সব পৃথিবীর বিষে মহাকাশ নীল
.............................
এই পৃথিবীতে বসে দেখি যতো রঙ
মানুষের আচরণে নানান ভড়ঙ,
অন্যসব পৃথিবীতে এই চলে বুঝি
জানতে বিস্তারে, খুব এলিয়েন খুঁজি।
সেসব পৃথিবী তবে ভূমিকম্পে নড়ে?
বাইরে প্রেমিকা থাকে, বউ থাকে ঘরে?
দশটা মিথ্যার কাঁধে চার সত্য উঁকি
দিয়ে ভাবে বলো দেখি, কোন পথে ঢুকি?
যেই নদে দুধ বয়, কয় ফোঁটা বিষে
সাথে সাথে চলেফেরে, থাকে মিলেমিশে?
যাবেনা চাইলে দেখা, পান করে তবে
দুধের ভেতরে বিষ প্রাণে ধরা দেবে
ধরা খেলে বোঝা যাবে গরল-অমৃতে
নিজেই মিশেছে যেনো, এবারের শীতে
বুঝেও নাইতো লাভ, বৃথা ওড়ো চিল
সব পৃথিবীর বিষে মহাকাশ নীল।
জীবন
........
এই যে জীবনরে আমার
লোহার-তামার মনে হয়
কেন যে!
শাল বনে লেখা
.........................
নিজের কাছেই মোর যতো অপরাধ আছে জমা
এই চুপ অরণ্যে তাদের জন্যে চেয়ে নিচ্ছি ক্ষমা।
নত
............
যেকোনো হৃদয়ে আঘাতের মানে
সব মানুষের মনে একসাথে চিড় ধরানো-
এই সত্যে আস্থা রেখে
ভেতরে উদিত শান্ত ভোর,
আপনার সাক্ষ্যে আজ
আমার তাবৎ অপরাধে
সকলের কাছে নত,
করি করজোর!
জ্যোতিষ
..........
ও চাঁদ
হাত দেখে দাও
তুমি না জ্যোতিষ!
সহমরণ
...........
তোর পাশে বসে থাকতেই বেশ লাগে
চিবুকে গলায় উড়ে এসে কেশ লাগে!
ভুল
.....
ভুল গোনা, তারা গোনা
একই ব্যাপার
জীবন ফুরাবে তাও গোনা ফুরাবে না।
সুহৃদ,
বহু দিন জীবনে ঘটেনা কোনো
বলার মতোন ঘটনা।
নদী
...
চাওয়া-পাওয়া পাড়ে ফেলে কোথায় সে নদী বয়ে যায়!
তাকে ইর্ষা করি, নমস্কার করি।
মায়ের মুখ
............
যেদিন মায়ের মৃত্যু হলো, আমি সেজো চাচার কোলে চড়ে গ্রামময় ফুরফুরে ঘুরে বেরিয়েছি। সে ভ্রমণ আসলে ছিলো সম্মিলিত ছলনায় আমাকে না জানতে দেয়া, মায়ের প্রস্থান। পরে ছলনা আমার নিয়তি হয়ে যায়। তারপর মায়ের সন্ধানে নক্ষত্র বিষয়ে আগ্রহ পেয়ে বসে। যেকোনো তারা ততোদিনে পেয়ে গেছে মায়ের চেহারা মিছামিছি।
নিশ্বাস বিপক্ষে গেলে মানুষ কোথায় যে যায়, তা নিয়ে অনেক ভেবেছি।
আব্বা ও মায়ের সাথে আমার একটা ছবি বহুদিন টাঙানো ছিল ঘরের দেয়ালে। তারা দু'জনে দাঁড়ানো, মাঝখানে ফুল হাতে মোড়ায় স্থির বসে শৈশবের আমি। সেই ছবির সাথে অনেক কথাটথা হতো আমার প্রায় প্রতি মাঝরাতে। কোনোদিনই উত্তর না পাওয়ায় হঠাৎ মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিই। থাকতে শুরু করি তার থেকে দূরে সরে।
এক ভোরে দেখি, আমাদের গ্রামের বাড়ির উঠানের পূব কোনে রান্না করছেন মা। মাটির চুলায় ভাত বসিয়ে কথাবার্তা মিনারা ভাবীর সাথে-। সেদিন ঘুম থেকে বেরিয়েই ছবিটা খুঁজে বের করি। দেখি, তাতে বাবা আর আমর মুখ অবিকল আছে, শুধু মায়ের মুখ বিকৃতিতে চেনা যাচ্ছে না।
আমি দীর্ঘকাল দূরে সরে থাকার কারণে নিজেই নিজের মুখ নষ্ট করে ফেলেছেন মা!
দৃষ্টি
....
চাহনি দেখলেই বোঝা যায়, তুমি সুঁইয়ে সুতা গাঁথতে পারো।
শ্মশান
....................
এ শরীরে আসলে শ্মশান
শ্মাশানে অগনিত চিতা
তার মধ্যে একটা আমার।
সেটার উপর বসে-
দেখো সীতা,
মদ খায়
ডোম আর বাংলা কবিতা!
অ্যারোপ্লেন
.......
আমার মন ভালো হবে কবে, ওহে অ্যারোপ্লেন?
মৃত্যুশোক
......
কোনো কোনো সন্ধ্যা নিজেরই মৃত্যুর শোক নিয়ে হাজির হয়।
নজরবন্দি
............
কতোনা পৃথিবী দিয়ে
দূরবীন নিয়ে দেখে
আমাদের চলাফেরা!
২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লেখা কবিতা
জীবনের বিস্ময়বোধ
........................
সে কোন অবাকযাত্রায় চোখের আভাসে
সান্ধ্যভাষা নিয়ে বসে থাকা
বনের বাংলো বাড়িতে!
শার্সিতে ধুলোর দাগ- নৈঃশব্দ চিড়ে ফেলা পাখির আওয়াজ
তাহলে জীবন, বিস্ময়বোধক চিহ্নের নামে পাললিক ওড়াউড়ি!
বনের মধ্যে এই বাতাসের সব কথা বোঝার আগেই
সে ইচ্ছায় ঝরে যাবে পাতা! কেউ তার খোঁজও নেবে না!
আর এমন রোদের জল, স্বতঃস্ফূর্ত ফুল
লতার-গাছের, পাখির-পতঙ্গের, হরিণের-সাপের দেশে
মানুষ নম্র হয়ে ওঠে, ফোটে বুঝি মানুষের মন।
কিছুটা একার মতো একা হওয়া
কিছুটা মৃত প্রসবা গাভীর মতো দুঃখ হওয়া
কিছুটা দুপুরের মতো খাঁখাঁ হওয়া
গ্রীষ্মের মতো নিজের ভেতরে নিজে ঝিঁঝিঁ হয়ে ওঠা ।
আসলে যদিও এই বন নেই,
গাছ নেই, পাতা ঝরা নেই
বনের মধ্যে কোনো কংক্রিট বাড়ি নেই
বাড়ির মধ্যে কোনো জানালা নেই, জানালায় ধুলো নেই
তার পাশে কারও আর বসে থাকা নেই
বসে থাকার দিকে কোনো ধাবমান পাখির চিৎকার নেই
অথচ জীবনের ভ্রান্তি ও বিভ্রম আছে! বিস্ময়বোধ আছে!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯