ক্লান্ত লাগে নিজেকে। নিত্যকার ঘটনা আজ এগুলো। তাই হয়তো লেখার জন্য আগ্রহ পাই না। কিন্তু হঠাৎ করে সেদিন হাসপাতালে আসা শিশুটির কর্মকান্ডের কথা শুনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কাগজে/ন্যাকড়েতে আগুন জ্বালিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে "হরতাল-হরতাল"।
কত বছর হবে শিশুটির, ৫/৫+ !!!
এমনিকরে চলতে থাকা দিনে যদি কোন শিশু মুখস্ত করা শুরু করে "অ তে অবরোধ", অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
এখানেই সবকিছুর ইতি টানা, আজ-কাল বোধহয় স্বপ্নেও সম্ভব নয়। তাই সামনে এগোতে হয়।
আমার খুব নিকট আত্মীয় পুরুষ শাসিত সমাজে বড় বউ হয়েও স্বামীহীন অবহেলিত একজন নারী। বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে কাপড় বিক্রি করে একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে চলে তার দিনযাপন। মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে। বিয়েও দেয়া হল; অবশেষে শূণ্য ঘর। তাকে আরো শূন্য করার জন্য শুরু হল হরতাল আর অবরোধের খেলা। প্রতিটা ঘরে কষ্টের দিনাতিপাত, কাপড় কিনবে কে?
- তবুও মা যত কষ্টের মাঝেই থাকুক না কেন, সন্তানকে দেখতে মন ছুঁটে যায়।
বিপত্তি ঘটে আসার পথে। কোন দিক থেকে যেন উড়ে আসে একটি পেট্রোল বোমা।
মেয়ে খবর পায়, স্বামীর সুখ বঞ্চিত তার দুঃখী মা – অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
প্রতি ঘন্টায় চোখের পলকের মতো এসব খবর প্রচারিত হচ্ছে। কার কি আসে যায়। এটা’তো একজন খেটে খাওয়া হত-দরিদ্র মানুষের জীবন কথা। এর দায় বইবে একটি পরিবারকে ঘিরে থাকা কিছু মানুষ'ই। কষ্টটা একান্তই তাদের। কিছুদিন পর হয়তো আমরাও ভুলে যাব --- কিন্তু এ পরিবারের চোখের পানি থাকবে সারা জীবন!!!
বলতেছিলাম, প্রতি ঘন্টায় চোখের পলকের সাথে সাথে খবর পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতি দিনকার এমন খবরের পরেই এক দলের নেত্রী বলছেন, "হরতাল সফল হয়েছে। জনগণ মেনে নিয়েছে !!"
আরেক দলের নেত্রী বলছেন, "জনগন এ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশের মানুষ সুখে আছে !!"
প্রশ্ন জাগে, কারা এ দেশের মানুষ? কাদের জন্য প্রযোজ্য হয় এ সুখের সংজ্ঞা?
জানি আমাদের এমন হাজারো প্রশ্নে তাদের কিছু আসে যাবে না। ক্রমে অসহায়ত্ব গ্রাস করে। টলটলে চোখ বুঝতে পারে বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে আসতে চাচ্ছে।
বলব - কখনো অগ্নিদগ্ধ হই নি আমি।
তাই বলে আমার মস্তিষ্ক বিকৃতিও ঘটে নি।
তবুও বলতে হয় দিন শেষে বেঁচে আছি...