( বঙ্গদেশের উত্তর, পশ্চিম ও পশ্চিম উত্তর অংশে ধারাবাহিক অভিযাত্রার কিছু কথা)
ঘুম ঘুম চোখে কখন ঘুম নেমে আসল বুঝতেই পারলাম না। হঠাৎ বাসের ব্যবস্থাপকের ডাক। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ভোর ৫ টা। তড়িঘড়ি করে বাস থেকে নেমে আসি। রাতের শেষ অন্ধকারকে পিছনে ফেলে ছুটে গেল বাসটি। সেই সাথে সুনশান নিরবতা। দূরে আরও একটি বাসের সম্মুখবাতির আলো ধেয়ে আসছে, তারপর আবার নিরবতা। বেশ আগেভাগেই চলে এসেছি বুঝতে পারলাম। লোকজনের কোন চিহ্ন নেই। চা স্টল বা হোটেলর আশায় সামনে পা বাড়াই। নিরাশ হতে হয়নি। অল্প দূরেই পেয়ে গেলাম চায়ের একটা স্টল। দু’একজন লোক আছে। আমাদের দেখেই বুঝতে পারল, আমরা রাতজাগা অভিযাত্রী। চা পান করতে করতেই আজান শুনাগেল। এখন ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা। আমরা ঘোড়াঘাটের আজাদ মোড়ে।
দু কিস্তি চা পান শেষে দুকানীর সঙ্গে বেশ একটা ভাব হয়ে গেল। জানতে চাইল আশেপাশে একটা দুর্গ আছে নাকি। তথ্যসূত্র মতে তো এখানেই হওয়ার কথা। দোকানী বুঝতে পারল না। তারপর শুরু হল তাকে বুঝিয়ে বলার পর্ব। হ্যাঁ আমি যে দুর্গ নগরীর কথা বলছি তা ঘোড়াঘাট দুর্গ। করতোয়ার তীরেই গড়ে উঠেছিল দুর্গটি। ধারণা করা হয় সম্রাট আকবরের আমলে এই দুর্গে ৯০০ আশ্বারোহী, ৫০টি হাতি ও ৩২,৬০০ পদাতিক সৈন্যের স্থান সংকুলান হতো। মোগল আমলের সাথে এর ইতিহাস জড়িত থাকলেও এই দুর্গের নাড়িপোতা আছে তারও অনেক আগে সেই সুলতানী আমলেরও পূর্ব থেকে। কিছু সূত্রমতে ঘোড়াঘাট দুর্গ এগার শতকে সেন আমলে নির্মিত হয়। গৌড়ীয় সুলতান বরবক শাহের সেনাপতি শাহ ইসমাইল কামতাপুরের রাজার অধিকার থেকে ঘোড়াঘাট জয় করেন এবং দুর্গটি সংস্কার করে নতুনরূপে গড়ে তোলেন। যা হোক এতো ইতিহাসের কথা। আমি খুঁজে দেখতে চাই এর বাস্তবচিত্রটি এখন কেমন। অনেক বলার পরও তাকে বুঝাতে পারলাম না। শাহ ইসমাইল গাজীর মাজারের কথা বলাতে জায়গাটা সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে পারলাম। যা হোক আমাদের কথা বলার সময় আরও একজন উপস্থিত হলেন তার কাছ থেকে একটা দুর্গের কথা জানতে পারলাম তা সাহেবগঞ্জের কায়াগঞ্জে নদীর কাছে বললেন। সম্ভবত সেটি গবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তবে কথা বলে আরও একটা প্রাচীন মসজিদের খুঁজ পাওয়া গেল সেটা ফুলহারা মসজিদ। কথা বলতে বলতে তিনিই একটা ভ্যান ঠিক করে দিলেন। আমার জানা তথ্য আর লোকশ্রুতিকে সঙ্গী করে ছুটে চললাম।
প্রধান সড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে গ্রামীন মেঠো পথে ভোট্টা ক্ষেত আর করতোয়ার পাড় ধরে চলেছি ফুলহারা মসজিদের পথে। মসজিদটি কাটাবাড়ী ইউনিয়নের ফুলহারা গ্রামে অবস্থিত। তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট যে মসজিদটি প্রথমেই নজরে আসবে তা দেখে এতটা প্রাচীন মনে হবে না তবে, মূল মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রবেশের পর দেখা পাওয়া যায় সেই প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের কিছু চিহ্ন। উত্তর ও পূর্বদিকে ভগ্নপ্রায় বেশ কিছু ইমারত। কোন শীলালিপি না পাওয়ার দরুন এর নির্মাণকাল জানা সম্ভব হয়নি। তবে নির্মাণশৈলি দেখে ধারণা করা হয় মসজিদটি ১৮ শতকের হতে পারে।পুর্ব দিকের স্থাপনাটিতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়ে ঘরের অনুরূপ দোচালা আকৃতির ছাদ আছে এবং নকশা করা । মসজিদ দর্শন শেষে আবারও দুর্গ নগরীর খুঁজ। যা হোক স্থানীয় লোকেদের কথা মত না গিয়ে আবার চলে আসলাম ঘোড়াঘাট। ঘোড়াঘাট পৌরসভার যেখানে তোরণ ঠিক সেখানটাতেই ইসমাইল গাজীর মাজার। পুরানো কবর দু’টিও আছে তবে বর্ননা সঙ্গে বাস্তবের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। মাজার দর্শন করে একটু সামনে এগিয়ে গেলে মূল সড়কের পাশেই দেখা পাওয়া যায় সেই ঐতিহাসিক ভগ্নপ্রায় মসজিদটির। আমার হাতে সময় কম নয়তো আরও খুঁজ করা যেত এই দুর্গ নগরীরর কিছু চিহ্নের।
ফুলহারা মসজিদ
ঘোড়াঘাট দুর্গ নগরীরর ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ
পরবর্তী গন্তব্য সুরা মসজিদ বা সুজা মসজিদ। এক নামেই সবাই এ জায়গাটি চিনেন। ঘোড়াঘাট হিলি সড়কের ওসমানপুরের কাছেই চরগাজা মৌজায়। না দেখলে এর সৌন্দর্য ও মহিমা উপলব্দি করা যাবে না। তাই দেখার নিমন্ত্রন রইল । তবে কিছু কথা না বললেই নয়, মসজিদটির পাশেই রয়েছে বিশাল একটা পুকুর আর সেটির আশপাশে ইতস্তত পড়ে আছে বেশকিছু পাথর খন্ড যার এক দুটির গায়ে মুর্তি খুদায় করা ছিল। এ বিষয়ে আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারিয়ার বই গুলো পড়লে বেশ কিছু তথ্য পেয়ে যাবেন। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, এই চরগাছাই/চোরগাছায় আছে প্রাচীন কুন্দারনগর। তথ্যানুসারে এখান রয়েছে বেশ কিছ প্রাচীন দিঘি। ধারণা করা হয় কুন্দারনগর নগরীটি সম্ভবত গুপ্তযুগের অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার বছর আগেকার । বলা হয়ে থাকে কুন্দারনপুর ছিলো গ্রীক ইতিহাসে বর্ণিত পেন্টাপলিস বা পঞ্চনগরীর একটি।
সুরা মসজিদ দর্শন শেষে প্রাচীন আর একটি স্থানের দিকে ছুটে চলা। আমার তালিকাতে এরও স্থানছিল না তবে যেহেতু কাছেই তাই লোভ সামলাতে পারিনি। আর সেটি হচ্ছে কাজী সদরুদ্দিনের বাস ভবন ও সমাধি। এটি শহরগাছী মৌজায়। ভ্যান রিক্সা করে মূল সড়কের পূর্ব দিকে চলে গেলেই হল। সমাধি ও মসজিদ দেখে হতাশ হবেন তবে সমাধির অল্প কিছু দূরেই পীর সাহেবের ১২ দুয়ারীর প্রাসাদের ভগ্নাংশ আজও টিকে আছে যা আপনাকে পুলকিত করবেই।
সুরা মসজিদ
কাজী সদরুদ্দিনের ১২ দুয়ারি প্রাসাদ
ঘড়ি টিক টিক করে এগিয়েছে বেশ। আমার ইচ্ছা ছিল রানিগনরে প্রাচীন বেলওয়া নগরী ও তারপর সিংড়া ইউনিয়নের বারো পাইকের গড় দেখে নবাবগঞ্জ কিন্তু বেলাওয়া নগরী, পল্লরাজ ও দামোদরপুর সহ বেশকিছু প্রাচীনকৃর্তী আছে যা দেখে আমার এই সংক্ষিপ্ত সময়ের দীর্ঘ যাত্রা সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। তাই পরবর্তী এপিসোডের জন্য তাকে ছেড়ে দিতে একটু কষ্টই হল। যা হোক আমরা যাচ্ছি বিরামপুর সেখান থেকে নবাবগঞ্জের পথ ধরবো।বিরামপুরের ঢাকামোড় থেকে পেট পুজো সেরে নতুন গন্তব্য রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ি। শালবনের ভিতর দিয়ে ছায়াঘেরা মায়ময় একটা মেঠো পথ। ফাল্গুনের লিলুয়া হাওয়া ও ঘুঘুর অবিরাম ডাক মনটাকে উতলা করে দেবে। তবে একটু কষ্ট আছে রাস্তার বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুক ধূলো বেশ ভোগাবে। রতনপুর বাজারের কাছেই রখুনি কান্ত বাবুর পতিত বাড়িভিটা দেখে ছুট দেই সিতাকোট বিহারের পথে। যে পথে রতনপুর গিয়েছিলাম সে পথে না ফিরে ফুলবাড়ি উপজেলার প্রান্তসীমা ছুয়ে ছোট একটা গ্রামীণ বাজার আছে তা হয়ে মূল সড়ক ধরে ফিরে আসা।
রখুনি কান্ত জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ
বিরামপুর নাবাবগঞ্জ সড়কে নবাবগঞ্জ থেকে দুই কিলোমিটার আগেই সিতাকোট বিহার। বিরামপুর পৌর ভূমি অফিসের কাছ থেকে সহজেই অটো বা সিএনজি পাওয়া যায়। নিরিবিলি আর অযত্নে পড়ে আছে সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রাচীন বৌদ্ধ বিদ্যাপীঠ। বর্গাকৃতির এই বিহারটির মাঝে একটাতাল গাছ আছে এখন। বিহারটিকে কেন্দ্র করে নানা কল্প কাহিনীও কম নয়। স্থানীয়দের মতে, সীতাকে যখন বনবাসে দেওয়া হয়, তখন এ স্থানটিতেই তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ।নবাবগঞ্জের শালবনের কাছে আশুলিয়ার বিলের মাঝখানের এক উঁচু ঢিবিতেই বাস করতেন বাল্মীকি। সেখানে বসেই তিনি নাকি রামায়ণ রচনা করে ছিলেন। আর রাম পত্নী সীতা বসবাস করতেন বলে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে সীতার কোট। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর একটা পরিচিতিমূলক রং চটে যাওয়া ফলক চাপিয়ে দিয়েই তাদের কাজ সেরেছে। রক্ষনাবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। সিতাকোট বিহারের সংলগ্ন একটি ঢিবি আছে যা এখনও উৎখনন করা হয় নি। সিতাকোটে বেশখানিকটা সময় কাটিয়ে আমার পরবর্তী গন্তব্য পাঁচবিবির পথ ধরি। পাচঁবিবি আসতে হলে বিরামপুর এসে বাংলাহিলি হয়ে জয়পুরহাটের বাস ধরতে হবে। মাঝ পথে বাংলাহিলি স্থল বন্দর দেখে বিকাল চারটায় পাচঁবিবি। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করে আরেক পেন্টপলীসের আরেক নগরের খুঁজে পাথারঘাটা। পাচঁবিবি উপজেলার চারমাথা থেকে একটু হেঁটে রেল স্টেশন। তারপর স্টেশন পার হয়ে ভ্যানে করে সহজেই চলে আসা যায় কুষাণ আমলের এই প্রাচীন নগরীতে। পাথরঘাটা পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নে তুলসী গঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এখানেই নিমাই পীরের মাজার এবং খ্রিস্টান মিশন আছে। কি দেখবেন পাথরঘাটাতে ? সত্যি বলতে এখন আর তেমন কিছুই নেই তবে পীরসাহেরে মাজার সংলগ্ন পাথর খন্ড এবং নদী জুড়ে অসংখ্য পাথার। অখন্ড বাংলার প্রথম পাথর নির্মিত সেতুর ভগ্নাংশ। সেতুটির অবস্থান নিমাই পিরের দরগাহ থেকে সোজা দক্ষিণে । তবে সেতুটির দেখতে হলে আপনাকে একটু কল্পনায় ছবি আঁতে হবে নয় তো জট বেধে থাকা অবশিষ্ট পাথর খন্ড ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়বে না। মাজারের পিছনে বর্তমান সেতুটির কাছেই আছে একটি মন্দির এবং এর সম্মুখভাগেই রয়েছে প্রাচীন স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ সহ বেশ কিছু পাথর খন্ড। এর একটির গায়ে দেখতে পাবেন ধ্যানরত মূর্তি। আশপাশে খুঁজকরে পেয়েও যেতে পারেন গ্রীক পন্ডিত টলেমীর সেই পেন্টাপলীসের কোন যোগসূত্র।
মিশনের ভিতরেও সংরক্ষিত আছে বেশকিছু ধ্বংসাবশেষ অনুমতি নিয়ে দেখে আসতে পারেন। কূষাণ সাম্রাজ্যের পাষাণ চিহ্ন দেখতে দেখতে আজকের সূর্যও যাই যাই বলছে। সন্ধ্যানেমে আসে তাই পশ্চিম কড়িয়া গ্রামের ঐতিহাসিক লকমা রাজবাড়িকেও পরবর্তী পর্বের জন্য ছেড়ে দিতে হয়।
সীতাকোট বিহার
পাথরঘাটা
রাত শেষে দিনের যাত্রায় পা বাড়াই প্রথমেই জয়পুরহাট সদরের বার শিব মন্দির। এখন মেলা হচ্ছে ২ দিন ব্যাপী শিব রাত্রী উৎসব। মেলার দর্শনার্থী অনেক। বিশালাকার মাছ মিষ্টির দেখা পেলাম মেলার দোকানীদের পসরায়। তারপর মহাতীর্থ সোমপুর বিহারের পথে। বার শিব মন্দির থেকে অটো বা ভ্যান করে খঞ্জনপুর মোড়ে। সেখান থেকে আবারও সিএনজিতে করে পাহাড়পুর বিহার। খঞ্জনপুর মোড়েই শতাব্দী প্রাচীন একটি চার্চ আছে। দেড় ঘন্টার যাত্রা শেষে বদলগাছির পাহাড়পুরে। আমার দেখা সেই সোমপুর বিহার আর এখনকার সোমপুর বিহারের মধ্যে বিস্তর ফাড়াক। এখন নিরাপত্তা প্রাচীর, বিনোদন কমপ্লেক্স, টিকিট আর পিকনিক পার্টির ভো ভো জেলার শব্দে সেই ছায়ানীবিড় সবুজ ঘাসে আবৃত এক যুগেরও বেশি আগে দেখা বিহারটি হারিয়ে গেছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এটি তাই একে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। সেটির জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন। তবে যে হারে পিকনিক পার্টি মূল বিহারের কাছেই রান্নাবান্না আর আবর্জনা ফেলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাতে তো ভাগর হতে বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয় না। সোমপুর মহাবিহার, সত্যপীরের ভিটা, জাদুঘর এসব বিষয়ে পন্ডীত ব্যক্তিরা বিস্তর লেখালেখি করেছেন তাই পড়ুন ও দেখে আসুন এতটুকুই বলবো। এখানেই থেমে গেল হয়তো হতো কিন্তু আরও একটি বিহার তখনও হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। সেটি হলুদ বিহার। সোমপুর থেকে ১৫/১৬ কিলোমিটার দূরে বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে তুলসীগঙ্গা এবং ছোট যমুনা নদীর মাঝখানে দ্বীপগঞ্জ বাজারের পাশেই এটির অবস্থান। এক সময় বিক্ষিপ্তভাবে প্রাচীন বেশ কিছু ঢিবি ছিল এখানে । নিদর্শনগুলি এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যমান ছিল। এখন এসবের খুঁজ করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। হলুদ বিহার সম্পের্কে বাংলাপিডিয়ার তথ্য গুলো তুলে দিলাম
‘স্থানটি ১৯৭৬ সালে সংরক্ষিত করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথমে ১৯৮৪ সালে এবং পরে ১৯৯৩ সালে এটি খনন করে। খনন কার্যের ফলে একটি মন্দির কমপ্লেক্স আবিষ্কৃত হয়। কমপ্লেক্সটি প্রতি পার্শ্বে ৫.৮০ মিটারের একটি নিরেট বর্গাকৃতির ভিত্তি (সম্ভবত এটি একটি স্তূপের ভিত্তি ছিল), দুটি অসমান আয়তকার কক্ষ, একটি সিঁড়ি ও কমপ্লেক্সের বেষ্টনী দেওয়ালের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। ৫.৫৫ মিটার × ৩.২০ মিটার এবং ২.৬ মিটার × ১.৬ মিটার আয়তনের কক্ষ দুটির মধ্যে ক্ষুদ্রাকার কক্ষটি ছিল খননকারীদের মতে মন্দির, যেখানে নিরেট ভিত্তির দিকে মুখ করা একটি বড় পাথরের মূর্তি স্থাপিত ছিল। অন্যদিকে বৃহত্তর কক্ষটি একটি মন্ডপ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। এ ভবনের চারপাশে ১.১ মিটার প্রশস্ত হাঁটাচলার একটি পথ ছিল। মন্দির কমপ্লেক্সের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি অভিক্ষেপের ধ্বংসাবশেষ অংশত উদ্ঘাটিত হয়েছে। অভিক্ষেপের দিকে একটি ইট বাঁধানো পথ দক্ষিণ দিক থেকে প্রবিষ্ট ছিল।
কয়েকটি স্থানে সর্বোচ্চ ৬.১৫ মিটার গভীরতায় খনন কার্য আট স্তরে সম্পন্ন হয়েছে। এ সকল স্থান হতে বেশ কিছু কৌতূহলোদ্দীপক প্রাচীন নিদর্শনাদি ও সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে আরও পাওয়া গেছে মাটির পাত্র ও তাওয়া। এগুলির মধ্যে রয়েছে খোদাইকৃত পোড়ামাটির সিল, অলংকৃত ইট, মানুষের মূর্তি সম্বলিত বেশ কিছু ভাঙ্গাচোরা পোড়ামাটির ফলক। পাথরের সামগ্রীসমূহের মধ্যে একটি মূর্তির স্তম্ভমূল, অলংকারের ঢালাই ছাঁচ এবং চূর্ণনযন্ত্র উল্লেখযোগ্য।
এ পর্যন্ত হলুদবিহারে সীমিত আকারে যে খননকার্য করা হয়েছে তা অভ্রান্তভাবে প্রাথমিক মধ্যযুগের বেশ সমৃদ্ধিশালী বৌদ্ধ বসতির অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের পাহাড়পুর এবং সীতাকোটের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক। এ প্রাচীন স্থানটির শনাক্তীকরণ এখনও নিশ্চিত করা হয় নি, তবে প্রাথমিক তথ্যাদি আরও অব্যাহত কাজের জন্য নিশ্চিতভাবে উৎসাহব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।’
ফেরার পথে দ্বীপগঞ্জ থেকে নওগা রোডে অপ্রত্যাশিত ভাবেই পেয়ে যাই শংকর শাহার বসতবাড়ির ধ্বংশাবশেষ। ছোট যমুনার গ্রাসে বেশির ভাগ অংশই আজ বিলীন। স্থানিয় লোকদের কাছ থেকে জানতে পারলাম শংকর শাহা একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিছিলেন। তার একমাত্র মেয়ে হঠাৎ করে নিখুজ হয়ে যায় এবং অনেক খুঁজ করেও তার সন্ধান না পেয়ে তিনি এই বাড়ি ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দেন। নওগা সদর থেকে এটি খুব দূরে নয়। বক্তারপুর ইউনিয়নের কাছেই ঘোষপাড়া বালুভারা সেতুর আগেই ঠেংভাঙ্গার মোড়ের অল্প দূরেই এটির অবস্থান।
এই অভিযাত্রাটি এখানেই শেষ করতে হয়েছিল। পরবর্তী সপ্তাহে হয়তো আবার ছুটে যাবো হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে…
হলুদ বিহার
ছোট যমুনার গ্রাসে শংকর শাহার বাড়ি