somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধ্যাকালের দিনলিপি

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিন ডিউটি থেকে আসি রাজ্যের যতো বিষাদ-ক্লান্তি নিয়া । প্রতিদিনই ভাবি দেবো কালই চাকরি ছেড়ে ! সেই কাক-সকালে বেরোই আর ফিরি মোরগ-সন্ধ্যায় । শালা গুল্লি মারি কলেজ মাস্টারির ...দিলাম কালই রিজাইন ! না হয় না , চাইলেই পারি না । আসা-যাওয়ায় টানা চার ঘন্টা ডিউটি আর ক্লাশ করার পর আর শরীরে কুলোয় না । এই টানাপোড়নের মাঝে যে টুকু হৃদয়ে পুলক জাগায়ে যায় তা হলো মেঘালয় পাহাড় ! প্রতিদিন এই মেঘালয়-ই কী আমাকে এই দীর্ঘভ্রমণে নিয়ে যায় ? হয়তো ! তাই যদি নাই হবে তবে কেনো মেঘালয়ের পেজাপেজা মেঘের উড়াউড়ি দেখেদেখে ক্যাম্নে যে কলেজ বারান্দায় পৌঁছে যাই টেরও পাই না । মেঘালয়ের শাদা মেঘের দল উড়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই কোনো বিরাম নাই । হয়তো টুক করে দেখা গেলো কোনো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে উড়ে যাচ্ছে নয়তো অভিমানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাচ্ছে । প্রায় দু'ঘন্টার ভ্রমণে এই মেঘালয় আমাকে দেড় ঘন্টা মোহিত করে রাখে । এই মোহিতাবস্থা আমাকে কলেজ পর্যন্ত-ক্লাশ পর্যন্ত মোহাবিষ্ট করে রাখে । মেঘালয় আজো তার বুকে মেঘ-ঘন ঘোর মেঘকে বুকে নিয়ে চলে , বুকের ভিতর তখন কে যেনো বাদাম টেনে দেয় । হয়তো চিনচিনে ব্যাথাও হয় , মোহাচ্ছন্ন থাকি হয়তো সে ব্যাথা বুঝতে পারি নে ।

তখন কতো কিছু মনে পড়ে ... তবে বেশি মনে পড়ে শক্তি চাটুজ্জ্যো'র ঐ কবিতা , অবনী বাড়ি আছো ? কৈ আর কারো মুখ তো মনে পড়ে না ? নাকি পড়ে , বুঝতে পারি না ? এই-ই রোজকার চিত্র । মাঝে লাঞ্চ । এই সময়টা একটু এই অঞ্চলের মানুষদের খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা করি , করতে পারি কী ? তো প্রতিদিন ই একটা লোককে দেখি যে কিনা এই ছোট বাজারে ঘুরেঘুরে নানা ভঙ্গিমায় ভিক্ষে করে বেড়ায় । পান খাওয়া লালচে কালো মতো করে দাঁত , আর পানরস থুতনি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ইতিউতি করছে । আমাকে-আমাদেরকে ভালোই চেনে । খেয়াল করলাম সে আমাদের কাছে সপ্তাহে একদিন পরপর মোট তিনদিন ভিক্ষে চায় । তবে দুটো পিচ্ছি পরদিনই ভিক্ষে থেকে খাবার পর্যন্ত চায় । কখনো কখনো হাত-পা এমনকি প্যান্টও খামছে ধরে । আবার যখন ফেরার প্রস্থুতি নিয়ে আসি তখনো ঐ দু'টো ধাওয়া করে ।

বাস থেকে নামি রাজ্যের ক্লান্তি নিয়ে । কিন্তু শহরে এসে চাইলেও হুটহাট বাসায় ফিরতে পারি না । বন্ধু-বান্ধব , চা-সিগারেট আড্ডাবাজী করতে করতে এগারো নয়তো বারো । কখনো রেস্টুরেন্টে না হয় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । এর মাঝে যে জিনিষটা চরম বিরক্ত করে তা হলো ... প্লিজ গিভ মি ওয়ান পাউন্ড ! এখন এই বাক্য শুনলেই বুঝি কে সে । চমকাই না । কিন্তু এর মাঝে যে একের পর এক হাত পাততেই থাকে তার সময়সীমা পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর । মধ্য বয়সী থেকে থুত্থুরে বুড়াবুড়ি পর্যন্ত আছে এই ভিক্ষের মিছিলে । হঠাৎ একদিন হয়তোবা দেখলাম এই চেনা মুখের মধ্যে একজন নাই । কিন্তু নতুন মুখ অনেক । এরা প্রায় ভাবলেশহীন । চেহারা নির্বিকার । হয়তো পেশাটাকে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারে নাই কিংবা মানাতে পারে নি হয়তোবা সে এই রকমই ভাবলেশহীন ! কিন্তু খেয়াল করলাম যারা নাই মানে নিত্যদিনের ভিক্ষা করতে যাদের দেখি তাদের বেশির ভাগই নাই হচ্ছে বুড়োবুড়ি । এদেরও প্রশ্ন করি তাদের লগের বুড়ো কিংবা বুড়ি কই ? খটখটে গলায় উত্তর আসে মইরা গ্যাছে গা কিংবা বাড়ি চইলা গ্যাছে গা অথবা জানি না । এতোদিনের সুখ-দুঃখের সাথী আর সে কিনা ট্যাঁটা গলায় বলে মইরা গেছে গা ! একটুও দুঃখবোধ নাই ? কি জানি হয়তো আছে , হতো নাই । কিংবা সেও হয়তো বুঝে নিয়েছে এইভাবে তো তারও একদিন নাই হইয়া যাইতে হইবে , তাই হয়তো এটা ওদের কাছে স্বাভাবিক ।

তখন খুব খারাপ লাগে , বিষণ্ণ-ভারাক্রান্ত হয়ে যায় মন । আহা ... সেদিন ঐ বুড়োটাকে কেনো ২০টা টাকা দিলাম না ! ভাত খাইতেই তো চাইছিলো ... সেদিন কি পকেট খালি ছিলো নাকি ফাঁকা । এই ভাবতে ভাবতে ঐ কুঁজো একদম মাথাটা নুয়ে পড়া , পেটের কাছে লেগে থাকা মুখ কি ভালো করে দেখেছি ? মনে পড়ে না কেনো ? আবছা , অস্পষ্ট পড়ে ... শাদা ধবধবে দাঁড়ি কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ । এইতো এইতো মনে পড়ছে , দেখতে পাচ্ছি চাচামিয়াকে । চাচা ডাকতাম কী ! মনে পড়ছে না ... মরে গেছে বলেই কী 'চাচা' সম্বোধন করছি ? মৃত মানুষ , চাচা ডাকলেই কী আর না ডাকলেই কী ? জীবিতের সম্মান নাই ... মৃতেরে মরিচা ধরা হ্রদয়ে নিয়া বসাই ! এই ভাবি হয়তো কিংবা ভাবিও না , বোধ-অবোধ নাবোধের দোলাচলের ফাঁফরে হাসফাঁস করে মন ।

'বাবা আল্লার অস্থে আমারে ভিক্ষা দিবায় নি!' তাকাই । দেখি লোকটাকে । চোখ বড়বড়ো হয়ে যায় , এ তো সেই বুড়া ! মরে নাই ! সেই লোকটাই তো , হ্যা সেই বুড়োটাই । পকেট হাতড়ে বেড়াই হয়তো ... পেছন থেকে কে যেনো বুড়োকে নানা বলে সম্বোধন করে এর হাত ধরে আছে । ঐ বুড়োর তো তিনকালে কেউ ছিলো না । আর এর হাতে লাঠি নাই । এ সে না অন্য কেউ , অন্যজন । আসলেই কী সে অন্য কেউ , নাকি ঐ বুড়ো-ই সে ? সব বদলায় এরা বদলায় না । নাকি এরা স্থির , নিথর-নিশ্চল ? শহরের রাতারাতি গাড়িবাড়ি হচ্ছে , রাস্থা-ঘাট কি পরিবর্তন হচ্ছে না ! সব হচ্ছে । কিন্তু এদের দৃশ্য স্থির-অচল সাদাকালো রাংতায় মোড়ানো । এরা কি জানে এরা কবে থেকে ভিক্ষুক ? জানে না । এই শহর কিংবা আমার কলেজের বাজারের আশেপাশের ভিক্ষুক কি এক না বহু ? নাকি বহু-ই এককে এক জায়গায় আটকে রেখেছে , কোনটা ? মাথা ভারী হয়ে উঠে ... তন্দ্রাচ্ছনের মতো কখোন জানি নিজের অজান্তেই পা বাড়াই বাসার উদ্দেশ্যে নিজেই জানি না !
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×