বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্যাশ বিভাগে "ক্যাশ অফিসার" পদে
নিয়োগের MCQ Test ও লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র
-------------------------------------
প্রিয় মহোদয়,
উপোরোক্ত পদে নিয়োগের জন্য আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ২১/১০/২০১১ তারিখ শুক্রবার বিকেল ০৩:০০ টা হতে Dhonia School and College,Dhonia, ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ০১ ঘন্টা ব্যাপী MCQ Test (১০০ নম্বর) ও ০১ ঘন্টা ৩০ মিনিট ব্যাপী লিখিত পরীক্ষায় (১০০ নম্বর) অংশগ্রহণ করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
এই তো সপ্তাহ খানেক আগে সকাল ১১ টা বাজে তখন।আপা আমাকে ঘুম থেকে ঢেকে তুলল।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মাত্র সকাল ১১ টা বাজে।লাস্ট কবে এত সকালে ঘুম থেকে জেগেছি মনে পড়ছে না।চরম রাগ চাপা দিয়ে তাকালাম আপার দিকে....
কি হয়েছে,এত সকালে ডাকলি কেন?
দেখ তোর একটা চিঠি এসেছে।মনে হয় ইন্টাভিয়্যু কার্ড হবে।
হলে হবে।রেখে দে।
একটু বাজারে যেতে হবে--
বাজার-আহ কি শান্তির জায়গা।নাম শুনলেই আনন্দে আমার চোখ বেয়ে পানি চলে আসে।দিন দিন দুনিয়ার মানুষ জন ক্রমেই আমার শান্তি বিনষ্টের মিশন নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। যে কাজ আমি মনেপ্রাণে করতে চাই না-সেই কাজ গুলাই আমার সামনে ক্রমাগত আসে।হায় খোদা।
তাড়াতাড়ি বাথরুমে যা।আজকে আবার পানি থাকবে না।
আহ শান্তি আর শান্তি।কে বলেছে কোথাও শান্তি নাই।আমার চারপাশে তো দেখছি শান্তির মেলা বসেছে দেখছি।পেইন জাস্ট পেইন।এমন পরিস্থিতিতে আমার শুধু গান গাইতে ইচ্ছা করে।একটা গানের সুরই শুধু ভেসে উঠে গলায় এসে আটকে যাক- উ লা লা....।
আমি আজও মাছ কিনতে পারলাম না।টাকা ছিল কিন্তু একজোড়া ইলিশ মাছ ৮০০ টাকা দিয়ে কেনার মত টাকা ও ইচ্ছা কোনটাই ছিল না।আপা আবার ইলিশ মাছই নিতে বলেছে।
বেশি করে তরিতরকারী কিনলাম।একটা কচি লাউ কিনলাম ৮০ টাকা দিয়ে।আহ ব্যাগ ভর্তি হয়ে গেল।এইবার তাইলে ফেরা যাক।
বাসায় এসে আপাকে বললাম ভাল ইলিশ নাই।ইলিশ কিনলে আরো সকালে যেতে হবে।এত দেরি করে বাজারে গেলে কি ইলিশ পাওয়া যায়।বলেই কাকে যেন ধমকা ধমকি শুরু করে দিলাম।আপা আর কিছু বলল না-
ফ্যান ছেড়ে ইন্টাভিয়্যু কার্ডটার দিকে তাকালাম।
ওমা নাই।মোবাইল দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।খাটের উপর নিচ খুজলাম।
আপা,এই আপা-আমার কার্ডটা কই।
খুজে দেখ।তুই তো রাখলি।
বালিশ,তোষক-সব উল্টে পাল্টে দেখা হল।নাই।হাওয়া।
যাক পরে খুজবো নে।
রিমোট হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ শেয়ার এর দরদাম উঠনামা দেখলাম।আমার নিজের কোন শেয়ার নাই।বুঝিও না।তারপরও শেয়ার মার্কেটা দেখি।খারাপ লাগে এমন করে লোকগুলা টাকা হারিয়ে বসে আছে।
এরা হঠাৎ ই ব্যস্ত হয়ে উঠল-
দর্শক ,এই মাত্র খবর পেলাম মতিঝিলে শেয়ার হোল্ডারদের সাথে পুলিশের ব্যাপক হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে।আমরা আপনাদের সরাসরি সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।আমিও তাড়াতাড়ি জামা গায়ে দিলাম।ফ্যান অফ করে।খালি গায়ে আমাকে ওরা যদি মতিঝিলে নিয়ে যায়।ব্যাপার টা শোভন দেখাবে না।
এমন করে যথরিতি কেটে গেলে গত ৬ দিন।এর মাঝে আমি এখনো আমার ইন্টারভিয়্যু কার্ড খুজে পাই নি।
গতকাল বিকেল ৩:০০ টাতে আমার পরীক্ষা ছিল।জুমা'র নামাজের জন্য গোসলে যাব।আলনা থেকে টাওয়াল নিতে গিয়ে আমি তাকে দেখলাম।আলনার পাশে জুতার বাক্স,তার চিপায় পড়ে আছে।সাথে সাথে ঘড়ির দিকে তাকালাম।
সময় ১২:৪২
অনেক সময় পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার।
প্রস্তুতি:
সুন্দর করে শেভ করলাম।ইস্ত্রি করা জামা,প্যান্ট বের করলাম।চুলে শ্যাম্পু করলাম।
গোসল সেরে স্প্রেও দিলাম।নামাজের আরো কিছু সময় বাকি আছে।কম্পুটা ছেড়ে একটু গান শুনলাম-
"ঘুড়ি তুমি কার আকাশে উড়ো;
তার আকাশ কি আমার চেয়ে বড়..."
হঠাৎ মাউস গিয়ে পড়ল -'এম্পায়ার আর্থ' এর উপর।এই গেমস টা আমি আর খেলব না।আজকেই লাস্ট।দুই রাজ্য চরম যুদ্ধ চলছে।অবশেষে আমি যখন জয়লাভ করলাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ২:১০ বাজে।আমি আরো ৩০ সেকেন্ড তাকিয়ে রইলাম ঘড়ির দিকে।
আবার শুরু হল -আমার সেই হাই স্পিড এ্যকশান।ধুম মাচালে...
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হলাম।
প্রায় চার থেকে পাঁচ মিনিটের পথ হাটার পড়ে মনে পড়ল আমি মোবাইল বাসায় রেখে এসেছি।আবার ব্যাক টু দি প্যাভিলিয়ন।আবার ধুম মাচালে-
রিকশাওয়ালে কে বললাম -মামা কুইক চলো ধনিয়া এ.কে. স্কুল।মামাও কুইক করে বলল-ওদিকে যাইয়াম না
আমার তখনই মনে হল -আই আম গোয়িং টউ বি লেট।
সাথে সাথে পাশের রিকশায় লাফ দিয়ে উঠে বসেই বললাম-মামা, ধনিয়া এ.কে. স্কুল চলো পরীক্ষা আছে।যাক এই বার রাজি হল।
ঘড়ি বের করে দেখলাম ২:২৭।কিছুক্ষণের মাঝেই আমি একে স্কুল দেখতে পেলাম।আহ যাক তাইলে আমি পেরেছি।
আমি যতই একে স্কুলের কাছে আসছি ততই অবাক হচ্ছি।আ সামনে কোন ভিড় নেই।কোন জটলা নেই।চাকরি প্রত্যশী বাংলার দামাল ছেলেদের না দেখেই আমি বুঝলাম-সামথিং ইজ রং।স্কুলের গেট তালামারা। আমি কুইক ঘড়ির দিকে তাকালাম।
২:৩৮ বাজে।
একবার রিকশাওলার দিকে তাকালাম।ইন্টারভিয়্যু কার্ড টা বের করে দেখি তারিখ ও সময় ঠিকই আছে।
তাইলে সমস্যা কোথায়? মামাকে বললাম মামা এইটা ধনিয়া কলেজ না?
রিকশাওয়ালা মামা মনে হয় কিছু বুজচ্ছে।সব কয়টা দাঁত বের করছে তো আর ভিতরে ঢুকানোর খবর নাই।
মামা-এই ডা তো এ.কে. স্কুল। আর ধনিয়া কলেজ তো শনিরআক্রায়।
হে হে হে -আমি ও মামা'র মতন তখন আর আমার দাঁত গুলা বের করে ফেললাম।আর ভিতরে ঢুকাইতে পারলাম না।
কইলাম মামা-৩:০০ উনারা আমারে যাইতে কইছে।আর এখন বাজে ২:৪০।
৩ টার আগে কি যাওয়া সম্ভব।অতীতে আমি এমন পরিস্থিতে রণে ক্ষান্ত দেই।আজ দিলাম না।
আবার শুরু হইল-ধুম মাচালে--
ইয়েস।আই গট ইট--
৩ টা ১৭ মিনিটে আমি পৌছালাম।এমন অবস্থায় এমন ভাব ধরতে হবে-যাতে আমাকে দেখে কোন রকম উত্তেজিত মনে না হয়।আমি বুক ভরে দম নিলাম।
স্যার নিজ উদ্দ্যগে আমার সিট খুজতে শুরু করে দিলেন।আমার উদ্দ্যগ স্যারের মাঝে দেখা গেল।কেন দেরি হল।আগে সিটে বস।তারাতারি শুরু কর।রোল নং, সেট কোডটা ঠিক মত লিখ।
স্যারের এই তৎপরতা সাথে উত্তেজনা দেখে আমি বড়ই প্রীত হইলাম।
কাম হইল- টাকা গুনা।
আমি নতুন আসল ১০০,৫০০,১০০০ টাকার নোট চিননের উপায় ও এক থেকে একশো পর্যন্ত শতকিয়া পড়ে এসেছি।ও আল্লাহ এরা দেখি পরীক্ষার নামে স্কুল খুলে বসেছে।
খাতার দিকে তাকিয়ে দেখি ২:৩০ মিনিট পরীক্ষা।(শেষ ঘন্টা না পড়া পর্যন্ত বের হওয়া নিষেধ) আমার তখনই মনে হল -বের হয়ে যাই।আড়াই ঘন্টা বসে থাকবো কি করে।
যাই হোক আমি বসে থাকলাম।
প্রথম প্রশ্ন:
সৌরজগতের সবথেকে কাছের গ্রহ কোনটি?
ক. শনি খ. মঙল গ. বৃহ:স্পতি ঘ. বুধ
এই প্রশ্ন এখানে কেন?
ভাল করে আবার আমার ইন্টারভিয়্যু কার্ডের দিকে তাকালাম। কোন পোষ্টে পরীক্ষার জন্য আসছি?
না এখানে স্পস্ঠ করেই লেখা "ক্যাশ অফিসার" পদে।
তাইলে শুরুতেই এরা সৌরজগতে দৌড় মারলো কেন?
বাংলাদেশ ব্যাংক কি সৌরজগতের অন্য গ্রহে ব্রাঞ্চ খুলবে নাকি?
কিন্তু আমার পক্ষে এই মুহুর্তে অন্য গ্রহে গিয়ে -ক্যাশ অফিসারের ডিউটি করা সম্ভব না।
অত:পর, আমি রণে ক্ষান্ত দিলাম.