বিভিন্ন ব্লগ এবং পেপার কার্টিং দেখে কয়েকদিন থেকে মনে হচ্ছিল নবাবগঞ্জের বান্দুরা থেকে ঘুরে আসি। জায়গাটা ঢাকা থেকে খুব একটা দূরে ও না। তাই কাল সকালে আম্মুকে বললাম পুরান ঢাকার জমিদার বাড়ী দেখেতে যাব। আর সাথে সাথেই একমাত্র ছেলের প্রতি পিতা-মাতার ভালবাসা দেখানো শুরু হলো। পুরানো বাসায় সাপ থাকবে..সাবধানে থাকবে…পানির কাছে যাবে না..বন্ধ ঘরে গ্যাস থাকতে পারে..আরো কত কি! যাই হোক, আব্বু আম্মু বুয়েটে নামিয়ে গেলে সেখান থেকে রিক্সা করে পল্টন এ গিয়ে বান্দুরা গামী বাসে উঠলাম। চরম লোকাল সেই বাস যাত্রী ও ছাদের উপর মালামাল নিতে অনেক দেরী করে ফেলল। তবে বুড়িগঙ্গা সেতু পার হবার পর কেরানীগঞ্জের রাস্তার দুই পাশের সৌন্দর্য্য মুগ্ধ করার মতো। এরমাঝে শুরু হলো বৃষ্টি। দুই পাশ দেখতে দেখতে বেশ ভালই মনে হচ্ছিল। তবে সরু রাস্তা, বাসের দ্রুত গতি ও বৃষ্টির মাঝেও বাসের ওয়াইপার না থাকায় বেশ ভয় ভয়-যে লাগেনি তা না। যাত্রার শেষাংশে অনেক দূর ধরেই রাস্তা পথের সঙ্গী হয়ে থাকে ইছামতি নদী।এছাড়া ব্রীজ এর উপর থেকে বর্ষার তুলসীখালী নদীটা দেখতেও বেশ লাগল।
যেতে আমাদের বেশ সময় লাগে। ঘন্টা-দুয়ের কাছাকাছি বাস ভ্রমণ শেষে আমরা বান্দুরায় নামি।সাথে করে বেশ কিছু পেপার কার্টিং এবং ব্লগ এর লেখা প্রিন্ট করে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেগুলা থেকেই দেখে হলিক্রশ স্কুল ও সংলগ্ন গির্জা দেখার জন্য রিকশা ভাড়া করি। জপমালা রানীর গির্জাটা বেশ সুন্দর। সামনে এটা পুকুর আছে। আর মাঠ সহ প্রার্থনার স্থানটাও নজর কাড়ে।
সেখান থেকে আবার রিক্সায় রওনা দিই। আমাদের রিক্সা চালক বলেন, সামনে গোল্লা নামক স্থানে নাকি আর একটি গির্জা আছে। আমরা সেটার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। পথের রিক্সা ভ্রমণটা ছিল উল্লেখ করার মতো। একদম নিশ্চুপ ইট বিছানো রাস্তা, দুইপাশে অগোছালো ভাবে বেড়ে ওঠা গাছ-গাছালি এবং পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতি নদী…সব মিলিয়ে রিক্সা ভ্রমণটা ছিল অসাধারণ।(সম্ভবত) ইছামতি নদী পার হয়ে আমরা গোল্লাস্থ সেই গির্জায় নামি। এই গির্জাটাও বেশ সুন্দর।
ইছামতি নদী ও গির্জা
অত:পর থেকে আমরা কালাকোপার কাছে জমিদার বাড়ী যা জজ বাড়ি নামে পরিচিত সেখানে আসি। সেটার দেখে কিছুটা আশাহত হই। কারণ যেরকম জমিদার বাড়ী বা প্রাচীন স্থাপনা ভেবেছিলাম সেরকম কিছু না।আগে হয়তো জমিদার বাড়ি থাকলেও বর্তমানে সংস্থার করে হয়তো সেখানে লোকজন থাকে। বারান্দায় ঝোলানো কাপড়, বাড়ির আশেপাশে লোকজন দেখে ওইটাকে ব্যক্তিগত বাড়ি মনে হলো। কৃত্রিমতা ভাল লাগে না। তাই সেখান থেকে গেলাম সংলগ্ন কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি তে। এইটার সামনে একটা মন্দির এবং মাথাবিহীন মুর্তি দেখলাম।এই জমিদার বাড়ীটি বেশ সুন্দর। ভগ্নপ্রায় এই বাড়িটি আমাদের প্রাচীন স্থাপত্য ও সমাজজীবনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ি
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির সামনেই আমরা পিকনিক হিসেবে সাথে নিয়ে আসা টিফিন সাবাড় করি। পাশের রাস্তা দিয়ে আবার রিক্সায় রওনা দিই আন্দরকোট্টা'র উদ্দেশ্যে। পথে আনসার ক্যাম্প, ইছামতি নদী সহ আরো কয়েকটা প্রাচীণ বাড়ি দেখতে পাই।
আন্দরকোট্টা যাবার পথে
আন্দরকোট্টা জায়গাটা বেশ ভাল। তবে একা বা সংখ্যায় বেশি না হলে তার ভিতরে না যাওটাই ভাল। আমরাও আন্দরকোট্টার ভিতরে যাইনি। আন্দরকোট্টার সামনেও একটা সুন্দর পুকুর আছে।
সেখান থেকে রিক্সাযোগে ঢাকা-বান্দুরাগামী সড়কে এসে দাঁড়াই। কিছুক্ষণ দাড়াতেই বাস এসে পড়ে। এবার ফেরার পালা। আসতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। সোয়া এক ঘন্টার মাঝেই ঢাকার নয়াবাজার চলে আসি।
বর্ষার সময়ে রাস্তার দুইপাশ, ইছামতি নদী, বান্দুরা থেকে কলাকোপা রিক্সা ভ্রমণ এবং সর্বোপরি সেখানকার পুরোনো স্থাপনা..সব মিলিয়ে ভ্রমণ টা বেশ চমৎকার হয়েছে বলা যায়। তবে বেশি মনোমুদ্ধকর প্রাচীণ স্থাপনা দেখার আশা নিয়ে সেখানে গেলে আশাহত হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৩১