somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভন্দু শরীফ উদ্দিন পর্বঃ ২

১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু শরীফ উদ্দিন টিউশন ও প্রেস্টিজ হারাবার পর তাকে যতটা বিচলিত দেখার আশা করছিলাম তেমন কিছুই দেখা গেলো না। এক বিকালের খাদ্যস্ফীত উদরসর্বস্ব ঘুম ভাঙ্গাতে শরীফ উদ্দিনকে আমার রুমে হানা দিতে দেখা গেলো।

'চ' বহুল শরীফকে দেখে বিপর্যস্ত না মনে হলেও পরিবর্তনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। বেশ সুশীল একটা ভোঁতা হাসি দিলো সে।
জিজ্ঞেস করলাম, আবার টিউশনির খোঁজে আসছিস?
না রে ভাই। আমি আর চাকরামী করমু না এই জীবনে।
তাহলে ঘুম ভাঙ্গাইলি ক্যান?
আমি একটা ছোটখাট পত্রিকায় সাহিত্য পাতায় লেখার কাজ পাইসি। ভাবলাম তুই লেখক মানুষ, তোর চিন্তা ভাবনা জাইনা যাই। বলে সে গম্ভীর ভাব করলো।

প্রথমত, সংবাদ শুনে আমি মর্মান্তিক কষ্ট পেলাম। আমার বহুদিনের স্বপ্ন ছিলো পত্রিকায় নিজের লেখা ছাপানোর। আর শরীফ উদ্দিনের মত অগা মগা পোলা কি না সাহিত্য পাতায় আমন্ত্রিত হয়!
যা হোক মেজাজ খারাপ আড়াল করে জিজ্ঞেস করি, তা লিখবিটা কী নিয়ে? রোমান্টিক কিছু নাকি?
আরে ধুর ধুর। অইসব প্যাতপ্যাতা প্রেমের গল্প চটকানো আমার দ্বারা হবে না, তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে সে। লিখবো আমি সায়েন্স ফিকশন।
রিয়েল্যি?? তুই তো আর্টসের স্টুডেন্ট!!
হুম। কিন্তু ম্যাট্রিকে আমার সায়ন্স ছিলো। আমি এখনও প্রোটোপ্লাজম, সাইটোপ্লাজম, নিওক্লিওলাস মাইটোকোন্ড্রিয়ার নাম মনে রাখতে পারসি। তাই ওসব লেখা আমার জন্য হাহ।
ফাইন। তাহলে লেখ। আমার কাছে কী।
আমি আসলে প্লট খুঁজে পাচ্ছি না ভালো। প্রথম লেখা ছাপাবো, একটু ভাবের হওয়া দরকার না?
মনে মনে ভাবলাম শ্লা! নিজে লিখতেও জানবে না, আবার ভাবও নিতে চায়। তার ওপর রোমান্টিক লেখাগুলাকে প্যাতপ্যাতা বলে সে চান্সে আমাকে অপমান করল।
মুখে বললাম, আমাকে ভাবতে সময় দে। কাল পরশু জানাবো নে।
না না। আমাকে আজই লিখতে বলেছে।আমি মুততে গেলাম। তুই ভাবতে থাক। বলে সে উঠে গেলো।
হুম, তাকে খুব কঠিন কন্সেপ্ট দিতে হবে যাতে সে লিখতে না পারে। তাকে স্পেস টাইম কনভার্জেন্স নিয়ে মাথা নষ্ট করানো যেতে পারে ভেবে ভেবে আমি আহ্লাদিত হই এমন সময় সে টয়লেট থেকে হাসি মুখে বের হয়ে আসে।

বলে, প্লট পেয়ে গেসি দোস্ত।
কী প্লট?
তুই।
মানে?
তোর জীবনের জটিলতাগুলার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই হবে গল্প।
ভাবলাম, বাহ! আমার কী দায় পরসে তাকে আমি আমার জীবনের জটিলতা বলতে যাবো!
বললাম, নাহ আমার জীবনে কোনো জটিলতা নাই।
আসলেই? সে হতাশ হয়।
হুম।
তাহলে তুই তোর ক্লাসের কোন মেয়েকে জানি পছন্দ করতি অই জটিলতাই বল।
এরকম কেউ নাই।
আরে আছে তো। চারকোণা চেহারার ফর্সা কইরা, দেখসিলামও একদিন।
আমার বিষ দৃষ্টি দেখে সে চুপ যায়।
তোর শারীরিক জটিলতা বলতে পারিস।
আমার চেহারা দেখে সে রাম ধমক আশংকা করে তাড়াতাড়ি বিদায় নিলো।

শনিবার সকালে ক্লাসে ঢুকতে বন্ধু বিকাশ পত্রিকা হাতে ধরিয়ে বলল শরীফুদ্দিন দিয়া গেসে। সে তার গল্প ক্লাসের পিছনের দেয়ালেও আঠা দিয়া লাগাইয়া গেসে সকালে।

সাহিত্য পাতায় গিয়া আমি স্তম্ভিত। গল্পের নাম, মনোয়ার ও এন্টিসারশন জীবন।
এন্টিসারশন বস্তুটা কী জিনিস এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নাই, অথচ আমার এন্টিসারশন জীবন বলে সে গল্প ফেঁদে বসল।

গল্প পড়ে যা বুঝলাম মনোয়ার (আমি) লোকটা প্রায় সব দিক দিয়েই ব্যর্থ।
সে পড়ালেখা করেও অজানা কারণে জীবনে কোনো উন্নতি করতে পারে না। সে চারকোনা চেহারার এক চশমা পরা মেয়েকে ভালবাসে কিন্তু কিছু বলতে পারে না।
সে তাই নিজেকে বৈজ্ঞানিক স্বেচ্ছাসেবীতে পরিণত করে। তাকে দেয়া হয় এন্টিসারটিক মাউথ ওয়াশ। এর মাধ্যমে সে অন্যের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অপমান করতে পারে, সে ধারালো আর অহঙ্কারি হয়ে ওঠে। সে তার ধারালো কথার মাধ্যমে হত্যা করে একের পর এক প্রতিভাকে যাদের প্রতি সে ঈর্ষান্বিত ছিলো। কিন্তু এই এন্টিসারটিক জীবনে সে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। তার চারকোণা চশমা মুখের মেয়ে তাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে।

চতুর্থ সারিতে বসা সেই চারকোণা মুখো মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কিম্ভূত দৃষ্টি দিলো।


এত লেইম, আগামাথাহীন কাহিনীর একটা লেখার কারণে আমাকে অপদস্থ হতে হলো আমি মানতে পারছিলাম না।

বাসায় ফিরে গোসল করতে গিয়ে দেখি আমার এন্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশটার বোতলে নীল লেগে P বস্তুটা R হয়ে বসে আছে।


চলবে ......
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৪৪
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×