somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরণ-বাঁচন

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি একেবারে মৃত্যুর দোরগোড়ায় থেকে ফিরে আসলো। যমদূতের সাথে কি হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়টা না করল সে! বাইরে থেকে দেখেই সবাই আৎতে উঠেছে, ভেতরের খবর আন্দাজ করতে পেরে কেউ কেউ বলেছে- এ সাক্ষাৎ ভগবানের কাজ! হিন্দুপাড়ায় বাড়ি কি না! পরাজয় ঘটলো যমদূতের অথচ মুখ ভার তার স্বামীর। বঙ্গ মিয়ার। জগতের সমস্ত মেঘ তার মুখে এসে জড় হয়েছে। জগতের এত এত মানষের মরণ হয়, আর শ্যালার মরণ এসি আমার উঠুনের ছুমুতে এসি আটকি গেল! যার পেটে ভাত নেই, অসুখ হলি চিকিৎসা নেই তার হয় না মরণ আর যার মরণের কোনো হেতুই নেই, শয়ে শয়ে বাঁচলিও যার বাঁচার খেদ মিটবি না সে কেমন টপ করি মরি গেল! আল্লার এ এক আজব বিচার। ও পাড়ার চেয়ারম্যানের ডাঙর হয়ে ওঠা মেয়েটার আকস্মিক মৃত্যুর কথা স্মরণ করে ভাবে বঙ্গ। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। বঙ্গ বিলের ধারে বাবলা গাছের তলে গায়ের জামাটা আসন করে বসে আছে। বিলের পানিতে পানকৌড়ির জলকেলি দেখার লোক সে না। সকাল থেকে তার চোখ ওদিকটাই যায়ওনি। সে আছে আপন ধ্যানে। ওখানে বসে থাকাটা একটা ঘটনা মাত্র। ভাবতে ভাবতে কখন যে সে এখানটাই বসেছে তা সে নিজেও জানে না। সামনে যে এক নদী পানি তাকে নকল করে গালে হাত দিয়ে ভাবনার ভান করছে তাতে তার নজর কোথায়!

বঙ্গের জীবনে কেউ বাঁচেনি বেশিদিন। দাদা-দাদী, নানা-নানীর মুখ সে দেখেনি। দাদা-দাদী মারা গেছে জন্মের আগেই। নানা-নানীর দেশ ওপারে। বঙ্গ বড় হওয়ার পর মরলেও তাদের মুখ দর্শন তার কপালে জোটে নি। বাড়ির বাছুরটার সাথে সাথে সে নিজেও যখন হালের উপযুক্ত হচ্ছিল তখনই গেল আববা। মা গেল তারও আগে- ওপারে না, ও-পাড়ার গেদু ব্যাপারীর সাথে পাশের গাঁয়ে। এই হল বঙ্গের জীবনবৃত্তান্ত। বললে আরও বলা যায় কিন্তু সে বড় একঘেয়ে। এক ঘেয়ে জীবনটা থেকে মুক্তি হব হব করেও হল না। বঙ্গর কী আর সাধে মন খারাপ! সে ভেবেছিল জীবনটাতে এইবার একটা ঘটনা ঘটবে। যে ঘটনার জন্যে পাঁচরকম মানুষ পাঁচটা কথা বলবে। একহারা জীবনটা দোহারা হবে। কত বড় বড় বাড়িতে তার নামে কথা উঠবে। হোক দোষ তবুও বঙ্গ নামে যে কেউ একজন এই সমাজে আছে তা তো জানবে সকলে! বঙ্গও যে কিছু ঘটাতে পারে সেটা জানাতে পারা তো আর কম কথা নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো কই? বঙ্গ চাইলেও এখন আর পারবে না। বৌর মৃত্যুর সম্ভাবনা শেষ, তার মানে তার সে সম্ভাবনারও সমাপ্তি ঘটল। এ তাদের দুজনারই জানা। কত স্বপ্ন এঁটেছিল দুজনে মিলে তার কি আর অত হিশেব আছে! এইবার গঞ্জে রথের মেলা বসলে আস্ত একটা খাট কিনে আনতো, বড় লোকদের বাড়ির মতো ডিজাইন করা খাট। দুজনেই টাকা গুছিয়েছিল বাড়িতে কটা ইট গাঁথবে বলে। মেয়ে হলে নাম রাখবে বৈশাখী, ছেলে হলে বাদল- হলে কি সে তো পেটে আছেই! এখন শুধু ঠিকঠাক মতো বউটা মরলেই হয়।

বঙ্গ যখন শুনেছে তার বউ আর মরবে না- কালু ডাক্তার বেহুদ্দার মতো জং পড়া দাঁত বের করে ভিড় ঠেলে যখন জানান দিয়েছে সে কথা- কই বঙ্গ? ভগবান তোর ডাক শুনিছে রে! এ-যাত্রা তোর বউ সাক্ষাৎ ভগবানের কাছ থেকি জীবন ছিনি নি এসিছে।- বঙ্গ তখন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ভেবেছে- আল্লাহ, জীবনে এই একটা প্রার্থনাই তো দু’জন মিলি করিলাম! একজনকে বাঁচি একুন তিন-জুনাকেই মারলি তো? তিনজন মানে সাথে মাঠ-পাড়ার মকলেছের বৌ আর আনবর্ন শিশুটা। মকলেছ পাঁচ বছর হল আরব দেশে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×