somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইচ্ছা ও ইচ্ছাপূরণের বিবর্তন

০৩ রা মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাটি হাটি পা পা করে আজ আমি কত বড় হয়ে গিয়েছি। অথচ আজ ঠিক যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে যদি পেছনের ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকাই তবে ঐ মুহূর্তগুলোর সাথে জড়িয়ে থাকা ইচ্ছা এবং ইচ্ছাপূরণের বিবর্তন আমাকে হাসায়, আমি খুব করে হাসি এবং কিছু ইচ্ছা আজও লুকিয়ে লুকিয়ে মনের মধ্যে লালন করি। সাদা কাগজে ছক কেটে সাজিয়ে দেখি ইচ্ছাগুলোর সাত রং।

- একেবারেই পিচ্চিকাল। স্কুলে গিয়ে টুকটাক কিছু কিনে খাওয়ার জন্য বাবা তখন ৫০ পয়সা বা ১ টাকা দিত। টুকটাক বলতে আমার সেই পিচ্চিকালের পৃথিবীতে ছিল লজেন্স, বিস্কুট, ছোট ছোট বাতাশার মতো খাবার ( যা আমরা টিকটিকির ডিম বলতাম), ডেনিস ( এখনকার ছেলেমেয়েরা এই খাবারটাকে ঠিক কি নামে ডাকে তা অবশ্য আমি জানি না)। দোকানদারের কাছ থেকে যখন এই রকম কোন টুকটাক কিনতে যেতাম তখন হাপুস নয়নে তাকিয়ে থাকতাম দোকানীর খাবার রাজ্যের দিকে আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম আমি ও অনেক অনেক টাকা জমা করে একদিন এমন একটা দোকান দিব। তারপর সারা দিন আমার সেই দোকানে বসে থাকবো এবং যখন তখন টুপ করে মুখের মধ্যে খাবার চালান করে দিব। টাকা পয়সা জমানো ও হয় নি আর দোকানের মালিক ও হতে পারলাম না। ব্যাপক আফসুস নিয়ে আজও দিন কাটাই।:(( :((



- আমার বড় আপু তখন সেভেন কিংবা তার চেয়েও একটু উপরের ক্লাসে পড়তো। সেই সময়টায় ঈদে একজন আর একজনকে ভিউ কার্ডে নিমন্ত্রন করতো। প্রতি ঈদে আপু তার বন্ধু/বান্ধবদের কাছ থেকে অনেক অনেক এই রকম কার্ড পেতো যেগুলোর ফ্রন্টপেজ এ থাকতো বাংলা ছবির নায়ক-নায়িকাদের ছবি এবং তাদের নাম। সে যে কি মজা। শাবানা, আলমগীর, রাজ্জাক, ববিতা আরো অনেক নায়ক-নায়িকার নাম ও চেহারা চিনেছিলাম ঐ ভিউ কার্ডের অবদানে। আপু যতগুলো কার্ড পেতো সবগুলোর অলিখিত মালিক আমিই হয়ে যেতাম আর আমি ও অপেক্ষা করতাম কবে বড় হবো। বড় হলেই তো আমি অনেক বন্ধু পাবো এবং তারা আমাকে ভিউকার্ড দিবে। আর এখন যদি আমাকে কেউ নায়ক-নায়িকার ছবি ওয়ালা কার্ড দিয়ে ঈদের কিংবা অন্য কোন স্পেশাল ডে এর নিমন্ত্রন বা শুভেচ্ছা জানায় তবে আমি হাসবো না কাঁদবো তা বলতে পারবো না।


- তখন আমি ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। গ্রামে বেড়াতে গিয়ে দেখি চারপাশে সাজ সাজ রূপ। ঘটনা আর কিছুই না। পাশের গ্রামে যাত্রাপালা আসবে আর সেই পালাতে থাকবে বিখ্যাত নায়িকা শিবানী। আহ্, শিবানীর রূপের সে কি প্রশংসা। তাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে যাত্রাপালা দেখার সুযোগ নিয়েই ফেলেছিলাম । চুনকালি মাখা শিবানীর মুখের রূপ বুঝতে না পারলেও চারদিকে তার খ্যাতি দেখে আমি ও মনে মনে ঠিক করে ফেলি যে বড় হয়ে শিবানী হবো । একা মনে হাটতাম আর নিজেকে নায়িকা শিবানী ভেবে ভেবে চেহারায় কঠিন গাম্ভীর্যতা টেনে আনতাম।


- সবচেয়ে মজার ইচ্ছাটা সম্ভবতো ক্লাস নাইন এর দিকে। বিয়ে যাদি করতেই হয় তবে ক্রিকেটার বিয়ে করবো। ক্রিকেটার না পেলে বিয়ে করবো ই না। হাহাহা , কয়েকজন ক্রিকেটারকে তো ঘুমে-জাগরনে ই স্বপ্নে দেখতাম। মনের জানালা খুলে ইচ্ছার ডানা মেলে উড়ে যেতাম গ্যালারিতে আর অহংকারী দৃষ্টিতে দেখতাম ক্রিকেট রাজপুত্রকে।



- বড় হতে থাকলাম আর সেই সাথে পরিবর্তিত হতে থাকলো আমার ইচ্ছাগুলোর। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলাম। সেই সাথে মাথার মধ্যে ঘুর ঘুর করতে থাকলো নতুন একটা ইচ্ছা: গার্মেন্টস কর্মী হওয়া। এই ইচ্ছাটা অবশ্য পূরণ করেছিলাম আমি। ইচ্ছাপূরণের এই গল্পটা অন্যদিন না হয় বিস্তারিত জনাবো সবাই কে। B-) B-)



- এখন ও যেই ইচ্ছাটা নিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যাই সেটা হলো: কোন বাসার কাজের বুয়া হওয়া। অনেক দিন ধরেই ইচ্ছাটা মনের মধ্যে সুপ্ত এবং জাগ্রতভাবে লালন করে আসছি। সারা দিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে এক সময় দরজার আড়াল থেকে চোখ রাখবো সেই বাড়ীর টিভির দিকে আর মুখটা হা করেই হয়তো দেখতে থাকবো স্টার জলসা কিংবা জি বাংলা। কাজে কর্মে কোন ভুল হলেই রক্ষা হবে না। তবে আমাকে ওই বাড়ীর মানুষেরা বকা দিলেই আমি নিজেও আচ্ছা করে বকা দিয়ে দিব। এতো সহজ না কাজের বুয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করা। হু, বলে রাখলাম কিন্তু।তবে বিয়ে করার আগেই এই ইচ্ছাটা পূরণ করতে হবে। না হয় ঐ ভদ্রলোক আমার এই ইচ্ছার কথা শুনলেই বাপের বাড়ী চিরতরে পাঠিয়ে দিবে না হয় পাঠিয়ে দিবে পাবনার পাগল হাসপাতালে। ওহ্ হা, বিবাহযোগ্য ছেলে আছে এমন কোন বাসাতে কাজ করতে যাবো না, বিপদ আছে তাতে। ব্যাপক বিপদ ।।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১১
৪২টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×