চলো, সুরঞ্জনা চলো ফের আজনবী হয়ে যাই।
আমাদের এঁদো গলি ছালওঠা কুকুর রূপবান টিন
আর ঢেউ খেলানো খোয়ারিকে পেছনে ফেলে
চলো ফের আজনবী হয়ে যাই।
কোনো লাভ নেই সখা, পরিপাটি প্রেম
সুডৌল মায়া জন্মাবে এবং মরে যাবে।
নিশ্চিন্ত ঘুম আর তৃপ্ত উদ্ধত হাসির মৃত্যু হবে,
চকচকে মলাটের কবিতার বই, সাপ বিনুনি এবং
পরীক্ষিত সতীত্ব-সেও লুটিয়ে পড়বে পুরুষাকারে।
অনাদরে বাড়তে থাকা প্রত্যাশার হাতছানি জয় করে
চলো ফের আজনবী হয়ে যাই।
ছাই রঙা ভরসা, সেও নিমিষে মিলিয়ে যাবে
ফাঁপা অন্ধকারে,
একাকী সুরঞ্জনা ঘোর বেপথু হবে এবং মরবে।
তবুও নারীকণ্ঠ বেদবাক্য কলরবে উঠে আসা
ক্ষীণ আলোয় ভাস্বর হতে হতে ভোর হওয়ার আগেই
চলো ফের আজনবী হয়ে যাই।
মরাল গ্রীবায় সেই ঈশৎ কালো তিলটিকে
কতদিন ছুঁয়ে দেখা হয়না, আদরের পেলব পরশে
কাছে টানা হয়না; অনধিকারে বাড়তে থাকা
অন্ধকারে একচিলতে আলোর ঝলকানি
এলো কি এলো না কি যায় আসে?
চলো না, ফের আজনবী হয়ে যাই?
মিথ্যা, নির্ভেজাল মিথ্যায় নিয়ত বসবাস আমার;
যারা বলেছিল মরে গেছি, তারা সব চলে গেছে
বেগুনি রঙের দিগন্ত পেরিয়ে আরো দূরে
যেখানে জীবনানন্দের ধানশালিকও নেই-
যোগিন্দরের কাচা চামড়ার কটকানো গন্ধও নেই!
লোবানের কথা? তাও মনে পড়ে না;
কেননা আমার চারপাশে ম ম উচ্ছ্বাসে
বিপুলা পৃথিবী ক্রমেই ছোট হয়ে আসে।
এত এত মানুষ, এত এত শব্দ শশ্মানের
নিস্তব্ধতায় আরো বেশী শীতল এবং শান্ত।
ছোট ছোট ঢেউও স্থীর জটায়ুর মত ঠাণ্ডা,
পিঁপড়েরা সার বেঁধে আসছে.....আসছে..।
সোঁদাগন্ধ মাটিকে সরে যেতে বলো-ওরা সরে যাবে,
পাতাবাহারী গাছটিকে দুলে উঠতে বলো- সে মাথা নোয়াবে,
চোখের ধোঁয়াটে চাদরকে সরে যেতে বলো-সে সরে যাবে,
আমাকে সরে যেতে বলো-আমিও সরে যাব;
তারপর থেকে যাবে সেই একজন, ভীষণ রকম
একা একজন-কোঁচকানো এক বুলেটফুটো সার্ট....
সে তোমায় বলবে-
সুরঞ্জনা চলো, আজনবী হয়ে যাই!
ফের আমরা আজনবী হয়ে যাই!
--------------------------------------------------------
২০১২ সালে আগস্টের ৯ তারিখ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪