somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাগ নিয়ে ভাবনা (পর্ব-১)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাগ অপ্রয়োজনী বা অস্বাভাবিক কিছু নয়, বরং রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই স্বাভাবিক রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিমিষেই সব কিছুকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। ঘটে যাতে পারে সম্পর্কের ছাড়াছাড়ি বা অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা যা আমাদের প্রত্যাশিত নয়। তাই সব কিছু শেষ হবার আগেই আমাদের জানতে হবে রাগ হওয়ার পেছনের কারণ গুলো সম্পর্কে। যার সাহায্যে আমরা আমাদের রাগ টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব, ব্যবহার করতে পারব প্রয়োজনীয় কাজে (আমরা সবাই জানি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাগ ছাড়া কাজ হয় না) সে কারণে আমাদের শিক্ষতে হবে রাগের ইতিবাচক ব্যবহার, নেতিবাচক ভাবে নয়। আসুন আমরা আজকে জেনে নেই – রেগে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম একটির কথা, আর সেটি হল "প্রত্যাশা"।

প্রত্যাশাঃ
প্রত্যাশাকে রাগের অন্যতম কারণের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কি কারণে - আসুন আমরা সবাই একটু ভেবে দেখি আমাদের জীবনে যে রাগ গুলো করেছি, প্রত্যাশার সাথে তা সম্পর্কযুক্ত ছিল কি না!
০ বন্ধুর আব্বু প্রতিমাসে বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়/ বই, খাতা, কলম প্রভৃতি হারিয়ে ফেললেও কিছু বলে না/ বনভোজনে যাওয়ার অনুমতি দেয়/ সারাদিন ঘুরে বেড়ালে কিছু বলে না/ বেশি করে খরচ দেয়/ রাতে দেরি করে বাসায় ফিরে আসলেও কিছু বলে না ইত্যাদি। তাই আমরাও আমাদের বাবা-মায়েদের কাছে তাই প্রত্যাশা করেছিলাম। বাবা-মা যখনই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন; তখন আমরা রাগ করেছি বাবা অথবা মায়ের উপর, তাই নয় কি।
০ পরিচিত বা প্রতিবেশী বাড়ির ছেলে-মেয়েরা এতো লক্ষ্মী/ বুদ্বিমান/ খুব’ই ভাল রেজাল্ট করে/ বাবা-মায়েরা যা বলে, যেভাবে বলে তাই শুনে-তাই করে ইত্যাদি। আমার সন্তানটি কেন পাশের বাসার ছেলেটির মত নয়?, যাই বলি তাই কেন করেনা? বা পারেনা?; সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার প্রত্যাশা। আর প্রত্যাশা পূরণে সন্তানেরা ব্যর্থ হলেই তাদের প্রতি দেখানো হয় রাগ।
০ আশেপাশের বন্ধু-বান্ধবী/প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী-স্ত্রী’রা তুলনা করে তার দেখা ভাল একটি জুটির সাথে। অন্যেরা একে অন্যকে কত ভালবাসে, কথা শুনে, সময়কে মূল্য দেয়, খুশি করার জন্য কত কিছু করে প্রভৃতি। তবে কেন আমার ভালবাসার মানুষটি এমন? কেন প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ?
এমনিভাবে চারপাশে ঘিরে থাকে আমাদের প্রত্যশা, প্রত্যাশা আর অফুরন্ত এবং অত্যাধিক প্রত্যাশা। প্রত্যাশা পূরণ না হলেই আসে হতাশা এবং রাগ। তাহলে দেখাই যাচ্ছে, রাগের সৃষ্টি হতে পারে আমাদের করা কিছু প্রত্যাশা থেকে।
তাই রাগ থেকে বাঁচতে প্রত্যাশার পরিমাণ কতটুকু রাখবেন একটু ভেবে দেখেন।

লক্ষণীয়ঃ
একটু লক্ষ্য করুন, শুধুমাত্র অন্যের আচরণ দেখে সৃষ্টি হওয়া বা বাস্তববর্জিত প্রত্যাশার কারণে আমি কেন হতাশা এবং রাগের শিকার হব?
আমাকে বুঝতে হবে যে - আমি যা প্রত্যাশা করছি, যার কাছে করছি - তার কাছে তা প্রত্যাশিত নাও হতে পারে। সে কারণে – অপ্রত্যাশিত কোন কিছু পূরনে আপনি, আমি অর্থাৎ কেউ নিশ্চয়ই সচেষ্ট হব না।
হ্যাঁ, আমরা প্রত্যাশা করব। তবে আমাদের প্রত্যাশা হবে বাস্তবের সাথে মিল রেখে। অথবা যার কাছে প্রত্যাশা করছি তার যোগ্যতা/ ক্ষমতা বা ইচ্ছার সাথে মিল রেখে বা সে যতটুকু পারবে তার চেয়ে একটু কমিয়ে। কেননা, প্রত্যাশার বাইরে কিছু পেলে দেখবেন তা দিবে অপ্রত্যাশিত আনন্দ।
তাই আসুন আমরা আমাদের আপনজনদের এবং অন্যের প্রতি প্রত্যাশা কমিয়ে রাখি।

রাগের সময় করণীয়ঃ
ধরি, যে কোন কারণেই, আপাতত আমি রেগে গিয়েছি এবং আপনি জানেন আপনার রাগ ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যায় আপনার জীবনে, তখন আপনি কি করবেন?
আমরা জানি একটাই মাত্র উপায় - সেই ক্ষতিকর এবং ধ্বংসাত্মক রাগটিকে নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু কিভাবে?
তাহলে শুনুন, রাগ নিয়ন্ত্রনের জন্য অনেক ধরনের কলা কৌশল রয়েছে। আপনাকে আয়ত্ব করতে হবে সেগুলো। সে সমস্ত কলা কৌশলের মাঝ থেকে আমি আজ এখানে একটি কৌশল সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

* কৌশল> আত্ম-কথাঃ
০ যখন’ই বুঝতে পারব আমি রেগে গিয়েছি বা যাচ্ছি, সাথে সাথে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করব এই বলে, “আমি রেগে গিয়েছি বা যাচ্ছি” (এটাকে বলা হয়, রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ)
০ পরবর্তীতে আমরা ১০০০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টোদিকে গণনা শুরু করতে পারি বা বিপরীত কোন চিন্তা করতে পারি। যেমন, রেগে যাওয়ার বিপরীত চিন্তা – আমি শান্ত আছি বা আমার মন ভাল আছে বা আমি শান্ত আছি এই ধরনের কিছু কথা। রাগ কমে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবে বলতে থাকব। বেশ কয়েকবার বলার পর আশা করা যায় আপনার রাগটি পূর্বের তুলনায় কমে আসতে শুরু করবে। কারণ, রেগে যাওয়ার সময় শরীরের যে হরমোনগুলো আপনাকে রাগ বাড়াতে যে শক্তি প্রদান করেছে তা বিপরীত চিন্তার কারণে হ্রাস পেতে শুরু করবে (রাগ নিয়ন্ত্রণের দ্বিতীয় ধাপ)

০ এভাবে ক্রমশ রাগটি কমে আসতে শুরু করলে আমি তখন ভেবে দেখব, আমি কেন রেগে গিয়েছিলাম?
নিজেকে শান্ত রাখার জন্য ঐ মুহূর্তে রেগে না গিয়ে ঠিক কি করলে ভাল হত বা রেগে না গিয়ে আর কি কি করা যেত (রাগ নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় ধাপ)
# এমন ভাবনা এবং তদানুযায়ী কাজ করতে পারলে যেমনটি আমার বর্তমান রাগ যাবে কমে যাবে ঠিক তেমনিভাবে ভবিষ্যতের রাগ আসবে আপনার নিয়ন্ত্রণে।

কিছু চিন্তাই যদি হয় একটি সুস্থ জীবনের প্রধান নিয়ামক, তাহলে আসুন প্রত্যাশার বিপরীতে চিন্তা করতে শিখি।
ধন্যবাদ সবাইকে।

©মুহাম্মদ খোরশেদ আলম,
প্রশিক্ষনরত এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×