যে দোয়া কইরেন। বাসায় একটু চাপের মধ্যে আছি। তবে আবারো বলি, আমার মধ্যে একটি আত্মতৃপ্তি আছে যে, আমরা অন্তত কোন জামাতিকে মুখের উপর জামাতি বলে প্রমাণ করেছি। এবং আমরা খুব দৃঢ়ভাবে দাবি করব যে, আমরা একেবারে একটিভলি সফলতম ব্লগ দিবস আয়োজন করেছি! আমাদের মূল থীমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে! যুদ্ধাপরাধী ও তার দোসরদের সমর্থকদের সরাসরি প্রতিহত করে।
আমি রাফা ভাই, বিপ্লব, মাসুম ভাই, মেহেদী ভাই সবাইকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই সেদিনের ভূমিকার জন্যে! স্বর্ণাকেও ধন্যবাদ ভার্চুয়ালী নিলয়ের পরিচয় প্রকাশ করার জন্যে! ইসস, নিলয়কে যদি একটুও সন্দেহ করতে পারতাম! স্বাগত বক্তব্যে যেমন বলেছিলাম, তেমনই বলতে চাই! বাংলা ব্লগ দিবস সফল হোক! সফল হোক, আমাদের যুদ্ধাপরাধীবিরোধী প্রচারণা!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



