somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্থ নামের ছেলেটি

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন ছিলো ২৫শে ফেব্রুয়ারী। বেলা তখন প্রায় আড়াইটা হবে। আমাদের ব্যাচের প্রায় সবাই ছিলো হৈ হুল্লোড়বাজ। হৈ হৈ রৈ রৈ করে বই মেলায় অকারনেই ঘুরছিলো সবাই। বইমেলার প্রায় শেষের দিক ছিলো সেটা তবুও আমাদের মহানন্দ যজ্ঞের তাতে বিন্দুমাত্র কমতি ছিলো না। সবার মাঝে শুধু একজনকেই সেদিন খুব স্পেশালভাবেই আলাদা করে ফেলি। উদাস উদাস, সকলের মাঝে থেকেও সবার থেকে আলাদা, একটু খাপছাড়া, একটু চিন্তুক, আতেল টাইপ একজনকে। কোনো দিকে যেন খেয়ালই নেই তার। নিজের মনে ভাবছেন কত কিছু। মনে মনে ভাবছিলাম ঢং আর কি। একটু অংহকারীও মনে হয়। হুহ এই ঢং বা অহংকারের কি আছে রে তোমার ভাই?

পাত্তা দেবো না, দেবো না ভাবলেও কেনো যেন তার দিকেই বার বার মন চলে যাচ্ছিলো আমার। চকচকে হলুদ পাঞ্জাবীর সাথে রংচটা স্যান্ডেল, কুচকানো প্যান্ট, এক মুখ খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি । ছি ছি কোনো কান্ড জ্ঞান, ছিরিই নেই দেখছি এর। সবার থেকে আলাদা হয়ে দেখি কি একটা বই নাড়া চাড়া করছেন উনি। পাশে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, Critique of the Gotha..... পুরো নামটাও পড়তে পারলাম না বইটার। বাবা এই সব কি পড়ে রে !
আমি যেন কিছুই দেখছিনা এমন ভাব করে একটা বই হাতে তুলে নিলাম তারপর ওকে জিগাসা করলাম,
-তোমার নাম কি? সে ভীষন অবাক হয়ে চোখ তুলে চাইলো আমার দিকে। বললো,
-পার্থ।
এত অবলীলায় বললো যে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম! আর সবচাইতে বেশি মুগ্ধ হলাম ওর ভয়েস শুনে। এই গমগমে ভয়েসটা ওর এই কুচকানো প্যান্ট, রং চটা স্যান্ডেল আর এই খোঁচা খোঁচা ছিরি ছাদের সাথে মোটেও যায়না। মানে ঠিক খাপ খায়না। আমার মুগ্ধ ভাবটা ওকে বুঝতে না দিয়ে ব্যাগ থেকে তড়িঘড়ি একটা পেন বের করে বইটাতে লিখলাম,

পার্থ,
আজকের এই মধ্য দুপুরের স্মৃতিটাকে,
আজীবন স্মরণীয় করে রাখার জন্য তোমাকে দিলাম
এই "হিমুর মধ্যদুপুর"
মহুয়া


তারপর সেটা প্যাক করে ওর হাতে দিলাম। ও হা করে চেয়ে রইলো। পার্থের সাথে প্রথম পরিচয়ের সেই ছিলো অমূল্য ক্ষন। এই ছন্নছাড়া ছেলেটাকে ঠিকঠাক শেইপের মাঝে আনতে সেদিন থেকেই লেগে গেলাম আমি, মানে মনে মনে আর কি। মনে মনে স্থির করে ফেললাম এই মধ্য দুপুরের হিমুকে আমার মানুষ করতে হবে।
কিন্তু কোথায় হিমু? মানে পার্থ। পরদিন থেকেই গায়েব সে। কোথাও তাকে দেখি না, খুঁজে পাই না। আমি মনে মনে সারাক্ষন ওকে খুঁজে বেড়াই। দীর্ঘ নয় নয়দিন পর হঠাৎ এক সকালে মন খারাপ করে ক্যান্টিনে বসে আছি একা একা। হঠাৎ দেখি উনি আসছেন উস্কখুস্ক চুল, আরও বেড়ে যাওয়া দাঁড়ি। বিচ্ছিরি ঘুম ঘুম চোখ মুখ নিয়ে উনি একটা টেবিলে এসে বসলেন। যথারীতি কোনোদিকে খেয়াল নেই তার। আমি যে জলজ্যান্ত একটা মানুষ এইখানে বসে আছি সেটা উনার নজরেই আসলোনা। এমন রাগ হলো। দুম করে গিয়ে বসলাম ওর সামনে। রাগে গা জ্বলছিলো আমার। জানতে চাইলাম,
-কোথায় ছিলে এতদিন?
পার্থ বেশ অবাক হয়ে চাইলো। ঘুমের ঘোর মনে হয় তখনও কাটেনি।
আমি আবারও বললাম,
- কোথায় ছিলে বলো এখুনি।
সে হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে ভীষন খেপে উঠলো,
- কোথায় ছিলাম মানে? এইভাবে জিগাসা করছো কেনো? কোথায় ছিলাম তোমাকে বলতে হবে? তুমি এইভাবে কথা বলার কে?
চড়া গলায় ওর প্রশ্ন শুনে আমি বিস্ময়ে হতবাক! চোখ ফেটে কান্না এসে গেলো। আমি ওর সামনেই দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠলাম। আমার কান্না দেখে পার্থ ভীষন ভয় পেলো এবার। সে বললো,
- আরে কি ব্যাপার ? থামো, কান্নাকাটির কি হলো? হয়েছে কি?
ক্যান্টিনের লোকজন সব আমাদের দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো। সে তাড়াতাড়ি আমার হাত ধরে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে আসলো।
আমি কথাই বলতে পারছিলাম না। আসলে আমার কান্না যে পার্থের কাছে এত কার্য্যকরী হবে সে কথা সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম আমি। সেদিনই পার্থ প্রতিজ্ঞা করেছিলো। ওর উপর যত যাই আসুক ও কোনোদিন আমাকে আর কাঁদতে দেবেনা। বুঝে গেলাম আমি যে কোনো অন্যায় আবদারও মেনে নেবে পার্থ যদি আমার চোখের এক ফোটা জল ঝরে।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি অবশ্য প্রায়ই ওকে ব্ল্যাকমেইল করি। :P

পার্থকে এই হিমু টাইপ ছন্নছাড়া জীবন থেকে সুশৃঙ্খল জীবনে ফিরিয়ে আনবো বা আমার মনের মত করে গড়ে তুলবো যত যাই মনে মনে ভেবে ভেবে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমি তার এক ফোটা পরিবর্তন যদিও আনতে পারিনি আজও। আমার সাথে ওর চিন্তাধারা, লাইফস্টাইলের নব্বই ভাগ অমিল ।তবু পার্থ ইজ পার্থ আর অনেক পরে হলেও বুঝেছি আসলে এই হিমু টাইপ একরোখা পার্থকেই আমি ভালোবাসি। ছন্নছাড়া, উদাসী, এলোমেলো বা যা মনে চাই তাই করে ফেলা শুধু আমার কান্নাতেই কুপোকাত হয়ে যাওয়া এই পার্থকেই।
পার্থ ইউ আর দ্য অনলি ওয়ান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড এ্যন্ড ইউ নো রেস্ট অফ দ্যা ওয়ার্ডস....:)

See I know a little bit something good
Always comes out of a little bit something bad
And I wasn't looking for someone new
Till you came down
Giving me the best that I've had

And now you're on my skin
Body to body
Working me out
Yeah you, you play to win
Rocking me steady
Round after round....
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২
৩৯টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×