somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা, বিয়ে এবং মৃত্যু

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের একজন শ্রদ্ধেয় নাস্তিকের কথা দিয়ে শুরু করি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ড. আহমদ শরীফ। তাঁর মুক্তচিন্তা এবং উদার ভাবনার জন্য মৌলবাদীরা তাঁকে 'মুরতাদ' ঘোষনা করেছিল। তাঁর ধানমন্ডির বাড়িতে একবার বোমা হামলাও করেছিল। তবে মৌলবাদীদের হাতে তাঁকে মরতে হয়নি। তিনি স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পেরেছিলেন।
জার্মান কবি রাইনা মারিয়া রিলকে তাঁর একটি কবিতায় বলেছিলেন, 'মানুষ বিবেচিত হবে তার মৃত্যু'র নিরিখে' ড. আহমদ শরীফ কি ছিলেন তা দেখেছি তাঁর মৃত্যু'র মধ্য দিয়ে। তিনি বিয়ে কিভাবে করেছিলেন তা আমি জানিনা। তিনি কোন ধর্মীয় রীতি অনুসারে বিয়ে করেছিলেন কিনা তা কেউ জেনে থাকলে জানাবেন। তবে তার মৃত্যু'র পর কোন ধর্মীয় রীতি অনুসরণ হয়নি। সেটা জানি। মৃত্যু'র ভিতর দিয়ে ড. আহমদ শরীফ তাঁর জাত চিনিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি যে উইলটি করে গেছেন সেখানে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, 'আমার মৃত্যুর পর কোন জানাজার প্রয়োজন নেই।' তাঁর মরদেহ মেডিকেল কলেজের হাতে দেবার আগে শহীদ মিনারে সেই উইলটি পাঠ করেন নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক মামুনুর রশীদ (আমার নাট্যগুরু)। বাংলাদেশের আর কোন ব্যক্তি নিজের মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে এমন কথা বলে গেছেন বলে শুনিনি। এখানেই তিনি সবার চেয়ে আলাদা। স্বতন্ত্র। এমনকি যারা কমিউনিষ্ট আন্দোলন করেছেন তাঁরাও এমন সচেতন ভাবনা ভেবে যাননি। যাই হোক, শ্রদ্ধা জানাই ড. আহমদ শরীফকে।
এবার নাস্তিক বন্ধুদের বলি, আপনারা নিজের বিয়ে এবং মৃত্যু সম্পর্কে কে কি ভাবছেন?
আমার কথা বলি। যেহেতু আমি প্রচলিত কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নই। সঙ্গত কারণেই আমি বিয়ে এবং মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে যথেষ্ঠ সচেতন। খ্যামটা নাচবো আবার ঘোমটাও দেব এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। অনেকেই নিজেকে নাস্তিক বলে জাহির করেন। অথচ বিয়ে করেন ধর্মীয় রীতি মেনে। আসলে তারা প্রকৃত নাস্তিক নন। মুখোশ পড়ে চলেন। আত্নপক্ষ সমর্থন করে বলেন, কিছুটা সামাজিকতা তো মেনে চলতেই হয়। এই ধারণার মানুষ যতই নিজেকে নাস্তিক বলে জাহির করুক আমি বিশ্বাস করি না তারা নাস্তিক।
প্রত্যেকটা ধর্মীয় বিয়ে মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। পুরোহিত, মোল্লারা নিজেদের টিকে থাকার স্বাথেই কোন এক সময়ে এই প্রথা চালু করেছিলেন। আজকের দিনে এই প্রথা মেনে চলার পক্ষপাতী আমি নই। অনেকেই আমাকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী যাতে সুখে শান্তিতে থাকে তাই এই বিয়ে করা। কিন্তু আমি চোখ-কান খুলে চারপাশে তাকালেই দেখতে পাই ডিভোর্সের সংখ্যাটা দিনের পর দিন বাড়ছেই। এবং এই সংখ্যার প্রায় শতভাগ দম্পত্তিই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। ভারত বর্ষে তো বটেই হতে পারে পৃথিবীর প্রথম লিভ টুগেদার করা দম্পত্তি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং আঁরিয়েত্তা (হেনরিয়েটা)। মাইকেলের বিলাসী বেহিসেবী জীবন-যাপনের জন্য তাদের সংসারে অভাব ছিল কিন্তু কেউ কাউকে ছেড়ে যাননি। লোকে লিভ-টুগেদার বললেও আমি একে বিয়েই বলবো। আমার কাছে নারী-পুরুষের মনের মিলনই বিয়ে। অবশ্য হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে এই ধরণের বিয়েকে গান্ধর্ব বিয়ে বলা হয়ে থাকে। যদিও সমাজে সেটার প্রচলন নেই। সুতরাং প্রচলিত রীতি অনুসারে বিয়ে করলেই কেবল স্বামী-স্ত্রী সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে এ ধারণা ভুল। বিবাহ পদ্ধতি নিয়ে অন্য একদিন লিখবো।
পরিশেষে একথাই বলতে চাই নাস্তিকদের বিয়ে করা উচিত প্রচলিত ধারার বাইরে। এবং মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কেও স্পষ্ট কথা বলে বা লিখে যাওয়া উচিত। কোন্ কোন্ নাস্তিক বন্ধুরা প্রচলিত ধারার বাইরে বিয়ের কথা ভাবছেন সাড়া দিন। সব নাস্তিক মিলে বসে ভিন্ন ধারার বিয়ের কথাও ভাবা যেতে পারে। আমি অন্তত সেটাই ভাববো। আমার কবিতা এবং বিভিন্ন লেখায় আমি আমার মৃত্যু পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে লিখে যাচ্ছি। পরবর্তীতে উইলও করবো। আপনি কি করবেন?



উগ্রপন্থা নয় গঠনমুলক সমালোচনা করুন।
মাইনাস সাদরে গ্রহণ করা হবে।


হমপগ্র'র মন্তব্যে'র জবাব।

লেখক বলেছেন: আপনার মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। বিয়ে সামাজিক আচার একথা ঠিক। কিন্তু কোন আচার যদি মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হয় তখন তা আমরা মেনে নিতে পারি না। তাছাড়া বিয়েকে যদি আমরা সামাজিক আচার হিসেবে মেনে নিই তাহলে ধর্মটাও তো আমাদের সংস্কৃতি হিসেবে মেনে নিতে দোষ নেই। আমি বহুগামিতায় বিশ্বাসী নই। তাতে সংসারে র শান্তি নষ্ট হয়। কিন্তু বৈধতার ব্যাপার বলেলন তো? সেটা নিজের মধ্যে। কে কি বললো না বললো তাতে আমার কিছু আসে যায় না। মনের মিলনই আমার কাছে বিয়ে। তার জন্য সমাজের স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না। নিজের স্বীকৃতিই বড় কথা। তাছাড়া বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমি বিয়ে রেজিস্ট্রি করার পক্ষে। সেটাও এক ধরণের স্বীকৃতি। যদিও আমাদের দেশে হিন্দু সমাজে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয় না।


সুতরাং আমাকে চরিত্রহীন ভাবার কোন কারণ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৪০
৬২টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×