বিছানায় এখন আমার জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। সেই ছিল একসময় যখন বিছানার এপার গঙ্গা হইতে পাড়ি দিয়া ওপার পদ্মা'য় পৌছে যেতে পারতাম। মাঝে-মধ্যে নক্ষত্র পতনের মত মেঝে পড়িয়া সাতাঁর কাটিতাম। আর এখন? শুধুই দীর্ঘশ্বাস......
হ্যাঁ, আমার বিবাহ হইয়াছে।
তিনি কোল বালিশ ছাড়া গুমাইতে পারেন না, নতুন সংসারে আবার কোলবালিশের মত বিলাশ বহুল জিনিসও নাই।
তো??
উত্তর মেরুর প্রচন্ড শীতেও যেই আমি রুমহিটার বন্ধ করিয়া খালি গায়ে ঘুমাই তাহার অকাল অবসান হইয়াছে। প্রচন্ড অস্বস্তিতে যতই তাহার হস্তখানি সরাইতে যাই ততই অক্টোপাশের বন্ধনে আমার জীবন অতিষ্ট হইয়া যায়।
ভোরের আলো দেখিয়া বিছানায় যাওয়া বড় উপভোগের বস্তু এখন বিস্মরণ হইয়াছে। সন্ধ্যা রাতে অর্থাত্ রাত১২টা ২০মি. নাগাদ নিতান্ত অনিচ্ছায় আমায় এখন বিছানায় পিঠ রাখিতে হয়। ঘুম কি আর আসে বাহে।
আহা: মনে পড়ে যায়, সেই একা থাকার রাত গুলার কথা......নিশিরাইতে নেটে বসিয়া থাকা... এখন চোখ বুজিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলিতেছি.... একবার শুধু জিজ্ঞাসিলাম...একটু ব্লগ পড়ি? উত্তর আসিল. .."নতুন ল্যাপটাপ কেনার টাকা থাকলে পড়"।
ইহার মানে জিজ্ঞাসা করাই অবান্তর!....কারন?
বিবাহের দুইদিন পর....বাল্যবন্ধুদের পাইয়া আড্ডায় মশগুল হইয়া সামান্য দেরি করিয়া ফেলেছিলাম। বেশিনা রাত মাত্র সোয়া ১২টাও বাজে নাই দেখি আমার ছোট ভাইকে লইয়া আমার নতুন স্ত্রী আড্ডায় হাজির। বিব্রত আমি বন্ধুদিগ হইতে বিদায় লইয়া বলিলাম চল বাসায় যাই। তিনি হাসি মুখে বসিয়া রইলেন...বলিলেন তাহারও রাত্রিকালিন বড় আড্ডা পছন্দের। কিছুতেই বাসায় যাইবেনা। পড়িলাম গ্যাড়াকলে.....বন্ধুরাও চান্স পাইয়া চা-চানাচুর আনাইয়া নতুন উদ্যমে আমার কাল্পনিক দোষ লইয়া গপ-সপ চালু করিয়া দিল। পরে প্রায় আধা ঘন্টা পর 'রাত্রে আর কখনোই আড্ডায় বসিবনা' কবুল করিয়া নিস্তার পাইয়াছিলাম... ....
ওফ!! অথচ কি হইবার কথা ছিল!! বিবাহ করিবার পূর্ব থেকেই আমি গুরু ধরিয়াছিলাম বিবাহ পরর্বতী জীবনে কিভাবে একনায়কের মত সংসারে কর্তৃত্ব করা যায় তাহা লইয়া। প্রচন্ডভাবে প্রস্তুত হইয়াছিলাম 'হাউ টু কিল দ্যা ক্যাট এট বাসর ঘর' । কিন্তুক!! হায় হোসেন, হায় কারবালা!! বাসর ঘরে (যাহা তাহার ইচ্ছায় তাহাদের বাড়িতেই সাজানো হয়েছিল) প্রবেশমাত্রই তাহার প্রচন্ড গা দুলানো হাসিতে আমার আক্কেলগুডুম.....ভাব ধরিয়া কর্তাসুলভ কি হইয়াছে জানতে চাহিলেই...আমাকে আয়নার সামনে দাড় করাইয়া দিল। দেখিলাম তাহার বদ কোন ভগ্নি গৃহ প্রবেশমুখে মালা পড়ানোর সময় আমার দুইকানের গোড়াতেও দু'টা জবাফুল বসাইয়া দিয়াছে। আর আমারে দেখাইতেছে টোটাল 'ছ্যাইয়া'দের মত.......তারপরও দেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সচেষ্ট হইলাম, ফুল দুটা কান হইতে ফেলিয়া....তাহাকে দেখাইয়া আমার নাগরা দিয়া পিষিয়া ফেলিলাম......বুঝাইলাম ইহা একটা সর্তক সংকেত.......কিন্তুক সে বলিল...".এই দাড়াও দাড়াও আমার মোবাইলের ক্যামেরাটা অন করি...তোমার মুডটা সেইরকম হইছে...."
ওফ্ খোদা!!....আমি আবারও 'বিড়ালটা' ধরার আশায় গম্ভীরভাবে বলিলাম 'তুমি এখনো আমাকে সালাম করনাই' বলিয়া পা বাড়িয়ে গৃহকর্তার ন্যায় দাড়াইলাম..... সে তাহার গা দুলানো হাসি দিয়া টপাস করে আমার পায়ে সালাম করেই ধপাস করিয়া বিছানায় বসিয়া তাহার পা' দুখানা আমার সামানে ঝুলাইয়া দিয়া বলিল...."স্ত্রীকেও সালাম করিতে হয়..হাদীসে আছে"....
'কোন হাদীসে আছে'? অপ্রস্তুত হইয়া গেলাম
"সহীহ্ বুখারী হাদীসে....তাড়াতাড়ি সালাম কর'
কোনমতে মুখে সালাম দিয়া, বিড়ালটা আবার ধরার আশায় বলিলাম....'দেখ তুমি কিন্তু এখন আর আমার সাথে আগের মত ফাইজলামি করতে পারবা না....'
"কিউঁ...???" ভুড়ু নাচিয়ে জানতে চাইল..
'এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী' গম্ভীরভাবে বলিলাম.....
শুনিয়া প্রচন্ড হেসে উঠে বিড়ালটা ধরে ইয়ে মানে আমার শেরওয়ানীর কলার ধরে টান দিয়ে বলল.....
'জনাব আপনারে আমার জামাই-জামাই লাগে না গো........আপনি আমার সেই 'তুমি'-ই থাকবেন......."
বস্....আর লেখা যাইবেনা...ফোন করিয়াছে..."কি কর? পড়ালেখা? আজ উইকএন্ড দেখে ব্লগ পড়িতেছোনাতো আবার? আমি আধাঘন্টার মধ্যে আপাকে নিয়ে বাসায় আসতেছি...."
আধাঘন্টা প্রায় শেষ হইতে চলল.......
আমি এখনও স্বপ্ন দেখি 'বিড়ালটা' কিভাবে ধরা যায়.....
৩য় পর্ব-কামরূপ কামাখ্যা অধ্যায়
৩য় পর্ব
এইখানে ২য় পর্ব
এইখানে ১ম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:১৮