দাদু কোত্থেকে যেন একটা ঘৃতকুমারী গাছ যোগার করেছিল । গাছটা বড় হওয়ার পর আমাদের উপর অত্যাচার (!! ) শুরু হল । প্রতিদিন সকালে খালিপেটে এর পিচ্ছিল শাঁস খেতে হত । একদিন সকালে উঠে দেখি কে যেনো গাছটা চুরি করে নিয়ে গেছে । আহ, সেদিন যা খুশি লাগছিল। মনে মনে সে চোরকে হাজার বার ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম ।
আমাদের বাড়ির পেছনে ছিল শিমুল,কদম, নিম, মেহগনি আর কলা গাছ । শিমুল গাছের নিচে বসে কত্তো পুতুল খেলেছি । আর কলাবাগানের ভেতরে তো নিজেদের সকল ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা একত্রে করে বিরাট এক মহল বানিয়েছিলাম । আসলে সেটার সাইজ ছিল ছোট কিন্তু যখন বানিয়েছিলাম তখন কেন জানি বিরাট মনে হচ্ছিল ।
তখন চারটা সুপারির বিনিময়ে একটা আইসক্রিম পাওয়া যেত । তাই সকাল বেলা উঠার পর সবাই সুপারি কুড়াতে যেত । আমি সবার শেষে চোখ কচলাতে কচলাতে গাছ তলায় গিয়ে কিছুই পেতাম না । তাই সবাই যখন আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে আইসক্রিম কিনত তখন বাধ্য হয়েই আমাকে সবার অগোচরে গাছ থেকে সুপারি চুরি করে আনতে হত । আহা কি দিনগুলোই না ছিল.....
তো যাই হোক শহরে তো আর গাছ লাগানোর মত তেমন খালি জায়গা নেই তবুও বাড়ির সামনের একহাত জায়গাতেই চাপাচাপি করে লাগানো হয়েছিল নিম, আম, কাঠগোলাপ আরও কিছু ফুলগাছ । সন্ধ্যায় বারান্দায় বসলেই শীতল বাতাসে শরীরটা জুড়িয়ে যেত । তাই লোডশেডিং এর সময় সবাই ছোট বারান্দাতে এসে বসতাম । কিন্তু সেদিন কোন নোটিশ ছাড়াই সিটি কর্পেরেশনের লোক এসে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলল (2টা নিম আর একটা আমগাছ ) । এতকরে মানা করা হল শুনলো না ।তাদের এককথা, রাস্তা বড় করার জন্য গাছ কাটতেই হবে । আমাদের বাড়িটা ছিল রাস্তার একদম শেষ মাথায় । গাছ 3টা না কাটলেও কোন সমস্যা ছিল না । শুধু আমাদের না আশেপাশের সব বাড়ির সামনে এখন কোন সবুজ নেই । বারান্দায় যেতে এখন আর ভালো লাগে না । এই সিটি কর্পোরেশন স্লোগান দেয় গাছ লাগানোর , আর এরাই যখন গাছ কেটে ফেলে তখন কেমন লাগে??
শাহানা আপুর "পৃথিবীর তাপমাত্রা" পোস্টটি পড়ে কষ্টটা জেগে উঠলো আর সেজন্যই এই লেখা ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০