somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারুণ্যের দুই রূপ; গ্যাংনাম স্টার বনাম রক্তাক্ত চাপাতি

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বীকার করেই নিচ্ছি যে ইদানিং দেশের রাজনীতির ঘটনা প্রবাহের দিকে নজর দিতে আর ইচ্ছে করে না। আর কত এইসব ছেলেখেলা দেখব? সহ্যের একটা সীমা থাকে। এখন তো মাঝে মাঝে মনে হয়, নিজের কাজটাই করি। এই খুন খারাবির রাজনীতির দিকে তাকালে কষ্ট হয়, ভয় লাগে যদি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি! যদি সবার মত আমিও আবার কথায় কথায় বাঙ্গালিকে গালি-গালাজ শুরু করে দেই!

যাই হোক, দুইদিন হল ঢাকায় আছি।
প্রথমদিন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় ১১ টা। আদাবরে বাসায় ঢুকার পথে আম্মার মোবাইলে রিচার্জ করতে গিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় খেলার শেষ ওভার দেখলাম। স্নায়ুচাপে ভুগতে থাকা গ্যালারি ও পর্দার সমর্থকদের অপেক্ষার পালা শেষ হল প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিজয়পতাকা উড়িয়ে। জনতা হাউজিং এর ভেতর থেকে ঢাকের তালে তালে লম্বা পতাকাবাহী একটি মিছিল বের হল। নিজেকে মিলিয়ে দিলাম মিছিলে। মেইন রাস্তা পর্যন্ত উল্লসিত জনতাকে এগিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলাম। গদগদ মেজাজেই সে রাতের ঘুমযাত্রা।

সকালে কাগজ মেলেই দেখি লাল সবুজে প্রচ্ছদ মোড়ানো। গ্যাংনাম স্টাইল নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। এর মধ্যেই নাস্তা সেরে ক্যাম্পাসে রওয়ানা দিলাম। পথিমধ্যে মুঠোফোনে আম্মাজান পারিবারিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমার পথরোধ করলেন। চাচার বাসা ঘুরে ক্যাম্পাসে আসতে বিকেল যায় যায় অবস্থা। ক্যাম্পাসে কথা হল আগামী সপ্তাহে রিডিং ক্লাবের টপিক নিয়ে। খুব উচ্ছসিত ভাবে মোটামুটি সবাই একমত হলাম যে গত চল্লিশ বছরে আমাদের অর্জনের একটা খতিয়ান দরকার। আমাদের যে ‘ব্যাপক’ অর্জন তার স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি আমি যুক্ত করার চেষ্টা করলাম, এই বাংলাদেশের এগিয়ে চলার সাথে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের হর্তাকর্তারা নিজেদের কীভাবে প্রস্তুত করে তুলছি তারও একটা ফিরিস্তি করতে হবে। প্রস্তাব খসড়া পাসও হলো। সূর্যসেন হলে নুডলস খেয়ে নীলক্ষেতের বইয়ের ধুলা ঝাড়তে ঝাড়তেই দেখা ডিপার্ট্মেন্টের প্রিয় ছোট ভাই মাহতাবের সাথে। পরামর্শ নিলাম পাবলিক হেলথের উপর কাজ করার ধরণটা কিরকম হতে পারে। সম্মোহিত হয়ে মাহতাবের মুখের দিকে তাকাতে তাকাতেই একসময় আবিস্কার করলাম আমি জহুরুল হক হলের ভেতর। মাহতাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে নীলক্ষেতে বাসের জন্য আধ ঘন্টার অপেক্ষা শেষে অগত্যা কুয়াশার ঝাপটা লেপে রিকশা করে বাসায় ফিরলাম। সংক্ষিপ্ত ভোজনপর্ব শেষে রাত দেড়টায় ৪০ বছরের বাংলাদেশ নিয়ে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বসলাম।

রাত তিনটা বিশ। বক্তৃতার ট্রেসিং প্রায় ঠিক-ঠাক। দিনের প্রথমবারের মত কম্পিউটারে প্রথম আলো ডট কমে ঢুকলাম। বিশ্বজিতের খবরটি ভয়ংকর সে প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু আগে ছবি দেখিনি । পর পর ৪ টা ছবি দেখে স্মম্ভিত হলাম। আমার অনুভূতিকে কে যেন মুহুর্তেই রক্তাক্ত করে দিল। আমার চিন্তা অসার হয়ে আসল। চেয়ারে হেলান দিয়ে এক ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম। আমার প্রস্তাবিত বক্তৃতার পুরো বিষয়টাই ছিল ইতিবাচক এবং শেষটা প্রশ্নবোধক কিছু।

দুইদিন সম্পূর্ণ দুইরকম। প্রথমদিন যে তারুণ্য দেখে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়েছিলাম ঠিক পরদিন সে তারুণ্যই আমার স্বপ্নকে রক্তে লেপে দিয়েছে। দুঃখের সাথে পুরনো উপলব্ধিটা ছিড়েফুড়ে বের হয়ে আসতে চাইল। এটা আমার বাংলাদেশ! এখানে স্বাপ্নিকের অনেক কষ্ট! এখানে কবির অনেক কষ্ট! এখানে মানুষের অনেক কষ্ট!
শুধু রাজনীতির দোকানদারদের সুখ! অবারিত সুখ! অনমিত সুখ!!! ঃ((((

৫ টা বাজল। সকাল সমাসন্ন। আমি ট্রেসিং টা মুছে দিলাম। নতুন করে ভাবতে হবে। এ ভাবনা হবে ৪০ বছরে কতটুকু মানুষ হলাম। কাল বৈঠকে কথাটা তুলব। বক্তৃতার বিষয়টা চেঞ্জ করা যায় কিনা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×