সর্ব প্রথম মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে তিনি অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ স্যারকে এ রকম একটা মান সম্মত পত্রিকা প্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং আমাকে এ লিখাটি লিখার সুযোগ দিয়েছেন।
বর্তমান বাংলাদেশের সব থেকে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ইভটিজিং। কিন্তু কেন মেয়েরা ইভটিজিংয়ের শিকার হয় সেটা কি আমরা কখনো খোঁজ নিয়েছি? আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কীভাবে সমাজ থেকে ইভটিজিং দূর করতে পারি? দোকান খোলা থাকলে ক্রেতা আসবেই, মিষ্টি দেখলে পিঁপড়া যাবে, টক দেখলে প্রতিটা মানুষের খেতে ইচ্ছা করবে এটা কি স্বাভাবিক ব্যাপার নয়? আমরা যদি দোকান বন্ধ রাখি তাহলে কি ক্রেতা আসবে? যদি মিষ্টি ঢেকে রাখি পিঁপড়া কি খেতে পারবে মিষ্টি? টক না দেখলে কেউ কি খেতে চাইবে? আমার এই প্রশ্ন বিশ্বের প্রতিটা বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাছে। সৃষ্টিকর্তা নর এবং নারীকে সৃষ্টি করেছেন চুম্বকের দুইটা মেরুর মতো। মেয়েদের পুরো শরীরটা যে ছেলেদের কাছে চুম্বকের মতো আকর্ষণীয়। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। মেয়েদের শরীরের সব থেকে আকর্ষণীয় অঙ্গ হলো তাদের ‘স্তন’। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে ৯৬% মেয়েরা তাদের বুকের ওড়না গলায় পেচিয়ে বুক টানটান করে পথঘাটে চলাফেরা করে। অথচ ওড়নাটা কিন্তু বুক ঢেকে রাখার জন্য। আর কিছু মেয়েরা নাভি বের করে পাতলা জর্জেট বা সিল্কের শাড়ির সঙ্গে পিঠে ৩ ইঞ্চি ঘের দেয়া ব্লাউজ পরে বুক টানটান করে কোমর দোলাতে দোলাতে বাইরে চলাফেরা করেন। এই অবস্থা দেখলে ৬০ বছরের বুড়ো হাবড়ারও যৌবনে ধাক্কা দেবে। মন চাইবে...। যেন এটা উত্তপ্ত মরুভূমির দেশ। তাই মেয়েরা তাদের শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে বিরক্তিবোধ করে। আসলে আপুরা কিসের জন্য শরীরটা খোলামেলা রাখেন? পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই কি? শ্রদ্ধেয় মা-বোনেরা একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনাদের শরীরটা খোলামেলা দেখার অধিকার একমাত্র আপনার স্বামীর, পর পুরুষের নয়। একটু চিন্তা করে দেখুন আপনারা খোলামেলা পোশাকে দেহটা যেভাবে অন্যকে দেখাচ্ছেন এতে আপনাদের মূল্য নৈতিক দিক থেকে কতটা মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। আমি জানতাম ইজ্জতই নাকি মেয়েদের অমূল্য সম্পদ যা হারালে আর পাওয়া যায় না। আজ সেই অমূল্য সম্পদও অন্য দ্রব্যের মতো অন্যকে দেখাচ্ছেন। আপনাদের কি একটুও লজ্জা করে না এরকম চলতে? আপনারা না আমাদের মায়ের জাতি। একটু ভাবুন তো! আপনাদের কারণে আজ ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ। গোটা দেশ, সমগ্র জাতি। যাদের মধ্যে রয়েছে আপনাদেরই বাবা, ভাই এবং বন্ধু। ঘটছে অসংখ্য বিবাহ বিচ্ছেদ। যে মেয়েটি স্বামীর আদর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সে হতে পারে আপনার বা আমার বোন। শুধুমাত্র আপনাদের এই খোলামেলা দেহের জন্য। সমগ্র পুরুষ জাতীর প্রতি আমার অনুরোধ মেয়েদের সম্মান করে চলুন। আমাদের মনে রাখা উচিত আমরা যে মায়ের পেট থেকে ভুমিষ্ট হয়েছি সেও কিন্তু মেয়ে জাতি। অন্য মেয়েকে অসম্মান করা মানে নিজের মা-বোনকে অসম্মান করা। আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমাদের মা -বোনরাও রাস্তায় চলাফেরা করে। স্কুল, কলেজে পড়ালেখা করে। মেয়েদের আমি অনুরোধ করছি প্লিজ আপনারা মানসম্মত পোশাক পরে চলাফেরা করুন। তাহলেই প্রকৃত সম্মান পাবেন। কোনো জায়গায় লাঞ্ছিত হবেন না। আমাদের সরকার বা কোনো আইন রক্ষকের একার পক্ষে ইভটিজিং দূর করা সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন প্রতিটা বাবা-মায়ের সচেতনতা। প্রতিটা বাবা-মায়ের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা সন্তানদের পোশাক পরিচ্ছেদ, চালচলন আচার-ব্যবহারের প্রতি খেয়াল রাখুন। আসুন আমরা ছেলেমেয়ে সবাই মিলে সমাজ থেকে ইভটিজিং নামক ভাইরাসকে চিরতরে দূর করি। আমরা সবাই একত্রে তৈরি করি আমাদের বসবাসের উপযোগী একটা সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থা।
ধন্যবাদ সবাইকে