এনবি-আইওটি নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় এনবি-আইওটি (NB-IOT) নেটওয়ার্ক সুবিধা চালু করা শীর্ষ অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোনকে স্বীকৃতি দিলো মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন-জিএসএমএ।
অপারেটর গ্রামীণফোন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জিএসএমএর এই স্বীকৃতি একইসাথে বাংলাদেশ ও গ্রামীণফোনকে আইওটির বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে দিয়েছে।
বিশ্বের মাত্র ৪৫টি উন্নত দেশ এই টেকনোলজি (এনবি-আইওটি বা এলটি নেটওয়ার্ক) ব্যাবহার করছে, ভারত পাকিস্তান বা এশীয়া আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ এখনো শুরু করতে পারে নি। দক্ষীন আমেরিকায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনা ছাড়া কোন দেশ শুরু করেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে শুধু সৌদিআরব আর আমিরাতের আছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় এনবি-আইওটি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে।
এনবি-আইওটি কি?
ধরেন আমেরিকায় একটি বাসা ভাড়া নিলেন, খালি বাসায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ভাড়াটের নামেই বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হয়।
বিদ্যুৎ কম্পানী কয়েকটি। যে কোন একটাতে ফোন দেন, নাম ঠিকানা সোশাল সিকুরিটি ভেরিফিকেশন ফর্মালিটি শেষ করে ক্রেডিট কার্ডে টাকা জমা দিলেই কয়েকমিনিটের ভেতর বিদ্যুৎ চালু হয়ে যাবে।
কোন লোক এলো না, মই নিয়ে, কেমনে চালু হল?
কারন বিদ্যুৎ মিটারটি এনবি বা এল্টি-আইওটি কেপেবল। ধরেন নিউজার্সিতে মিটার, মিটারের ভেতর থেকেই লাইন অন করে দেয়া হয়েছে হাজার মাইল দূরে লসএঞ্জেলসের হেড অফিস থেকে। বিলও দেখছে তারা।
ন্যারো ব্যান্ড ইন্টারনেট অব থিংস (এনবি-আইওটি) এক ধরনের অত্যাধুনিক রিমোট যোগাযোগ প্রযুক্তি;
অফিসে বসেই তার বিহীন রাস্তার বাতি নেভানো/জালানো থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ গ্যাস, পানি মিটার।
দুরবর্তি বন্যা নিয়ন্ত্রন গেইটের সাটার বন্ধ করা, দুর্গম এলাকার পাওয়ার গ্রিড লাইনের সার্কিট ব্রেকার নিয়ন্ত্রন, জরুরি অবস্থায় গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইনের ভাল্ব বন্ধ করা। হাইওয়ে টোল নিয়ন্ত্রন, কত কি।
বেসরকারি ব্যাবহার এমনকি ব্যাক্তিগত ব্যাবহারও সম্ভব, কৃষকের ইরিগেশন পাম্প চালু/বন্ধ, বাসার দরজা লক, সিকুরিটি ক্যামেরা চালু করা, বাগানের পানি চালু/বন্ধ। ইত্যাদির মতো সারাদেশে কোটি মানুষের জন্য যোগাযোগে সংযোগ নিশ্চিত করবে।
আইনশৃক্ষলা বাহিনী অতি জরুরি অবস্থায় এলাকা ভিত্তিক ইন্টারনেট বা এলাকা ভিত্তিক মোবাইল নেটওয়ার্ক , মোবাইল কম্পানীগুলো গরিমসি করে বন্ধ করতে দেরি করলে নিজেরাই তাৎক্ষনিক বন্ধ করে দিতে পারবে।
বাংলাদেশে সাধারন আইওটি ব্যাবহার আগেও ছিল, তবে ব্যায়বহুল নিজস্য তারের নেটওয়ার্ক তৈরি করে এটিএম মেশিন নিয়ন্ত্রন, রেলওয়ের সিগনেল ও রিমোট রেল সান্টিং ইত্যাদি নিজস্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখনো চলছে।
আরো কিছু ইন্টার্নেট ভিত্তিক আইওটি বিচ্ছিন্ন ভাবে সেবা দিচ্ছিল। ফ্লোরা আইওটি নেটওয়ার্ক ব্যাবহার ছিল। তবে আই ট্রিপল ই মনোনীত নয় বলে সেটা খুব চলেনি।
তাজরিন ও রানাপ্লাজা বিপর্যয়, এরপর আরএমজি সেক্টরে পরবর্তি মন্দা সামাল দিতে ২০১৭ সালে রবি অবস্য একটি তারবিহীন মানসম্পন্ন আইওটি নেটওয়ার্ক চালু করেছিল, (এনবি-আইওটি না) শুধু পোশাক শিল্পে বিদেশী বায়ার/ম্যানুফ্যাকচারার দের জন্য। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক স্টার্ট-আপ কোম্পানি ‘এনসিংগা’র সাথে যৌথ রবি। এর ফলে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ (আইওটি)-ভিত্তিক স্মার্ট-ফ্যাক্টরি সল্যুশন চালু হয়েছিলো।
এনসিংগা’র নেক্সট জেনারেশন স্মার্ট-ফ্যাক্টরি শপ-ফ্লোর সল্যুশন’র (এনফ্যাক্টরি) মাধ্যমে পণ্যের গুণগত দিক বিশ্বমানের হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য সাথে সাথে পেয়ে যান বিদেশী বায়ার/উৎপাদনকারীরা।
'এনফ্যাক্টরি' হচ্ছে শিল্প খাতের জন্য আইওটি-ভিত্তিক সল্যুশন যা পণ্যের মানোন্নয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মিদের কার্যকর তথ্যাবলী প্রদান করে। পাশাপাশি এটি ফ্যাক্টরি প্রডাক্সন ফ্লোরের তাৎক্ষণিত তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডিজিটাল ভার্চুয়াল বেল্ট সৃষ্টি করে পণ্যের ত্রুটিগুলো সারিয়ে তুলতে সহায়ক হয়। এভাবে উৎপাদনের সকল পর্যায়ে সঠিকভাবে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে এই সল্যুশনটি। তবে রবি এই সার্ভিস অন্য সেক্টরে নিতে মাকেটিং চেষ্টা করতে দেখা যায় নি। কাউকে উৎসাহিত করেনি।
তবে এনবি-আইওটি আরো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিশ্বমানের ও সার্বজনিন।
এছাড়া এনবি-আইওটি অনেক বেশি সহজ ও বিদ্যুত সাশ্রয়ী। নিয়মিত ফোরজি যোগাযোগে যে ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন হয় এনবি-আইওটি প্রযুক্তিতে এনার্জি লাগে অনেক কম। অর্থাৎ, ইউটিলিটি ব্রেকার সেন্সর ও মিটারে আছে এমন সব রিমোট এলাকায় যেখানে ফোন কল করতেও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না, সেখানেও এনবি-আইওটি খুব সহজেই নিখুত সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করবে।
এর মাধ্যমে ভুগর্ভস্ত সুয়ারেজ নালায় স্থাপিত ওয়াটার মিটার কিংবা ৫ তলা নীচে বেজমেন্টে গাড়ি পার্কিং সেন্সর যেখানে মোবাইলে কল পর্যন্ত করা যায় না এখন থেকে সেসব কঠিন এলাকার সুইচেও এনবি-আইওটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশন বা ফায়ার সার্ভিস আইওটি ক্যাপাবল ডিভাইস বাধ্যতা মুলক করে দিয়ে বহুতল ভবনের অগ্নি নির্বাপন ত্রুটি, অনিরাপদ লিফট চিহ্নিত করতে পারবে, অফিসে বসেই।
এখন প্রশ্ন গ্রামিনফোন কি মুল্যে এই সার্ভিস দিবে।
গলাকাটা দাম রাখলে অন্য প্রভাইডাররা এই সার্ভিস দেয়া শুরু করলে দাম কমে আসবে হয়তো।
সুত্র - উইকিপিডিয়া, বিডিনিউজ২৪ ও বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সাইট থেকে। বাকিটা আমার নিজের লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:২৪