somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগরী (উপন্যাস: পর্ব-এক)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘নাগরী’ উপন্যাসের আখ্যান মৌলিক নয়, পৌরাণিক ঋষ্যশৃঙ্গ’র আখ্যান অবলম্বনে রচিত। মৌলিক আখ্যানকে ভিত্তি করে রচিত হলেও আখ্যান বিন্যাসে এসেছে বিস্তর পরিবর্তন। ‘নাগরী’র মধ্যে মূল আখ্যানের প্রচলিত ধর্মীয় ও অলৌকিক ঘটনা বা বিশ্বাস না খুঁজে এটিকে একটি বাস্তবধর্মী উপন্যাস হিসেবে পড়াই যুক্তি সঙ্গত, কেননা বর্তমানের এই বিজ্ঞানের যুগে বসে যদি একই আবর্তে থেকে সে-কালের অলৌকিক ঘটনা বা বিশ্বাসে আস্থা রাখি বা অবাস্তবতাকে মেনে নিই, তবে আর এই পুরোনো আখ্যান নতুন করে লেখার কোনো অর্থ হয় না। বাস্তবের পথে হেঁটে লেখক-স্বাধীনতা নিয়ে উপন্যাসের আখ্যান বিন্যাস করা হয়েছে অলৌকিকতা বর্জন করে। সঙ্গত কারণেই আখ্যানের পরিণতিও হয়েছে ভিন্নভাবে।

তবে মূল আখ্যানের ভেতরে তৎকালীন সমাজ-সভ্যতার যে গুপ্ত ঐতিহাসিক সত্য আছে; তা খুঁড়ে কিছুটা বিস্তৃত রূপ দিতে গিয়ে প্রাচীন ভারতের মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ইত্যাদি তুলে ধরতে হয়েছে। আর তা করতে গিয়ে মূল আখ্যানের নির্দিষ্ট চরিত্রের বাইরেও অনেক কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করতে হয়েছে এবং চরিত্রগুলোকে রক্ত-মাংসে গড়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর তৎকালীন সমাজ-সভ্যতায় লালন করে মূল চরিত্রগুলোর সঙ্গে একই সুতোয় গাঁথতে হয়েছে।

মিশু মিলন
রচনাকাল: ২০১৬ সাল

***********************


এক

একটানা বেশ কিছু বছর অনাবৃষ্টির ফলে তীব্র খরায় মহাসংকটে পড়েছে অঙ্গরাজ্য; ফসলের মাঠ তো বটেই জল শুকিয়ে পুকুর-কুয়োর তলা হয়েছে চৌচির, এমনকি ছোট ছোট নদী-খালের জল শুকিয়েও বক্ষে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে! গঙ্গার বদান্যতায় চম্পা নদীতে এখনো স্রোত বইছে বটে কিন্তু শীত-গ্রীষ্মে সেই স্রোতে না থাকে অলংকার, না আভিজাত্য। বর্ষাকালে গঙ্গা-চম্পার মিলনস্থল রাগে ফুঁসে ওঠা গোখরোর মতো ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করলেও অন্যান্য সময় ফণা তোলা দূরে থাক, ফিসফিসও করে না; নিঃশব্দে জলঢোঁড়ার মতো বয়ে যায়! ধু ধু চর পড়েছে গঙ্গায়, সূর্যকিরণে তপ্ত বালির দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, কেবল গঙ্গার মাঝখান দিয়ে লজ্জাবনত নারীর মতো বয়ে চলেছে নিরলংকার-নিরহংকার জলধারা। অঙ্গরাজ্যে জলের অভাবে রোগে ভুগে, ছটফট করতে করতে রোজ-ই মরছে মানুষ-গবাদীপশু; বৃক্ষ-লতা মরছে নীরবে। বছরের পর বছর হিংস্র-বিষাক্ত প্রাণির ভয় উপেক্ষা করে, বহু জীবন ক্ষয় করে অরণ্য কেটে যে কৃষি জমি তৈরি করা হয়েছে, তা এখন নিস্প্রাণ ধূসর তেপান্তর। অনাবাদে দুর্ভিক্ষ লেগেছে সারা রাজ্যে, বৃক্ষরাজি বন্ধ্যা নারীর ন্যায় ফলশূন্য। কেবল গঙ্গার পার্শ্ববর্তী জনপদেই যৎকিঞ্চিত ফসল দৃষ্টিগোচর হয়, গঙ্গা থেকে দূরবর্তী অঞ্চল ক্রমশ মরুভূমির রূপ নিচ্ছে।

অঙ্গরাজ্যের রাজধানী চম্পানগরীর উত্তরে গঙ্গা আর পশ্চিমে চম্পা নদী বয়ে চলেছে, নগরীর বেশিরভাগ পাতকুয়ো শুকিয়ে গেলেও নদীর জলে কোনোরকমে জলসংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু দেখা দিয়েছে পেটের পীড়াজনিত রোগ, পেটের পীড়ায় এবং হংসের ন্যায় তরল মলত্যাগ করতে করতে মারা যাচ্ছে নানা বয়সের মানুষ। বিশেষত শিশুমৃত্যু বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। পুকুর এবং কুয়ো শুকিয়ে যাওয়ায় নদী থেকে দূরবর্তী অন্যান্য অঞ্চলে কেবলই হাহাকার।

খাদ্য সংকট ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মানুষ কোনোরকমে দিনযাপন করছে মধুপুরী, অযোধ্যা, কোশল, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সু‏হ্ম প্রভৃতি রাজ্য থেকে বণিকদের আনা খাদ্যদ্রব্যের ওপর নির্ভর করে। বণিকেরা অন্যান্য রাজ্য থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে এনে বিক্রি করছে চড়া দামে। ধনীদের ক্রয় ক্ষমতাও এখন সীমিত হয়ে পড়েছে, আর দরিদ্রদের যে কী দৈন্যদশা তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন! অসংখ্য ক্ষুদ্র এবং মাঝারি বণিক নিঃস্ব হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য কৃষক, জেলে, তাঁতী, কর্মকার, কুম্ভকার। অনাবাদের কারণে এখন কর সংগ্রহ হচ্ছে খুব কম। অনেক অঞ্চলে কোনো চাষাবাদই হচ্ছে না, নদী তীরবর্তী অঞ্চলে চাষাবাদ হলেও ফসল হচ্ছে খুবই কম, ফলে আইন অনুযায়ী উৎপন্ন ধানের পঞ্চাশ ভাগের আট ভাগ কর দেবার কথা থাকলেও কৃষক চার ভাগের বেশি দিতে পারছে না। মাংস, মধু, ঘি, গন্ধদ্রব্য, ওষধি, শাক, ফল, বাঁশের দ্রব্য, চামড়ার জিনিস, মৃৎ-ভাণ্ড, পাথরের দ্রব্য প্রভৃতির ওপরও পঞ্চাশ ভাগের ছয় ভাগ কর সংগ্রহ করার আইন থাকলেও প্রকৃতপক্ষে দুই-তিন ভাগের বেশি কর সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই ক্রমশ শূন্য হচ্ছে রাজকোষ।

এদিকে লোকসান দিতে দিতে এখন ধনী বণিকেরাও ভৃত্য ছাটাই শুরু করেছে। ফলে কর্মহীন মানুষ রুটি-রুজির জন্য অবলম্বন করছে অনৈতিক পন্থা। চৌর্যবৃত্তি, দস্যুবৃত্তি আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে; কোথাও কোথাও সংঘবদ্ধ দস্যুদের হাতে প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ। চম্পানগরী মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাজ্যের অন্যত্র আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। মানুষ জনপতি, বিশপতি এবং জন্মন্পতিদের অমান্য করতে শুরু করেছে। প্রতিদিনই নিত্যনতুন সংকট তৈরি হচ্ছে, একটি সংকট যেন নতুন আরেকটি সংকট লেজে বেঁধে টেনে নিয়ে আসছে, আর এই সকল সংকটের সূতিকাগার অনাবৃষ্টি!

জলের অভাবে অসংখ্য মানুষ তাদের গৃহ-জন্মন্ ছেড়ে পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন আর গৃহপালিত পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে গঙ্গা-চম্পা-কৌশিকী নদীর ধারে। কিন্তু গঙ্গা, চম্পা, কৌশিকী মানুষের তৃষ্ণা মিটাতে পারলেও ক্ষুধা নিবারণে অক্ষম; ক্ষুধায় কাতর মানুষ খাবারের আশায় ছুটে আসছে রাজধানী চম্পানগরীর দিকে। চম্পানগরীর বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে পান্থশালা খোলা হয়েছে, সেখানে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পান্থশালাতেও এখন স্থান সংকুলান হচ্ছে না, নগরীর পথে-ঘাটে যত্রতত্র এখন গৃহহীন ভাসমান মানুষের ভিড়। কেউ কেউ রাজ্য ছেড়ে জলপথে দূরের কোনো রাজ্যে চলে যাচ্ছে সপরিবারে। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ ছুটছে জলের আশায়, জন্মনের পর জন্মন্ মানুষশূন্য হয়ে পড়ছে।

সকাল-সন্ধ্যায় এখন আর পাখির কল-কাকলিতে মুখরিত হয় না চম্পানগরী, পাখিরাও হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে যেন! কান পাতলে কেবল ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার শোনা যায়, গৃহের দ্বারে দ্বারে কেবল ভিক্ষুক আর ভিক্ষুক। কোথাও আমোদ-স্ফুর্তি নেই বললেই চলে, মানুষের মন থেকে হঠাৎ যেন আমোদ-স্ফুর্তি উধাও হয়ে গেছে! রথদৌড় কিংবা কুস্তি দেখতে আগের মতো মানুষের ভিড় হয় না, নট-নটীদের অভিনয়-নৃত্যগীতের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। রীতি মেনে আগের মতোই ‘সমন উৎসব’ হয় বটে, কিন্তু তাতে আর আগের মতো প্রাণ নেই। গণিকারা সেজেগুঁজে বিকেল থেকে তীর্থের কাকের মতো সদরদ্বারে অপেক্ষায় খাকে নাগরের জন্য, কিন্তু পূর্বের ন্যায় সহজে নাগর মেলে না।

মানুষ দুষছে রাজা লোমপাদকে; অধিকাংশ মানুষ বলছে, ‘মহারাজ লোমপাদ পাপী, তার পাপের ফলেই রাজ্যে এমন অনাবৃষ্টি!’
বিচক্ষণ কেউ কেউ রাজা লোমপাদ তো বটেই তার পূর্ববর্তী রাজাদেরকেও দুষছেন, যারা অবাধে অরণ্য ধ্বংস করে কৃষি জমি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচক্ষণ মানুষেরা বলছেন, ‘অবাধে অরণ্যের বৃক্ষ ধ্বংস করার কারণেই হয়তো এই অনাবৃষ্টি।’
কেউ-বা বলছে, ‘অরণ্যদেবীর অভিশাপেই বৃষ্টি হচ্ছে না!’
দূর্ভিক্ষে-রোগে স্বামী হারানো স্ত্রী, পুত্র-কন্যা হারানো পিতা-মাতা, পিতা-মাতা হারানো অনাথ সন্তান বিলাপ করতে করতে অভিসম্পাত করছে রাজা লোমপাদকে।

রাজা লোমপাদ নিজেও চিন্তিত-বিষন্ন-ব্যথিত। সেই কোন দূর অতীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অঙ্গরাজ্য, অন্ধ মহর্ষি দীর্ঘতমা গঙ্গাবক্ষে ভেলায় ভেসে যাচ্ছিলেন, তার অনিয়ন্ত্রিত কামুক স্বভাবের কারণে মুনিগণ তাকে ত্যাগ করেছিলেন, আর স্ত্রীর নির্দেশে তার পুত্ররা তাকে গঙ্গাবক্ষে ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন, যযাতি’র পুত্র অনুবংশীয় রাজা ধর্মাত্মা বলি তাকে গঙ্গাবক্ষে দেখতে পেয়ে সমাদর করে নিজগৃহে নিয়ে যান নিয়োগপ্রথায় সন্তান উৎপাদনের জন্য। রাজা বলি তার স্ত্রী সুদেষ্ণাকে মহর্ষি দীর্ঘতমার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতে বলেন, সুদেষ্ণা নিজে না গিয়ে তার ধাত্রীকন্যাকে পাঠান দীর্ঘতমার কাছে, পরে রাজার আদেশে সুদেষ্ণা স্বয়ং যান। মহর্ষি দীর্ঘতমার ঔরসে সুদেষ্ণার গর্ভে রাজা বলি’র পর পর পাঁচটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তীকালে পাঁচ পুত্র পাঁচটি রাজ্যের শাসনকর্তা হন এবং রাজ্যগুলো তাদের নামে খ্যাত হয়-অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র এবং সুহ্ম। সেই থেকে বহু রাজা অঙ্গরাজ্য শাসন করেছেন; বহুবার অনার্য পনি, অজ, যক্ষ, কিরাত, নিষাদ, বানরদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতেছেন এবং তাদেরকে করতলগত দাস বানিয়েছেন। সেইসব যুদ্ধে বহু রক্তক্ষয়, প্রাণক্ষয়, ধনক্ষয় হলেও সেই বিপর্যয় সামলে তারা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এবারের বিপর্যয় ভিন্ন- প্রাকৃতিক। কে জানে অতীতে আর কোনো অঙ্গরাজ এমন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন কি না, হয় তো হন নি।

এমনিতেই আর্যাবর্তে অঙ্গরাজ্যের অনেক দুর্নাম! ব্রাহ্মণ মহর্ষির ঔরসে ক্ষত্রিয় রাজার স্ত্রীর গর্ভে নিয়োগপ্রথায় সন্তান উৎপাদন করায় এবং সেই পুত্রের নামে রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় শুরু থেকেই অঙ্গরাজ্য বর্ণ-শংকরের দোষে দুষ্ট হয় এবং উত্তরকালে সেই বর্ণ-শংকর প্রক্রিয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। কেবল ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয়ের মধ্যেই বর্ণ-শংকরের প্রক্রিয়া সীমিত থাকে নি, কালক্রমে তা ছড়িয়ে পড়েছে বৈশ্য-শূদ্র এবং অন্যান্য অনার্য জাতির মধ্যেও। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের করতলগত অনার্য নারীরা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় পুরুষের ঔরসে বহু সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রক্তের সংমিশ্রণের মতোই আর্য এবং অনার্য সংস্কৃতির সংশিশ্রণও ঘটেছে এবং এখনো ঘটে চলেছে। আর্যরা তাদের আচার-সংস্কৃতি যেমনি চাপিয়ে দিয়েছে অনার্যদের মধ্যে, তেমনি অনেক অনার্য আচার-সংস্কৃতিও ঢুকে পড়েছে আর্যদের গৃহে। অনার্য বিবাহিত মহিলাদের মতোই এখন অনেক আর্য বিবাহিত মহিলারাও কপালে এবং সিঁথিতে সিঁদূর পরে। অনার্যদের মতোই এখন অনেক আর্যও চলতে পথে সিঁদূর মাখানো বট-অশ্বত্থ বৃক্ষের তলায় দাঁড়িয়ে প্রণাম করে। আবার কোনো কোনো অনার্য গোষ্ঠীর মানুষও আর্য ব্রাহ্মণদেরকে পুরোহিত হিসেবে মেনে নিয়েছে, বিবাহের সময় আর্যদের মতো যজ্ঞ করে, ব্রহ্মা কিংবা বিষ্ণু মন্দিরের সামনে মাথা নত করে প্রণাম জানায়।

আর্যাবর্তের অন্যান্য রাজ্যেও বর্ণ-শংকর এবং সংস্কৃতির সংমিশ্রণ কম-বেশি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, তবু এক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের বদনামই বেশি, যেহেতু স্বয়ং রাজা অঙ্গ ছিলেন ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের বর্ণ-শংকর সন্তান।

আর্যাবর্তের অন্যান্য রাজ্যের শাসকগণ, মুনিগণ, বিদগ্ধ পণ্ডিতগণ এবং বণিকেরা তো বটেই সাধারণ মানুষও অঙ্গরাজ্যকে ঘৃণার চোখে দেখেন। মিথিলা, মধুপুরী, কোশল প্রভৃতি রাজ্যের মানুষ অঙ্গরাজ্যের মানুষের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ করতে দু-বারের জায়গায় দশবার ভাবে। তার ওপর বছরের পর বছর এই অনাবৃষ্টি আর অনাবাদের ফলে প্রজারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে, গুপ্তচররা চারিদিক থেকে খবর নিয়ে আসছে- যে কোনো সময়ে জ্বলে উঠতে পারে প্রজাবিদ্রোহের আগুন। আর ওদিকে অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমে চম্পা নদীর ওপারে মগধরাজ, দক্ষিণে কলিঙ্গরাজ, দক্ষিণ-পূর্বে সুহ্মরাজ, উত্তরে লিচ্ছবিরাজ এবং বিদেহরাজ তো সর্বদাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন অঙ্গরাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন জনপদ নিজেদের অধিকারে নেবার জন্য; চারপাশ থেকে অঙ্গরাজ্যকে যেন গিলে খেতে চান তারা। এদের মধ্যে মগধরাজ্যের সঙ্গেই অঙ্গরাজ্যের রেষারেষি সবচেয়ে বেশি, মগধের জলসীমা দিয়ে আসার সময় বেশ কয়েকবার অঙ্গরাজ্যের বণিকদের পণ্যবাহী তরণী লুট হয়েছে। মগধরাজ দস্যুদের আটক কিংবা প্রতিহত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। দূত মারফত বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে পত্র পাঠালেও কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় নি। যে কারণে অঙ্গরাজ লোমপাদ এবং তার অমাত্য পরিষদের ধারণা মগধের জলসীমায় বারবার পণ্যবাহী তরণী লুটের পিছনে মগধরাজের হাত রয়েছে। মগধরাজ পায়ে পা লাগিয়ে যুদ্ধ বাঁধাতে চান, বারবার উস্কানি দেন যাতে অঙ্গরাজ লোমপাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় এবং উত্তেজনার বশে তিনি মগধরাজ্য আক্রমণ করেন; আর তখন নিজরাজ্য আক্রমণের অজুহাতে মিত্র রাজাদের সাহায্যে মগধরাজ অঙ্গরাজ্য আক্রমণ করে দখল করে নেবেন। কিন্তু মগধরাজের সেই ফাঁদে পা দেন নি রাজা লোমপাদ, তিনি বারবার ধৈর্য্য এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। আশপাশের রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র অযোধ্যার রাজা দশরথের সঙ্গেই অঙ্গরাজ লোমপাদের সম্পর্ক দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ। দশরথ বন্ধু বৎসল, নির্লোভী শাসক, পররাজ্য হস্তগত করার লালসা তার তেমন নেই। নিঃসন্তান লোমপাদ দশরথের শিশুকন্যা শান্তাকে দত্তক নিয়েছেন, শান্তা এখন যৌবনে পা রেখেছে।


(চলবে........)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×