somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সমাজে টাউট বাটপাড় মানুষের চরিত্র।

২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাটপাড় চার বর্ণের একটি শব্দ। সমাজে বসবাসরত একটা শ্রেণীর মানুষের চরিত্রগত নাম বাটপাড়। এরা সমাজে বসবাসরত এমন একটা শ্রেনীর ব্যক্তির চরিত্রের নাম যাদের মধ্যে কুপ্রবৃত্তির তাড়না প্রচন্ড, সুপ্রবৃত্তি নেই বললেই চলে।এদের হৃদয়ে থাকে কপটতা। এরা অশুভ চরিত্র । চিন্তায় এরা ক্ষতিকর ,কর্মে অকল্যাণকর এরা সচরাচর শিক্ষিত হয় না কিন্তু শিক্ষা লাভ করলে ধূর্ত হয়ে উঠে ।এরা যখন কথা বলে তখন মিথ্যা বলে । এরা নীতিবাক্য বিশ্বাস করেনা । শিক্ষা এদের কাছে যেকোন পর্যায়ে গৃহীত হবার অভিপ্রায় মাত্র। এরা শিক্ষিত হলে শিক্ষাকে লোক ঠকিয়ে তাদের দূর্ভীসন্ধী চারিতার্থ করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, সেই জন্যই এরা ভয়ঙ্কর । এদের পুরা চরিত্রটাই একটা অভিনয়। এরা সমাজের পক্ষে সর্বোপরি ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকর হয়ে উঠে।

এই শ্রেনীর লোকদের প্রধান কাজ হলো সমাজের মধ্যে অবস্থানরত মানুষদের মধ্যে চলে বলে কৌশলে কলহ বিবাধ লাগিয়ে রাখা। বহুল প্রচলিত প্রবাদের মতো ‘ সাপ হয়ে কামড়িয়ে ওঝা হয়ে ঝাড়া’ এর মতো নিজেদের চোগলহুরিতে লাগানো ঝগড়া বিবাদ কে আবার এরা নিজেরাই উদ্যেগ নিয়ে সমাধান করতে আসে। এদের এতোসব কর্মকাণ্ডের আগাগোড়ায় হলো ধান্ধা করা। যে সমাজের মানুষ বেশী শান্তিপ্রিয় অনেক সময় দেখা যায় সেই সমাজে এই বাটপাড় শ্রেণির লোকগুলো সামাজিক নেতৃত্বে চলে আসার প্রয়াস পায়।
বাটপাড় দের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট হলো এরা বেকার থাকে দৃশ্যমান কোন কাজকর্ম এরা করেনা কিন্তু নিজেকে অনেক ধার্মিক কিংবা ভালো মানুষ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে। এদের লজ্জা শরম থাকেনা বললেই চলে যতো দূর দূর করেন না কেন এরা আপনার পিছু ছাড়বেনা । এদের শৈশব কৈশোর কালে থাকে এলাকার সমস্ত খারাপ কাজের হোতা। যুবক বয়সে কিছুটা নিরব থাকলেও পৌড় বয়সে এসে দাঁড়ি টুপি দিয়ে সমাজের প্রথম কাতারে আসার চেষ্টা করে। মসজিদে যাবে এরা কোন ইবাদতের জন্য নয় কোন পরিবারে কিংবা অন্য কোথাও কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা সাধারণ মুসল্লীদের কাছ থেকে জানার জন্য। আর কিছু না পেলে এরা মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের পেছনে লেগে যাবে। এদেরে আসল চরিত্র বোঝা অনেক কঠিণ। এরা সব সময় শিকারের ফাদ পেতে বসে থাকে। কেউ ডাকলেও আসবে না ডাকলেও আসবে ।

এরা নিজেদের চরিত্রের কালিমা নিয়ে অন্যের সমালোচনা করবে , সমাজে যাদের আর্থিক অবস্থান ভালো তারাই মূলত এদের প্রধান টার্গেট । সমাজের বসবাসরত আর্থিকভাবে স্বচ্চল মানুষদের কে কেন্দ্র করেই এরা সমস্ত অপকর্মগুলোর চাল চালে। এদের বসার জায়গা এলাকার চায়ের দোকান কিংবা মসজিদের পুকুর ঘাট । এদের বেশভুশা থাকবে ফেরেস্তার মতো কাজ করে ফেরাউনের মতো।এদের চোখে সব সময় পানি থাকে মানুষের মনের অবস্থা বুঝে চোখের পানি ফেলে গায়েল করার চেষ্টা করে অথচ এরা নিজের স্বার্থের জন্য সবচেয়ে নির্দয় হয়। মানুষের প্রতি এদের কোন দয়ামায়া থাকেনা । এদের কে রক্তচোষা জোঁকের সাথে তুলনা করলেও কম বলা হবে। এরা নিজের স্বার্থের জন্য জোঁকের মতোই লেগে থাকে স্বার্থ উদ্ধার হলে তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

এরা নিজেদের প্রতিপক্ষ মনে করে সমাজের সৎ মানুষদের যারা সত্য কথা বলে উচিত কাজ করে। এদের কে যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়না এই বাটপাড় শ্রেনীর প্রতিদিনের কাজের মধ্যে অন্যতম একটা কাজ হলো সমাজের সৎ মানুষদের নামে বদনাম করে বেড়ানো। কারন সৎ মানুষদের কে সমাজে নিস্ক্রিয় করে রাখতে পারলে তাদের কাজ তারা নিরপদ্রপহীন, বাধাহীন এগিয়ে নিতে পারে।
এদের কাজের পরিধি ব্যাপক। এরা এলাকার চায়ের দোকানে বসে ছেলে মেয়ের বিয়ের সম্মন্ধ আসলে পাত্রপাত্রীর নামে বিভিন্ন খারাপ অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করে, আবার এলাকায় কেউ মারা গেলে সেখানেও দৌড়ে যাবে মায়াকান্নার অভিনয়ের সাথে মৃত ব্যক্তির বিষয় সম্পত্তি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কলহ লাগিয়ে দিতেও ভূল করেনা । তারপর সময় সুযোগমতো ওখান থেকেও ধান্ধার কাজ টা সেরে নেয়। এদের বিচরন সমাজের সর্বত্র।

এদের আরেকটা বৈশিষ্ট হলো বিদ্যা বুদ্ধির দৌড় বেশী না হলেও এরা সবজান্তার অভিনয় করে ,মাঝে মাঝে ধর্মের বাণী কপচাবে কিন্তু কাজ করে ধর্মের সম্পূর্ণ বিপরীত । ধান্ধার সুযোগ না থাকলে ধর্মের ধারে কাছেও যাবে না। এদের বর্তমান সময়ে সমাজের নিরাপদ আশ্রয় হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন পীর ভিত্তিক সংগঠনগুলি। পীর সাহেবদের সংগঠনের সাধারণ সরল প্রাণ মুরিদদের বিভিন্ন কথার ফাঁদে ফেলে দিয়ে সংগঠনের বড় বড় পদগুলু দখল নিয়ে এলাকার সরল প্রাণ মানুষ দের ধোঁকা দেয়া থেকে শুরু করে এদের সমস্ত অপকর্মের শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে পীরের সংগঠনের পদ্গুলু এবং পীরের অন্ধ মুরীদদের ব্যবহার করে। নিজেদের কথা কে পীরের কথা বা নির্দেশ বলে সমাজে চালিয়ে দিয়ে পীরের নামে নিজেরা ধান্ধা করে। মোট কথা এরা ধান্ধা ছাড়া নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না।

ধর্মীয় কুসংস্কার, সামজিক অনাচার এবং নানান ধরনের বিভ্রান্তি সমাজের রন্ধ্রে রন্দ্রে এদের মাধ্যমে সংক্রামিত করে এরা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহার করে । এরাই এই কাজগুলুর একশো পারসেন্ট সুবিধাভোগী।

এদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সমাজে বসবাসরত সৎ মানুষদের নীরবতা। এরা যেমন সৎ মানুষকে ভয় পায় আবার তাদের নীরাবতা কে সুযোগ হিসেবে গ্রহন করে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ কে প্ররোচিত করে অশিক্ষিত, সাধারন শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ,সুধীজনদের ক্ষতি করতে প্র্যাসী হয় এবং নিজেদের হীন স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। এরা সমাজের বোঝা । এদের কে চিনতে না পারলে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।

তাই একটি সুন্দর ও ঐক্যবদ্ধ সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে এই বাটপাড় শ্রেণীকে চিহ্নিত করে সমাজের সৎ নীতিবান মানুষদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে । আর নয় নীরবতা। নিজেদের সুষ্ট সামাজিক জীবন যাপনের জন্য এখন থেকেই সচেতন হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে ভাটপাড়দের বিরুদ্ধে । এই ভাটপাড় শ্রেণীর বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই কাঙ্কিত নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা আমরা পাওয়ার আশা রাখি।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৩৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×