বিশ্বে বসবাসরত প্রাণিকুলের মাঝে মানবজাতিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি তো আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমূদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে উত্তম রিজিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর এদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (বনি ইসরাইল : ৭০)। মূলত মানবজাতির জন্যই এ পৃথিবীর সৃষ্টি। মানবজাতি ছাড়া অন্য সব কিছু আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা মানবকল্যাণেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তিনি সব কিছু তোমাদের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন।’ (বাকারা : ২৯)। মানবজাতি সমাজবদ্ধ জাতি। পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী পরিবেষ্টিত এ সমাজ। এ সমাজে থাকবে শান্তির নিশ্চয়তা, জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তা। ইসলামী সমাজের এ হলো এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সকল মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের ওপর তার রক্ত, তার সম্পদ ও তার ইজ্জতের ওপর আঘাত হানা হারাম।’ (মুসলিম : ৪৬৫০)। কুরআনে কারিমে ঈমানদার বান্দাদের বিশেষ বিশেষ গুণাবলির উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহের ইবাদত করে না। আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। যারা এমন কর্মে লিপ্ত হবে তারা শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন এ অপরাধের দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানে সে অপমানকর অবস্থায় চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (ফুরকান : ৬৮-৬৯)। আর এভাবেই আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইসলামী সমাজব্যবস্থার নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।
মানুষের মাঝে আল্লাহ পাক দু’টি সত্তা রেখেছেন। এক. কুপ্রবৃত্তি, দুই. সুপ্রবৃত্তি। কুপ্রবৃত্তি মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে। আর সুপ্রবৃত্তি মানুষকে সৎ পথে চলতে উৎসাহিত করে। কুপ্রবৃত্তি পরিচালিত হয় শয়তানের প্ররোচনায়। সুপ্রবৃত্তির মানুষ পরিচালিত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদর্শিত আদেশ-নিষেধের ওপর। তাদের ঈমানি শক্তি ও চেতনায় তারা সব ধরনের অনাচার-পাপাচার থেকে বিরত থাকতে সম হয়। তারা হয় ন্যায়নীতির পথিকৃৎ। অন্যায়-দুর্নীতি তাদের স্পর্শ করতে পারে না। তাদের দ্বারা সমাজে বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজ সংঘটিত হয় না। অপর দিকে কুপ্রবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়। লোভ-লালসা, সম্পদের মোহ, মতার আকর্ষণ ইত্যাদি কারণে সমাজে তারা বিভিন্ন ধরনের অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত হয়। জানমালের য়তিসহ নানা ধরনের অপরাধে লিপ্ত হয় যা সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘিœত করে। ঠকবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি, ধোঁকা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তারা অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে। এ জন্য প্রয়োজনে তারা আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষে গোলাগুলি ও বোমাবাজির আশ্রয় গ্রহণ করে। ইসলামী সমাজে কখনো এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোকে শরিয়তে হারাম করা হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় এসব গর্হিত কাজকে কোথাও ‘ফাসাদ’ বলা হয়েছে, আবার কোথাও বলা হয়েছে ‘জুলুম’ ও ‘সীমালঙ্ঘন’। আর কুরআনে কারিমে বেশ কয়েক স্থানে বলা হয়েছে, যারা এমন কাজে লিপ্ত হয় তারা জালিম, তারা মুফসিদ। তাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন না এবং তাদেরকে সুপথের সন্ধানও দেন না। বিভিন্নভাবে এদের নিন্দা করা হয়েছে। (দ্রষ্টব্য, মায়েদা : ৬৪, কাসাস : ৪ও৭৭, ইউনুস : ৯১, আল ইমরান : ৫৭ ও ১৪০, মায়েদা : ৫১, আনআম : ১৪৪, বাকারা : ১৯০, মায়েদা : ৮৭ সংশ্লিষ্ট আরো অন্যান্য আয়াত)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এতটুকুতেই থেমে থাকেননি। যারা এমন আচরণ করবে; এমন অপরাধে লিপ্ত হবে; রাস্তাঘাটে, ঘরে-বাইরে, অফিসে-দোকানে যেকোনো পন্থায় চুরি-ডাকাতি করবে; রাহাজানি-ছিনতাই ও মাস্তানি করে অরাজকতা সৃষ্টি করবে; সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে; জানমাল, ইজ্জত-আবরু ও সামাজিক শান্তির পথে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে; তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ জব্বার কাহহার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এ জমিনে তাদের জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছেন এবং আখেরাতেও তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক আজাবের কথা বলেছেন। এসব অন্যায়-অপরাধ দমনে শান্তি ও জানমালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় শাস্তির যে বিধান রাখা হয়েছে, সেগুলোই হলো শরিয়া আইন, জাকে ফিকাহর পরিভাষায় ‘উকুবাত’ বলা হয়। হদের বহুবচন হুদুদ। হুদুদ সব বিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উকুবাত হুদুদের একটি প্রায়োগিক অংশ।
হত্যা জঘন্যতম একটি অপরাধ। স্বার্থের বশে মানুষ একে অপরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, একজন অপরজনের প্রাণ কেড়ে নেবে; ইসলাম এটা কোনোভাবেই সমর্থন করে না। জীবনদাতা আল্লাহ, মৃত্যুদাতাও আল্লাহ। তিনিই জীবনের মালিক, তিনিই মৃত্যুর মালিক। এ মালিকানায় অন্য কেউ হস্তপে করুক, এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। আর এ জন্যই মানবহত্যাকে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ জন্যই মানুষ যত কষ্ট বা বিপদেই পড়–ক না কেন আত্মহত্যা হারাম করা হয়েছে। কেউ হত্যার মতো অপরাধে লিপ্ত হবে আর তার কোনো শাস্তি হবে না, এটা তো হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ এর জন্য ‘কিসাস’-এর বিধান দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, ‘হে ওই সব লোক যারা ঈমান এনেছ! হত্যায় নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের (শাস্তি হিসেবে হত্যাকারীকে হত্যা) বিধান লিপিবদ্ধ (ফরজ) করা হয়েছে।’ (বাকারা : ১৭৮)। আরো বলা হয়েছে, ‘আর হে বোধসম্পন্ন বিবেকবান লোকেরা! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে জীবন, যাতে তোমরা মুত্তাকি ও সাবধান হতে পারো।’ (বাকারা : ১৮৮)। অর্থাৎ কিসাসের বিধান অন্যায় হত্যা বন্ধ করে জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
কিসাসের ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যে, কিসাস শুধু হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং মানুষের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি এ গ্রন্থে (তাওরাতে) তাদের ওপর লিপিবদ্ধ (অলঙ্ঘনীয় সিদ্ধান্ত) করেছি যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত ও জখমের বদলে জখমের অনুরূপ জখম। অতঃপর কেউ তা মা করে দিলে এতে তার জন্যই গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। আল্লাহ যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা রায় বাস্তবায়ন করে না, তারাই জালিম।’ (মায়েদা : ৪৫)। আয়াতটি ইহুদিদের প্রসঙ্গে নাজিল হলেও তা উম্মতে মুহাম্মাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ও বহাল আছে। অতএব কেউ যদি কারো হাত ভেঙে অকার্যকর বা কেটে দেয়, বা কারো পা কেটে দেয় বা চোখ নষ্ট করে দেয় বা দাঁত ভেঙে দেয় বা প্রতিপরে আক্রমণে যেকোনো অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায় তাদের জন্য কিসাসের এ বিধান কার্যকর হবে। এতে সামান্যতম পপাতিত্ব জুলুম হিসেবে গণ্য হবে।
সম্পদের মোহ মানুষের সৃষ্টিগত। তাই সম্পদ আহরণে মানুষ সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। এটা দোষের কিছু নয়। আল্লাহ পাক মানুষকে বৈধ পন্থা ও উপায়ে সম্পদ উপার্জনের অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণের কোনো অনুমতি নেই। এতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। করা হয়েছে হারাম। অবৈধ উপায়ে সম্পদ আহরণের মধ্যে রয়েছে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইসহ নানা অপকৌশল। চুরি হলো অন্যের মাল বা সম্পদ সঙ্গোপনে আত্মসাৎ করা, যা অপরাধ হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। চুরি একটি নিকৃষ্টতম কর্ম, যা সবাই ঘৃণা করে। চুরির মাধ্যমে মানুষ নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে। কেউ বা চুরি করে সরাসরি, আবার কেউ চুরি করে লুকোচুরির মাধ্যমে। কেউ চুরি করে মাল বা টাকা-পয়সা সরিয়ে নেয়, আবার কেউ চুরি করে কাগজে-কলমে। আল্লাহ পাক সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তাই এমন অপকর্মে কেউ লিপ্ত হলে তার জন্য কুরআনে কঠোর শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে। এ শাস্তির নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লাহ। তিনি বলেন, ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও।’ (মায়েদা : ৩৮)।
অনুরূপ যারা ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে জমিনে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, শান্তির পরিবেশ বিঘিœত করে, তাদের ব্যাপারেও রয়েছে কঠোর শাস্তি প্রয়োগের নির্দেশ। এদের এসব কর্মকাণ্ডকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে এর শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি এই যে, তাদেরকে হত্য করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটিই তাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।’ (মায়েদা : ৩৩)।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও নৈতিকতা তথা ইজ্জত-আবরু মানুষের এক মহাসম্পদ। এ সম্পদ আল্লাহপ্রদত্ত। এটা সম্পদ দিয়ে বিচার করা যায় না। এটা একজন নৈতিকতাবোধসম্পন্ন মানুষ কখনো বিসর্জন দিতে পারে না। এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দ্বারাই মানুষ পরিণত হয় ভালো মানুষে। আর এটা খোয়ালে সে হয় অমানুষ বা মানুষরূপী পশু। আর তাই কুরআনে কারিমে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর শাস্তির ঘোষণা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী এদের প্রত্যেককে এক শ’ চাবুক মারো, আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী হও; মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্য করে।’ (নূর : ২)। এ শাস্তি হলো অবিবাহিত নারী-পুরুষের জন্য। যদি তারা বিবাহিত হয় তবে তাদের শাস্তি হবে ‘রাজম’ বা প্রস্তর নিক্ষেপে মৃত্যুদন্ড ।
এর পরও রয়েছে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার কারণে শাস্তি। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘যারা সতী নারীর প্রতি অপবাদ দেয় এবং এ জন্য চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদেরকে আশিটি দোররা মারো এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; এরাই হলো ফাসেক।’ (নূর : ৪)।
এরূপ সমকামিতার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। এ সমকামিতার কারণেই লুত জাতিকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বিশ্বের কোনো কোনো দেশে আজ মানবতার এ জঘন্যতম অপরাধকে আইনের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। নেশাগ্রস্তদের জন্যও রয়েছে শাস্তির বিধান। এগুলোর শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে সাহাবায়ে কেরামের ইজমার ভিত্তিতে। এভাবেই শরিয়া আইন বাস্তবায়িত হয়েছে ইসলামী শাসনামলে।
এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধির। অর্থাৎ বিচার বিভাগের। কোনো ব্যক্তি এককভাবে এগুলো বাস্তবায়নের মতা রাখে না। রাষ্ট্র এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম শিথিলতা করা যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন। তিনি বলেন, ‘হে ওই সকল লোক যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন, আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচারে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ো না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বলো অথবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে মনে রেখো তোমরা যা করো আল্লাহ এগুলোর সম্যক খবর রাখেন।’ (নিসা : ১৩৫)।
এ প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা রা: বর্ণিত একটি চমকৎপ্রদ ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, মাখজুম গোত্রের এক মহিলা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হয়। বিষয়টি কোরাইশ গোত্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। তখন তারা বলাবলি করতে লাগল, এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট কে সুপারিশ করতে পারে? সবাই বলল, রাসূলুল্লাহ সা:-এর অত্যন্ত প্রিয় উসামা ইবন জায়দই তা করতে পারে। উসামা বিষয়টি নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে আলোচনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, আল্লাহর বিধানের বিষয়ে তুমি সুপারিশ করছো? এরপর তিনি দণ্ডায়মান হয়ে খুতবা দিলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংস করেছে এ অপকর্ম যে, যখন তাদের কোনো সম্মানী ব্যক্তি চুরি করত তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোনো দুর্বল চুরি করত তবে তার ওপর হদ (শাস্তি) প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি : ৩২১৬)।
প্রফেসর ড. হাফেজ এ বি এম হিজবুল্লাহ
তারিখ: ২৩ নভেম্বর, ২০১২
লেখক : শিক্ষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া