somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিলক গবেষনা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে অনেক আগের কথা। তখন এলাকায় আমার একটা গ্রুপ ছিল। আমি ছিলাম ক্লাস সেভেন এ, আমার সমান বয়সী ক্লাসমেট ঝুমা ও ছিল এই গ্রুপের সদস্য। বাকিরা আমার চেয়ে ছোট ক্লাসের।গ্রুপের বিভিন্ন বয়সী সদস্যরা হল : নাহার, টুকু, রিনা, সাওলিন, শেফা ও সেতু। এরা ছিল পার্মানেন্ট গ্রুপ সদস্য। এর বাহিরে ও মাঝে মাঝে কিছু পার্ট-টাইম সদস্য জুটে যেত কখনও সখনও। বিকাল হলেই আমরা বাসার সামনের মাঠে জড়ো হইতাম এবং তারপর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আড্ডা মারতাম। আড্ডার প্রধান একটা টপিক ছিল "তিলক গবেষনা" । আমরা বিশ্বাস করতাম - যার হাতে তিল থাকবে তার রান্না অনেক মজার হবে। এই প্রসঙ্গ এলেই আমি আমার বাম হাতটা সবাইকে গর্বের সহিত দেখিয়ে বলতাম যে আমার রান্না করা খাবার দারুন হবে। কেউ কেউ এই ব্যাপাটায় আমাকে ঈর্ষা করতো যদিও তখন রান্না ঘরে ভালো মতো প্রবেশ করা হয় নি। তারপর, গলা বা ঘাড় এর বিষয়ে বিশ্বাস ছিল : যার গলায় বা ঘাড়ে তিল থাকবে তার মৃত্যু হবে শহীদ হয়ে কিংবা ফাসী হয়ে। এই তিলক বিশ্বাসটায় প্রায়ই আমার মধ্যে ঘুম হারাম হবার অবস্থা হতো। একা মনে ভাবতাম "আমার কি তবে ফাসী হবে? না,না ... হে আল্লাহ, আমাকে তুমি শহীদ হওয়ার সোভাগ্য দিও"। আমাদের গ্রুপের টুকুর পায়ে ছিল বিশাল তিল। তারমানে সে সারা জীবনই থাকবে অসুস্থ থাকবে। টুকুর ছিল এই বিশ্বাসটায় দারুন আপত্তি। যুক্তি খন্ডনের মতো করে বলার চেষ্টা করতো যে তার কোন অসুখ নাই। কিন্তু আমরা কি সহজে ছাড়িবার পাত্র? আমরা জোর গলায় বলতাম যে এখন না হোক, একটু বয়স হলে ঠিক ই অসুখ ধরবে তাকে (টুকু কে)। প্রতিদিন আমরা তিলক সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ও তিলক এ আক্রান্ত মানুষের উদাহরন আড্ডায় উপস্থিত করতাম। সব চেয়ে কঠিন এবং ভয়াবহ তিল ছিল "ঠোটের" তিল। যার ঠোটে তিল থাকবে সে নির্ঘাত প্রেম করে বিয়ে করবে যদিও প্রেম সম্পর্কে ধারনাটা তখনও পাকা-পোক্ত ছিল না। তবে প্রেমে পড়াটা যে এই পৃথিবীর সব চেয়ে খারাপ কাজ সে বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন দ্বিমত ছিল না। সাওলিনের ছোট খালার ঠোটে নাকি একটা তিল আছে । তো সেটার কারনে ওর খালামনিকে নিয়ে আমাদের মধ্যে বিস্তর সন্দেহ ছিল যদিও সেই সব সন্দেহ সাওলিনের সামনে আমরা প্রকাশ করতাম না। শত হোক, বেচাররি খালা তো, এই সব শুনলে কষ্টতো সে একটু পাবে ই। এভাবে ই দিনের পর দিন আমাদের তিলক সংক্রান্ত জ্ঞান ও গবেষনা বেড়েই চলছিল। তারপর অনেক দিন পর আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে আবিষ্কার করলাম যে আমার নিচের ঠোটের বাম দিকে অস্পষ্ট একটা তিল। ভূত দেখলেও বোধ হয় এতো ভয় পেতাম না সেদিন যেই ভয়টা পেয়েছিলাম। ভয়ে, লজ্জায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার। কপাল ভালো যে তিলটা অস্পষ্ট ছিল এবং কাউকে মেনশন না করলে উহাতে কারো নজর পড়তো না। সেই দিন থেকে তিলক গবেষনা বন্ধ করে দিলাম। কোন স্বউৎসাহী সদস্য এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অন্য বিষয়ে গল্প করা শুরু করতাম। মনের মধ্যে তখন ভয় ছিল কারো নজরে যদি আমার ঠোটের তিলটা পড়ে যায়। ধীরে ধীরে তিলক গবেষনা তার ব্যাপ্তি হারাতে থাকলো এবং আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম। সেই থেকে আর কোন দিন তিলক গবেষনায় অন্তর্ভুক্ত হয় নি । এবং এই অস্পষ্ট তিলকের কার্যকারিতা এখনও পর্যন্ত প্রকাশ হয় নি। প্রকাশ না পেলেই বাঁচি ...

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১২
৮৬টি মন্তব্য ৭৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×