somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তরের মার্চ ও আমি

২৬ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ছাউনিবিহীন আর্মি জীপগাড়িতে আমরা আট-দশজন তরুণ ও যুবশ্রেনীর লোকজন স্বশস্ত্র অবস্থায় প্রায় সারাদিন-সারারাত ঈশ্বরদী উপজেলার সম্ভাব্য সকল রাস্তায় টহল দিই। আমাদের এই দলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক আব্দুল লতিফ বিশ্বাস (পরে দৈনিক ইত্তেফাকের ঈশ্বরদীস্থ সংবাদদাতা)। তার হাতে একটা দো-নালা বন্দুক যা আসলে তার বাবার, অন্যদের কারো হাতে পয়েন্ট ২২ বোরের রাইফেল, ইয়ারগান, ঢাল-তলোয়ার, সড়কি, বর্শা কিংবা তীর-ধনুক। আমার হাতে শক্ত করে ধরা একটা মাছ মারা ট্যাটা, বুকে যেন দুর্বার সাহস। সাড়া মাড়োয়ারী হাইস্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র, কিন্তু বছরের শুরুতে রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হয়ে যাবার পর স্কুলও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সহপাঠি বন্ধুরা কে কোথায় তা জানি না। এর আগে আমাদের গ্রাম বড়ইচারার স্কুলমাঠে প্রতিদিন বিকালে লাঠিচালনা শিখেছি পিটি-প্যারেড। মজিদ ভাইয়ের নির্দেশ ছিল থুৎনি সমান উচ্চতার শক্ত লাঠি জোগাড় করতে। নিজেদের বাঁশঝাড় থেকে নিজেই দা দিয়ে বাঁঁশ কেটে লাঠি তৈরি করেছি। গাড়িটির চালক পাকশীর একটা ছেলে (নাম স্মরণ করতে পারছি না)। এই জীপগাড়িটা ঈশ্বরদী বিমান বন্দরে ডিউটিতে নিয়োজিত পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একটি সেকসন আগে ব্যবহার করতো। ১০ জনের ওই সেকসন বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে আ্ত্মসমর্পনের পর তাদেরকে থানায় সোপর্দ করা হয় আর গাড়িটির আপাতত দখল চলে আসে আওয়ামী লীগের হাতে। পাবনার আদালত বন্ধ, রোডও স্থানে স্থানে কেটে দেওয়া ও বড় বড় গাছ কেটে বেরিকেড বসানো; সুতরাং বন্দীদের কোথাও পাঠিয়ে দেবার সুযোগ নেই বলে থানা হাজতেই আটকাবস্থায় রাখা আছে। থানা পুলিশও এদের নিয়ে চিন্তিত, তারা জানে না এদেরকে কী করা হবে। থানার ভেতরে-বাইরে দু'এক শ লোক দিন-রাত সব সময়ই দেখা যা জটলা করতে। প্রায় সকলের চোখে-মুখে উত্তেজনা, কখন যে কী হয়! এসব জটলার মধ্যে স্থানীয় নেতাদের প্রায় সকলকে দেখি ভাবলেশহীন দাড়িয়ে থাকতে আর যেন অপেক্ষাকৃত তরুণরাই সদাব্যাস্ত, তাদের গোসল-খাওয়া, ঘুমানো সময় নেই কারো।

১৯৭১-এ ৭ মার্চে ঢাকার রেসকোর্স মাঠে মুজিবের ভাষণের পর থেকে পুর্বপাকিস্তানের বাঙালিরা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। যে কোনোদিন যে কোনো মুহূর্ত থেকে সামনা-সামনি যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়। শাসকগোষ্ঠী আগেই বলে দিয়েছে যে, শেখ মুজিবের ৬-দফার কোনোটিই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কেননা, তাদের দৃষ্টিতে ওগুলো মানা আর পাকিস্তানের পূর্ব-পশ্চিম সম্পুর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়া একই কথা। ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপুর্ব বিজয়ের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো মিলে ক্ষমতা হস্তান্তরে শুরু করেন টালবাহানা। আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু এভাবে দিনের পর দিন চলে যায় কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর আর হয় না; ইয়াহিয়া খান পদত্যাগও করেন না। ২৫ মার্চে ঢাকায় পাকবাহিনীর গণহত্যা শুরু হয়ে গেলে তা প্রথমেই ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি অধ্যুষিত সেনাছাউনি, পুলিশ, ইপিআর ও মিলিশিয়া বাহিনীর অবস্থানগুলোতে, দেশের সর্বত্র।

ঈশ্বরদী ফায়ার ব্রিগেড অফিসটাই তখন সরকার বিরোধী জনতার কন্ট্রোল রুম। ওই অফিসের ৩০৩ নম্বরের টেলিফোনটা তখন বলতে গেলে সংগ্রামীদের দখলে। আর পাবনা, রাজশাহী বা রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ ও খবরাখবর জানতে এছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দিনে দু'একবার অমি নিজেও সেখানে গিয়ে বসি দল-বলের সাথে। আমরা কখন বাড়ি যাই, কখন খাই, কখন ঘুমাই তার কোনো হদিস নেই। সব রাস্তায় একবার টহল শেষ হলে এই কন্ট্রোলরুম চত্ত্বরে আমাদের গাড়িটা ফিরে আসে। অন্য আরেকটা গ্রুপ তাতে লাফিয়ে ওঠে বের হবার জন্য।

এসব ঘটনা ১১ এপ্রিল '৭১ ঈশ্বরদীর পতনের পুর্বক্ষণ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×