হায় হায় .. বাঙালি সামান্য কোমর দুলোনিতে চিত হয়ে পড়ে গেলে?
একটা গন্ডির ভেতর কজন দেশী বিদেশী নারী সামান্য কোমর দুলাইছে। পাছাও না বক্ষও না তাতেই সারা দেশে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প?
মানুষ নেচে গেয়ে আনন্দ করে নিজেদের সুস্থ রাখলে, মন সতেজ সবুজ রাখলে কিছু বাঙালী জাত গেল জাত গেল বলে ডায়রিয়া শুরু হয়ে যায়। সামান্য নাচ, এতই নাজায়েজ? নাচকে অশ্লীল মনে করা হয়?
নাচে কি সমস্যা? নাচ সমস্যা না বিদেশী নাচে?
ঢাকা লিটের্যারি ফেস্টিভ্যাল, সংক্ষেপে ঢাকা লিট ফেস্ট, একটি সাহিত্য উৎসব যা প্রতিবছর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ নাগরিক আহসান আকবর, কাজী আনিস আহমেদ,ও সাদাফ সায্ পরিচালিত এই উৎসবের আয়োজক সংস্থা যাত্রিক।
এই সাহিত্য উৎসব প্রথম আয়োজন করা হয় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে। একটি ব্রিটিশ সাহিত্য উৎসবের অনুসরণে তখন এর নাম ছিলহে লিটের্যারি ফেস্টিভ্যাল। সমালোচনার মুখে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এর নাম পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ঢাকা লিটের্যারি ফেস্টিভ্যাল, সংক্ষেপে ঢাকা লিট ফেস্ট। এই উৎসবের প্রধান তিনজন পরিচালক হলেন কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর।
২০১১ সাল থেকেই ঢাকা লিট ফেস্টের প্রতি বছর সমালোচনা হচ্ছে। তাদের মতে, এটি একটি নব্য-উপনিবেশবাদী প্রচেষ্টা।[৩] ব্যক্তিস্বার্থ ও গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করতে জাতীয়স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের বুকে তারা উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রভাব বইয়ে দিতে চায়।[২][৪] এই উৎসব আয়োজন বিভিন্ন কারণে বাংলা একাডেমির আদর্শ-নীতি-উদেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক।[৫] বর্তমানে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিছু উচ্চবিত্ত-বিশেষ শ্রেণি ও দেশি-বিদেশি সংস্থা দ্বারা অবহেলিত- অপমানিত
৯ নভেম্বর বিকেলে বাংলা একাডেমির ভাস্কর নভেরা হলে অনুষ্ঠিত ওই সেশনের শিরোনাম ছিলো
‘Ageing: The Secret of Life’।
পুরো সেশন জুড়ে কথা হয়েছে বয়স বেড়ে যাওয়াকে কীভাবে উদযাপন করা যায়। সেশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন নরওয়েজিয়ান লেখক অ্যানি ওস্টবি—যার বই পনেরটির বেশি দেশে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়, ফিনিশ লেখক মিন্না লিন্ডগ্রেন—যার ট্রিলজি দ্য সানসেট গ্রোভ শুধু ফিনল্যান্ডে নয়, বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলার হয়েছিলো, ওই ট্রিলজির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল সিনেমাও। উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ-ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক ইয়ারা রডরিগেজ ফাউলার এবং বিখ্যাত সাংস্কৃতিক প্রযোজক তেরেসা আলবর।
পুরো সেশন জুড়ে তারা বিভিন্নভাবে বয়স বেড়ে যাওয়ার এবং লেখকসত্তার ওপর তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৬২ বছর বয়সী তেরেসা আলবারের আকর্ষণীয় পারফরম্যান্স দিয়ে সেশন শুরু হয়। আয়োজনে তেরেসা বলেন, ‘তরুণ বয়স থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষকে বার্ধক্যে পা রাখতে হয়। বার্ধক্যে সমাজে নানা মানুষের অবহেলা, কটুকথার সম্মুখীন হতে হয় নারীদের। বার্ধক্য মানে জীবনের সব রঙ ফুরিয়ে যাওয়া নয়। বার্ধক্য হতে পারে রোমাঞ্চকর, হতে পারে উপভোগ্য।’
লেখক মিননা লিন্ডগ্রেন সম্মতি রেখেই বলেন, ‘বয়স কেবল একটি সংখ্যা, বার্ধক্য নারীকে তাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা থেকে বিরত রাখতে পারে না; বরং তা পূরণ করার মধ্যেই রয়েছে এ সময়ের সুখ ও শান্তি। বার্ধক্য কোনও লজ্জা নয়।
অ্যানি ওস্টবি তার প্রকাশিত ‘হাভসং’ বই থেকে কিছু লাইন আবৃত্তি করে শোনান। তরুণ থেকে বৃদ্ধ হওয়া এই বাস্তব পর্যায়টিকে মেনে নিয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। এটিকে সুন্দরভাবে মেনে নেওয়াই শ্রেয় বলে মনে করেন অ্যানি।
এবং একেবারে শেষে বেড়ে যাওয়া বয়সকে আনন্দে উদযাপন করার একটি উদাহরণ স্বরূপ সবাই বাংলা মমতাজের ‘লোকাল বাস’ গানের সঙ্গে দেশি-বিদেশী কিছু কবি-লেখক নেচেছেন, নাচের পোশাকে নয় যে যেই পোশাকে এসেছিলেন আর তাকে নাকি বাংলা সংস্কৃতির বারোটা বেজে গেছে,
অর্থাৎ সকল বিবেচনায়, নাচটি সেশনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিলো। অনেকদিন আগে (৮০ দশকে) বিটিভিতে রুনা লায়লার হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে গান করার প্রতিবাদে বাংলা সংস্কৃতির তখনকার তথাকথিত ধারক-বাহকরা খুব সরব হয়েছিলেন। ‘জাত গেল’ ‘জাত গেল’ বলে মাতম করেছিলেন।
লিট ফেস্টের যে সেশনটির মূল বক্তব্যই ছিল, ‘জীবনটা বৃদ্ধ হলেই শেষ হয়ে যায় না’। সেখানে তো বরং যেমন খুশি তেমন করে এমন নির্মল আনন্দ উদযাপন করাই যুক্তিযুক্ত। তাই তো তারা নেচে গেয়ে উক্ত বার্তাটিই দিতে চেয়েছেন।
যে সমাজ বয়সী নারীদেরকে হেয় করার জন্য ‘বিগতযৌবনা’ বলে তাচ্ছিল্য করে, অবহেলা করে। সেই সমাজের চোখ তো টাটাবেই, জ্বালা করবেই। এই নাচটি সেই সমাজের বিরুদ্ধেই একটি প্রতীকি প্রতিবাদ।
এর আগেও ২০১০ এ ইসলামি ফাউন্ডেশনে শিক্ষা সফরে আমেরিকা থেকে আগত একদল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রী নেচেছিল।
দু দেশের সুংস্কৃতির অংশ হিসেবে এরা সারাদিন ইসলামি ফাউন্ডেশনে কাটায়। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা হামদ-নাত-ক্বেরাত ইত্যাদি আরবি-বাংলা-ইংরেজিতে পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান শেষের দিকে বিদেশী অতিথিদের মঞ্চে আহবান করা হয় কিছু একটা পারফর্ম করার জন্য, বিদেশী ছেলে-মেয়েরা কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই অল্প কিছুক্ষনের জন্য হাতে তালি দিয়ে এবং পায়ের স্টেপ দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠান শেষে ২-৩ মিনিটের নাচ খুবই প্রানবন্ত ও দর্শক মোল্লারা সবাই করতালি দেয়াতে উপস্থিত দুএকজন মানুষের ভাল লাগে নি, মানবজমিন ও আমার দেশ পত্রিকায় জানিয়ে দেয়।
পরদিন পত্রিকায় শিরনাম হয় ইসলামী ফাউন্ডেশনে ডিস্কো নৃত্যের আসর।
view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১১