somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতা

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। সূর্য
.......
মেহগনি পাতায় অথৈ রোদ
পিছলে যায়
পিছলে পিছলে পড়ে নিচে
খড়ের গাদায়।
তার পাশে মেঠোরাস্তা-
ধুলায়
যার পায়ের দাগ
সূর্য তাকে খুঁজতে খুঁজতে যায়
পশ্চিমে, সন্ধ্যায়।

২। ঠাণ্ডা মুখ
..........
নেকড়ের লোমশ হাত লাগা গা ছমছমে
একটা রাত এসে জানাবে
ঘুমের অধিক গুপ্তজ্ঞান।
পুরনো একটা গানের পাখা গজালে
সে উড়িয়ে আনবে জ্বরতপ্ত বর্ষা সন্ধ্যা,
কতোকাল আগেকার!
যদিও দূরের নামহীন নক্ষত্রেরা নির্বিকার
আর মানুষ অনুভূতিপ্রবণ রয়ে যাবে,
দলছুট এক শেয়াল চেঁচাবে ধানক্ষেতে,
ঢেউয়ের মধ্যে নাচতে নাচতে বাজতে থাকবে
তবলা বাদকের ছিঁড়ে আনা হৃৎপিণ্ড।
স্বপ্নের কতো কী লঙ্কাকাণ্ডে ঘুম ছুটে গেলে
মৃতপ্রশান্ত ঠাণ্ডা মুখটাকে ঘুমন্ত ভেবে
রাধা তার গায়ে কাঁথা টেনে দেবে!
সে আর পাবে না টের!!

৩। রেল কলোনির হাওয়া
..................
রাতদুপুর ঝিমিয়ে আসে
কেউ নেই কারো পাশে, নেই
সব দূর, পরিপার্শ্ব বলে নেই কিছু
পৃথিবীর ডিপ্রেশন সব ভাগ হয়ে যাবে মাথাপিছু?
ভাবনা থামিয়ে দিয়ে
ঝনঝন করে হাসে ট্রেন
দেন দরবারহীন-
যায় অত্যাচার ছুঁড়ে দিতে দিতে
নাড়া দেয় মগবাজারের ভিতে।
ট্রেনের পেটের মধ্যে যাত্রীসব তারা
মনে করে ভুলে যাচ্ছে অপ্রিয় ইশারা, সাড়া নেই।
তাই ঘুমে
পরের মৌসুম নিয়ে হাজির শৈত্যপ্রবাহ
এতো এতো প্রবাহের ভিড়ে
ট্রেনে কাটা পড়ে যার রক্তপ্রবাহ বইবে ধীরে,
তারে মনে রেখো, হ্যারে, রেল কলোনির হাওয়া।

৪। প্রাপ্য
…..
মানুষেরেই সালাম
মানুষেরে দিই থুথু্।

৫। বিস্ময়
.............
মহামায়াবহ দুপুরদিনে
একটা উজ্জ্বল মুখের কালো ফড়িং
জানিয়ে দিতে পারে
বিস্ময় একটা সাঁকোমাত্র
যা পেরিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় মানেই
পরাবাস্তব ঘোর থেকে
আছড়ে পড়া সাগর পাড়ে
প্রবীন পাথরে।
আর পাথরের পাশে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা
মানুষ মাত্রই ভাবে
পৃথিবীতে বিস্ময় বলে কিছু নেই
চোরাবালি ছাড়া!

৬। অন্ধ গতায়াত
............
আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলে গাঢ়তর রাত
নিজেকে সেই অন্ধ ভিখারি মনে হয়
যে কয়েনের ঝনঝন শব্দে চোখ পিটপিট করে
দেখে জ্যোতিময় রূপালি ঝলক।
তাই ভান, উপার্জনের ভনিতা
প্রকৃত অন্ধের প্রতি সন্দেহ ছুড়ে দেয়
জ্যামিতিক টোনে,
জন্মান্ধ দৃশ্যের দিকে চোখ তাক করে
সবইতো অন্ধ গতায়াত থৈহীন অন্ধকারে!

৭। খোঁজার খরচ
..............
রাত আরও ঘোলাটে হলে শিশিরে-আঁধারে-কুয়াশায়
উড়ন্ত পাখির পাখা ঝাপটানোর ধ্বনি,
তাহলে বিদায়!
ভোরে, দূরে যতোদূরে ধুলোপথ হয়েছে ধনুক
তার থেকেও অন্তরালে যে পদচ্ছাপ চলে গেছে
তাকে খোঁজার খরচ বৃথা।
সিদ্ধান্ত নিয়েই তো সে বাড়িয়েছে পা
দিকচক্রবালে, অর্ধবৃত্তাকার!

৮। সাফ কথা
………..
কোনো এক আলগা বিকেলে
লাসভেগাসের যে কোনো ক্যাসিনাোতে
জুয়া খেলে
তিন লাখ ডলার হারার আগে-
আমার জান নেওয়া যাবে না আজরাইল!

৯। দ্বিখণ্ডিত
.....................
আমাদের জারুল ফুল পেতে যাওয়ার কথা ছিল কোথাও।
কথা ছিল কোনো এক পাতাবাহার সকালে
হুট করে উড়ে গিয়ে
কড়ই গাছের ডালে
বসে বসে দেখব জীবন; গতিময়।
বাতাসের সাথে করিয়ে দেব সাক্ষাৎ
বিকেলের সকল ঘুড়িকে।
স্রোতের সাথে মিটিয়ে দেব পাড়ের বিরোধ-
নদী বিষয়ক আগ্রহে আমরা ঢেউও পুষতে চেয়েছিলাম।
বর্ষাদিনে টঙ দোকানে ছাউনির বাইরে দাঁড়িয়ে
চায়ের কাপ হাতে কথা ছিল,
থাকার অধিক, প্রকাশ্য-আড়াল।
শুকনো পাতার সদৃশ সব কথা মাড়িয়ে কিনা
দূরত্বের জটিল বাঁকে
আমরা বাম পা উত্তরে আর ডান পা দক্ষিণে চালালাম!

১০। জবা ফুল
..........
একটা জবা ফুলের মূর্খতায় আপনার হাইপারটেনশন।
ঘুমের সাথে মেটাতে বিরোধ চাইছেন বড়ির মধ্যস্থতা,
অথচ
শেষরাত চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে নিয়ে
বসিয়ে রাখছে বারান্দায়।
অস্থিরতা হাঁটাতে হাঁটাতে হাঁটাতে হাঁটাতে
আপনার থেকে কমসেকম তিনশ’ মাইল দূরে নিয়ে যায়,
আর সেখানে গিয়ে আপনি দেখছেন,
লোকে জবা ফুল রান্না করে খায়!

১১। প্রস্তুতি
.............
অনেক ভনিতা শেষে নিয়েছি পাথর,
ফুল-কাঁটা দুটোই নিলাম।
চোরাবালির ভুবনে তলিয়ে যেতে পারি
জেনেই এসেছি এই বিরাণ বেলাভূমে,
বক্র পর্যটনে।
নাগালে পাহাড়, দূর ও অদূরে আকাশে
রক্তিম মেঘে মেঘে আঁকা রোদ।
খাদের প্ররোচনায় চূড়াময় অনিশ্চয়তা,
এখানে প্রকৃতি ও জীবন খুব অনুমানসাধ্য নয়।
এমন রৌদ্রের দুনিয়ায়
যে কোনো মুহূর্তে ঝড়োবাদল নামলে,
বজ্রপাতের লক্ষ্য হবো, ধরে নিয়েই আমি তৈরি থাকলাম।

১২। স্বভাবের আলোড়ন
...................
কার্তিক মাস তার সংকল্প কেটে ফেলে
অগ্রহায়ন এসে বলে, ওটা আগাছাই ছিল।
ক্রমাগতে হাঁচির দ্যোতনা, জ্বর
শরীর বা প্রকৃতিতে
আবহাওয়া বদলের সংবাদ বয়ে আনে,
তাও সকালের দিকের নিঃশব্দ শিশির
দুপুরকে বিশ্বাস করানো যায় না,
হেমন্ত স্বভাবের আলোড়নে।
ভিন্ন ভাষ্যে
সংকল্প ঠিকই থাকে, লক্ষ্য ঘোরে সমকোনে।

১৩। গোধূলী
.........
রোজ বিকেলের কিছু পরে
সন্ধ্যার সামান্য আগে আগে
খুনোখুনি মনে, রক্তধারা-
আকাশটা ভরে যায় দাগে।

১৪। নিবেদন
.......................
আমি কি যাব না তবে
উপলক্ষের পাড় ঘেঁষে
হেতুর সন্ধ্যানে,
গানে বা বাগানে?
বিকেলের মিনারে যখন
পাখিরও ফুরুৎ তাড়া,
ধারা বয় নদীতে, বাতাসে,
বহমান চিন্তা নিয়ে
তবু কোন ইশারায়
এই স্থানু বসে থাকা?
আমি কি যাব না?
ভাবনার মতো করে
ছোটা কি হবে না কোনোকালে?
কোনো হেতু ফোটা কি হবে না,
ওহে স্বপ্নোজ্জ্বল ফুল?

১৫। পূর্বাভাস
……….
না জন্মানো দুঃখরা বাতাসে পূর্বাভাস হয়ে কাঁদছে!


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×