স্থান : জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ গেট, মানিক মিয়া এভিনিউ
তারিখ : ১০ জানুয়ারী, ২০১৩। সময় : বিকাল ৪.০০ থেকে ৫.৩০ পর্যন্ত
নারীর অগ্রগমনের কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ সকল মহলে স্বীকৃত। আমাদের দেশে নারীর প্রতি নানারকম নিপীড়ন ও নির্যাতন হরহামেশা ঘটেই চলেছে। যার মাত্রা প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। এমনকি দুই বছরের কন্যাশিশুও রেহাই পায় না ধর্ষকের বর্বরতা থেকে। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মোতাবেক, ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত- দেশের নারী নির্যাতনের কিছু চিত্র -
> নারীর প্রতি ধর্ষণসহ বিভিন্নমূখী নির্যাতন : ১০ হাজার ২৯টি। প্রতিদিন গড়ে ৫৬টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
> নারী ধর্ষণ: ১ হাজার ৮ শত ৬৯টি। প্রতিদিন গড়ে ১১টি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
> নারী ধর্ষণ শেষে হত্যা: ১৩ জন।
উপরের তথ্যগুলো শুধুমাত্র সেইসকল ঘটনা যেগুলোতে পুলিশ কেইস হয়েছে এবং চিত্রটি ছয় মাসের। যদি পুরো বছর হিসাব করা হয় তাহলে এ নির্যাতনের সংখ্যা দাঁড়াবে এর দ্বিগুন। যা আমাদের জাতির জন্য ভয়ংকর একটি চিত্র। আমাদের মনে রাখা দরকার যে, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের খুব কম ঘটনারই পুলিশ কেইস হয়। একটি বিরাট সংখ্যা রয়ে যায় তথ্য ও খবরের বাইরে।
সমাজের প্রায় সকল স্তরের নারীরাই বিভিন্নমুখী নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়। এই সকল নির্যাতিত নারীরা তাদের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কোন সঠিক বিচার পায় না। সামপ্রতিককালে ঘটে যাওয়া উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা হল-
> টাঙ্গাইলে ১৫ বছরের স্কুল ছাত্রীকে চার দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ;
> রাঙ্গামাটির কাউখালিতে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা;
> সাভারে কলেজ ছাত্রীকে মেসে আটকে গণধর্ষণ ও সে দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে তা মোবাইল ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি এবং নির্যাতিতার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের দাবী;
> রামগড়ে পৈশাচিকভাবে ১২ বছরের শিশুকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ধর্ষণ;
> লৌহজংয়ে ধর্ষণের শিকার এক বাক প্রতিবন্ধী। ওই দিনই নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি দিয়ে থানায় বসেই ঘটনার রফা করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা;
> মিরসরাইয়ে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার;
> রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ইব্রাহিমপুরে ২ বছর ৪ মাস বয়সী এক শিশু ধর্ষণের শিকার;
> ফরিদপুরে কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো শুধুই খবর। এসব মধ্যযুগীয় বর্বর অপরাধগুলোর ঠিকমত তদন্ত হয় না। তদন্ত হলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা গ্রেফতার হলেও আইন প্রয়োগের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অপরাধীরা জামিন পেয়ে যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধী আইনের আড়ালেই থেকে যায়। ধর্ষণের মতো বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নজীর যে আমাদের দেশে একেবারে নেই, এমন নয়। বিবেকবান প্রতিবাদী মানুষ আগেও পথে নেমেছে। ১৯৯৫ সালে ইয়াছমিন ধর্ষণ ও হত্যা এবং ১৯৯৮ সালে শিশু তানিয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে ব্যাপকভাবে পথে নেমেছিল মানুষ। কিন্তু প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে। এর কোন ধারাবাহিকতা থাকে না। ফলে কিছুদিন পরেই আবার ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটে চলে আমাদের চোখের আড়ালে বা চোখের সামনে। বর্বর ধর্ষকদের দৃষ্টান-মূলক শাস্তি হয় না। সমাজ কাঠামো, মূল্যবোধ, আইনে কোন মৌলিক পরিবর্তন হয় না। ক্ষমতাবানদের প্রশ্রয়ে চলতে থাকে নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের পর গলাটিপে বা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা।
এভাবে আর কতদিন এমন জঘণ্য ঘটনা দেখবো আমরা??
নারী নির্যাতন ও নারী ধর্ষণ বন্ধের জন্য প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ, পদক্ষেপ, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ।
সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলুন-
>"ধর্ষণ শুধু নারী নয়, পুরো মানব জাতির বিরুদ্ধে অমার্জনীয় অপরাধ, একে রুখতে হবে এখনই"।
>ধর্ষণকারী যেই হোক, দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।