somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চেনা শহরের অচেনা এক মানুষের গল্প .........

০৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক দিন আগের কথা তখন আমি ছোট ছিলাম। সারাদিন স্কুল শেষ করে বিকেলে এসে পাড়ার মাঠে বন্ধু দের সাথে খেলতাম। আমরা যে মাঠে খেলতাম তা ছিল আমাদের বাসার সামনেই, যখন ব্যাটিং করতে নামতাম আমাদের বাসা দেখা যেত। মাঝে মাঝে আম্মুকে দেখতাম বারান্দায় এসে দাড়িয়ে আমাকে দেখছে, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বারান্দা থেকে ডাক দিত। মাঝে মাঝে আমাদের বাসার পাশের ইউনিট এ একটা আপুকে দেখতাম কখন ও তাকিয়ে আছে অন্য মনস্ক হয়ে আকাশের দিকে ,কখনও বা উনি রাস্তার দিকে তাকিয়ে কি জানি দেখত ? কখনও দেখতাম বারান্দায় পায়চারি করত অস্থিরতায়, খেলায় মনোযোগ থাকায় কখনও এত ভাল করে খেয়াল করি নাই আপুটাকে। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল একটা সময় এল আপুটাকে খুবই কম দেখতাম , আস্তে আস্তে এমন একটা সময় এল তখন আপুটাকে আর কখনও চোখে পড়ত না। তখন আমি এস. এস. সি পরীক্ষার্থী রাত জেগে পড়তাম। রাতে পড়তে পড়তে যখন বিরক্ত হয়ে যেতাম তখন একটু জানালার পাশে দাড়িয়ে আকাশ দেখতাম, চাঁদ দেখতাম, রাস্তায় দুই একটা মানুষ মাঝে মাঝে চোখে পড়ত, মাঝে মাঝে ফোন এ কথা বলতাম বন্ধুদের সাথে। একদিন খুব চিকন স্বরে কোথায় জানি এক মহিলার কষ্টে, যন্ত্রণায়, “আল্লাহ , আল্লাহ , ওহ, ওহরে, আল্লাহরে, বলে ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। শব্দটা দুর থেকে নাকি কাছ থেকে আসছে সেটাও বুঝি নি। সেদিন আমি ব্যাপার টা পাত্তা না দিয়ে পড়তে চলে গেলাম। একই ভাবে প্রায় শুনতে পেতাম, একদিন বুঝলাম আসে পাশে কোথাও থেকে আসছে। আমি ধরেই নিয়েছিলাম হবে হয়ত কোন বয়স্ক মহিলা বয়সের ভার এ কষ্টে রাতে ঘুমাতে না পেরে হয়ত আল্লাহ আল্লাহ বলে ডাকছে, কষ্টে ওহ,উহুরে করছে। আমার দাদি, নানিদের এমন করতে দেখতাম তাই ব্যাপার টা ওতটা পাত্তা দেই নাই। এভাবে কেটে গেল কিছু দিন দেখতে দেখতে আমার এক্সাম কাছে ঘনিয়ে এল। ঐ সময় টাতে ঐ মহিলার আল্লাহ আল্লাহ বলে ডাকাটার মাত্রা টাও কেমন জানি বেশী হচ্ছিল ঐ ডাক গুলো তে কষ্টের মাত্রা যে দিন দিন বেশি হচ্ছিল টা বুঝাযেত। এরই মাঝে আমি বেশ কয়েকদিন আম্মুকে ঐ আওয়াজ এর ব্যাপার এ জিজ্ঞেস করেছি আম্মু ব্যাপার টা উড়িয়ে দিল বলল আসে পাশের হবে কেউ, তুই পড়ায় মনোযোগ দে ওসব চিন্তা বাদ দে। আমিও তাই করলাম ব্যাপার টা বলতে গেলে ভুলেই গেলাম কারন ব্যাপার টাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন ছিল আমার এক্সাম এর আগের রাত তাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে লোক জনের অনেক গুঞ্জন এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল সকাল সকাল তখন আম্মুর কাছে শুনলাম আমাদের বাসার পাশের ইউনিট কে জানি ইন্তেকাল করেছে, “ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। আমি আম্মু সহ গিয়ে ঐ বাসায় গিয়ে দেখি এক মহিলা একটা আপুর ছবি দেখিয়ে আরেক মহিলা কে বলছে “অনেক কষ্ট পাইছে মাইয়াটা কি এক রোগ অইল মাইয়াটার ডাকতরে রা খুইজ্জা পাইল না , যাক আল্লাহ নিয়া গেছে আল্লার মাল, বেহেস্ত নসিব করুক। আমি যখন ছবিটা ভাল ভাবে খেয়াল করলাম বুকের মধ্যে কেমন জানি করে উঠলো এ তো দেখছি সেই আপুটা যাকে মাঝে মাঝে বারান্দায় দেখতাম। আমি সেদিন এক্সাম দিয়ে আসলাম। এর পর থেকে কখনও রাতের বেলা ঐ চিকন কণ্ঠে ঐ মহিলার আল্লাহ, আল্লাহরে ওহ, ওহরে, শব্দ শুনতে পাইনি যাকে আমি কোন বয়স্ক মহিলা মনে করেছিলাম সে আসলে ইন্তেকাল করা আপুটা ছিল তা বুঝতে আর বাকি রইল না। এর কিছুদিন পরে বাসার বুয়ার সাথে আম্মু কথা বলছিল তখন শুনলাম আপুটা নাকি পড়াশুনা শেষ করে জব করত, বিয়ে ও নাকি হয়েছিল , বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে কি জানি এক অজানা রোগে ঐ আপুটা নাকি পাগল পাগল করতো , এই ভাল তো এই খারাপ , একটা পর্যায়ে ঐ মহিলার জামাই নাকি ঐ মহিলাকে আমাদের পাশের ইউনিট এ তার ভাইয়ের বাসায় দিয়ে গেছে বিরক্ত হয়ে। জীবনের শেষ দিকে নাকি একদম বিছানা থেকে উঠতে পারত না, টয়লেট ও নাকি বিছানায় করতো , আর দেখাশুনা করত ঐ বাসার বুয়া, টয়লেট করে বিছানা নোংরা করে ফেলে বলে ঐ আপুটাকে নাকি ঠিক মত পানি পর্যন্ত দিত না বুয়া। সারাদিন এইভাবেই নাকি ছটফট করতো। কথা গুলা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না, মনে হল কি অদ্ভুত মানুষের জীবন, কত বৈচিত্র্য তায় ভরা মানুষের জীবন, কত কষ্টের হতে পারে মানুষের জীবন, কি না হতে পারে মানুষের জীবনে। এই শহরের এক একটা বাসায় এক একটা ঘরে লুকিয়ে আছে কত কাহিনী, কত ইচ্ছা, কত আসা, কত বিশ্বাস , সব কিছু মিলিয়ে কত গল্প লুকিয়ে আছে এক একটা মানুষের জীবনে । জীবনে কখন কি হয় কিছু বলা যায় না 

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×