somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরানি সিনেমা-বিপ্লবঃ 'দ্য চিলড্রেন অব হ্যাভেন' ও মাজিদ মাজিদি ।

১২ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইরানি বিপ্লব পরবর্তী যে সংস্কার কার্যক্রম চলে তার একটা বড় প্রভাব পড়ে থাকবে ইরানি শিল্প-সাহিত্যে । প্রাগৈতিহাসিক কিংবা নিকট অতীতে সাহিত্য-সংস্কৃতির যে পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা সমজদার ইরানীয়রা তা তাঁদের দুর্জনেরাও (ইঙ্গ-মার্কিন ! এম্নিতেই ত্যানারা পুরাই আউলা জাউলা মাথা খারাপ ঝাতি, শাশক-শোষকেরা জাতি নয়! এরা সব সময়য়ই দুড়া কাউয়া ছিল , পরে একসময় এক হইয়া পাতি কাউয়ার লগে প্রতারণা কৈরা শেক্সপিয়ররে ধইরা কুকিল হইয়া গ্যাছে কিংবা আছে, যাউজ্ঞা আইজ এই থাকুক , এই আলোচনা অন্যত্র করমুনে) অস্বীকার করে না । বোধকরি এর একটা বড় প্রভাব পড়ে গেছে ইরানীয় সিনেমায় ।

আব্বাস খিয়োরোস্তামি , জাফর পানাহি , মাজিদ মাজিদি , বাহ্রাম বেজাই , দারিয়স মেহেরজুই , মহসেন মাখমালবাফ , পারভেজ কিমাইভি , সামিরা মাখমালবাফসহ আরও একঝাক মেধাবী প্রতশ্রুতিশীল ফিল্মমেকার এই দেশটির সিনেমায় জন্য যে খাটাখাটুনি করছেন তা এককথায় বিস্ময়কর । কারণ , রাষ্ট্রপক্ষ সিনেমার জন্য যে নীতিমালার বিধান করে রেখেছেন তা মুক্তসিনেমার জন্য বাধা , তদুপরি এই সিনেমেকাররা যেভাবে কৌশলে-ইঙ্গিতে সিনেমাকে শারিরীক-বাচনিক ভঙ্গিতে উপস্থাপিত করে চলেছেন তা পুরো সিনেওয়ার্ল্ডের জন্য চিন্তার বিষয় । এতোএতো বাধা-বিপত্তি মাড়িয়ে ইরানি সিনেমা সারাবিশ্বে যেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে , বিশেষ কৈরা ইউরোপ-অ্যামেরিকায় (যেখানে পশ্চিমারা ইরানকে পারলে আজই কলনিয়াল রাষ্ট্র বানাবার জন্য বুক চিতিয়ে আছে , সেখানে ইরানি সিনেমা পশ্চিমাদের সদরে-অন্দরে ঢুকে বুকের পাঁজরে ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে , এইটা মনে হয় শীতল যুদ্ধের লক্ষন !?) তা আমাদের মতো দেশের সিনেপ্রেমিদের জন্য আনন্দদায়ক ও সুখকর সংবাদ ।

ইরানি সিনেমা আজকের কথিত ইউরোপ-অ্যামেরিকান সিনেমাকে যেভাবে চ্যালেঞ্জড করে তার স্বরূপ চিনিয়ে দিচ্ছে তা সিনেপ্রেমি হিসেবে আমি আমরা সবাই উৎফুল্লিত । এই ধারাবাহিকতার একটা সুনির্দিষ্ট বয়ান থাকা দরকার , থাকবেও । তয় আলস্যবশত এর দীর্ঘ ছেদ পড়তে পারে । ইরানি সিনেমার যে বৈপ্লবিক পট-পরিবর্তন তা এই লেখা কিছুটা ধরতে চেষ্টা করবে তয় সেটা করবো সিনেমাকে কেন্দ্র করে । এতে হয়তো নিবন্ধ-প্রবন্ধের রেশ পাওয়া যাইতে পারে তবে তা আশা না করাই ভাল ।

বিবর্ণ , ছেঁড়া , রঙ-পাংশুটে জুতোজোরাঃ ছোটোবেলায় ইদের আগের রাতে বাবা যখন নতুন জুতোজোরা হাসিহাসি মুখে চোখের সামনে তুলে ধরতেন তখন কী যে ভাল্লাগতো ! সে বোধহয় সবারই কমবেশি অভিজ্ঞতা আছে সে ইদ কিংবা পুজোই হোক । তখন ইদের সকালের জন্য সে কী অপেক্ষা , সারারাত ঘুম হতোনা । আলি জুতোজোরা হাড়িয়ে নির্বাক , আতঙ্কিত-শঙ্কিত । একমাত্র বোন জারা ,যার নিত্যদিন এই বিবর্ণ , ছেঁড়া , রঙ-পাংশুটে জুতোজোরা পড়েই স্কুলে যেতে হয় । আর বলা নাই , কওয়া নাই সেই জুতোজোরা কীনা আলি এই দুর্মূল্যের বাজারে গায়েব করে এলো ! রয়া , জারার ক্লাসমেট । তার পায়েই কীনা সেই বিবর্ণ , ছেঁড়া , রঙ-পাংশুটে জুতোজোরা ! এও কী সম্ভব ?

রঙ , পেনসিল , সোনালি কলম অতপরঃ সেই রাতেই আলি রফা করে । জারা'র মর্নিং শিফটে ক্লাশ , সে আলির বেমানান জুতো পড়ে যাবে আবার ছুটির আগে আগে কিংবা পড়ে যদ্দুর পারে দৌড়ে আলি'র স্কুলের আগে পৌঁছে দিবে । জারা বাধ্য হয়েই ম্লানমুখে মাথা নাড়ে , আলি আপন সহোদরাকে পেনসিল, ক্লাস পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া পুরস্কার সোনালি কলম হাতে গুঁজে দেয় , জারা ফিক করে হাসে । সে হাসিতে ভাই-বোনের ভালবাসাই নয় প্রশ্ন রেখে যায় এই চাওয়া-পাওয়াই কী সব প্রাপ্য নয় ? আলি আর কীইবা দিতে পারে কিংবা পারতো ?
অন্ধ-শ্রমিক ও দিনমজুরেরাঃ দিনমান খাটাখাটুনির পর বাবা-মা স্বপ্ন দ্যাখেন ছেলে-মেয়ে যেন আপন মেধায়-যোগ্যতায় নিজেকে ছাড়িয়ে যায় । এইটা বামচোখের স্বপ্ন হয়তোবা , নাহলে এমন বাস্তব ক্যাম্নে চুরি-চামারি হয়ে যায় ! ডান চোখতো কাজের খুজেই দিনাতিপাত করে । রয়া'র বাবা অন্ধ বলে কী স্বপ্ন দ্যাখেন না , নাকি দ্যাখেন ? আর আলি-জারা'র বাবার স্বপ্ন কী বামাদোষে দুষ্ট বলে স্বপ্ন-স্বাধীনতা , অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা কিংবা সাম্য-মৈত্রীর আশা-আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে দিছেন ?

বামাস্বপ্ন কিংবা স্বপ্ন ছিনতাই ! আলি-জারা'র দৌড়ঃ নাটাই নয় , ঘুড়ি নয় , ফুটবল নয় , কুতকুত কিংবা পুতুল নয় , দড়ি খেলা নয় এক্কেবারে সরাসরি দৌড় ! আলি প্রতিযোগী ,সাথে বেনিয়া পুঁজিবাদী গুষ্ঠির প্রতীক হাজারে হাজার ছেলে প্রতিযোগী । জারা সেই খেলার নিয়তি । জারা-আলি জানে এই খেলায় ফার্স্ট নয় থার্ড হতে হবে , নয়তো সেই পাদুকা মিলবে না । পা'ই যদি না থাকে জুতো কিংবা পাদুকা দর্শনে কী মাহত্ম্যে থাকে ! আফগান , ইরাক , লিবিয়া , কঙ্গো , নাইজেরিয়া , ফিলিস্তিনীদের কী পাদুকা লাগে , নাকি ক্রাশ , কোনটা ? সেই ক্রাশ ক্যাডা সাপ্লাই দেয় ? তাইলে আর পাদুকা-জুতো দরকার নাই জারা পা'ই দরকার , বোন ক্ষমা কর ! এই কী ভাবছিল আলি ? ৭০ , ৫০ , ২০ ফিট দূরে আলি , ফার্স্ট ! ফার্স্ট !! ফার্স্ট !!!

ফ্ল্যাশব্যাক ! বাস্তব-সিনেমায়ঃ যেভাবে বেকায়দায় ফেলে যখন-তখন যেকোন দেশকে ইঙ্গ-মার্কিনীরা কলোনিয়াল রাষ্ট্রের দাসানুদাসে পরিণত করতে চাচ্ছে , তাদের বলি জারা-আলি'রা সেই মানসিকতা-সাহসিকতা নিয়া দৌড়াচ্ছে , গন্তব্য কী খুব দূরে , আলি-জারা সহোদর কী আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে ? সাধু সাবধান !

কবিতা , ক্যামেরা কাহিনি চিত্রনাট্য ও মাজিদ মাজিদিঃ সিনেমায় কবিতা বিক্রি আজতক ইরানীয়রাই অত্যন্ত সফলভাবে বাজারজাত করে বেনিয়া-বুর্জোয়া পশ্চিমাদের মাংসাশী পেটকে ফুটো করে দিচ্ছে এই ফুটো দিয়া এখন মধ্যপ্রাচ্যের তেল ঢুকে শাতিল আরবে রূপ নিচ্ছে ! তো বলছিলেম কবিতা যখন জন-জাগৃতিতে নাই বুঝতে হবে কবিতা তার স্থান কিংবা স্বধর্মচ্যুত হয়েছে ,এমতাবস্থায় মাজিদ তাঁর ''চিলড্রেন অব হ্যাভেন'' এ যেভাবে তার সফল রুপায়ন করেছেন তা সত্যি অবিশ্বাস্য । ক্যমেরার চোখ কী সব ধরতে পারে ? প্রশ্ন করলে উত্তর নির্মিতির কারিগর দিবেন কীভাবে ? তাইলে ''চিলড্রেন অব হ্যাভেন'' দ্যাখেন । জুতো সেলাই , মুদি দোকানির ঠকানো গেইটের মানুষখেকো ককুরের ঘেউঘেউ পর্যন্ত সবই ধরা পড়েছে ।

কাহিনি নাকি সিনেমার প্রাণ ! চপেটাঘাত করলেন মাজিদ মাজিদি । সাদামাটা কাহিনিকে যেভাবে সিনেবন্দী করে রাজনৈতিকভাষ্য তৈরি করলেন তা ইরানি সিনেমার তো বটেই তাবৎ সিনেমেকারদের জন্য একটা গল্পহীন গল্পও তৈরি করে রাখেলন ।

জয়তু আলি-জারা ! জয়তু ''চিলড্রেন অব হ্যাভেন'' !! জয়তু মাজিদ মাজিদি !!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৬
১৮টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×