“মা আমারে একডা টম টম গাড়ি কিন্না দিবা মেলা থেইক্কা। আর সুমইন্নার মত ভট ভট করইন্না একডা লঞ্চ কিন্না দিবা। ও আমারে কাইলকা খেইলতে দেয় নাই।
মা, আমি আর কিছ্ছু চামু না। তুমি যা কইবা আমি সব হুনুম।
আমি পুরা রাস্তা হাইট্টা যামু মা, আমারে মেলায় নিয়া যাইবা।”
সন্তানকে কোলে নিয়ে মা ঘরে ফিরছে মেলা থেকে। বাচ্চাটির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করা জল পথ করে নেমে যাচ্ছে।
তাহলে কি বাচ্চাটির আব্দার পূরণ হয় নাই।
কিন্তু, ঐ তো দেখা যাচ্ছে,
সন্তানকে ধরে রাখা মায়ের এক হাতে টমটম গাড়ি। অন্যহাতে একটি ভটভটি লঞ্চ। উপরন্তু, মায়ের হাতে কিছু মুড়কিভাজাও দেখা যাচ্ছে।
তবে বাচ্চাটি কাঁদছে কেন?
চলুন, আরো একটু এগিয়ে দেখি, কিছু বুঝতে পারি কিনা।
বেলা পড়ে এসেছে - বহুদূরের পথ, হেঁটেই ফিরতে হবে। সন্তানটি এখনো বুঝে উঠতে পারছে না – “মা কেন তারে পাখি মারইন্না (নতুন আব্দার করা) বন্দুকটি কিন্না দিল না। সে এইটা দিয়া সুমইন্নারে আচ্ছা কইরা একডা শিক্ষা দিবার পারতো। বাড়িতে থাইকতে এইডার কথা তার মনে আহে নাই, এর লেইগা তারে কিন্না দিব না।”
তাই সে কাঁদছে। চোখ ভরা জল আর বুক ভরা অভিমান নিয়ে কাঁদছে। অন্যদিকে সন্তানের এতো করুণ কান্নার বিপরীতে মায়ের চোখ অশ্রুবিহীন।
বিস্ময়ে অবাক পৃথিবী!
সবাকেরা তাকিয়ে রয়!
মাত্র ১০ টাকা দামের বন্দুকটি কিনে দিল না। ৮ টাকা বললেই হয়তো দোকানদার দিয়ে দিত।
অন্যায় আব্দার, বাড়িতে থাকতে এইটার কথা বলে নাই, “বড় জ্বালায়” বলে বাচ্চাটিকে ধমকাতে ধমকাতে নিয়ে যাচ্ছে তার মা। আশেপাশের সবাই বিস্মিত।
বিস্ময়ে অবাক পৃথিবী!
সবাকেরা তাকিয়ে রয়!
আড়ালের খবরঃ
তোমরা হয়তো কেউ দেখ নাই, মায়ের আঁচলের এক কোণায় বাঁধা সবকয়টি টাকা দোকানিকে দিয়েছে সন্তানের আব্দার করা (টমটম গাড়ি আর ভটভটি লঞ্চ) হাসিটি কিনতে।
দিন-মজুরে বাবা কোথাও থেকে মেলার টাকা জোগাড় করতে পারে নাই। তাই মায়ের অর্ধানাহারে থেকে অতি কষ্টে জমানো মুষ্টি চাল, পাশের বাড়ির খালার কাছে বেঁচে যে কয়টি টাকা পেয়েছিল তাই শত ভাঁজে স্থান দিয়েছিল আঁচলে।
তোমরা হয়তো কেউ খেয়ালও কর নাই অথবা অবুঝ বাচ্চাটিও বুঝতে পারে নাই; মায়ের কোলে চড়ে মেলায় যাওয়ার সাথে ঘরে ফেরা মায়ের হার্টবিটটি মিলছে না। মিলছে না তার শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিও।
তাই জানে না কেউ,
মা তার এক বুক ভরা অভিমান কার প্রতি ছাড়বে ~ মা নিজেও তা জানে না।
♥(উৎসর্গঃ মা তোমাকে কখনো বলা হবে না. . .)♥
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১৬