আত্মহত্যায় ব্যর্থ মানুষ যেভাবে ফিরে আসে...পরাজয়-গ্লানি-করুণা-ধিক্কারের অনিবার্যতার কাছে...আরও একটি আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যাবে বলেই হয়তো বা...না...আমি সেজন্য আসিনি...আমি আত্মহত্যাপ্রবণ কিনা সে খবর অবশ্য আমার জানা নেই...জানা নেই প্রবণতা ব্যাপারটা মানুষের কোন মর্মমূলে ঘাপটি মেরে বসে থাকে...আর কোন বাহ্যিক বা অন্তর্গত প্ররোচনাতেই বা বেরিয়ে আসে দিকশূন্য হয়ে...সিলিং-এর হুকের মধ্যে গলিয়ে দেয় মৃত্যুর ব্যবস্থা...
গত বুধবার, ১২ মে ২০১০-এর আনন্দবাজার পত্রিকার তেরো নম্বর পাতায় একটা খবর ছিল, যার শিরোনাম "অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রৌঢ়ের"।
"হাওড়ার চ্যাটার্জীহাটের একটি বাড়ি থেকে মঙ্গলবার পুলিশ এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে। তাঁর নাম প্রমোদ বসু (৫৭)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী বর্তমান। পুলিশ জানায়, প্রমোদবাবু শরৎ চ্যাটার্জী রোডের ওই ভাড়াবাড়িতে একাই থাকতেন। বাড়িতে তিনি আবৃত্তিও শেখাতেন। এ দিন সকালে ছাত্রছাত্রীরা প্রমোদবাবুর কাছে আবৃত্তি শিখতে এসে ঘরের খোলা জানলা দিয়ে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়।..."
খবরে যা ছিল না, তা বলতেই আমাকে ফিরে আসতে হলো...খবরে ছিল না এই প্রমোদ বসু নামের মানুষটি আসলে কবি...সত্তরের দশকের এমন একজন কবি যিনি এদেশের অগুনতি মেইনস্ট্রিম এবং লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে ওতোপ্রোত ছিলেন...বাংলা কবিতার নিবিষ্ট পাঠক যাকে একডাকে চেনেন...যাকে অস্বীকার করলে বাংলা কবিতার ইতিহাসকে অস্বীকার করা হয়...খবরে আর যা যা ছিল না সেসব ক্রমশ প্রকাশ্য...আর হাটে হাঁড়ি ভাঙার জন্য আমি এসব লিখতে আসিনি...এক মিনিট নীরবতার বদলে আমাদের প্রমোদদা, কবি প্রমোদ বসুর একখানি কবিতার নীরব পাঠ, আপনাদের কাছ থেকে চেয়ে নিতে এসেছি...বলতে এসেছি, এতটা তাচ্ছিল্য, এতটা অস্বীকার কী সত্যিই একজন কবির প্রাপ্য? আপনারাই বলুন...
"আজ" / প্রমোদ বসু (কৃত্তিবাস পত্রিকায় প্রকাশিত)
ঠিক এই রকম সময়ে আমি বলতে চেয়েছিলাম
আলো,
তোমার সামনে ঘন ছায়া ঢেকে কোন অহঙ্কারী আজ
আভূমি দাঁড়ালো?
তার চক্ষু-কোটরে আগুন, তার ভীমাকার শরীরে খেলে সাপ,
তার মগজে অজস্র উন্মাদ,
রাত্রির পর রাত্রি জেগে প্রেতরাশি কঠিন উল্লাসে আনে
মারণ-সংবাদ!
ঠিক এই রকম সময়ে আমি তাই বলতে চাইছি,
আজ
এ নিষ্ঠুর খেলার ভেতর তুমি এসে অপ্রতিরোধ্য হলে
বেঁচে যায়
বিবেক, সমাজ।