সংখ্যায় ঠিক কি পরিমাণ লোক তার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রকে পছন্দ করে এটা আমার জানার ইচ্ছে। বিভিন্ন সময়েই আমার বিরক্তি বা ভালো না লাগা প্রকাশ পেয়েছে নিজের কাজের ক্ষেত্রটিকে নিয়ে। আমার প্রথম জব ছিল একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। সেখানে বেশিদিন থাকিনি অবশ্য। এরপর জয়েন করেছিলাম আরেক অফিসে। বলতে গেলে বড় পরিসরে কাজের সুযোগ বা ক্ষেত্র বলতে গেলে ওটাই ছিল। আমার জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটা অধ্যায়। কাজ করতে করতেই শিখেছি মার্চেন্ডাইজিং এর অ আ ক খ। কাজটা খুব ভালোবেসেছিলাম বলে প্রচুর সময়ও দিতাম সেখানে। নিজে কাজে নতুন হয়েও দুইজন জুনিয়র পেয়েছিলাম যারা আমাকে কাজের ব্যাপারে সাহায্য করতো। কিন্তু অনেক বছর পর যখন জানলাম তাদের মাঝে একজন সেই অফিস থেকে বের হয়ে আমার নামে বাজে মন্তব্য করতো বিভিন্ন জায়গায় আমি নাকি তাকে কাজ শেখাইনি, আমি অনেক অহংকারী এবং আরও কিছু বাজে কথা যা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। আমি এখন প্রেজেন্ট অফিসে কাজ করে বুঝতে পারছি আমার যারা সিনিয়র আছেন বা ছিলেন তারা নিজের হাতের কাজ কখনো ছাড়ে না, এত সহজে কিছু শেখাতে চায় না নতুন যারা আসে আর সে হিসেবে আমি আমার জুনিয়রদের ব্যাপারে কতটা উদার ছিলাম! আমার ঘরের মানুষটা বলে -
এটা উদারতা না। এটা তোমার বোকামি!
আসলেই হয়তো তাই। আমার মন মেজাজ ভালো যাচ্ছে না অফিসিয়াল ইস্যুতে তাই আজকে মনে হয় যাইই লিখবো নেগেটিভ হয়ে লেখাগুলো প্রকাশ পাবে।
তারপর সেই জব ছেড়ে আমার টিচিং প্রোফেশনে ঢুকলাম। কিন্তু ক্যানো যেন এই সেক্টরটাকে আমি ভালো লাগাতে পারিনি। স্কুলের বাইরেও আরো দুজন স্টুডেন্ট ছিল। বাচ্চা পড়াতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি এটা ভীষণ ধৈর্যের কাজ আর স্টুডেন্টের মাথা শার্প না হলে শিক্ষকের মাথা যে নষ্ট হতে বেশি সময় লাগে না এটা বুঝতেও আমার দেরি হয়নি। আর স্কুলে কিছু অনিয়ম দেখে আবার জব ছাড়লাম। প্রায় বছর দেড়েক বেকার সময় কাটিয়েছি। আমার মা খালি বলতো -
নিজের বাচ্চাকে টিচার দিয়ে পড়াচ্ছিস কিন্তু তুই তো ঠিকই স্কুলে বা অন্য স্টুডেন্ট পড়াস। সমস্যা কি?
আসলেই তো সমস্যা কি ছিল! শুধু শুধু উদাসীনতা বা ভাল্লাগেনার রোগ, কারো ভাষায় ফ্যান্টাসি আমার আশৈশব থেকেই। আমার আজকে শুধু মেজাজটাই খারাপ না। সেই সাথে টের পাচ্ছি আমি উদাসীনও হয়েছি। অফিস থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কই গেলে ভালো লাগবে সেটা জানি কিন্তু যাবো বললেই কি যাওয়া যায়!
এবার আসি প্রেজেন্ট অফিসের বিষয়ে। এখানে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলো। আর এই পাঁচ বছরের মাঝে গত দুই বছর ধরে মনে হচ্ছে খুব ভুল করেছি এখানে থেকে গিয়ে। নতুন সুযোগ পেয়েছিলাম ওখানে চলে গেলেই পারতাম! বারবার অফিস চেঞ্জ করা আমার পছন্দ না কিন্তু এখানে এসে টের পাচ্ছি যারা নিয়ম মেনে চলে, সবকিছুর জবাবদিহিতা দিতে প্রস্তুত থাকেই তারাই বেশি সাফারার। সততার কোনো দাম নেই। কিন্তু যারা ম্যানেজম্যান্টকে জবাব দেয়ার ধার ধারে না, যখন ইচ্ছে হলো আসলো আর গেলো, চুরি ধারি করলো তারাই ভালো আছে। কারণ তাদের বেতনের টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। সাইড ইনকাম দিয়েই সংসার আর এক্সট্রা খরচ মিটে যাচ্ছে। ক'দিন আগে এক কলিগ যে কিনা টাকার কুমীর সে আরেক কলিগকে বলছিল -
ভাই একটা জমি কিনবো। একটু খোঁজ লাগাইয়েন তো!
সে কলিগ বললো -
আমাদের এরিয়াতে জমির কিন্তু অনেক দাম!
টাকার কুমীর কলিগ বললো -
আরে ভাই ট্যাকা কোনো বিষয় না। এক কুটি দুই কুটি ব্যাপার না!
যাই হোক আমার মেজাজটা খারাপ লাগে কাজের মূল্যায়ন খুব কম হয়। আমাদের অফিসে তেলের মূল্য অনেক বেশি। আমার এক্স বস মানুষ হিসেবে খুব ভালো কিন্তু অফিসিয়াল ইস্যুতে খুব খুঁতখুঁতে এবং জটিল। আমি সঠিক লোকের কাছে সঠিক কাজ শিখার সুযোগ পেয়েছি দেরীতে। এক্স বসের অনেক কাজ পছন্দ হতো না কিন্তু সহ্য করতে করতে এর মাঝে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। একদিন সাহস করে ম্যানেজম্যান্টকে জানালাম আমার কোন সিচুয়েশনে সময় যাচ্ছে। আমি সল্যুশন পেলাম। ইন্ডিপেন্ডটলি কাজ করতে লাগলাম যা আমার কনফিডেন্স বাড়িয়েছে অনেক। আমার এক্স বসের কাছে কাজের মূল্যায়নটা এমন - আমি যদি ১০০ টা কাজ করি আর এর মাঝে ৩ টা কাজ ভুল হয় উনার মাথায় এটাই সেট হয়ে থাকে আমি সবকিছুই ভুল করি। অথচ বাকি ৯৭ টা কাজ যে আমি ঠিক করেছি সেটার কোনো ভ্যালু নাই আর ম্যানেজম্যান্টের কাছে গিয়ে জানাবে ও তো ভুল করে, ওকে দায়িত্ব দেয়া যাবে না। উনার কাছে শুধু আমি না অফিসের সব লোকের উপর উনি বিরক্ত থাকে আর কাউকেই তার পারফেক্ট মনে হয় না। তার ভুলের হিসাব আমি কখনো তার অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাউকে জানাইনি। কারণ এটা বুঝতে পেরেছিলাম - " বসদের ভুল ভুল না "। উনি আমাকে একটা সময় এতোটা অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আমি জব ছেড়ে চলে যাবার চিন্তা করেছিলাম একবার। আমাকে কোনো কাজের ব্যাপারে মেইলে সিসিতে রাখেন না, কোনো কাজের এপ্রুভাল পেলে বা রিজেক্ট হলে জানান না। আমাকে ইদ্যে যে কাজ উনি করাতেন সে কাজ কোনোমতে পড়তে লিখতে পারা মানুষও পারবে। কিন্তু চলে গেলেই সমস্যার সমাধান হবে না ধরে নিয়ে সেই মানসিক অত্যাচারে আমি যদি সাহস করে এগিয়ে না গিয়ে আমার সিচুয়েশন তুলে না ধরতাম আমি আজ আরো তলায় পড়ে থাকতাম।
আমার আরেকজন কলিগ যে কিনা আমার ইয়ারমেটও এক কলেজেই পড়তাম, টাকে আমি বেশ পছন্দ করি। ওর সাথে আমাকে এখন কাজ করতে হয়। ইন্ডেপেন্ডটলি ও আমাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতেও দেয়। সেই কলিগ অফিসের ম্যানেজম্যান্টের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে অবশেষে জব ছেড়ে দিচ্ছে এ মাসেই। এখনো ম্যানেজম্যানেট জানে না বিষয়টা। ওর একাউন্টের লাখ লাখ অর্ডার এখন স্বাভাবিকভাবেই আমার উপর এসে পড়বে। এছাড়া নতুন আরো দুইটা বায়ারের কাজ দেখতে হচ্ছে। যে কোনো কাজের শুরু থেকে থাকলে যেমন কাজের ন্যাচার, বায়ারের ন্যাচার, বায়িং অফিসের লোকজনদের চিনতে সুবিধা হয় হুট করে সে কাজের দায়িত্ব এসে পড়লে হিমশিম খেতে হয়। আমার অফিসের মালিকপক্ষ সুবিধার হলে এসব হ্যান্ডেল করতে খুব কষ্ট হতো না কিন্তু তাদের ন্যাচার হলো তারা অল্প সময়ে বেশি রেজাল্ট চায় এবং ভালো কাজের মূল্যায়ন করে না। শুধু তাই না এ মাসে ইনক্রিমেন্ট হবার কথা কিন্তু একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে যা জানলাম এবার অফিস স্টাফদের কোনো ইনক্রিমেন্ট হবে না অনলি প্রোডাকশন এর লোকদের হবে।
বেতন বাড়বে কি বাড়বে না এখন আর এসব নিয়ে ভেবেও লাভ নাই। জাস্ট এটাই ভাবছি সিদ্ধান্তটা দ্রুত নিতে হবে। আমাদের অফিসের ভালো কিছুই আমার চোখে পড়ছে না। আগে যা ওভারলুক করে গেছি এখন মনে হচ্ছে কেন ওভারলুক করে গেলাম। নতুন অফিস নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়া সমস্যা হলেও এটা তো সত্যি কথা " নো রিস্ক নো গেইন"। রিয়েলি এখন ক্লান্তি লাগছে যে কোনো কাজ করতে। নতুন দায়িত্ব পেয়েছি ঠিকই কিন্তু জানি আমি যত লোড নিবো আমাকে তত চাপিয়ে দেয়া হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি চিৎকার করবো " আর পারছি না " বলে।
কিছুদিন ধরেই আমি আবার ব্লগে অনিয়মিত। মিস করি সময়টা। কিন্তু জীবন আর জীবিকার প্রাধান্য সবার আগে। জীবিকা ঠিক না থাকলে জীবনে তিক্ততা বেড়ে যাবে। এখন আমাকে আর চুরি করে ব্লগে আসতে হয় না, সময় বের করতে হয় না। নিজেই নিজের বস। দায়িত্বটাও আগের চেয়ে কয়েকশো গুন বেশি। ফাঁকে ফাঁকে ব্লগে উঁকি হয়তো দিবো কিন্তু মন ভরে সময় নিয়ে কমেন্ট করা হয়ে উঠবে না। না পড়ে কমেন্ট করে " অনবদ্য, ভালো লাগলো " এমন কমেন্ট করা সম্ভব কিন্তু আমি সেটা করবো না।
কিছুদিনের বিরতিতে যাবার জন্য আপাতত এটাই আমার " বিরতিমূলক পোস্ট"। যাদের ব্লগে যেতে পারিনি বা পারছি না তাদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী এবং সেই সাথে অগ্রীম বলে রাখি মন্তব্যের উত্তর দিতেও দেরি হতে পারে। আজকে একটু সুযোগ ছিল বলে বকবক করে নিলাম। আর কেউ কেউ ভাবেন আমি খুব গম্ভীর টাইপের মানুষ, কম হাসিখুশি, খুব সিরিয়াস মানুষ তাদের জন্য বলছি আমি মোটেও অমন না। আমি খুব হাসি কিন্তু ব্লগ ইমোটিকন গুলো ঠিক জুতসই না আর এজন্যও মনে হতে পারে আমি রাগ রাগ হয়ে লিখছি। অফিসের বাইরে থাকলে বা বাসায় থাকলে আমি আমার পরিবারের মানুষগুলোর সাথে অনেক খুশি থাকি। নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়।
এত মানসিক চাপ নিয়ে অফিসিয়াল বিষয় কতদিন আর মেনটেইন করতে পারবো জানি না! কিন্তু অন্যায় আর সহ্য হচ্ছে না।
ব্লগর ব্লগর আবার চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:০১