somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার মহান শিক্ষকের জীবনী

০২ রা মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৫ম কিস্তি

নবুয়্যাতের সূচনা


হযরত(স) এর বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি পৌঁছলো। তার জীবনে এবার আর একটি বিপ্লবের সূচনা হতে লাগলো। নির্জনে বসে একাকী আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকা এবং আপন সমাজের নৈতিক ও ধর্মীয় অধঃপতন সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনায় তিনি মশগুল হয়ে পড়লেন।তিনি ভাবতে লাগলেনঃ তার কওমের লোকেরা কিভাবে হাতে-গড়া মূর্তিকে নিজেদের মা’বুদ ও উপাস্য বানিয়েছে।নৈতিক দিক থেকে তারা কত অধঃপাতে পৌঁছেছে!তাদের এই সব ভ্রান্তি কি করে দূরীভূত হবে?খোদা-পরস্তির নির্ভুল পথ কিভাবে তাদের দেখানো যাবে? এই বিশ্ব-জাহানের প্রকৃত স্রষ্টা মালিকের বন্দেগী করা উচিত? এমন অসংখ্য রকমের চিন্তা ও প্রশ্ন তার মনের ভেতর তোলপাড় করতে লাগলো। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে এসব বিষয়ে তিনি গভীর ভাবে চিন্তা করতে লাগলেন।

হেরা গুহায় ধ্যান

মক্কা মুয়াজ্জমা থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত জাবালূন নূর-এ ‘হেরা’নামে একটি পর্বত-গুহা ছিল।হযরত(স) প্রায়শই সেখানে গিয়ে অবস্খান করতেন এবং নিবিষ্ট চিত্তে চিন্তা-ভাবনা ও খোদার ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। সাধারণত খানাপিনার দ্রব্যাদি তিনি সঙ্গে নিয়ে যেতেন, শেষ হয়ে গেলে আবার নিয়ে আসতেন।কখনো কখনো হযরত খাদীজা(র) ও তা পৌঁছে দিতেন।

সর্ব প্রথম ওহী নাযিল

এভাবে দীর্ঘ ছয়টি মাস কেটে গেল। হযরত চল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। একদা তিনি হেরা গুহার ভেতর যথারীতি খোদার ধ্যানে মশগুল রয়েছেন্‌ সময়টি তখন রমজান মাসের শেষ দশক।সহসা তার সামনে আল্লাহর প্রেরিত এক ফেরেশতা আত্নপ্রকাশ করলেন। ইনি ফেরেশতা-শ্রেষ্ঠ জিবরাঈল(আ) ।ইনিই যুগ যুগ ধরে আল্লাহর রাসূলদের কাছে তার পয়গাম নিয়ে আসতেন।
হযরত জিবরাঈল(আ) আত্নপ্রকাশ করেই হযরত(স)-কে বললেনঃ‘পড়ো’। তিনি বললেনঃ ‘আমি পড়তে জানি না’।একথা শুনে জিবরাঈল(আ) হযরত(স)-কে বুকে জড়িয়ে এমনি জোরে চাপ দিলেন যে, তিনি থতমত খেয়ে গেলেন।অতঃপর হযরত(স)-কে ছেড়ে দিয়ে আবার বললেনঃ‘পড়ো’।কিন্তু তিনি আগের জবাবেরই পুনরুক্তি করলেন।জিবরাঈল(আ) আবার তাকে আলিঙ্গন করে সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেনঃ‘পড়ো’। এবারও হযরত(স)জবাব দিলেনঃ‘আমি পড়তে জানি না।’পুনর্বার জিবরাঈল(আ) হযরত(স)-কে বুকে চেপে ধরলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ{1} خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ{2} اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ{3} الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ{4} عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ{5}
(অর্থ- পড়ো তোমার প্রভুর(রব) নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন;সৃষ্টি করেছেন জমাট-বাঁধা রক্ত থেকে। পড়ো এবং তোমার প্রভু অতীব সম্মানিত, যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে এমন জিনিস শিখিয়েছেন যা সে জানতো না।)

এই হচ্ছে সর্বপ্রথম ওহী নাযিলের ঘটনা। এ ঘটনার পর হযরত(স) বাড়ি চলে গেলেন। তখন তার পবিত্র অন্তঃকরণে এক প্রকার অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তিনি কাঁপতে কাঁপতে খাদীজা (রা) কে বললেনঃ (আমাকে শিগগির কম্বল দ্বারা ঢেকে দাও) খাদীজা (রা) তাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলেন। অতঃপর কিছুটা শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে এলে তিনি খাদীজা (রা)-এর কাছে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করলেন;বললেনঃ (আমার নিজের জীবন সম্পর্কে ভয় হচ্ছে) খাদীজা(রা) বললেনঃ (না, কক্ষনোই নয়। আপনার জীবনের কোন ভয় নেই। খোদা আপনার প্রতি বিমুখ হবেন না। কেননা আত্মীয়দের হক আদায় করেন;অক্ষম লোকদের ভার-বোঝা নিজের কাঁধে তুরে নেন;গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করেন;পথিক-মুসাফিরদের মেহমানদারী করেন।মোটকথা, ইনসাফের খাতিরে বিপদ- মুসিবতের সময় আপনিই লোকদের উপকার করে থাকেন।)

এরপর খাদীজা(রা) হযরত (স)-কে নিয়ে প্রবীণ খ্রিস্টান ধর্মবেত্তা অরাকা বিন নওফেলের কাছে গমন করলেন।তিনি তাওরাত সম্পর্কে খুব ভালো পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। হযরত খাদীজা(রা) তার কাছে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন।তিনি সব শুনে বললেনঃ (এ হচ্ছে মূসার ওপর অবতীর্ণ সেই নামূস) (গোপন রহস্যজ্ঞানী ফেরেশতা)। হায়! তোমার কওমের লোকেরা যখন তোমাকে বের করে দেবে, তখন পর্যন্ত আমি যদি জিন্দা থাকতাম! হযরত(স) জিজ্ঞেস করলেনঃ আমার কওমের লোকেরা কি আমায় বের করে দেবে? অরাকা বললেনঃ তুমি যা কিছু নিয়ে এসেছো, তা নিয়ে ইতঃপূর্বে যে-ই এসেছে, তার কওমের লোকেরা তার সঙ্গে দুশমনি করেছে। আমি যদি তখন পর্যন্ত জিন্দা থাকি, তাহলে তোমায় যথাসাধ্য সাহায্য করবো’ এর কিছুদিন পরই অরাকার মৃত্যু ঘটে।

এরপর কিছুদিন জিবরাঈলের আগমন বন্ধ রইলো। কিন্তু হযরত(স) যথারীতি হেরা গুহায় যেতে থাকলেন।এই অবস্থা অন্তত ছয়মাস চলতে থাকলো।এই বিরতির ফলে কিছুটা ফায়দা হলো। মানবীয় প্রকৃতির দরুণ তার অন্তরে ওহী নাযিলের ঔৎসুক্য সঞ্চারিত হলো। এমন কি, এই অবস্থা কিছুটা বিলম্বিত হলে তাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে জিবরাঈলের আগমন শুরু হলো। তবে ঘন ঘন নয়,মাঝে মাঝে। জিবরাঈল এসে তাকে এই বলে প্রবোধ দেন যে,আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল মনোনীত হয়েছেন। এরপর হযরত(স) শান্ত চিত্তে প্রতিক্ষা করতে লাগলেন। কিছুদিন পর জিবরাঈল ঘন ঘন আসা শুরু করলেন।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×