আশ্চর্জজনক হলেও সত্যি এত বড় হয়ে গেলাম তাও আমি কখোনো কোন ফুটবল বা ক্রিকেট কোন ধরনের খেলাই মাঠে বসে সরাসরি দেখিনি। তাই এইবার বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ টা আর মিস করতে চাইনি। শেষ ওয়ানডের দিন থেকে আমাদের মিড-টার্ম শুরু। তাই ভাবলাম ওই ম্যাচটাই দেখি। টিকিট কেনার দায়িত্ব ছিল জুনিয়র এর উপর। দুই দিন ঘুরেও কোন টিকিট না পাওয়ায় ভেবেছিলাম খেলা দেখার আশা মনে হয় শেষ! যাই হোক শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক গ্যালারীতে ০৬-টি টিকিট কেনা সম্ভব হয়েছিল।
আমরা ছিলাম ৬জন। আমি, জুনিয়র, পারভেজ, বান্দা (সাইফ), রাফ্ফান আর ডিলন। এর মাঝে ডিলন পরে আমাদের সাথে যোগ দেয়।
আমরা জুনিয়র এর গাড়ীতে করে মাঠে যাই। মাঠে ঢুকেই আমার চক্ষু ছানাবড়া। পুরো মাঠ একসাথে এমন ভাবে দেখা যায় কল্পনাও করিনি কখোনো। পুরো মাঠ, বাউন্ডারী, ১৩ জন খেলোয়াড়, উইকেট, পিচ সম মিলিয়ে চমৎকার একটা ভিউ। প্রথম দেখায় আমার অনুভূতি অসাধারণ।
আমরা অবশ্য টস দেখতে পাইনি। টিকিট এর গায়ে সময় ২.৩০ মিনিট লেখা থাকলেও এর আগেই খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সিট ছিল ইন্টারন্যাশনাল-আপার অংশে। ঢুকে বসতে বসতে না বসতেই ওয়াসন আর পন্টিং মিলে শুরু করল তান্ডব। বেটা রাফ্ফান আবার অস্ট্রেলিয়ার দিকে। প্রতিটা শট শেষে গাধাটা একগাল হাসি দেয় আর মনে হয় দিই মাথায় একটা করে চাটি। রাফ্ফান একটা বাইনোকুলার এনেছিল। যদিও সেটার ব্যবহার কেবল মাশরাফি, সাকিব বা হাসি, পন্টিং কে দেখার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা ছড়িয়ে পড়ছিল গ্র্যান্ড-স্ট্যান্ড সহ আরো অন্যান্য দিকে।
এর মাঝে রাজ্জাক সহ স্পিনার রা দ্রুত তিনটি উইকেট ফেলে আমাদের আনন্দে উদ্বেল করে। এক একটা উইকেট পড়ে আর আমরা পতাকা হাতে লাফালাফি করি। আমার সবথেকে ভাল লেগেছে মাশরাফির দ্বিতীয় স্পেলে এসে পাওয়া উইকেট দুটি। প্রথম ইনিংস শেষে স্কোর দেখে অবশ্য বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।
টিকিট এর পিছনে ক্যামেরা নেয়া নিষেধ দেখে আমি আর ক্যামেরা নিয়ে যাইনি। যদিও মাঠে দেখলাম অনেকে ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছে। কিভাবে নিল কে জানে। আমরা যাবার পরে এক পর্যায়ে ডিসপ্লেতে দেখা দর্শক সংখ্যা ১০,০০০ এর উপরে । অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শেষ থেকেই মাঠে দর্শক বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ এর ইনিংস এর সময় সেটা বেড়ে ২০,০০০+ হয়। আমরা আসলেই ক্রিকেট পাগল জাতি।
হাফটাইম এ ব্লাইন্ড ক্রিকেট দেখে ফুড কোর্ট যেতে যেতে দেখি ওইখানের সম আইটেম শেষ। ছিল শুধু বার্গার। ১০০ টাকা মূল্যের সেই বার্গার খেতে ভাবলাম কি কি উপাদান ব্যবহার করলে এটার মূল্য ১০০ হতে পারে। অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংস এর মাঝ পথে গিয়ে দেখি সেই বার্গার-ও শেষ!
বিরতির পরে বাংলাদেশের ব্যটিং শুরু হল। প্রথম থেকেই তামিম আর ইমরুল মাতিয়ে রাখছিল। নাফিস আউট হবার আগে পর্যন্ত আমরা আশায় ছিলাম বাংলাদেশ জিতবে এই আশায়। তার পরও বাংলাদেশের ব্যটিং দেখে ব্যাপক মজা লেগেছে। জয় পেলে হয়তো আরও ভাল লাগতো, তারপরেও বাংলাদেশ বাহবা পাবার মতই খেলেছে। হাই স্কোরিং মাচে নিজ দলের ব্যাটিং দেখার তুলনাই হয় না।
মাঠে বসে খেলা দেখার মজাই অন্য রকম। পুরোটা মাঠ একসাথে চোখের সামনে। টিভিতে বসে দেখলে শুধু নির্দিষ্ট অংশ দেখা যায়। হা করে টিভি সেটের সামনে তাকিয়ে থাকলেই চলে। কিন্তু এইখানে শট দেখা থেকে শুরু করে বল কোনদিকে গেল সব নিজেকেই দেখতে হয়। সাথে ফিল্ড প্লেসিং, ক্যাপ্টেন্সি, ব্যাট্সম্যান দের আসা যাওয়া সব কিছুই দেখতে অন্য রকম লাগে। পুরোই নতুন একটা অনুভূতি। সেই সাথে একটু পরে পরে দর্শক দের চিৎকার, লাউড স্পিকারে ভেসে আসা গান, পুরোই উৎসবমূখর পরিবেশ। আর রাতের বেলায় ফ্ল্যাড লাইটের আলোয় মিরপুর স্টেডিয়াম অসাধারণ। মনে হয় অন্য কোন গ্রহে বসে আছি।
মাঠে বসে খেলা দেখার পরে আমার একটা কথাই মনে হচ্ছিল মাঠে যদি কখোনো না আসতাম অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হতাম। যারা এপর্যন্ত মাঠে গিয়ে খেলা দেখেনি তারা যেন একবার কিছুক্ষনের জন্য হলেও মাঠে নিজ দলের খেলা দেখে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:৩১