somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুম রহমান
শেষ পর্যন্ত লেখাটাই থাকে। টিভি, রেডিও, ওয়েবসাইট, চলচ্চিত্র, মঞ্চ, বিজ্ঞাপণ, ব্লগ - লেখার যতো মাধ্যম সবখানেই লিখতে হবে। পৃথিবী পাল্টে গেছে - এখন আমরা দুহাতের দশ আঙুলেই লিখি।

যে ছবি বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাধারণভাবে আমরা জানি, চলচ্চিত্র মানেই বিনোদন আর ব্যবসা। কিন্তু কোন কোন চলচ্চিত্র আছে যা ব্যবসা ও বিনোদনের উর্ধে তার ভূমিকা রেখেছে। কিছু চলচ্চিত্র সামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যা তুলে ধরেছে, মানুষের মূল্যবোধে আঘাত হেনেছে কিংবা বদলে দিয়েছে ভাবনার ধরণটাই। কখনো ভালো অর্থে কখনো বা খারাপ অর্থেই কিছু চলচ্চিত্রে বদল এনেছে মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রচলিত ধারাতেই। বদলে দেয়া এমন দশটি ছবি নিয়েই এ আলোচনা।[/sb

দ্য বার্থ অব আ নেশন


মুক্তি : ৮ ফেব্র“য়ারি ১৯১৫
দৈর্ঘ : ১৯০ মিনিট
রঙ : সাদাকালো, আংশিক রঙিন
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা ও প্রযোজনা : ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ
চিত্রনাট্য : টমাস এফ. ডিকশন জে আর [উপন্যাস, দ্য ক্লান্স ম্যান: এন হিস্টোরিকাল রোমান্স অব দ্য ক্লু ক্লুক্স ক্যান, দ্য লিওপার্ড স্পট, নাটক : দ্য ক্ল্যান্স ম্যান], ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ, ফ্রাঙ্ক ই উডস
অভিনয় : লিলিয়ান গিস, ম্যা মার্স, হেনরি বি ওয়ালথহল, মিরিয়াম কোপার, মেরি এলডেন, রাল্ফ লুইস, জর্জ সিগমান, ওয়ালটার লং
সঙ্গীত : জোসেফ কার্ল ব্রিল, ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ
চিত্রগ্রহণ : জি ডব্লিউ বিৎজার
সম্পাদনা : ডি ডব্লুউ গ্রিফিথ, জোসেফ হ্যানাবেরি, জেমস স্মিথ, রোজ স্মিথ, রাউল ওয়ালস
আমেরিকার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে টমাস ডিক্সনের কাহিনী অবলম্বনে ৩ ঘন্টা ১০ মিনিট দৈর্ঘের এই মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র গড়ে উঠেছে । কর্ণেল বেন ক্যামেরুন এবং কংগ্রেস ম্যান অস্টিন স্টোনম্যানের মধ্যে দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধুত্ব বিদ্যমান। গৃহযুদ্ধের শুরু হলে পরিবর্তিতত পরিস্থিতিতে পুরনো পারিবারিক বন্ধুত্বে শুধু ফাটলই ধরে না, তারা একেবারে পরস্পরের বিপরীত অবস্থানে চলে যায়। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, কিন্তু দুই পরিবারই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যুদ্ধের পর স্টোনম্যান সপরিবারে দক্ষিণে চলে যান নিজের রাজতৈনিক ভাবনা ও আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতিষ্ঠিত করতে। ক্যামেরুন অস্টিনের এই সিদ্ধান্তকে শ্বেত আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে দেখে। আর এই হুমকি ঠেকাতে সে ক্লু ক্ল্যাক্স ক্লেন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।
চলচ্চিত্রের ছাত্র মাত্রই জানেন গিফিথের এই ছবি পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত। সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে এই ছবিকে নিয়ে। সম্ভবত চিরকালের অন্যতম বিতর্কিত ছবি দ্য বার্থ অব নেশন। ২০০৬ সালে এন্টারটেইমেন্ট উইকলি একে বিশ্বের ২৫টি বিতর্কিত ছবির মধ্যে ৭ম স্থানে ঠাঁই দিয়েছে । এ ছবির প্রথমাংশে ব্যাপকভাবে গৃহযুদ্ধকে তুলে ধরা হয়, দ্বিতীয়াংশে ক্লু ক্যাক্স ক্লেন এর প্রতিষ্ঠাকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। জেনারেল লি’র আত্মসমর্পণ, লিঙ্কনের গুপ্ত হত্যার মতো সে যুগের উল্লেখযোগ্য সব ঘটনাই প্রায় তথ্যচিত্রের মতোই বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটাই প্রথম ছবি যা আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছিলো। বার্থ অব নেশনকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের প্রথম মাস্টার পিস গণ্য করা হয়। একদিকে চলচ্চিত্রের মৌল কৌশল সমূহের স্বার্থক ব্যবহার এবং অন্য দিকে বর্ণবাদী দর্শনের প্রচার এ ছবিকে সমালোচনার তুঙ্গে নিয়ে যায়। শৈল্পিক চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি দক্ষ সম্পাদনা এই চলচ্চিত্রের অন্যতম আকর্ষণ। স্বাভাবিতভাবেই এ ছবিকে ‘বার্থ অব আমেরিকান সিনেমা’ বলা হয়। হাটাহাটি পা পা করে চলচ্চিত্র তখন মাত্র হাঁটতে শুরু করেছিলো আর সেই সময়ই বার্থ অব আ ন্যাশনের মুক্তি এক ধাক্কায় চলচ্চিত্রকে দৌঁড়াতে শিখেয়ে দিয়েছে। গ্রিফিথই প্রথম দেখিয়েছে চলচ্চিত্রের ভাষা ও এর প্রভাব কতো শক্তিশালী ও ব্যাপক হতে পারে। আজকের চলচ্চিত্রের বহুল ব্যবহৃত রাতের দৃশ্য, বহিঃদৃশ্য, প্যানারোমিক শট, হাই এঙ্গেল শট ইত্যাদি এ ছবিতেই প্রথম দক্ষভাবে তুলে ধরা হয়। শুধু শৈল্পিক কারণেই নয় ব্যবসায়িক দিক থেকে এটি চলচ্চিত্রে ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। সেই সময়ের দুই দশক জুড়ে এটি সবচেয়ে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ছিলো। মাত্র ১১০,০০০ ডলার ব্যয়ে নির্মিত এ চলচ্চিত্র কোটি ডলারের ব্যবসা করেছিলো। ওয়াল্ট ডিজনীর বিখ্যাত এনিমেশন ফিল্ম øো হোয়াইট মুক্তির আগ পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর ধরে এ ছবি একচেটিয়া ব্যবসা করে গেছে। অথচ গ্রিফিথের হাতে এ ছবির জন্যে কোন লিখিত চিত্রনাট্য ছিলো না। টমাস ডিকশনের উপন্যাস ও নাটক থেকে কাহিনী নিয়ে পুরো ছবিটাকে তিনি মনে মনে চিত্রায়িত করেছিলেন। এমনকি এ ছবির জন্যে তিনি কোন নোটও ব্যবহার করেননি।এটাই প্রথম চলচ্চিত্র যা হোয়াইট হাউজে আলাদাভাবে প্রদর্শিত হয়। এবং তৎকালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট উইড্র উইলসন এ ছবির উচচ প্রশংসা করেন। উইলসন এ ছবি দেখে বলেছিলেন, ‘ইতিহাসকে যেন আলো দিয়ে লেখা হয়েছে।’ পরবর্তীতে গ্রিফিথের বিরুদ্ধে যখন ‘ন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সম্যান্ট কলার্ড পিপল’ [এনএএসিপি] বর্ণবাদের অভিযোগ আনে তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যকে কাজে লাগান। কিন্তু ইতিহাসে বর্ণবাদী ছবি হিসেবে এ ছবি নিয়ে বিতর্কের কোন শেষ নেই। মুক্তির কয়েক দশক পরও এ ছবি নানা প্রশর্দন কেন্দ্রে বহু দাঙ্গার সৃষ্টি করেছে। সে সময় বোস্টন, ডেনভার, ফিলাডেলফিয়া, মিনাপোলিস, পিটসবার্গ, ওহিও, সেন্ট লুইয়ের মতো বড় বড় শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিলো। লস এঞ্জেলেস এবং শিকাগো সহ একাধিক বড় শহরে এ ছবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিলো। কিন্তু সব দাঙ্গা আর বিতর্ক এ ছবির লাভের অঙ্ককে বাড়িয়েই দিয়েছিলো। সকল বির্তকের পরও প্রবল দর্শক চাহিদার মুখে এ ছবির সব দোষই কেটে যায়। যদিও এখনও কারো কারো ধারণা আছে তীব্র বর্ণবাদী দল ক্লু ক্ল্যাক্স ক্লান এর নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে এ ছবিকে ব্যবহার করা হয়! গ্রিফিথ বড় মাপের পরিচালক হলেও ব্যক্তি হিসাবে ছিলেন ভীষণ বর্ণবাদী। তাই ছবির প্রধাণ কালো চরিত্রে সাদারাই কালো সেজে অভিনয় করেছিলো। সত্যিকারের কালো নিগ্রোরা কেবল অপ্রধাণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলো। কালোদেরকে তিনি কোন গুরুত্বই দেননি। এ ছবির অন্যতম বিষয়বস্তুতে আছে কু-ক্লুক্স-ক্লান। আমেরিকার একটি গোপন সংগঠন কু-ক্লুক্স-ক্লান। মার্কিন গৃহযুদ্ধের পর নিগ্রো দাসদের মুক্ত হওয়া অনেকেরই পছন্দ হয়নি। টেনিসি সোসাল ক্লাব, যারা কিনা গ্রিক কাইক্লস বা চক্র দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলো, এদের একদল তরুণ সংগঠন এই গোপন সংগঠন সৃষ্টি করে। এরা মূলত নিগ্রোদের দমিয়ে রাখায় বিশ্বাসী ছিলো। রাতের আঁধারে সাদা গাউনে সারা মুখ শরীর ঢেকে এই দলের সদস্যরা ঘোড়ায় চড়ে সদ্য মুক্ত হওয়া নিগ্রো দাসদের ভয় দেখাতো। এই ভয় দেখানোর ব্যাপারটি তারা শুরুতে আনন্দ হিসেবে নিলেও ক্রমশ তারা নিগ্রো বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। এমনকি নিগ্রোদের খুন করা, অপহরণ করায় এরা জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৫ সালে এই গোপন সংগঠন আবার জেগে ওঠে, কিন্তু ১৯৩০-এ দেশের মন্দা পরিস্থিতে এরা আপনিতে দমে যায়। তবুও অনেকের ধারণা এই সংগঠন এখনও নানা ধরণের শোষণের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তীব্র বর্ণবাদী গ্রিফিথ অবশ্য পরবর্তীতে এ ছবির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ বের করেন যেখানে ক্লু ক্লেক্স ক্ল্যানের প্রসঙ্গ বাদ দেন। চলচ্চিত্রের কৌশল, কারিগরী দক্ষতার দিক থেকে মাইলস্টোন এই ছবির গায়ে কলঙ্কের মতোই বর্ণবাদে র উল্কি আঁকা থাকলেও মনে রাখতে হবে বিশাল ক্যানভাসের এই ছবি পরবর্তীতে বহু মার্কিন তারকা পরিচালকের জন্ম দিয়েছে। পরবর্তীকালের পরিচালক জন ফোর্ড, রাওল ওয়ালস, এলমার ক্লিফট, জোসেফ হেনাবেরি, কার্ল ব্রাউন, ডোনাল্ড ক্রিপ্স প্রমুখ এ ছবিতে শিল্পী বা কলাকুশলী হিসাবে কাজ করেছেন। গ্রিফিথের প্রধান সহকারী জোসেফ হেনাবেরি এ ছবিতে আব্রাহাম লিঙ্কন ছাড়াও আরও ১৩টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। হোয়াইট আর্ম জো চরিত্রের অভিনেত এলমো লিঙ্কনও ৮টি চরিত্রে অভিনয় করেছেন।


দ্য জ্যাজ সিঙ্গার

মুক্তি : ৬ অক্টোবর ১৯২৭
দৈর্ঘ : ৮৮ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা : এলান ক্রসল্যান্ড
প্রযোজনা : ডেরিল এফ জানুক
চিত্রনাট্য : আলফ্রেড এ কন, জ্যাক জারমুথর্, স্যামসন র‌্যাফিলসন
অভিনয় : আল জনসন, মে ম্যাকভয়, ওয়ার্নার ওল্যান্ড, ইউজিন বেসারার, ববি গর্ডন
সঙ্গীত : এর্নি এ্যাডম্যান, জ্যামস ভি মোনাকো, লুই সিলভার্স, আরভিন বার্লিন
চিত্রগ্রহণ : হল মোর
সম্পাদনা : হ্যারল্ড ম্যাকর্ড
জ্যাজ সঙ্গীত সম্পর্কে বাবার কটু মন্তব্যের প্রতিবাদে তরুণ জ্যাকি বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কয়েক বছর পর সে জ্যাক রবিন নামে একজন নাইট ক্লাবের গায়ক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। নৃত্যশিল্পী মেরি ডেলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ব্রডওয়েতে নাচ-গান করার স্বপ্ন দেখে তারা। দুজনে একত্রে যাত্রা শুরু করে। এক সময় ব্রডওয়ে গান গাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু তখন জ্যাকির মা তাকে অনুরোধ করে বাবার আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গান গাইতে। পরিবারের প্রতি ভালবাসা নাকি বৃহত্তম সুযোগ কোনটিকে জ্যাক বেছে নেবে তাই নিয়ে শুরু হয় অর্ন্তদ্বন্দ্ব।
আপাত সরল কাহিনী নিয়ে নির্মিত এ ছবি চলচ্চিত্র ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কেবল চলমান ছবি এই ছিলো চলচ্চিত্রের বিস্ময় আর চমক, কিন্তু সেই চমককে ম্লান করে দিলো জ্যাজ সিঙ্গার। দর্শক বিস্মিত হয়ে দেখলো রূপালী পর্দায় মানুষ শুধু হাঁটছে না, কথাও বলছে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাই জ্যাজ সিঙ্গারকে প্রথম স্বার্থক সবাক ছবি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাসী এ ছবির মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে সংলাপ ও সুরের যাদুতে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। এই ছবির মুক্তিতে শুধু যে নির্বাক চলচ্চিত্রের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠে তাই নয়, বরং পাশ্চাত্ত চলচ্চিত্র জগতে মিউজিক্যালের জš§ দেয়। মিউজিক্যাল চলচ্চিত্রের বক্স অফিস সাফল্যের মাইলস্টোন বলা যায় এই ছবিকে। জ্যাজ সিঙ্গার চলচ্চিত্রের ইতিহাসের প্রথম ছবি যাতে সংলাপ, সুর ও আবহ সঙ্গীতের সমন্বিত রূপায়ণ দেখা যায়। এর আগে ১৯২৬ সালে জন বেরিমোর নির্মিত ডন জুয়ান ছবিতে সুর ও আবহ সঙ্গীতের সমন্বিত ব্যবহার ছিলো। শুধু সবাক চলচ্চিত্রই নয়, জ্যাজ সিঙ্গার এনিমেশন ফিল্মেরও সূচনা ঘটায়। এ সময় ওয়াল্ট ডিজনী প্লেন ক্রেজি ও গ্যালোপিন’ গাউচো ছবি দুটিতে তার বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র মিকি মাউস-এর অভিষেক ঘটিয়েছেন। জ্যাজ সিঙ্গার দেখার পর সবাক চলচ্চিত্রের শক্তি অনুধাবণ করেই ডিজনী তৃতীয় মিকি মাউস ছবি স্টিমবোট উইলির মুক্তি দেন। এ ছবিতে তিনি চরিত্রের মুখে সংলাপ, প্রয়োজনীয় সঙ্গীত ও আবহ ব্যবহার করেছেন। এবং আগের দুটো নির্বাক এনিমেশন ছবিকে বাদ দিয়ে তিনি সবাক মিকি মাউসের মুক্তি দেন। এই এক ছবি দিয়েই ওয়ানার্স ব্রাদার্স হলিউডের অন্যতম চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থায় রূপান্তরিত হয়। ১৯২৯ সালে প্রথম অস্কার প্রবর্তন করা হলে সেরা ছবি, সেরা চিত্রনাট্য ও সেরা কারিগরি দক্ষতার জন্যে এ ছবি মনোনয়ন পায়। কিন্তু তখন বাকী সব নির্বাক ছবির সাথে সবাক এই ছবির প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকে অন্যায্য বলে মনে করেন সমালোচকরা। তাই একে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার দেয়া হয়নি। অবশ্য এ ছবির প্রযোজক ডেরিল এফ জানুককে বিশেষ অস্কার দেয়া হয়, সূচনাকারী বিস্ময়কর সবাক ছবি জ্যাজ সিঙ্গার প্রযোজনা করার জন্যে। আর পরের বছর থেকে নির্বাক চলচ্চিত্রের ধারাটিই বিলুপ্ত প্রায় হয়ে যায়। যদিও প্রথম সবাক ছবি হিসাবে স্বীকৃত তবুও মনে রাখা দরকার, জ্যাজ সিঙ্গারের কিছু অংশে সংলাপ আছে। প্রথম সবাক চলচ্চিত্র যেখানে সর্বত্রই সংলাপ আছে সেটি হলো ওয়ার্নার ব্রাদার্সের নিরীক্ষামূলক ছবি লাইটস অব দ্য নিউইয়র্ক (১৯২৮)। এ ছবি পরে দুইবার রিমেক করা হয়। ১৯৫২ সালে মাইকেল কার্টিজ ও ১৯৮০ সালে রিচার্ড ফ্লিচার এই দুটি ভার্সন তৈরি করেন। ১৯৮০ সালের ছবিতে জ্যাকের চরিত্রে বিখ্যাত গায়ক-সুরকার নিল ডায়মন্ড ও বাবার চরিত্রে স্যার লরেন্স অলিভিয়ার অভিনয় করেন।


বাইসাকেল থিভস [লাদ্রি দি বাইসিসলিত্তে]

মুক্তি : ২৪ নভেম্বর ১৯৪৮
দৈর্ঘ : ৯৩ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : ইতালি
ভাষা : ইতালিয়ান
পরিচালনা : ভিত্তরিও ডে সিকা
প্রযোজনা : গুইসেপ্পে আমাতো
চিত্রনাট্য : ভিত্তরিও ডে সিকা, সিসারে জাভাত্তিনি, সুসো চেচ্চি দ’আমিকো, জেরার্দো গুইরিয়েরি, অরেস্তে বিয়ানকোলি,এডলফো ফ্রাঞ্চি, মূল গল্প : লুইজি বার্তোলিনি
অভিনয় : লামবের্তো মা¹িওরানি, এঞ্জো স্টাইওলা, লিয়ানেল্লা কারেল, ভিত্তোরিও আন্তোনুচ্চি
সঙ্গীত : আলেসান্দ্রো সিকোগনিনি
চিত্রগ্রহণ : কার্লো মন্টোরি
সম্পাদনা : এরালডো দা রোমা
লুইজি বার্তোলিনির গল্প অবলম্বনে নির্মিত এ ছবির কাহিনী যথার্থই সরল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মন্দাক্রান্ত ইতালীর দরিদ্র নাগরিক আন্তোনিও রিচি চাকরীর সন্ধানে ব্যস্ত। একদিন পথে একটি পোস্টারে সে কাজের সন্ধান পায়। এই কাজের অন্যতম শর্ত, সাইকেল থাকতে হবে। কিন্তু তার পুত্রকে সাথে নিয়ে রোমের পথে পথে তার হারানো বাইসাইকেলটি খুঁজে বেড়াচ্ছে Ñ এই হলো ছবির কাহিনী। স্ত্রী মারিয়া বিছানার চাদরের বিনিময়ে মহাজনের কাছ থেকে সাইকেল আনে। কিন্তু পথের তার সাইকেলটি চুরি যায়। পুলিশ তার এই সামান্য সাইকেল খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে উঠে না। সে তখন বন্ধুদের নিয়ে পথে পথে সাইকেল খুঁজতে থাকে। বন্ধুরাও এক সময় হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এই কাহিনীর চিত্রায়নে দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালীর অর্থনৈতিক দূরাবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। অবশেষে সে তার পুত্র ব্র“নোকে বুঝিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে আবার সাইকেলটি খুঁজতে বেড়োয় এবং সৌভাগ্যক্রমে সাইকেল চোরকে তারা ধরতেও পারে। ব্রূনো দৌঁড়ে পুলিশ ডেকে নিয়ে আসে। পুলিশ এসে দেখে অভিযুক্ত বালকটি অচেতন হয়ে পড়ে আছে, আন্তেনিওকে ঘিরে আছে বালকের প্রতিবেশিরা, তারা অসহায় বালকটির এই অবস্থার জন্য আন্তোনিওকে অভিযুক্ত করে। পুলিশ আন্তোনিওকে জানায়, যেহেতু সে তার কাছে কোন চাক্ষুস স্বাক্ষী নেই এবং কোন প্রমাণও নেই সেহেতু বালকটি বিরুদ্ধে তাদের কিছু করার নেই। আন্তোনিওকে ফিরে যেতে হয়। প্রতিবেশিরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। শেষ পর্যন্ত সে নিজেই একটা বাইসাইকেল চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সাইকেল চুরি করতে গিয়ে সে হাতেনাতে ধরা পড়ে, জনতা তার ছোট্ট শিশুর সামনেই তাকে মারধোর করে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বেচারা ব্র“নোকে দেখে সাইকেলের মালিকের দয়া হয়, সে কোন কেস করে না। শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, ভিড়ের মধ্য দিয়ে বেচারা আন্তোনিও ব্র“নোর হাত ধরে যাচ্ছে। তারা দুজনেই কান্না রোধের চেষ্টা করছে।
বিশাল স্টুডিও, অনেক টাকার বাজেট, বিখ্যাত নায়ক-নায়িকা এই সব না হলে চলচ্চিত্র হবে না, সে ধারণাটাই বদলে দিলো ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস। চলচ্চিত্রে এই প্রথম আমরা সাধারণ মানুষের গল্প দেখলাম খুবই সরল আর অনাড়ম্বর ভঙ্গিতে। কোন প্রেম, মারামারি, গ্ল্যামারের ঝলক ছাড়াও যে চলচিচত্র হতে পারে বাইসাইকেল থিভস তার প্রমাণ। সত্যিকার অর্থে এই ছবিকে চলচ্চিত্রে নিউ-রিয়ালিজমের প্রবক্তা হিসাবে গণ্য করা হয়। সাধারণ মানুষের সাধারণ গল্পকে চলচ্চিত্রের উপাদান হিসাবে ফুটিয়ে তুলতে এই ছবি অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে। মানবতার গল্প বলার জন্য ভ্যাটিকানের শ্রেষ্ঠ ছবির তালিকাতেও এটি ঠাঁই পেয়েছে। স্বদেশ ছাড়াও ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, জাপানেও এ ছবি একাধিকবার সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নিয়েছে। নির্মাণের পর থেকেই সমালোচক ও অন্যান্য চিত্র নির্মাতাদের দ্বারা নিয়মিতই সেরা ছবির তালিকায় বাই সাইকেল থিভেসের নাম সর্বাগ্রে চলে আসে। এমনকি ১৯৫০ সালে এই ছবিকে বিশেষ সম্মাননা অস্কার পুরস্কার দেয়া হয়। মুক্তির মাত্র চার বছর পর সাইট এণ্ড সাউন্ড ম্যাগাজিন একে সর্বকালের সেরা ছবি হিসাবে ঘোষণা দেয়। ২০০২ সালের সাইট এণ্ড সাউন্ডের জরিপে এটি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবির মধ্যে ষষ্ঠ তালিকায় আছে। ১৯৪৫ সালে রবার্তো রসেলিনি তার রোম, ওপেন সিটি ছবির মাধ্যমে নতুন ধারার বাস্তববাদী ছবি সুচনা করেছিলেন বাইসাইলে থিভস তার অন্যতম সেরা উদাহরণ। চলচ্চিত্র সূচনা থেকে বিশেষ ঘরাণার ছিলো। এর আয়োজন, এর গল্প সব কিছুতেই ছিলো অসাধারনত্বের ছাপ। কিন্তু এই ছবিতে ফুঁটে ওঠে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ। এ ছবিতে দারিদ্র-অসহায়ত্ব, যুদ্ধোত্তর ইতালীর সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিব মন্দা একটি সাধারণ মানুষ, তার সন্তান ও একটি বাইসেকেলকে ঘিরে রচিত হয়। খুব কম ছবিই এতো সহজ করে এতো মহৎ বক্তব্য তুলে ধরতে পেরেছে। পরিচালক ডি সিকা রোমের রাস্তাতেই এই ছবির শুটিং করেছেন। তিনি কোন পেশাদার অভিনেতা ব্যবহার করেননি। আন্তোনিও চরিত্রের অভিনেতা লামবার্তোর অভিনয়ের কোন প্রশিক্ষনই নেই। ছবির এই কেন্দ্রীয় অভিনেতা ছিলেন এক কারখানা শ্রমিক। সারা বিশ্বের সেরা পরিচালকদেরকে এ ছবি নানা ভাবে প্রভাবিত করেছে। টিম বার্টন তার পি-উয়ি’স বিগ এডভেঞ্চার ছবির ধারণাটি নিয়েছেন এ ছবি থেকে। বিখ্যাত তামিল ছবি পোলাধাবানও এ ছবি দ্বারা অনুপ্রাণিত। ভারতীয় নতুন ধারার চলচ্চিত্র তৈরীতে এ ছবির ভূমিকা অসীম। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি, বিমল রায়ের দো বিঘা জমি’তেও বাইসাইকেল থিভসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।


২০০১ : আ স্পেস অডেসি
মুক্তি : ২ এপ্রিল ১৯৬৮
দৈর্ঘ : ১৭০ মিনিট, ১৪১ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : গ্রেট ব্রিটন, আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
প্রযোজনা ও পরিচালনা : স্ট্যানলি কুব্রিক
প্রযোজনা : কার্লো পন্টি, পিয়েরে রুভ
চিত্রনাট্য : স্ট্যানলি কুব্রিক, আর্থার সি ক্লার্ক [মূল উপন্যাসও তার লেখা]
অভিনয় : কেয়ার দুলেয়া, গ্যারি লকউড, উইলিয়াম সিলভেস্টার, ড্যানিয়েল রিখটার, লিউনার্ড রসিটার, ডগলাস রেইন [কণ্ঠ], রবার্ট বেটি, মার্গারেট টাইজাক
চিত্রগ্রহণ : জিওফ্রে আনওর্থ
সম্পাদনা : রে লাভজয়
শিল্প নির্দেশনা : জন হোয়েসলি, এন্থনি মাস্টার্স, হারি লাঙ্গে, আর্নেস্ট আর্চার
একদল আদিম মানুষ নিয়ে ছবি শুরু হয়। তাদের একজন চিতাবাঘের হাতে মারা গেছে। অন্য আরেক গোত্র তাদের পানি পান করার গর্তে হামলা করেছে। পরাজিত হয়ে পাহাড়ের এক কোণায় তারা ঠাঁই নেয়। ঘুম থেকে উঠে দেখে একটা বড় কালো পাথর তাদের গুহার সামনে বিদ্যমান। এর একটু পরেই তাদের একজন আবিষ্কার করে, কিভাবে হাড়কে ব্যবহার করতে হয়। পরদিন তারা পানি পান খাওয়ার গর্তটি পূনরায় উদ্ধার করে। একজন হাড়টি উপরে ছুঁড়ে মারে। হাড়টি উপরে উঠতে থাকে, শূন্যে ঘুরতে থাকে। একসময় হাঁড়টি একটি স্যাটেলাইটের আদল পায়। আমরা জানতে পারি, চাঁদে একটা বিশাল কালো পাথরের খোঁজ পাওয়া গেছে। একদল বিজ্ঞানীকে এই রহস্যময় পাথর সম্পর্কে অনুসন্ধানে করতে পাঠানো হয়। তারা মনোলিথ (বিশাল কালো পাথর)টি খুঁজে বের করে এবং আবিষ্কার করে এটি লক্ষ বছর আগে প্রথিত। ১৮ মাস পরে নভোচারী ডেভিড বোমেন এবং ফ্যাঙ্ক পোলে অনুসন্ধানের জন্যে স্পেস শিপে করে জুপিটারে পৌঁছে। তাদের স্পেস শিপটির মূল নিয়ন্ত্রণকারী কেন্দ্রীয় কম্পিউটার হল ৯০০০। এক পর্যায়ে হলের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় ত্র“টি দেখা দেয় এবং এই ত্র“টি আড়াল করতে সে নভোচারীদের হত্যার পরিকল্পনা করে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য যা করা উচিত বোমেন তাই করতে বাধ্য হয়। এরপর জুপিটার পেরিয়ে যাত্রা শুরু হয়। মহাশূন্য পেরিয়ে মানুষের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে।
আজকের প্রেক্ষাপটে কল্পনা করাও কঠিন ১৯৬৮ সালে এমন একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নিখুঁতভাবে নির্মাণ করা কতোটা দূরূহ ছিলো। বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা, চলচ্চিত্রের ডিটেইলের ব্যবহার, প্রযুক্তি চূড়ান্ত উৎকর্ষ, মেধার বিকাশ এই চলচ্চিত্রকে শতাব্দীর সেরা একটি ছবির স্থান দিয়ে দেয়। শুধু চলচ্চিত্র জগতে নয়, বিজ্ঞানীদের মধ্যে, এমনকি খোদ নাসা’র মহাকাশযাত্রীদের মধ্যেও এ ছবি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এপোলো ১১-এর অভিযাত্রীরা চাঁদে নেমে বলেছিলো, এর দৃশ্য ‘ঠিক ২০১১’-এ বর্ণিত দৃশ্যের মতোই। সেই সময়ে নির্মিত এই ছবিতে আমরা ফ্লাট স্ক্রিণ টিভি, ভয়েস রিকোগনিশন সফটওয়্যারের মতো জিনিস দেখতে পাই যা বহু বছর পর আবিস্কার হয়েছে। সাধারণ এ দর্শক এ ছবি দেখেই মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। এক কথায়, সায়েন্স ফিকশন ঘরাণায় কুব্রিকের অসাধারণ সংযোজন এই ছবি। মানুষের জš§, বিবর্তন, প্রযুক্তি, গ্রহান্তরের প্রাণী, অতিবুদ্ধিমান প্রজাতি । চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তৈরি অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসাবে গণ্য এ ছবি একাধারে চিন্তাশীল, এপিক এবং নান্দনিক। মানুষের জšে§র সূচনা থেকে ভবিষ্যত পর্যন্ত এ ছবিতে দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের মহাশূণ্যের বিশালতা ও ব্যাপকতা শব্দ আর দৃশ্যের দূর্লভ সম্মিলনে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছবি দর্শকের ধৈর্য এবং মুগ্ধতার আকাঙ্খা দাবী করে। যেখানে প্রচলিত ছবি উত্তর দিতে ব্যস্ত হয়ে যায় সেখানে এ ছবি আমাদেরকে প্রশ্ন করে। অস্কারে সেরা পরিচালনা, চিত্রনাট্য, শিল্পনির্দেশনার নমিনেশন পেলেও পুরস্কায় পেয়েছে শুধু মাত্র সেরা ভিজ্যুয়াল এফেক্টের জন্য। সাইট এণ্ড সাউন্ড সর্বকালের সেরা দশটি ছবির মধ্যে একে ঠাঁই দিয়েছে। আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেস ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে ‘ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং নন্দতাত্ত্বিক গুরুত্বের কারণে’ একে সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে। ছবি শুরু হওয়ার প্রায় আধঘন্টা পর সংলাপ পাওয়া যায়। তার আগ পর্যন্ত কোন সংলাপই নেই। শুধু তাই না, প্রায় দুই ঘন্টার এই ছবিতে ৪০ মিনিটের কম সময় সংলাপ আছে। সংলাপ নয়, কুব্রিক দৃশ্য, এ্যাকশন, শব্দ ও সঙ্গীত দিয়ে সব কিছু বলতে চেয়েছেন। পরিচালক কুব্রিক আর চিত্রনাট্যকার আর্থার সি ক্লার্ক ছবির প্রস্তুতি নিতে অসংখ্য সায়েন্স ফিকশন দেখেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৫৫ সালে জর্জ পালে কনসিকোয়েন্স অব স্পেস তাদেরকে প্রভাবিত করেছিলো। উল্লেখ বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্ক ১৯৪৮ সালে বিবিসির এক প্রতিযোগিতার জন্য সেন্টিনেল গল্পটি লেখেন। পুরস্কার পাওয়া তো দূরের কথা, গল্পটি শর্ট লিস্টেও ঠাঁই পায়নি। ক্লার্ক ও কুব্রিক দুজন একত্রে চিত্রনাট্যের কাজ করার সময় এই ছোটগল্পটিকে উপন্যাসে রূপ দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা নিশ্চিত ছিলেন না, প্রথমে উপন্যাস ছাপা হবে নাকি চলচ্চিত্র মুক্তি পাবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য চলচ্চিত্রই মুক্তি পায় প্রথমে। উপন্যাস আকারে প্রকাশের সময় ক্লার্কের সাথে সহ-লেখক হিসাবে কুব্রিক তার নাম দিতে রাজী হননি। তার ধারণা ছিলো এতে করে চলচ্চিত্রের ক্ষতি হবে। উপন্যাসের চাঁদের কালো পাথরের ব্যাখ্যা আছে, ফিল্মে নেই। মুক্তির পর থেকে এ ছবির বহু রকম ব্যাখা করেছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধা, বিজ্ঞানী এবং সাধারণ দর্শকরা। কুব্রিক তার ছবিতে তো নয়ই, কোন সাক্ষাৎকারেও কখনোই এ ছবির মূল বক্তব্য কি বা এর দ্বারা তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে পরিষ্কার কিছু বলেননি। তিনি বরং সব সময়ই বলেছেন, সবারই স্বাধীন অধিকার আছে এ ছবি সম্পর্কে নিজের মতো করে ভাববার। এ ছবিতে মহাশূন্যে প্রধান অভিযানের সেটটি দেখানো হয়েছে তা বিমান প্রস্তুতকারক কোম্পানি ভিকার্স-আর্মস্ট্রংদেরর দিয়ে বানানো হয়েছে। ১২ মিটার লম্ব ২ মিটার ব্যাসের একটি ড্রাম যেটি ঘন্টায় ৫ মাইল বেগে ঘুরতে পারে তার ভেতরে এই সেটটি বানাতে ৭৫ হাজার ডলার খরচ হয়েছে। শুধু তাই নয়, মূল ছবির দৈর্ঘের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি ফুটেজ শ্যূট করা হয়েছিলো।

সেক্স, লাইস, এন্ড ভিডিওটেপ
মুক্তি : ২০ জানুয়ারি, ১৯৮৯
দৈর্ঘ : ১০০ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
সম্পাদনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : স্টিভেন সোডারবার্গ
প্রযোজনা : রবার্ট নিউমায়ার
অভিনয় : জেমস স্প্যাডার, এন্ডি ম্যাকডাওয়েল, পিটার গালাঘার, লরা সান গিয়াকোমো
সঙ্গীত : ক্লিফ মার্টিনেজ
চিত্রগ্রহণ : ওয়াল্ট লিয়ড
ব্যাটন রুজে বাস করে এ্যান ও জন দম্পতি। তাদের মধ্যে সম্পর্ক শীতল। এ্যান বিমর্ষ, বিষন্ন, জনের সঙ্গে তার কোন শারীরিক সম্পর্কও নেই। এদিকে জন প্রেম করে বেড়ায় এ্যানের বোনের সঙ্গে । এ্যানের বোন সিনথিয়া পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশায় খোলামেলা, সে একটি বারে কাজ করে। আইনজীবি জন প্রায়শই তার মক্কেলদের বসিয়ে রেখে সিনথিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চলে যায়। জনের পুরনো বন্ধু গ্রাহাম দীর্ঘদিন পরে ব্যাটন রুজে আসে। এ্যানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। গ্রাহামের এপার্টমেন্টে গিয়ে এ্যান লক্ষ্য করে, চারিদিকে অসংখ্য ভিডিও টেপ রয়েছে। এ্যান তার কাছ থেকে জানতে পারে, গ্রাহাম মেয়েদের সাক্ষাৎকার ভিডিওতে ধারণ করে, সাধারণত নারীরা তাদের যৌন অভিজ্ঞতা, আকাঙ্খা ইত্যাদি নিয়ে তাকে সাক্ষাৎকার দেয়। এ্যান এ কথা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। সে ছুটে বেরিয়ে যায়। পরদিন সিনথিয়া গ্রাহামের এখানে আসে। তার কাছে জানতে চায়, সে তার বোনকে কি বলেছে। সিনথিয়ার চাপে গ্রাহাম জানায়, তার ভিডিওটেপ সম্পর্কে এবং এটাও জানায় যে সে নিজে যৌনভাবে অতৃপ্ত, অক্ষম। এই ভিডিওগুলো দেখলে তার যৌন আকাঙ্খা পূর্ণ হয়। গ্রাহাম সিনথিয়ার সাক্ষাৎকার নিতে চায়। সিনথিয়া আর কাউকে দেখানো হবে না এই শর্তে সাক্ষাৎকার দেয়। এদিকে এ্যান তার শোবার ঘরে সিনথিয়ার কানের দুল পেয়ে ভীষণ ক্ষেপে যায়। সে গ্রাহামের ওখানে ছুটে যায়, ভিডিওতে তার সব কথা বলতে চায়। কিন্তু গ্রাহাম তাকে জানায়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এন এটা করতে রাজী হতো না, তাই সে রেকর্ড করতে চায় না। কিন্তু এ্যান তাকে বাধ্য করে। এরপরই এ্যান বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করে। জন বুঝতে পারে গ্রাহাম তার স্ত্রী’র সাক্ষাৎকার ভিডিও করেছে। সে গ্রাহামকে আঘাত করে, তাকে ঘরের বাইরে রেখে সে এ্যানের ভিডিও দেখে। ভিডিওতে এ্যান বলে, সে কোনদিনই যৌন তৃপ্তি পায়নি। গ্রাহাম তাকে অন্য পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দেয় যে, সে গ্রাহামের ব্যাপারে আগ্রহী। এরপর দেখা যায় এ্যান ক্যামেরাটি গ্রাহামের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। গ্রাহাম বলে, সে তার প্রাক্তন প্রেমিকা এলিজাবেথকে ভুলতে পারছে না। তার কথা ভেবেই সে এখানে এসেছে। তার মিথ্যা কথা বলার অভ্যাসের কারণেই এলিজাবেথ তাকে ছেড়ে চলে গেছে। তারপর থেকেই সে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় বিশ্বাসী না। গ্রাহাম ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। বোঝা যায় যে, এরপর তারা দুইজন মিলিত হয়েছিলো। জন গ্রাহামের মুখোমুখি হয়। তাকে সে জানায় যে, এলিজাবেথের সঙ্গে সে যৌন সম্পর্ক করেছিলো। উত্তেজিত গ্রাহাম তার সব ভিডিও টেপ ও ক্যামেরা ধ্বংস করে ফেলে। ছবির শেষে এসে দেখা যায়, দিনের পর দিন মক্কেলদের ফিরিয়ে দেয়ার কারণে জন চাকরি হারায়। এ্যান ও সিনথিয়া বারে বসে এক সাথে মদ পান করতে থাকে। এক পর্যায়ে এ্যান ঘরে ফিরে আসে, সেখানে তার জন্য গ্রাহাম অপেক্ষা করছে। গ্রাহাম ও এ্যন বর্তমানে একত্রে আছে বলেই মনে হয়।
যে সময় সোডের্নবার্গ এ ছবি বানান সে সময় চলচ্চিত্র নির্মাণ ছিলো স্টুডিও’র কুক্ষিগত। ব্যক্তি বা একক প্রচেষ্টায় সফল চলচ্চিত্র নির্মাণের একটি বড় নজির এই ছবি। ইন্ডিপেন্ডেট চলচ্চিত্র আন্দোলনে এ ছবি বিশাল ভূমিকা রাখে। ’৯০ দশকে স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র তৈরির যে ঘরাণা বিস্তৃত হয় এ ছবিকে তার অনুঘটক বলা যায়। এই একটি ছবিই স্টিভেন সোডারবার্গকে পরিচালক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়। যৌনতার মতো বিষয়কে নিয়ে এতো খোলামেলাভাবে এর আগে কোন শৈল্পিক ছবিই তৈরি হয়নি। অবশ্য ছবির নামকরণ ও বিষয়বস্তু অনেককেই বিভ্রান্ত করে ছবির মূল বক্তব্য আস্বাদন করতে। বার্লিন প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পর বার্লিনের সবচেয়ে বড় থিয়েটারে এই ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। পূর্ব জার্মানীর অসংখ্য মানুষ তখন সীমান্ত পার হয়ে এ ছবি দেখতে এসেছিলো। তাদের ধারণা ছিলো এটি পশ্চিমা ঘরাণার দারূণ এটা পর্ণো ছবি হবে। বলাবাহুল্য, তারা বেশ আশাহত হয়ে হল ছেড়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস তাদের ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে এটিকে ‘সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক কিংবা নন্দতাত্ত্বিক গুরুত্বের জন্য’ তালিকাভূক্ত করেছে। ১৯৮৯ সালে কান ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে এটি পাম ডি’অর পুরস্কার পায়। শুধু তাই নয় সমালোচকদের বিচারেও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং জেমস স্প্যাডার সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। সানডেন্স ফিল্ম ফ্যাস্টিভালে এটি দর্শক পুরস্কার পান। এবং সোডারবার্গ অস্কারে সেরা চিত্রনাট্যর জন্য মনোনয়ন পান।

সুপার সাইজ মি
মুক্তি : ৭ মে, ২০০৪
দৈর্ঘ : ৯৮ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও প্রযোজনা : মর্গান স্পারলক
অভিনয় : মর্গান স্পারলক, আলেক্সান্দ্রা জেমিনসন
সঙ্গীত : ডাও রে, স্টিভ হোরোভিজ, মাইকেল পারিস
চিত্রগ্রহণ : স্কট আমব্রোজি
সম্পাদনা : জুলি ‘বব’ লোমবার্ডি
ফাস্টফুড কার না ভাল লাগে। নতুন প্রজন্মের কাছে ফাস্ট ফুড অত্যন্ত লোভনীয় আহার। মর্গান স্পারলক তার প্রথম তথ্যচিত্র সুপার সাইজ মি’র বিষয়বস্তু করেছেন ফাস্টফুডকে। এই ছবিতে তিনি নিজে পরীক্ষা করেছেন টানা একমাস ধরে শুধু ফাস্টফুড খেলে কী হতে পারে। মর্গান নিজে গিনিপিগ হয়ে ২০০৩ সালের ১ ফেব্র“য়ারি থেকে ২ মার্চ টানা একমাস শুধু ম্যাকডোনাল্ডের ফাস্টফুড খেয়েছেন। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবেলা এই বিশ্বসেরা ফাস্টফুড চেইনের খাবার খেয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে তার শরীরে, এমনকি মনেও। এই ফাস্টফুড খাওয়ার ফলেই তিনি ২০ পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন লাভ করেন, তার কোলেস্টরল লেভেল হয় ২৩০, বিষন্নতায় ভূগতে থাকেন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে তার যকৃত বাড়তি মেদ জমে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমেরিকার গড়পরতা তরুণদের বাড়তি মেদের কারণ হিসাবে এইসব ফাস্টফুডের প্রাণীজ চর্বিযুক্ত খাবারকে দায়ী করা হয়। ছবির শুরুতে দেখা যায় স্পারলককে তিনজন ডাক্তার, একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন গ্র্যাস্টিক বিশেষজ্ঞ ও একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা করে দেখছে। এর পাশাপাশি এই পুরো এক মাস ধরে তিনি একজন খাদ্যবিশেষজ্ঞ এবং তার শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞের নজরেও থাকেন। শুরুতে সবাই ভেবেছিলেন, টানা একমাস এই ফাস্টফুড খেলে তার শরীরে এমন কোন খারাপ প্রভাব দেখা যাবে না, কিন্তু শেষে ফলাফল দেখে সবাই বিস্মিত হয়েছিলো। যে বাড়তি ওজন তিনি কামিয়েছিলেন তা থেকে মুক্তি পেতে পরবর্তীতে তাকে চৌদ্দমাস নিয়মিত ব্যয়াম করতে হয়েছে। কীভাবে এইসব ফাস্টফুড তৈরি হয়, কী মান নিয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছায় এবং এগুলো কতোটুকু পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত সেটাও তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। এই ছবি মুক্তির পর ফাস্টফুড প্রেমীদের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সবার মধ্যেই প্রশ্ন জাগে, নামীদামী ফাস্টফুড দোকানগুলো ক্রেতাদের যতো সুস্বাদু আর লোভনীয় খাবার খাওয়াচ্ছে ততোটা কি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী খাবার পরিবেশন করছে? এ ছবির মুক্তির পর ম্যাকডোনাল্ডের বিরুদ্ধে একাধিক ক্রেতা মামলা করে। শুধু তাই নয়, এই ছবি মুক্তির ছয় সপ্তাহ পর ‘সুপার সাইজ’ নামে ম্যাকডোনাল্ড যে ফাস্টফুড প্যাকেজ অফার করেছিলো তা প্রত্যাখ্যান করে। অবশ্য এ প্যাকেজ সরিয়ে নেয়ার কারণ হিসাবে এ ছবি কথা তারা স্বীকার করেনি। স্বীকার করুক আর নাই করুক, এ ছবি মুক্তির পরপরই ম্যাকডোনাল্ড সহ অন্যান্য ফাস্টফুড চেইনগুলো তাদের খাবার তালিকাকে স্বাস্থ্যসম্মত করতে মনোযোগী হয়।
এই তথ্যচিত্রটি অস্কারে সেরা তথ্যচিত্রের মনোনয়ন পেয়েছিলো।

এন ইনকন্ভিনিয়েন্ট ট্রূথ
মুক্তি : ২৪ মে ২০০৬
দৈর্ঘ : ৯৪ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
পরিচালনা : ডেভিস গুগেনহাইম
প্রযোজনা : লরেন্স বেন্ডার, স্কট জি বার্নস, লরি ডেভিড
চিত্রনাট্য : আল গোর
সঙ্গীত : মাইকেল ব্র“ক
চিত্রগ্রহণ : ডেভিস গুগেনহাইম, বব রিচম্যান
সম্পাদনা : জে ক্যাসেডি, ডন সুইটলিক
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিষয়ে তথ্যতে ভরপুর এই ছবির ধারাবাহিক কোন কাহিনী সূত্র নেই। আল গোর, জর্জ বুশ, রোনাল্ড রিগ্যান প্রমুখের বক্তব্যের সাথে একাধিক বিশ্বখ্যাত পরিবেশবাদী ও বৈজ্ঞানিকের মন্তব্য দিয়ে সাজানো হয়েছে এ ছবি। আল গোরে’র স্লাইড শো প্রেজেনটেশন দিয়ে ছবি শুরু হয়। তারপর স্যাটেলাইট থেকে তোলা পৃথিবীর নানা ছবি দেখানো হয়। গোর এই সব ছবির মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, যুগে যুগে পৃথিবীর আবহাওয়া মণ্ডল বদলে যাচ্ছে। এরপর একে একে আবহাওয়া বদলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, এর ভবিষ্যত প্রভাব ইত্যাদি তুলে ধরা হয়। সব শেষে তিনি বলেন, যিনি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদনের হার কমানো যায় তাহলে আমাদের ও আমাদের ভবিষ্যতের পৃথিবী দূষণমুক্ত ও নিরাপদ হবে।
বিশেষত্ব : আমেরিকার সিনেট, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আল গোর-এর এই তথ্যচিত্রের মূল বিষয়বস্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ [গ্লোবাল ওয়ার্মিং]। সিম্পসন খ্যাত এনিমেটর ম্যাট গ্রোয়েনিংকে নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনকে তিনি সহজ-সরল বোধগম্য করে উপস্থাপন করেছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আল গোর স্বয়ং বিশ্বের নানা স্থানে সহস্রবার বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ নিয়ে স­াইড শো প্রেজেনটেশন করেছেন। লরে ডেভিড তার এই স­াইড শো দেখার পর অনুপ্রাণিত হন এবং তিনি গুগেনহাইমের সঙ্গে দেখা করে এই প্রেজনটেশনকে ভিত্তি করে চলচ্চিত্র তৈরির পরামর্শ দেন। তারই অগ্রসর পদক্ষেপ হিসাবে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।
প্রতিটি সচেতন মানুষের জন্য অবশ্য দ্রষ্টব্য ছবি। মুক্তির পরপরই সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এটিকে সবচেয়ে সফল ও সার্থক চলচ্চিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। অস্কারে সেরা তথ্যচিত্র এবং সেরা মৌলিক সংগীতের পুরস্কার পেয়েছে এই ছবি। সমালোচকদের প্রশংসিত এই ছবি ব্যবসায়িকভাবেও দারূণ সফল। প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করে এ ছবির বিশ্বের পঞ্চম ব্যবসা সফল তথ্যচিত্রের অবস্থানে রয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণের মতো আজকের আলোচিত বিষয়গুলির দিকে এই ছবি আলোকপাত করে। সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করেছে এ ছবি। বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলনে এ ছবির ভূমিকা সর্ব স্বীকৃত, বহু মানুষের ধারণা ও কার্যক্রমকে বদলে দিয়েছে এ ছবি। একটি ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ২০০৬ এর ডিসেম্বর থেকে ২০০৭ এর জানুয়ারী পর্যন্ত আমেরিকার ৫০ হাজার স্কুল শিক্ষককে এই চলচ্চিত্রের ডিভিডি বিনা পয়সায় দেয়া হয়। যাতে করে, তারা ছাত্রদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে।
এটি প্রথম তথ্যচিত্র যা দুটি ক্যাগাররিতে অস্কার পুরস্কার পেয়েছে। এটি বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিউট্রাল চলচ্চিত্র। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে ব্যক্তি বা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে কাজ করে ন্যাটিভ এনার্জি। তারা হিসাব করে বের করেছে এই ফিল্মটি তৈরি করতে কী পরিমাণ কার্বন খরচ হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের জন্যে ব্যবহৃত গাড়ি, অফিসের এসি ইত্যাদি থেকে নির্গত কার্বনের হিসাব করা হয়েছে। সেই হিসাবের সমানুপাতের অর্থ ব্যয় হয়েছে ন্যাটিভ আমেরিকার ন্যাটিভ আলাস্কার গ্রামগুলোতে রিনিউএবল এনার্জি প্রজেক্ট তৈরিতে।


দ্য ব্যাটল অব আলজিয়ার্স

মুক্তি : ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬ (ইতালী)
দৈর্ঘ : ১২১ মিনিট
দেশ : ইতালী, আলজেরিয়া
ভাষা : ইতালীয়, ফ্রেঞ্চ
পরিচালনা : জিলো পোনটেকোরভো
প্রযোজনা : এন্তানিও মুসো, সাদি ইয়াসিফ
চিত্রনাট্য : জিলো পোনটেকোরভো, ফ্রাঙ্কো সোলানিস
অভিনয় : ব্রাহিম হ্যাগিগ, জ্যান মার্টিন, সাদি ইয়াসিফ
সঙ্গীত : এনিও মোরিকোনে, জিলো পোনটেকোরভো
চিত্রগ্রহণ : মার্সেলো গাত্তি
সম্পাদনা : মারিও মোরা, মারিও সেরানদ্রি
একটা সংগঠিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যুদ্ধে জয়ের গল্পটা সত্যিই অসাধারণ। আর এমন অসাধারণ ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে। বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনী সুসজ্জিত পাকিস্তান আর্মিকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে। জিলো পোনচেকোরভো’র দ্য ব্যাটল অব আলজিয়ার্স ছবিটি দেখলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সালে গেরিলা বাহিনীর ভূমিকার কথাই মনে পড়ে যায় ভীষণভাবে। ১৯৫৪-৬২ সাল এই আট বছর ফরাসী সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়েছে আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষ। আর গেরিলা যুদ্ধের কৌশলের কারণেই শেষ পর্যন্ত দূর্ধষ ফরাসী সেনাবাহিনীও পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে, úৃথিবীর বুকে জন্ম হয়েছে আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্র আলজেরিয়ার।
ছবির গল্পটি সত্যি কাহিনী নিয়ে তৈরি। ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৭ সালে ফরাসীদের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধই মূল প্রেক্ষাপট হিসাবে ওঠে এসেছে। কাসাবাতে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্রমশ একত্র হতে থাকে এবং স্থানীয় ইউরোপীয় অধিবাসীদের হঠাতে থাকে। যার ফলে প্যারাট্রুপার আঘাত হানে স্থানীয় ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট(এফএলএন নামে পরিচিত, ঠিক যেন আমাদের মুক্তিবাহিনী)-এর উপর। প্যারাট্রুপাররা একের পর এক লিবারেশন ফ্রন্টের নেতাদের বন্দী বা হত্যা করতে থাকে। কিন্তু উপনিবেশিক দখলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে। এমনকি জেল থেকে বেরিয়ে আসা আসামীরাও যুদ্ধে যোগ দেয়। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ছিনিয়ে আনে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা। পরিচালক পোনটেকারভো অবশ্য বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন গেরিলাদের যুদ্ধ কৌশলের উপর।
ফ্রান্সে দীর্ঘ পাঁচ বছর এ ছবি নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু সারা বিশ্বব্যাপী আজও এই চলচ্চিত্রের প্রভাব ব্যাপক। মনে রাখতে হবে, ৬০-এর দশক জুড়েই বিশ্বব্যাপী উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, বহু দেশ নিজেদেরকে উপনিবেশের থাবা থেকে মুক্ত করে। এবং বলা হয়ে থাকে ব্ল্যাঙ্ক প্যান্থার কিংবা আইআরএ (আইরিশ রিপাবলিক আর্মি)-র মতো গেরিলা যোদ্ধাদল এ ছবি থেকে বহু কৌশল আয়ত্ব করেছে। এমনকি ২০০৩ সালে প্যান্টাগনে মার্কিন আর্মিকে এ ছবি দেখানো হয়, ইরাকি সেনারা কী ধরণের কৌশল ব্যবহার করছে তা বোঝানোর জন্য। বিশ্বব্যাপী গেরিলা যুদ্ধের উপর এমন সৎ ও মহৎ ছবি কমই নির্মিত হয়েছে।

দ্য ট্রায়াম্প অব দ্য উইল
মুক্তি : ২৮ মার্চ ১৯৩৫
দৈর্ঘ : ১১৪ মিনিট
রঙ : সাদাকালো
দেশ : জার্মান
ভাষা : ডয়েচ
প্রযোজনা ও পরিচালনা ও সম্পাদনা : লেনি রাইভেনস্টাল
চিত্রনাট্য : লেনি রেইফেনস্টাল, ওল্টার রুটম্যান
অভিনয় : এডলফ হিটলার, হার্মান গুরিং, জোসেফ গোয়েবলস ও অন্যান্য নাৎসী নেত্রীবৃন্দ
সঙ্গীত : হার্বাট ভিন্ড, রিচার্ড ভাগনার
চিত্রগ্রহণ : ে
বহু ঐতিহাসিক দাবী করেন, এই একটি ছবি তৈরি না হলে বিশ্বের ইতিহাসটাই হয়তো অন্য রকম হতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখতো হতো না বিশ্ববাসীকে। লেনি রেইফেনস্টালের দ্য ট্রায়াম্প অব দ্য উইল নাৎসীবাদকে প্রবলভাবে উসকে দিয়েছে, হিটলারকে জনপ্রিয় করেছে আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবতারণা করেছে। লেনি রাইভেনস্টাল এমন এক নারী যিনি হিটলারকে জনপ্রিয় নায়করূপে চিত্রায়িত করেছেন, হলিউডি দক্ষতায় হিটলারের সেনাবাহিনীকে তুলে ধরেছেন। হিটলারের চিন্তা-ভাবনাকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রোপাগাণ্ডা তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছিলো। ১৯৩৪ সালে ন্যুরেমবার্গে নাৎসী পার্টির কনভেশনকে কেন্দ্র করেই এ তথ্যচিত্র নির্মিত। পুরো তথ্যচিত্র জুড়ে হিটলারের অসংখ্য বক্তৃতা, জনগণ কতৃক সোল্লাসে হিটলারকে বরণ করে নেয়া, তৃতীয় রাইখের বিপুল উত্থান ও জনপ্রিয়তা, সাত লক্ষ নাৎসী সমর্থক এবং তার সেনাবাহিনীর দক্ষতা তুলে ধরা হয়েছে সুচারুভাবে। কারিগরী দক্ষতা, শিল্প কুশলতায় এ ছবি অসাধারণ, বিশ শতকের অন্যতম নারী পরিচালক হিসাবে রাইভেনস্টালকে সম্মান দেয়া হয়। বিশেষ করে ভাগনারের বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত এবং অসাধারণ চিত্রগ্রহণ (বিমান থেকে তোলা ছবি, লং ফোকাস লেন্স) ইত্যাদির সুবাদে নিন্দুকও এ ছবি নির্মাণের প্রশংসা করতে বাধ্য। এমনকি জার্মানির বাইরে সুইডেন, ফ্রান্স ও আমেরিকাতেও একাধিক ফেস্টিভালে রাইভেনস্টাল পুরস্কার পেয়েছেন। ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রোপাগাণ্ডা (প্রচারমূলক) তথ্যচিত্র হিসাবে এটি স্বীকৃত। চলচ্চিত্র কতো শক্তিশালী মাধ্যম, একটি চলচ্চিত্র কী করে একজন খলনায়ককেও দেবতার আসনে বসিয়ে দিতে পারে এ ছবি তার অন্যতম নজির। এ ছবি হিটলারের নেতৃত্বে পরাশক্তি হিসাবে জার্মানির জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখায়। উল্লেখ, হিটলার স্বয়ং এ ছবি কার্যনির্বাহী প্রযোজক ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে রেনি রাইভেনস্টাল জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় আসার পরপরই হিটলার তাকে ডেকে পাঠান এবং পার্টি কংগ্রেসের উপর একটি ফিল্ম বানাতে বলেন। কিন্তু রাইভেনস্টাল পাটর্ িবিষয়ে কিছু জানেন না এই বলেই ছবিটি বানাতে অস্বীকৃতি জানান, তখন হিটলার তাকে বলেন, তিনি এমন একজনকেই খুঁজছেন যে পার্টি সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। এতে করে সাধারণ দর্শক একজন নবীনের চোখ দিয়ে পার্টিকে দেখতে পাবে, বুঝতে পারবে এবং তিনি চাচ্ছেন ছবিটি যথেষ্ট শৈল্পিক ও মানবিক আবেদপূর্ণ হোক যাতে করে অরাজনৈতিক ব্যক্তিও তার দলের প্রতি সমর্থন দেয়। হিটলারের এ চাহিদা যে সে সময় পূর্ণ হয়েছিলো তাতে কোন সন্দেহই নেই। এমনকি অনেকেই বলে থাকেন একাধিকবার অস্কার জয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক ফ্রাঙ্ক কাপরা’র হোয়াই উই ফাইট সিরিজের সাতটি চলচ্চিত্র এ ছবি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই বানিয়েছিলেন। কাপরা নিজে ট্রায়াম্প অব দ্য উইল সম্পর্কে বলেছিলেন, এ ছবিতে একটি বোমা কিংবা একটি গুলি’র দৃশ্যও নেই, তবু এ ছবি স্বয়ং একটি মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র। বিষয়বস্তুর কারণেই এ চলচ্চিত্র অনেকের কাছেই ঘৃণ্য হয়ে আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর রাইনভানস্টাল মিত্র শক্তি হাতে বন্দী হন এবং নাৎসীদের সমর্থন দেয়ার অপরাধে চার বছর জেল খাটেন। মুক্তির পরও তিনি ছবি বানাতে পারেননি, তাকে কালো তালিকাভূক্ত করে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ২০০৩ সালে, ৬৮ বছর বয়সে তার মৃত্যু হলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এসোসিয়েট প্রেস (এপি), নিউ ইয়র্ক টাইমস, গার্র্ডিয়ান এর মতো সংবাদ মাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু করে। পরিচালক হিসাবে তার পূণমূল্যায়ন করা হয়।
একটি প্রস্তাবনা দিয়ে ছবি শুরু হয়েছে। এরপর পাঁচটি ভাগে ছবিটি দেখানো হয়। ভাগগুলো হলো : ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ২০ বছর পরে, জার্মানদের ভোগান্তির ১৬ বছর পর, জার্মানদের পুনজন্মের ১৯ মাস পর, এডলফ হিটলার আবার ন্যুরেমবার্গে আসেন তার ভক্ত, অনুসারীদের মাঝে। ছবির এক পর্যায়ে রুডলফ হেস এক বক্তৃতায় বলেন, হিটলার হলো দল এবং হিটলার হলো জার্মানি আর জার্মানি মানেই হিটলার। এই একটি কথায় বোঝা যায় এ ছবির মূল লক্ষ্যটি কী ছিলো।

দ্য থিন ব্লু লাইন
মুক্তি : ২৫ আগস্ট ১৮৮৮
দৈর্ঘ : ১০৩ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : আমেরিকা
ভাষা : ইংরেজি
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : এরল মরিস
প্রযোজনা : মার্ক লিপসন
অভিনয় : রান্ডাল এডামস, ডেভিড হ্যারিস
সঙ্গীত : ফিলিপ গ্লাস
চলচ্চিত্র পরোক্ষভাবে মানুষের জীবনে ভূমিকা রাখে, কিন্তু একটিমাত্র চলচ্চিত্রের কথাও যদি বলা যায় যা একজন মানুষের জীবনে হলেও সরাসরি ভূমিকা রেখেছে সেটি হলো দ্য থিন ব্লু লাইন। আমেরিকার মতো জায়গায় পুরো বিচার ব্যবস্থার উপর অনাস্থা প্রকাশ করেছে এই ছবি। এরোল মরিস প্রমাণ করে দিয়েছেন এ পৃথিবীতে সত্যিই কখনো কখনো ‘বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।’ আর এই প্রমাণের কারণে জানে বেঁচে যান রান্ডাল ডেল এডামস। রান্ডাল ডেল এডামসের বিরুদ্ধে ডালাসের এক পুলিশ অফিসারকে হত্যা করার অভিযোগ ছিলো। ২৯ নভেম্বর ১৯৭৬ সালে রবার্ট ডব্লু উড নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়। ডালাস পুলিশ প্রাথমিক পর্যায়ে এ হত্যার কোন কুলকিনারা করতে পারে না। পরবর্তীতে এক কিশোরের বর্ণনা অনুযায়ী তারা একটি গাড়ি ও রিভালভার উদ্ধার করে এবং সেই কিশোর ডেভিড রে হ্যারি খুনি হিসাবে রান্ডাল ডেল এডামসকে সনাক্ত করে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তার মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু এরোল মরিস প্রমাণ করে দেন এই অভিযোগ মিথ্যা, ভুল। মরিস নিজে একজন তদন্তকারী উকিলের চোখ দিয়েই রান্ডালের কেসটিকে ভিডিওতে ধারণ করেন, সংশ্লিষ্ট সব স্বাক্ষীদের সাক্ষাৎকার নেন, অনুসন্ধান করেন আসল সত্যের, যার প্রেক্ষিতে ছবি মুক্তির পর আদালতে পুনরায় এই হত্যা মামলার বিচার শুরু হয় এবং মৃত্যু দণ্ড থেকে মুক্তি পান রান্ডাল এডামস। শুধু এডামসের মুক্তি নয়, এ ছবি যেন নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা রাখে।
আজকের যুগে মরিসের এই ছবি ক্লাসিক ডকুমেন্টারির খেতাব পেয়ে গেছে। এই ছবির প্রভাবে অসংখ্য ছবি ও টিভি শো পরবর্তীতে তৈরি হয়েছে। নির্দোষ মানুষের বিচার নিয়ে বহুবার চিত্রায়িত হয়েছে অসংখ্য তথ্যচিত্র এবং সংবাদ পত্রগুলোও মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখেছে।
১৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×