somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস

০৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবেদ মিয়া তার ছোট ছোট পা’তে যতটুকু বড় কদম ফেলা যায় তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কদম ফেলায় আরেকটু গতি বাড়ালে তার হাটা দৌরে পরিণত হবে।আবেদ মিয়া আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে যেন আল্লাহ বাস ড্রাইভারকে স্টপের টং ঘরে পান বিড়ি চা পানে আরেকটু ব্যস্ত রাখে। সে যেই গলি দিয়ে হাঁটছে তার শেষ মাথায় হাতের ডানে বড় রাস্তায় বাস স্টপ। আর একটু হাঁটলেই যখন বাস স্টপ এসে যাবে তখন সে তার মাথাটা আগে থেকে ডান দিকে ঘুরিয়ে দেয়। যেন ডান পাশের বাড়ি ঘর ভেদ করে সে দেখতে পাবে স্টপে বাস আছে কি নাই।

আবেদ মিয়া সে এবার আল্লাহ ডাক থেকে সরে যায়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে হালায় বাসের গোয়াডা দেখতে পাড়লেই বাচি। অবশেষে সে বাসের পাছাটা দেখতে পায়। সে এবার সত্যি সত্যি দৌর দেয়। আবার বলে আবে হালায় বাস ছাড়িসনা।

বাসে উঠে অবশেষে আবেদ মিয়া। উঠেই সে দেখে ড্রাইভারের সিট থেকে ছেমরাডা উইঠা যাইতেছেগা। আবেদ মিয়া বলে ঐ কই যাইবার লাগছোছ? ছেলেটা বলে আমি বাসটারে ছামনের দিকে লরাইলাম। ওস্তাদ দোকানে। আমি হেলপার। প্রচুর ভিড় ঠেলে আবেদ মিয়া বাসের পিছনে যায়। পিছনে গেলে মানুষের হেলপারের কানি গুতা একটু কম লাগে।বেশ সময় হল ড্রাইভারকে আল্লাহ পান বিড়ি চা পানে ব্যস্ত রেখে দিয়েছেন। আবেদ মিয়া আবার চেচিয়ে উঠেঃ

ঐ ডেরাইভার নবাবের পো কই? ছিংহাছনে বইয়া কি চা কপি হুক্কা টানটাছে? বাসের অন্য যাত্রীরাও বিরক্ত হয় কিন্তু তাদের হয়ে আবেদ মিয়া যথাযথ ভঙ্গি ভাষায় বিরক্ত প্রকাশ করছে বলেই হয়তো অন্যরা চুপ করে ছিল।কিন্তু এবার এক ছাত্র বলে উঠেঃ

ঐ হেল্পার কিরে বাসের উপরে মানুষ নেও না? নইলে তো তেলের দামও উঠবেনা।

বা সারির বায়ের চেয়ারে বসা ছেলেটা জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে এক হুন্ডা ওয়ালার সাথে কথা বলছে।

হুণ্ডাওয়ালা বলছেঃ

আরে মামা আমিও তো যাইতাছি তুই আগে বলবিনা। নাম আমার সাথে বাইকে আয় হেল্পাররে টাকা দিছস?

আরে না ড্রাইভার হালায় তো মরছে। বাস ছারলে তো হেল্পার আইবো।

ওকে নাইমা আয়।

ছেলেটা চেয়ার ছেড়ে উঠতে যেয়ে আবেদকে দেখে। আরে আবেদ ভাই আপনি কই যাইবেন? আপনি আমার সিটে বহেন।

আবেদ মিয়া বলেঃ

এইতো একটু কামে যাইবার লাগছি। তুমি যাইবা না?

না ভাই আমি ঐ বন্ধুর হুণ্ডায় করে যাবো।

আবেদ মিয়া আরাম করে বসে। বাসও এবার ছাড়ে। কিন্তু বেশ ধিরে ধিরে। ড্রাইভারের আশা শেষ মুহূর্তে যদি এক দুইটা প্যাসেঞ্জার দৌড়ে বাসে উঠে।

আবেদ মিয়া এই বলে উঠেঃ

ঐ ডেরাইভার কিরে? তোর ডেরাইভারি দেইখা মনে হয়, তোর এতো কষ্ট হইতাছে যে তোরে জন্ম দেওয়ার সময়, তোর মার ভি এতো কষ্ট হয় নাই।

এই কথায় ড্রাইভার একটু পিছে ফিরে তাকায় কিন্তু বাসে মানুষ ঘিজঘিজ করায় সে আবেদ মিয়াকে দেখতে পায়না।

আর কিছু বলার সাহসও পায়না তার দেরি হওয়ার জন্য। সে জানে প্যাসেঞ্জাররা অনেক বিরক্ত তার উপর। আজকে চা বিড়ি আড্ডায় কিভাবে যেন দেরিই হয়ে গেছে।

আবেদ মিয়া বলতে থাকেঃ

গত ছপ্তাহে হুণ্ডাটা হালায় পানির দামে বেইচা দিলাম। ভালো মাল পাইছিলাম টেকা দরকার। নইলে কি এই হালায় ডিব্বায় উডি।

আবেদ মিয়া কথা বলতে থাকে সে যেন বুজতে পারে যে বাসের লোকজন তার কথা শুনছেই এমন কি যে লোকটা এক কানে মোবাইল গুজে আছে সেও অন্য কানে আবেদ মিয়ার যথার্থ যুক্তিযুক্ত কথা শুনে মনে মনে সায় দিচ্ছে।

হুণ্ডা চালাইতাম কেমনেতে সিঙ্গেল (সিগন্যাল) ডিংগামু। ক্যামনে জ্যাম বাদ দিয়া আগে যামু, হেই কতা মাথায় দৌরাইতো। আর এই হালায় মনে হয় বাস চালায় জেমে পরার লিগা সিঙ্গেলে পরার লিগা।বাস তেরা কইরা নিজেই জেম লাগায় আবার সিঙ্গেল যেই দিকে আছে হেই সিঙ্গেলে পরার লিগা স্পিড আগেই কমায় দেয়।

এমন সময় হেল্পার আসে আবেদ মিয়ার কাছে। ভাই কই যাইবেন? ভাই ৬ টাকা দেন কেন?

আব্বে ৫ টাকার নোট নাই তাই তোরে তিনডা দুই টাকা দিলাম।

ভাই ৭ টাকা ভাড়া

আব্বে আবার মুখে মুখে কতা ভি কছ! মানুষ চিনছ?

ভাই আপনার আসে পাশে জিগান কয় টাকা ভাড়া।

আব্বে মোর জ্বালা। আমার কাছে বড় নোট ভাংতি নাইক্কা।

এই কথা বলে আবেদ মিয়া তার সাদা ধবধবে পাঞ্জাবীর পকেট হাতড়ে একটা এক টাকা দামের চকলেট বেড় করে বলেঃ

আব্বে লো তোর এক টাকা।

হেল্পার চকলেটের দিকে একবার আরেকবার আবেদ মিয়াকে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে টাকা আদায় করে। তারপর একপাশে দাড়িয়ে দাত দিয়ে কামরে চকলেটের প্যাকেটটা ছেড়ার চেষ্টা করে কিন্তু কেন যেন সে তা ছিরতে পারেনা। তারপর বিরক্ত হয়ে বলেঃ

হালায় পাব্লিক!! এই কথা বলে সে চকলেটটা ফেলে দেয়।

*

আবেদ মিয়ার এবার বাস থেকে নামার পালা। মানুষ ঠেলে কনি দিয়ে গুতা দিয়ে সে বাসের গেটের দিকে আগাতে থাকে। আর বিরক্ত হয়ে বলতে থাকেঃ

হালায় মানুছ আর মানুছ। ঢাকা ছহরটারে পাইয়া বইছে। কই থিকা ছুনবার পারছে ঢাকা ছহরে টেকা বাতাসের লাহান উড়ে, ছুইন্না বাতাছ থিকা টেকা ধরবার আইয়া পরছে।

ড্রাইভারের সামনে যেয়ে আবেদ মিয়া বলেঃ

আব্বে গাড়ীডা থামা দেহি।

ড্রাইভার কথা শুনে গাড় ফিরিয়ে চেহারা দেখে তারপর বলেঃ

এই হানে জাম নাই সিঙ্গেল নাই স্টপও নাই সামনে থামবো।

আবেদ মিয়া ডেরাইভারের কণ্ঠে কিছু শুনতে পায়। এবার আবেদ মিয়া বলেঃ

আব্বে তুই হালায় আমারে চিনছ আমি কেডা। থামাইবার কইছিনা।

ড্রাইভার বলেঃ

হ আপনারে চিনি আপনে আবেদ মিয়া।

আবেদ মিয়া চমকে যায়।



আবেদ বলেঃ

তুই কেডা?

ড্রাইভার বলেঃ

আমার মামা হারমান মোল্লার বাড়িতে আপনে ভাড়া আছিলেন।

আবেদ মিয়া সচেতন হয়ে উঠে কথা শুনে।

একদিন মামায় বাইত্তের টিনের চালে মাইনসের হাটার আওয়াজ পাইয়া কয় ক্যাডারে বেক্কল টিনের চালে রাইতের বেলা হাডে। মামা তো টিনের চালে উঠবো। আমারে কয় মইডা ল। আমি মই নিলাম। মামায় মই দিয়া উডে আর কই খবরদার চাল থিকা কেউ ঝাপ দিবিনা। মামার কণ্ঠে হালায় ভালই ভয় খাইছিল পুরা জইমা বরফ। মামায় চালে উইঠা হাতে নাতে পাকরাও করে।

মামায় কয় ভদ্রলুকের বাসার চালে রাইতের বেলায় গাঞ্জা লইয়া বইছ। সামনের মাহিনায় আমার বাড়ি ছাইড়া কোন আখড়ায় গিয়া ঊডো।

আবেদ মিয়া পুরা জমে বরফ হয়ে যায়। একটু পরে ঘাম দিয়ে বরফ গলিয়ে আবেদ মিয়া কোন রকম হুঙ্কার দিতে নেইঃ

আব্বে হারামখোর বাস থিকা নাম তোরে দেখাইতাছে আমি হালায় কেঠা।

এমন সময় এক যাত্রী হাসতে হাসতে বলে ভাই আপনি না নামতে চেয়েছিলেন? আপনিই নেমে যান ড্রাইভারকে বাস থেকে নামালে আমাদের স্টপে কে নামাবে?

আবেদ মিয়া একবার সবার দিকে চোরা চোখে তাকিয়েই বাস থেকে নেমে যায় দ্রুত।

বাসটা ছেড়ে যেতেই আবেদ মিয়া চিৎকার দিয়ে বলে ‘ক্যা হেল্পার হালায় নামাইবো’।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×