বাঙ্গালীর জীবনে যদি ১৪ই ডিসেম্বর না আসত? আমরা অভিভাবকহীন হতামনা। আমাদের শিল্প, সাহিত্য,সংস্কৃতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা সব দিক দিয়ে থাকতাম অনন্য উচ্চতায়! এখনকার বুদ্দিজীবিদের মত দলীয়করন দেখতামনা হয়ত। একজন জহির রায়হান, একজন শহিদুল্লাহ চৌধূরী, একজন মুনির চৌধূরী, একজন আলতাফ মাহমুদদের হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে যেতাম।
হে শহীদ বুদ্ধিজীবিরা কেমন আছেন আপনারা? অবশ্যই ভালো আছেন, শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। শহীদদের মর্যাদা যে সবচেয়ে উচুতে!
আচ্ছা আপনারা কি আমাদের দেখতে পান? আপনারা কি দেখছেন আপনাদের উত্তরসূরীদের?
যদি দেখতে পান তাহলে নিশ্চয়ই প্রচন্ড ঘৃনা ভরে একদলা থুথু ফেলেন প্রতিদিন! আহারে! কি উত্তরসূরী আপনাদের! পূর্বসূরীদের হত্যার বিচারটা পর্যন্ত আমরা কুত্তার বাচ্চারা এখনো করতে পারলামনা।
আপনারা কি দেখছেন আপনাদের মেরুদন্ডহীন উত্তরসূরীদের? যারা সবসময় ব্যাক্তিস্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত? কিভাবে কিছু টাকা কামানো যায় মানুষকে মেরে সেই ধান্দায় ব্যস্ত?
আপনারা, আপনাদের সহযোগী ৩০ লাখ শহীদ জীবন দিয়েছিলেন একটি স্বপ্নের জন্য। স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে জানেন? এখনো ৬০% মানুষ দুবেলা ভাত খেতে পারেনা। এখনো এই দেশ বিশ্বের বুকে একটি দরিদ্র, দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ। এখনো মানুষ শোষিত। শোষকের চেহারা পরিবর্তিত হয়েছে, এখনো বাঙ্গালিদের দ্বারাই বাঙ্গালিরা শোষিত! হাহ! আপনারা কি ভেবেছিলেন পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্তি পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে? হাহাহা!
আপনারা কি জানেন আপনাদের হত্যাকারীরা এখনো স্বদর্পে ঘুরে বেড়াই? তারা এখন মন্ত্রি হয়, সংসদ সদস্য হয়, সংসদে বসে আমাদের ভাগ্য নির্ধারন করে! তারা এখনো স্বাধীন (!!!) দেশে মুক্তিযোদ্ধার পিঠে লাথি মারে!! আমরা আপনার মেরুদন্ডহীন উত্তরসূরীরা চেয়ে চেয়ে দেখি আর আহা উহু করি।
পারবেন ক্ষমা করতে আমাদের? ক্ষমা পেতে হলে ক্ষমা চাইতে হয়। কোন মুখে ক্ষমা চাইবো আমরা? মুক্তিযোদ্ধারা লাথি খায়, রাস্তায় ভিক্ষে করে, বীরশ্রেষ্ঠের সন্তান অভাবে অনটনে দিন কাটায়। আর আপনাদের হত্যাকারীরা গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরছে। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি।
আপনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই হে বীর শহিদেরা। ক্ষমা সেইদিন চাইবো যেদিন হত্যাকারি যুদ্ধপরাধীদের বিচার করতে পারবো, বিচারে বিলম্ব হওয়ার জন্য! জানি হয়ত ক্ষমা করবেননা।
আমরা গালি দেই যুদ্ধপরাধী ও তাদের সমর্থকদের। কোন মুখে দেই? কোন অধিকারে দেই? পরাজিতরা আবার কিসের গালি দেয়? আমরা ব্যার্থ, আমরা পরাজিত।
হে বীর শহিদেরা, আমি এই নগন্য অধম মানুষ প্রতিজ্ঞা করছি, যতক্ষন শ্বাস আছে নিজের অবস্থান থেকে বিচারের দাবী জানিয়ে যাব। যতদিন বিচার না হবে চিৎকার করে বলতে থাকবো বিচার চাই বিচার চাই। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও যুদ্ধপরাধী ও তাদের সহচরদের সাথে আপোষ করবোনা।
কাদতে নয় ফাসীর দাবি নিয়ে এসেছি। কান্না নয় এবার চাই রক্তের বদলে রক্ত। চাই নিজেদের কলংকমুক্ত করার যুদ্ধ।
আমাদের আশীর্বাদ করো বীর শহিদেরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:১০