সৈয়দ আবুল মকসুদ - গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক; যাঁকে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষই চিনেন ও তাঁর নাম জানেন বিশেষ করে যাঁরা পত্র-পত্রিকা পড়েন ও খোঁজ-খবর রাখেন। আজ ১৬ জুন ২০১৫, মঙ্গলবার প্রকাশিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, গুলশান ২ নম্বরের গুরুজির নির্দেশে তাঁর মরদ শিষ্যরা ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় প্রায় সকলেই নিজ নিজ অণ্ডতোষ কেটে নপুংশক অর্থাৎ চিরতরে খোঁজা হয়ে গেছেন। পুরুষ হিসেবে তাদের ব্ন্ধবীদের কাছে ইহজগতে আর কোনো মূল্য নেই। গুরুজিকে অতিভক্তিই এই ঘটনার কারণ বলে তিনি মনে করেন। এই ধরনের গুরুভক্তি বা প্রশ্নহীনভাবে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার পরিণাম যে কত ভয়াবহ ও সংশোধনের অযোগ্য বিপদের কারণ হতে পারে তা তিনি অন্য আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ঘটনাটি এই রকম:
আলোচ্য গুরুজি তাঁর যুবক ভক্তদের নির্দেশ দিতেন, ঈশ্বরের সর্বোচ্চ করুণা যদি চাও তো আমার নিয়োজিত ডাক্তারের কাছে যাও, গিয়ে তোমার এক জোড়া অণ্ডকোষের দুটোই ফেলে দাও। বান্ধবীদের সঙ্গে কিছুমাত্র পরামর্শ না করে যুবকেরা ডাক্তারখানায় গিয়ে বিচি দুটোই ফেলে দিয়ে আসে। আহাম্মক যাকে বলে! কয়েক দিন পরেই তারা বুঝতে পারে, কী জিনিস তারা খুইয়েছে। বিচি ফেলে দেওয়ার পর গুরুজির প্রতিশ্রুত ঈশ্বরের সান্নিধ্য তো দূরের কথা, বান্ধবীদের সান্নিধ্য থেকেও তারা বঞ্চিত হতে থাকে। অণ্ডকোষ ফেলে দেওয়ার পর এই শিষ্যরা ষাঁড় থেকে বলদ, পাঁঠা থেকে খাসি, এবং পুরুষ মানুষ থেকে পুরুষত্বহীনে পরিণত হয়ে পড়ে। যখন ওই যুবকেরা দেখেছে যে তারা সর্বস্ব খুইয়েছে, আর হারানোর কিছু নেই, তখন তারা সোজা চলে গেছে থানায় ও আদালতে। গুরুজির কোমরে পড়েছে দড়ি। এখন তিনি শ্রীঘরের অতিথি, হয়তো বাদবাকি জীবন গুরু বাবাজিকে জেলখানায় কাটাতে হবে। র ভাত-রুটিই খেতে হবে। কিন্তু তাতে ওই যুবকরা তো আর হারানো জিনিসটা ফিরে পাবে না কোনোদিন, সেটাই আফসোস!
জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ যে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর হাজার হাজার শিষ্য বা নেতা-কর্মীদের ব্যাপারেই আঙ্গল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।
তিনি এও বলেছেন, আধ্যাত্মিক নেতা হোন, ধর্মীয় নেতা হোন বা রাজনৈতিক নেতা হোন, নেতা নেতাই। ভয়বশত হোক বা ভক্তিবশত হোক, অন্ধভক্তি ও প্রশ্নহীন আনুগত্য না থাকলে নেতার অনুসারীর তালিকা থেকে খারিজ হতে হয়। সেজন্য নেতার নির্দেশে অনুসারী ও ভক্তেরা অকাতরে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করার জন্য যারা ইচ্ছুক ছিলেন আজ তাঁরা নেতার নির্দেশে পুরুষ থেকে নপুংসকে পরিণত হয়েছে ভরাযৌবনে একদল বলিষ্ঠ যুবক। এখন তারা নিঃস্ব—খোজা। কোনো যুবতীর কাছে এখন তাদের এক পয়সা দাম নেই। সত্যিই ব্যাপারটা বড়ই উদ্বেগজনক!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:০২