somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন হাদিস ও বিজ্ঞান

২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমানেরা কেন এত দরিদ্র ও মুসলমানেরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে কেন এত পিছিয়ে? এই দু’টি প্রশ্ন অনেক জ্ঞানপিপাসুকে ভাবিয়ে তোলে, অনেকের মনে সন্দেহ জাগে, তাহলে কি ইসলাম ধর্মে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও জ্ঞানার্জনকে উৎসাহ দেয়া হয়নি? এই সন্দেহ নিরসন করতে হলে প্রথমেই বলে রাখা দরকার ইসলাম ধর্মে জ্ঞানার্জনকে যে কী অপরিসীম গুরুত্ব দান করা হয়েছে, তা কল্পনাই করা যায় না।
কুরআনে প্রথম যে পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়, তার মধ্যে ছিল সর্বপ্রথম পড়ার কথা, তারপর মানব সৃষ্টির (Medical Science)কথা, তার পর কলমের কথা। কিছুকাল বিরতির পর আবার যখন আয়াত নাজিল হলো, তখনো সেই কলমের কথা। অথচ কী দুঃখের কথা যে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ কলম ব্যবহার করতে পারে না। কুরআনে এলেমের (সায়েন্সের আরবি অনুবাদ এলেম) কথা বলা হয়েছে বহু জায়গাতে। ইসলাম সাম্যের ধর্ম। কিন্তু জ্ঞানের ক্ষেত্রে এই সাম্য টেকে না। কুরআনে বলা হয়েছে, যারা জানে ও যারা জানে না তারা কি সমান? আল্লাহ যে এক ও অদ্বিতীয় তার সাক্ষী মানা হয়েছে জ্ঞানী ব্যক্তিকে। বলা হয়েছে, জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করেন; কারণ জ্ঞানী ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে, মহাবিশ্বে জীব ও জড়ের শাসনে যে নিয়মাবলি কাজ করে, তা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলÑ এই শৃঙ্খলার মধ্যে এতটুকু বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে পরিবেশ হতে পারে মারাত্মকভাবে বিঘিœত। জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানী ব্যক্তির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে হাদিসেও। জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন হলে চীনে যাও, রাতে কিছুক্ষণ জ্ঞানচর্চা সারা রাত্রির নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম, জ্ঞানী ব্যক্তির কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও মূল্যবান, জ্ঞানার্জন প্রত্যেক নর ও নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্য কর্তব্যÑ এসবও হাদিসেরই কথা। কুরআনে প্রায় ৭৫০ (সাড়ে সাত শ’) আয়াত রয়েছে, যেগুলো বিজ্ঞানের সাথে কোনো-না-কোনোভাবে সম্পর্কিত এবং অবাক হতে হয় এটি দেখে যে, কুরআনের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের কোনো সঙ্ঘাত (Conflict) নেই, আছে সামঞ্জস্য (Concordance) কুরআনে যেসব ঘটনাকে আয়াত (নির্দেশনাবলি) বা আয়া (এক বচন, মানে নিদর্শন) বলা হয়েছে (যথা মহা বিশ্বের সৃষ্টি, প্রাণের সৃষ্টি, দিবারাত্রির পরিবর্তন, জীবজন্তুর বিস্তারণ, মেঘমালার বিচরণ প্রভৃতি) সেগুলোর প্রায় সবই বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এ অর্থে বিজ্ঞান আল্লাহর আয়াত (নির্দেশনাবলি)। বিজ্ঞানের সাথে কুরআনের কোনো সংঘর্ষ নেই এ কারণে যে, কুরআনে একাধিকবার বলা হয়েছে, কুরআন হক বা সত্যসহকারে নাজিল হয়েছে, সৃষ্টির সব কিছুই করা হয়েছে সত্যসহকারেÑ আর বিজ্ঞানীর কাজও সেই সত্যকে আবিষ্কার করা। কোনো বিজ্ঞানীই কোনো নিয়ম বানান না। বিজ্ঞানীরা সৃষ্টির মধ্যে বিরাজমান নিয়মগুলো আবিষ্কার করেন মাত্র। কুরআনে এ সত্য উদঘাটনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে বারবার।
বলা হয়েছে ধর্মে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। পরের কথাগুলোও মর্মস্পর্শী : সত্য-অসত্য থেকে এত স্পষ্ট যে, জোর জবরদস্তির কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সত্য জোরালো বস্তু, যা বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন আর কুরআন এ সত্যের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। Maurice Bucaille তার লেখা The Bible the Quran and Science গ্রন্থ লিখেছেন ‘Ôthere is not a single verse in the Holy Quran which is assailable from the scientific point of view’ অর্থাৎ ‘কুরআনে এমন একটি আয়াত নেই যাকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দিয়ে ঘায়েল করা যায়। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ “Scientific Indications in the Holy Quran” এই সত্যকে আরো গভীরভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, কুরআনে বিজ্ঞানের কথা এত আছে, অথচ আমরা তা জানতে পারি না কেন? এর জবাবে বলতে হয়, আমাদের গ্রামগঞ্জে যেসব ধর্মীয় ব্যক্তি ওয়াজ করেন, তারা কুরআন-হাদিস পড়েন ঠিকই, কিন্তু বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক না থাকায় কুরআনের যেসব আয়াতে বৈজ্ঞানিক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে (যেমন প্রতিটি ‘বস্তু’ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে), সেগুলোর অর্থ অনুধাবন করে জনসমক্ষে বলা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। যে উদাহরণটি এখানে দেয়া হয়েছে সেখানে ‘বস্তু’ বলা হয়েছে, প্রাণী নয়। প্রাণী যে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে সে কথাও কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে সেটি বুঝতে সাধারণ মানুষের কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু বস্তু (প্রাণহীন) জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছেÑ এ কথা বোঝা গেছে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে। এই শতাব্দীর প্রথমার্ধে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী P A M DIRAC দেখিয়েছেন, প্রতিটি Particle-এর (বা কণার) একটি করে antiparticle (প্রতি কণা) রয়েছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে সম্পর্ক না থাকলে শুধু ধর্মে পারদর্শী ব্যক্তিরা এগুলো বুঝতে পারেন না। এ দিকে দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য, যারা বৈজ্ঞানিক গবেষণারত, তাদের অনেকেই কুরআন পড়েন না বা কুরআনের অর্থ জানেন না। এক কথায় যারা কুরআন জানেন, তারা বিজ্ঞান জানেন না, আর যারা বিজ্ঞান জানেন, তারা কুরআন জানেন না। ইসলামের অগ্রযাত্রায় একটা বড় সমস্যা কিন্তু সেখানেই। আর ঠিক এ কারণেই জ্ঞানপিপাসুদের সামনে আমরা এ কথা তুলে ধরতে পারিনি যে, ইসলাম একটি Scientific ধর্মÑ এখানে যে Do’s ও Don’ts আছে (অর্থাৎ যেসব বিধিনিষেধ আছে) তার প্রতিটির পেছনে আছে একটি Scientific basis বা যুক্তি। এখানে কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন বিজ্ঞান না পড়ে কি কেউ ইসলাম ধর্মচর্চা করলে ব্যর্থ হবেন? এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে যাচাই করার প্রশ্নই ওঠে না। কুরআন-হাদিস সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি প্রত্যেক মুসলমানের বিশ্বাস। তবে বিজ্ঞানের আলোকে কুরআনের আয়াতগুলো অনুধাবন করলে, যার ঈমান নেই, তার ঈমান আল্লাহর ইচ্ছায় আসতে পারে। আবার যার ঈমান একটু কমজোর, তার ঈমান আরো মজবুত হতে পারে। আর ভালো করে বুঝতে পারার একটা আনন্দ তো আছেই।
আমরা এবার গোড়ার প্রশ্নে ফিরে আসি। মুসলমানেরা দরিদ্র কেন? জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনগ্রসর কেন? আসলে প্রশ্ন দু’টি পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। আজ-কাল আমরা বলছি, The future belongs to knowledge অর্থাৎ জ্ঞান যার যত করায়ত্ত ভবিষ্যৎ কর্তৃত্বও থাকবে তার তত বেশি। কুরআনে বলা হয়েছে, যাকে জ্ঞানদান করা হয়, তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়। জ্ঞানই কল্যাণ।
এ সত্য মুসলমানেরা ইউরোপ যখন অজ্ঞতার অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, তখন ভালো করেই বুঝেছিলেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে উদ্দীপ্ত হয়ে হাজারো বছর ধরে পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছিল। আজ আরেকবার মুসলমানদের এ সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। কলমের (অর্থাৎ জ্ঞান) ব্যবহার বাড়াতে হবে। আর কালাম (আল্লাহর বাণী) পালন করতে হবে। এক হাতে কালাম ও অন্য হাতে কলমÑ এ অবস্থায় নিজেদের আনতে পারলে অজ্ঞতা থাকবে না, আর তখন দারিদ্র্যও থাকবে না। জ্ঞানপিপাসুদের প্রশ্ন আরো অনেক আছে। মহাবিশ্বের উদ্ভব হলো কী করে? প্রাণের উদ্ভব ঘটল কী করে? এসব প্রশ্ন কুরআনেও উত্থাপিত হয়েছে এবং যেসব সমাধানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেগুলো অনেক দিনের সাধনার ফলে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
জ্ঞানের শেষ নেই, গবেষণারও শেষ নেই। আর শেষ কথা বলেও কিছু নেই জ্ঞানচর্চার জগতে। তাই কুরআনের সব কথা যদি হালের জ্ঞান দিয়ে বোঝা না যায়, তবে অধৈর্য না হয়ে এটি বিশ্বাস করতে হবে যে, কুরআন মহাজ্ঞানী এক স্রষ্টা প্রতিপালক থেকে অবতীর্ণ, এর সব কথাই সত্যি, জ্ঞানের অগ্রগতি আরো হলে এ সত্য আরো ধরা পড়বে।
হাদিসেও যে বিজ্ঞানের প্রতি ইঙ্গিত আছে এখন সে কথাও জনসাধারণকে ভালো করে জানানো দরকার। আল্লাহর রাসূল হজরত মুহাম্মাদ সা: কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা এমনকি কোনো স্কুলেও পাঠ নেননি। তা হলে তিনি বিজ্ঞানের প্রতি ইঙ্গিত দিলেন কেমন করে? এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা অনুশীলনের মাধ্যমে যে জ্ঞান সংগ্রহ করি, তা হচ্ছে derived knowledge বা সংগৃহীত জ্ঞান। কিন্তু আমাদের নবীজির জ্ঞান ছিল Revealed knowledge অর্থাৎ নাজিলকৃত জ্ঞান। স্বয়ং আল্লাহই ছিলেন তাঁর শিক্ষক। সূরা নাজমে বলা হয়েছে যে নবীজি কোনো মনগড়া কথা বলতেন না, তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছিল ওহি এবং আল্লাহ তাকে শিক্ষাদান করেছিলেন শক্তিশালী জিবরাইলের আ: মারফত। আল্লাহ যেখানে নিজেই নবীজীকে শিক্ষা দিয়েছেন, সেখানে নবীজীর উক্তিগুলো যে বিজ্ঞানসম্মত হবেÑ তাতে আর সন্দেহ কোথায়? নবীজী যেসব কাজ করতে বলেছেন এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন; সেগুলো একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যায় যে সেগুলো সত্যিই বিজ্ঞানসম্মত। নবীজীর জ্ঞান যে সুদূরপ্রসারী ও সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তা কয়েকটি হাদিসের বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়।
আবু হুরায়রা থেকে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে : এক দিন এক ব্যক্তি নবী করিম সা:-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমার একটি কালো সন্তান হয়েছে; ওই ব্যক্তি স্বভাবতই কালো রঙের সন্তান আশা করেননি। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন ভিন্নতর এক প্রশ্নÑ ‘তোমার উট আছে? লোকটি উত্তর দিলেনÑ জি আছে। উটগুলোর রঙ কী? নবীজী আবার ও জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি উত্তর দিলেনÑ লাল রঙের। নবীজীর পরের প্রশ্নÑ সব লাল রঙের, একটাও কি ধূসর বর্ণের নেই। এবার লোকটি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা ধূসর বর্ণের উট আছে বটে। এবার নবীজী লোকটিকে প্রশ্ন করলেনÑ ‘অনেক লাল উটের মধ্যে হঠাৎ ধূসর রঙের উট এলো কেমন করে? লোকটি উত্তর দিলেন, একটি গুপ্ত বৈশিষ্ট্য এই ধূসর রঙটিকে টেনে বের করে এনেছেÑ এবার নবীজী লোকটিকে বুঝিয়ে দিলেনÑ ‘তোমার সন্তানের কালো রঙটিও টেনে বের করে এনেছে একটি গুপ্ত বৈশিষ্ট্য। প্রসঙ্গত, উল্লেখযোগ্য যে এই গুপ্ত বৈশিষ্ট্যকে genetics বা বংশগতি বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় hidden trait ভাবতে অবাক লাগে যে আজ থেকে চৌদ্দ শ’ বছর আগে এই হাদিসে নবীজী যে প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছিলেন, তা ছিল Recessive genes বা সুপ্ত genes -এর কথা যা traits রা জানতে পেরেছেন অনেক পরে। প্রসঙ্গত, উল্লেখযোগ্য যে মানবদেহের বিভিন্ন ঃৎধরঃং বা বৈশিষ্ট্যের জন্য এক বা একাধিক genes দায়ী। gene হচ্ছে জীবকোষের মধ্যে অবস্থিত DNA বা Dioxyribo Nucleic Acid নামক যে ÔMaster molecule of lifeÕ বা বংশগতির নীলনকশা নির্ধারক যে অণু রয়েছে, তার অংশবিশেষ, যা বিশেষ কয়েকটি Chemical compounds দিয়ে তৈরি। বংশপরাণুক্রমে এই gene- গুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে transmitted বা প্রবাহিত হয়, প্রজনন কোষের মারফত। যেসব মা-বাবার চোখ কালো, তাদের সন্তানের চোখ কালো হবে, সেটিই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে কালো চোখের জন্য যে gene- গুলো দায়ী, সেগুলো সন্তানের মধ্যে সরাসরি প্রকাশিত হয়, এগুলোকে বলা হয় dominant genes এখন বংশগতির কোনো একপর্যায়ে কোনো এক পূর্বপুরুষের চোখ যদি নীল থেকে থাকে, তবে সেই নীল চোখের জন্য দায়ী gene গুলো সরাসরি প্রকাশিত না হয়ে বেশ কয়েক generation ধরে hidden বা সুপ্ত থাকতে পারে এবং হঠাৎ কালো চোখওয়ালা বাবা ও কালো চোখওয়ালা মায়ের সন্তানের মধ্যে সেই পূর্বপুরুষের নীল চোখের জন্য দায়ী gene-গুলো যেগুলো এতকাল recessive বা সুপ্ত ছিল, সেগুলো যদি হঠাৎ করে প্রকাশ পায়, তবে মা-বাবার চোখ কালো হওয়া সত্ত্বেও সন্তানের চোখ নীল হতে পারে এবং তা মাঝে মধ্যে হতেও দেখা যায়। মা-বাবার গায়ের রঙ সাদা হওয়া সত্ত্বে সন্তানের রঙ কালো হতে পারে এবং সেটি ঠিক এ কারণেই। ভাবতে অবাক লাগে যে dominant genes এবং recessives gene-গুলো আমরা ভালো করে জানতে পেরেছি এ মাত্র সেই দিন, আর আমাদের মহাজ্ঞানী নবী সেগুলোর প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন কত শত বছর আগে। নবীর হাদিসটিতে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয়, তা হচ্ছে উটের বৈশিষ্ট্যের সাথে মানুষের বৈশিষ্ট্য তুলনা করেছেন তিনি, অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে laws of heredity অর্থাৎ বংশগতির নিয়মকানুন, জীবজন্তু ও মানুষের বেলায় similar বা সদৃশ এবং এটি আধুনিক বংশগতিরও কথা।
এবার পরিবেশসংক্রান্ত একটি হাদিসের আলোচনা করা যাক। আজকের বিশ্বে পরিবেশ একটি বহুল আলোচিত বিষয়, কিছু দিন আগে Brazil এ Rio di genero তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ধারত্রী সম্মেলন বা বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন। এর পরপরই বিশ্বজুড়ে পরিবেশসংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন NGO (Non Government Organization বিভিন্ন ক্লাব পরিবেশের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন, চার দিকে গাছ লাগানোর একটি হিড়িক লক্ষ করা যায়, এ হিড়িক একটি শুভ পদক্ষেপ, যদি অবশ্য গাছ লাগানোর ব্যাপারটা এলোপাতাড়ি না হয়ে সুপরিকল্পিত হয় এবং ব্যাপারটিকে monitor করা হয়, কোনখানে গাছ বাঁচল না, কোনখানে আবার লাগাতে হবে, সেসব দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, গাছের অস্তিত্বের সাথে আমাদের ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়ি, বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি, গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ছাড়ে। আমরা যদি বেশি মাত্রায় গাছ কেটে ফেলি এবং তা জ্বালাই, তাহলে এক দিকে যেমন আমাদের এবং যানবাহন, কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত গাছ রইল না, অন্য দিকে কাঠ পোড়ানোয় বাতাসে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংযোজন করলাম; অর্থাৎ বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড build-up বা পুঞ্জীভূত হতে থাকল। এ কথা সুবিদিত যে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, water vapour, Nitrous oxide, methane প্রভৃতি গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেলে ভূপৃষ্ঠে যে সৌরতাপ এসে পড়ে তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেই আটকা পড়ে যায় অধিকমাত্রায়; এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় green house effect. এই তাপমাত্রা বাড়ার ঘটনাকে বলা হয় global warming| তাপমাত্রা বাড়লে বরফ গলবে বেশি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে, সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো তলিয়ে যাবে; এ এক ভয়াবহ পরিণতি। এসব কথা ভেবেই সব দিকেই গাছ লাগানোর দিকে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে, বেশি গাছ থাকলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমবে। তা ছাড়া গাছ মাটিকে আঁকড়ে রাখে, নদীর তীরে গাছ থাকলে soil erosion বা ভূমিধস(?) হয় না, গাছের সাথে পরিবেশ সংরক্ষণ ও বন্যার প্রকোপ প্রভৃতি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশে যেখানে ৮৬ শতাংশেরও বেশি মানুষ মুসলমান, সেখানে গাছ লাগানোর প্রেরণা তো অনেক আগেই আসা উচিত ছিল হাদিস থেকে। গাছ লাগানোর প্রতি নবীজী অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। কাঞ্জ-উল আমলে হজরত বিবি আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত একটি হাদিস অনুযায়ী নবীজী বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে রোজ কিয়ামত এসে গেছে, তথাপি তোমার হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে যা লাগানো যায়, তবে সেই চারা লাগাবে’।
আমরা সবাই জানি যে রোজ কিয়ামত কখন হবে সে জ্ঞান আল্লাহ দেননি। রোজ কিয়ামত যখন হবে, তখন গর্ভবতী উষ্ট্রীর গর্ভও প্রত্যাখ্যাত হবে, তখন কে কার কথা ভাববে, দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি শুরু হয়ে যাবে। এ অবস্থায় চারা লাগাতে যাবে কে? অথচ এ অবস্থায় ও চারা লাগাতে বলা হয়েছে। এ হাদিসের মারফত নবীজী বৃক্ষরোপণের প্রতি যে অসাধারণ গুরুত্বারোপ করেছেনÑ তার তুলনা হয় না। হাদিস অনুসরণ করতে হবেÑ এ কথা মনে করেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা যদি গাছ লাগাতে শুরু করে এবং শুরু করা উচিতও, তবে তা হবে দেশের জন্য একটি শুভ পদক্ষেপ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করুন, আমরা সমুন্নত হই, একবিংশ শতাব্দীর গোড়াতে মহান রবের কাছে এই হোক আমাদের প্রার্থনা।

ড. এম শমশের আলী
তারিখ: ২৬ অক্টোবর, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৪৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×