somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কিনীদের স্বাধীনতা দিবস: বন্ধু তুমি শত্রু তুমি!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



৪ঠা জুলাইয়ের পটভূমি: যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বিষয়ে আমাদের মিল দেখে আমি খুশি। যতই শক্তিধর হোক, আমাদের মতোই তারা ব্রিটিশদের অধীনে ছিলো স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত। হায়রে ব্রিটিশ! যা হোক, নিউ ইংল্যান্ড প্রদেশের লোকেরা ব্রিটিশদে বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে (১৭৭৫) স্বাধীনতার ঠিক এক বছর পূর্ব থেকে। পরের বছর (১৭৭৬) জুলাইয়ের ২ তারিখে কংগ্রেস গোপনে তৈরি করে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিতে শুরু করে। তাতে উত্তর আমেরিকায় ব্রিটিশদের তেরোটি কলোনি আইনগতভাবে স্বাধীন হয়ে যায়। দু’দিন পরই প্রকাশিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। একে একে প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন স্বাধীনতাপত্রে। স্বাধীনতা ঘোষণার বছরে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ছিলো ২৫ লাখ। এখন তা ৩১ কোটি ৬০ লাখের ওপরে। (সবাই বলে, শুধু বাংলাদেশেই নাকি মানুষ বাড়ে!)


মজার ব্যাপার হলো, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে দু’জন স্বাক্ষরদাতা থমাস জেফারসন এবং জন এডামস পরবর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেজিডেন্ট হন এবং তারা ১৮২৬ সালের ৪ঠা জুলাইয়ে একই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ছিলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, অর্থাৎ ৫০ বছর পূর্তি দিবস। ছাপ্পান্ন জন স্বাক্ষরদাতার মধ্যে বেন্জামিন ফ্রাংকলিন হলেন আরেকজন রাষ্ট্রনায়ক, ঘোষণাপত্রের অন্যতম লেখক এবং সমাজসংস্কারক। আরেকজন স্বাক্ষরদাতা রবার্ট লিভিংস্টোন ছিলেন তখন নিউ ইয়র্কের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের মতোই স্বাধীনতা দিবস তাদের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন এবং সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবে ১৯৪১ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিনা বেতনের ছুটি হিসেবে পালিত হতো স্বাধীনতা দিবস। শুরুতে ফোর্থ অভ্ জুলাই হিসেবেই দিনটিকে স্মরণ করা হতো। ‘স্বাধীনতা দিবস ’ নামে স্বীকৃতি পায় ১৭৯১ সাল থেকে।




স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি: মার্কিনীদের মধ্যে খুবই কম লোকই ওই দিন কাজে যায়। কেউ কেউ বার্ষিক ছুটিগুলো স্বাধীনতা দিবসের সাথে যুক্ত করে পারিবারিক ছুটিতে বেরিয়ে যায়। বারবিকিউ, পিকনিক, ফায়ারওয়ার্ক, তরমুজ বা হটডগ খাওয়া প্রতিযোগিতা, বেইসবল প্রতিযোগিতা, পতাকা প্রদর্শন ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্বাধীনতা দিবস থাকলে মার্কিনীরা আগে বা পরে কোন একদিনে তা উদযাপন করে।


বন্ধু তুমি – শরতু তুমি: যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের পণ্যের বড় ক্রেতা এবং অনেক স্বদেশীর প্রিয় ঠিকানা। আমাদের স্বাধীনতার নিকৃষ্টতম বিরোধীতাকারীও এই যুক্তরাষ্ট্র! প্রচলিত আছে ‘যুক্তরাষ্ট্র যাদের বন্ধু, তাদের আর শত্রুর প্রয়োজন নেই’ - এক দম ওড়িয়ে দেওয়া যায় না কথাটি।
আংকেল স্যাম মিত্র এবং শত্রু উভয়েরই কার্য সিদ্ধ করতে পারেন। একথার পক্ষে বিপক্ষে অনেক বক্তব্য থাকতে পারে, তবে উভয়পক্ষই কোন না কোনভাবে সত্য। শ্রমিক পরিবেশের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম অভ প্রেফারেন্স/ বাংলাদেশী পণ্যের জন্য অবাধ বাণিজ্যসুবিধা ) সুবিধা প্রত্যাহার করে নিয়েছে আমাদের শ্যাম কাকা। এরকম একটি কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সকলকে বিস্মিত এবং হতাশ করেছে। রাষ্ট্রদূত মজিনা নানান কিছু বলে আমাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন, এটি একটি সাময়িক সিদ্ধান্ত। আজও মূলা ঝুলে আছে! নানা রকমের টালবাহানা চলছে জিএসপি নিয়ে। বিরোধীদলীয় নেত্রীও যখন এসিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তখন বুঝতে হবে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি চমৎকার চাল দিয়েছেন আংকেল স্যাম। এদের মানবাধিকার আর গণগন্ত্রের নসিহতের মতো এটিও একটি মায়াকান্না, তাতে কারও সন্দেহ নেই। অনেকে মনে করছেন, মার্কিন স্বার্থে প্রণীত কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য এ চাল দেওয়া হয়েছে। দাবা খেলায় রাজাকে (king) হুমকি দিয়ে মন্ত্রী (queen) খাওয়ার পায়তারা। যা হোক, আজ তাদের শুভ দিনে এসব নিয়ে আর কথা নয়।

তবু জানাই শুভ স্বাধীনতা! দূর আটলান্টিকের পারে আবাস গেড়েছেন আমার প্রিয় স্বদেশের ভাইবোনেরা। কেউ পড়তে গিয়ে, কেউ করতে গিয়ে, কেউ বৃত্তি পেয়ে, কেউ লটারি নিয়ে, কেউ বেড়াতে গিয়ে আবার কেউ সত্যিই কাজ গিয়ে স্থায়ী নীড় গড়েছেন সুদূর মার্কিনে। নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন, পেনসিলভ্যানিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ওরেগন, ডিসট্রিক্ট অভ কলাম্বিয়া এবং ইউটা থেকে আমার ব্লগের পাতাটিতে পদচারণা দিয়ে প্রেরণা দিচ্ছেন অনেক সহব্লগার। সকলকে এদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। সুখে থাকুন হে প্রবাসী। দূরে গেলেও যেন স্বদেশ থাকে অন্তরে। প্রিয় অপ্রিয় সকল মার্কিনীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই তাদের স্বাধীনতা দিবসে! চলুন নিজের স্বাধীনতাকে ধরে রাখি এবং অন্যের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করি :)




-----------------
*ছবি এবং অধিকাংশ তথ্য ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:৫৮
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×