somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারা বন্দী ছিলো বন্দীত্বের অভিপ্রায়ে

২৩ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
বিকালের প্যাতপ্যাতা হাওয়ায় উড়ে উড়ে রিকসায় ফিরছিলো সে।
ঘাম শুকানোর ঠান্ডা আর্দ্রতাসহ উড়ে উড়ে।

তার ভাবনা জুড়ে বিষাদের পূর্ণসন্তুষ্টি।

এই তৃতীয় বিশ্বের ঘিন্জি ঘুপচির একটা দেশে যেখানে চোখ কোথাও দূর সীমানায় না আটকে লেটকে যায় পটকে যায় থ্যাবড়া ঢালু দেয়ালে অথবা মানুষের সংকরজাত চেহারা আর দুলুদুলু কী চিমসে ধরা শইলে; সেখানে আজও রিকসা একটি ডেটিং প্লেস হিসেবে বিবেচিত হয়।

শাদা টেকো বুড়া লোকটার রিকসাকে কেউ পেছন থেকে ধাক্কা মারে।
আলসেমি আয়েশে পা চেগিয়ে বসায় তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় কি না দ্যাখা যায় না, কিন্তু বোঝা গেলো কোথাও গরমিল হয়েছে।

তার ধোন খাড়া রিকসাঅলাও ইতিউতি চোখ চালায়।
বাংলা সিনেমার রংচঙা পোস্টার আর পথচারী মেয়েদের দুলুনি ছাড়া অবশ্য অন্য কিছুতে সে তাকাবার অবকাশ বোধ করে না।

তাই সে নিজেই কারণ খুঁজতে শুরু করে।
বিকেলের মতই ছিলো শুরুতে এখন তা হঠাৎ করেই ভীতিকর
সন্ধ্যায় রূপ নিয়েছে।

এবং সবাই চুপ।

নিঃশব্দে কথা হলো বিদ্যুত চলে গেছে, এ যেন পরকীয়া আসক্ত প্রণয়ীর গমন, প্রত্যাবর্তনহীন।
এমন কি ভীষণ অনীহায় মার্কেটের কামলাগুলা জেনারেটর চালালো না, থাম্বা ফ্লাটবাড়িগুলায় হাঁপানো দারোয়ানটা আইপিএস চালু করলো না।
যেন এটা অনিবার্য ছিলো একদিন সব আলো সব শক্তি আত্মহত্যা করবে।

দ্রুত অন্ধকার হওয়ায় তাকে মোটামোচ রিকসাঅলা বাসস্টপে নামিয়ে ছুট লাগালো।

কোনো বাড়িতে আলো নেই, কোনো দোকান আলো জ্বালেনি; যেন জ্বালাতেই ফুরিয়ে যাবার ভয়।

খুপড়ি হোটেলে আজ মোগলাই ভাজার গন্ধ নেই। পেট্রল তেলে অনেক দিন রান্নার পর আজ ছুটি।
সব বাস শেষ ট্রিপে নামিয়ে দিচ্ছে প্যাসেন্জারদের।

আজ এখানের সমস্ত শক্তির শেষ হলো।



২.
হাতড়ে পাতড়ে সে পৌছালো বাড়িতে গন্ধ শুঁকে শুঁকে ।
সকালের কাক পোড়ার গন্ধে।
কেউ দরজা খুলতে চাইছিলো না, আসন্ন ডাকাতির আশংকায়।
তারপর মা নামাজ শেষে দরজা খুলল।
-তর সটু বোইন ত ফিরলো না রে!
সে জানত বোন টিকবে না এই বৈরী অন্ধকারে, তবে শুরুতেই হারাবে ভাবে নি।
তারপর মাও আর উচ্চবাচ্য করল না।
-খাওন কী আসে মা?
কাইলকার তরকারি ছারা আর কিসু নাই?
-যা আসে তাই দিয়া খায়া লা।
খেতে খেতে সে দ্রুত ঠিক করে পালানোর কথা।
এ শহর টিকবে মাত্র আর দশ বারো ঘন্টা।
মোবাইল নেটওয়ার্ক নষ্ট, কাজ করছে না ওয়ারলেস নেট, এখানের সমস্ত শক্তির পতন ঘটায়।
মিটমিটে মোমবাতির আলোতে সে মাকে দ্যাখে।
কাছে এসে টের পায় মৃত।

এমন কী বাতাসই মৃত ।
শুধু মৃত্যুর তৃপ্তি বয়ে আনে।

দরজার খুটখুট শব্দে তার কল্পনা ভাঙে।
অন্ধকারে তিরিশ বছরের বাড়িওয়ালি আড় সুপ্ত সাধ পূরণ করতে আসায় সে ভাবে হয়ত আবার আলো ফিরে আসবে, সামনের মাসে ভাড়া বাড়বে না শুধু এই সন্ধ্যাকালীন ব্যাভিচারের খাতিরে।
না, বাড়িওয়ালি জানালো সে মেইন গেট তালা দিয়ে দেবে।
সে বলল না তরুণী বোন ঘরে ফিরে নি।



৩.
মৃতলাশ মাকে পাশের ঘরে রেখে সে ব্যাগ গুছালো।
আর কোনো যন্ত্র চলবে না এরপর। অনেকেই এ খবর জানে না, তাই বাইসাইকেল আর পাম্পার চুরির শেষ সময়সীমা এ রাত।
চলে যেতে হবে পিচে মোড়ানো এই শহর ছেড়ে। মাকে কবর দেবার জায়গাও পাওয়া গেলো না।
অবশ্য রাস্তায় এতক্ষণে দূর্বৃত্তরা দাপটের টহল দিচ্ছে।
বেশ্যারাও জীবনের ঝুঁকি নেবে না আজ।
পড়ে আছে বিলবোর্ডের দেঁতো হাসির মডেলরা।
আর তরুণী বোন কোথাও ধর্ষিত হয়ে কুঁকড়ে আছে। তাই শেষ আশ্রয় নিজেকে সে জীবিত থাকার জন্য প্রস্তুত করলো।

শহুরে নরখাদকরা রাস্তায় উপচে পড়েছে কি না খবর জানা গেলো না।
অতিদ্রুত পলায়ন প্রয়োজন।

ব্যাগ সহ দরজা পেরোতেই বুঝলো বাতাসেও পৌছেঁছে হলদে কালচে মৃত্যুর গন্ধ যার আঘাতে তিরিশের বাড়িওলি সিঁড়িতে মরে লেটকে আছে।
হয়ত রাজনীতিবিদদের এসিগুলোর মধ্যেও ঢুকে পড়েছে বিষাক্ত বাতাস।



৪.
সেই বাতাসকে উপেক্ষা করে সে চুরি করলো চিকনা মৌলভির লাল সাইকেলটা। সাইকেল নিয়ে ভেসে ভেসে গেলো লাশ আর লাশখেকোদের পাশ কাটিয়ে পরিত্যাক্ত মাঠে।
ঘাস খোড়া মাটিতে সে শুয়ে দম নিলো এতটুকু।
তারপর ক্লান্তি।
ঘুম।
ঘুম শেষে সে তাকালো।
তবে নড়বার অনুমতি নেই।
পলকহীন তাকিয়ে থাকার ক্লান্তি আর,
ভেতরে জমাট বাঁধা রক্ত ও শ্বাস নেবার দমবন্ধ তৃষ্ণা।
আর লাল পিঁপড়ার মাংস খাবার উৎসব।


সে মাঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে কালো নীল আকাশের দিকে মুখ করে।
ক্ষুধায় তৃষ্ণায় আর্ত মৃত কান্নায়।


চির জাগরণে,
তার মৃত্যুতে।




পুনশ্চ: তখন রাত পৌনে দশটা যখন বাতি ফিরে এলো, চোখে আলো লাগায় ঘুমন্ত মা জেগে দেখলো মেয়েটা প্রণয়ী নিয়ে ঘরে ফিরেছে;
ছেলেটার খোঁজ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১১:৪৪
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×