somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

গল্পঃ যাত্রা বনী

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকাল থেকেই আকাশটা কেমন যেন মুখ ভার করে রেখেছে। দেখে মনে
হবে কোন এক ষোড়শী তরুনীর অভিমানী মুখ, এই বুঝি কেঁদে ফেলবে। থেমে থেমে মেঘের গর্জনও শোনা যাচ্ছে কিন্তু বৃষ্টির তেমন কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে একটা অদ্ভুত বিষন্নতা। সকালের প্রথম কাস্টমারকে বিদায় করে শফিক যখন হিসাবটা খাতায় লিখছিল তখনই গুঁড়ি গুঁড়ি করে বৃষ্টি পড়া শুরু হল। দেখতে দেখতে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই তা ভারী বৃষ্টিতে পরিনত হল। শফিক হতাশ চোখে একবার আকাশের দিকে আর একবার দোকানের সামনে জমতে থাকা জলের দিকে তাকাল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবল, নাহ! এই রকম বৃষ্টি হতে থাকলে ব্যবসা বানিজ্য সব লাটে উঠবে।

মাইজদী, নোয়াখালীর জেলা সদর। আর দশটা পাঁচটা মফস্বল শহর যেমন হয়, এটাও তেমন ব্যতিক্রম ছিল না। শহরের বুক চিরে একটাই প্রধান সড়ক, তার দুই পাশে দোকানপাট আর একটু পর পর বড় বড় গাছ। মাঝে মাঝে দুই একটা বাস হর্ন দিতে দিতে চলে যায়। তবে বিগত কয়েক বছর ধরে এখানে বেশ পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বড় বড় বিল্ডিং হচ্ছে, মার্কেট হচ্ছে, কল কারখানা এমনকি আবাসিক হাউজিংও হচ্ছে। বেড়েছে মানুষও। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে কাটা হচ্ছে গাছ। আর ইদানিং এই ছোট্ট শহরে ট্রাফিক জ্যাম লাগে। এখানে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পালটা ধাওয়া হয়। ভাংচুর জ্বালাও পোড়াও! এমনকি হরতাল পর্যন্ত হয়। ফলে এখন আর কেন যেন মাইজদীকে মফস্বল শহর বলে মনে হয় না। মনে হয় ঢাকা শহরের কোন এক বর্ধিত অংশ। শফিক আগের সেই ছিমছাম শহরটার অভাব বেশ অনুভব করে।

শহরের যে রাস্তাটা সোনাপুরের দিকে চলে গিয়েছে সেই রাস্তা ধরে বেশ কিছুদূর এগুলেই যে রেলস্টেশনটা পড়ে তার নাম হরিনারায়ণপুর। স্টেশনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটা ছোট বাজার। বাজারের একদম শেষ প্রান্তে প্রধান সড়ক থেকে খানিকটা দূরে ছোট ছোট কয়েকটা দোকান। তার মধ্যে একটা শফিকের মোবাইলের দোকান। মোবাইল টু মোবাইল কথা বলা, ফ্লেক্সিলোড ইত্যাদি এখান থেকে করা যায়। তবে ইদানিং মানুষের হাতে মোবাইল সহজলভ্য হয়ে যাওয়াতে ব্যবসা ঠিক আর আগের মত নেই। নতুন কিছু করতে না পারলে সামনে টিকে থাকাটা মুসকিল হয়ে যাবে। তার উপর গত কয়েকদিন ধরে এই রকম বৃষ্টিতে তো ব্যবসা প্রায় বন্ধ হবার পথে।

দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল শফিক। প্রায় দুইটা বাজে। রাস্তা ঘাট একদম ফাঁকা। ইতিমধ্যে আকাশ আরো অন্ধকার হয়ে আসার ফলে যে দু চারজন ছিল তারাও সব যে যার মত চলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত। বড় রাস্তার পাশে যে দোকানগুলো আছে তার কয়েকটায় বাতি জ্বলে উঠল। শফিকও ভাবল একবার উঠে বাতি জ্বলাবে, কিন্তু কেন যেন তার এই অন্ধকার অন্ধকার পরিবেশটাই অনেক ভালো লাগছে। এক কাপ চা খেতে পারলে খুব ভালো লাগত কিন্তু বাইরে রীতিমত ঝড় হচ্ছে, এর মাঝে চা খেতে যাওয়া সম্ভব না। প্রচন্ড শব্দে কাছেই কোথায় যেন বাজ পড়ল। কিছুটা চমকে উঠল শফিক। হঠাৎ তামান্নার কথা মনে পড়ল, আল্লাহই জানে বউটা বাড়িতে একা একা কি করছে। ঠিক করল, বৃষ্টিটা একটু কমলেই দোকান বন্ধ করে ও বাড়িতে ফিরে যাবে।

মিয়া ভাই, আছেন নাকি?
শফিক মুখ তুলে তাকাল। দেখল মাঝ বয়সী একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটার মুখে বসন্তের দাগ আর হাল্কা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চোখে সুরমা দেয়া। বেশ আয়েস করে পান চিবাচ্ছে। পরনে সাদা লুঙ্গি আর আকাশি রঙের পাঞ্জাবী, মাথায় একটা পুরানো টুপি। গা থেকে প্রচন্ড আতরের গন্ধ আসছে। মোটামুটি ভিজে গিয়েছে লোকটা। মাথার চুল বেয়ে পানি পড়ছে। মনে মনে ভাবল, এই দুর্যোগের মাঝে এই লোক আবার কি কিনতে এলো?

জী, ভাই আছি। বলেন কি লাগবে ? কিছুটা আগ্রহী হয়ে শফিক জিজ্ঞেস করল।
কিছু না মিয়া ভাই। আফনার সাথে পরিচয় হইতে আসলাম। পাশের দোকানটা আমি ভাড়া নিসি। গত পরশু দিন চালু করছিলাম। আফনারে দাওয়াত দিতে আসছিলাম। কিন্তু সেদিন আফনে দোকানে আসেন নাই।

গত পরশু দিন তামান্নার শরীরটা খারাপ করায় শফিক সেদিন আর দোকানে আসে নাই। মাইজদীতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সামনের লোকটা ক্রেতা নয় ভেবে কিছুটা হতাশ হলো। তবে চেহারায় সেটা ফুটিয়ে না তুলে হাসি মুখে বলল, খুব ভালো হইছে, চলে আসছেন পরিচয় হইতে। তবে আপনারে তো এই দিকে আগে দেখি নাই। বাড়ি কোথায় আপনার?

আমার বাড়ি রেল লাইনের ঐ পাড়ে। বিজয়নগর গ্রামে। আমরা তিন পুরুষ ধইরা গোরখোদক।
গোরখাদক?
জী, মানে মানুষ মারা গেলে কবর খুঁড়ি। আমার বাপ দাদারা এই কাজ করছে। গোরখোদক হিসেবে মাশাল্লাহ আমাদের পারিবারিক নাম ডাক আছে। আমার দাদার নাম মজু মিয়া। তারে এক নামে গ্রামের সকলেই চিনত। অনেক বড় বড় লোকের কবর নাকি তিনি খুড়ছিলেন। আমার বাপের নাম নুরু মিয়া। তারেও অনেক মানুষ চিনে। বছর দুই আগে কবর খুড়তে গিয়া একবার বুকে ব্যথা পাইছিল। সেই ব্যথায়ই উনি গত শীতে মারা গেসেন। আমি নিজেই তার কবর খুড়ছিলাম। আমি খুব সুন্দর কইরা কবর বানাইতে পারি। এই কাম সবাই পারে না। ঠিক করেছি মৃত্যুর আগে নিজেই নিজের কবর খুইড়া যাব।

শফিক কিছুটা থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল, ওহ! আইচ্ছা! তা এখানে হঠাৎ দোকান দিলেন যে? আর কিসের দোকান দিসেন?

আসলে বউ পোলাপাইন কেউ চায় না আমি ঐ কামটা আমি আর করি। সারাদিন মানুষের মরনের কথা ভাবতে হয়। মানুষ না মরলে কোন টেকাপয়সা নাই। আর সত্যি কইতে ইদানিং আমার আর কেন যেন কবর খুড়তে ভালা লাগে না। কিন্তু বাপ দাদাদের ব্যবসা বইলা কথা, কিচ্ছু করার নাই। তাই অনেক ভাইবা চিন্তা এখানে দোকান নিলাম। মূর্দার সকল প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন কাফনের কাপড়, চা পাতা, কফিন ইত্যাদি সবই পাওয়া যাইবো। তাছাড়া এই ব্যাপার সাথে আগের ব্যবসার মিলও আছে। ভালা করছি না?

শফিক কি বলবে ঠিক খুঁজে পেল না। শুধু হু হু বলে মাথা নাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকাল। বৃষ্টি অনেকটাই ধরে এসেছে। আকাশ এখন আগের তুলনায় অনেকটাই পরিষ্কার।

তা মিয়া ভাই এর নামটাই তো জানলাম না?
আমার নাম শফিক, শফিক আহমেদ।
আমার নাম মোঃ মনু মিয়া। এই বলে মনু মিয়া একটা কার্ড বাড়িয়ে দেয় শফিকের দিকে। নেন আমার কার্ড নেন। নতুন বানাইছি। এই কার্ড আনতেই মাইজদী গেসিলাম আর আসার সময় ভিইজা গেসি। প্রথম কার্ডটা আপনারেই দিলাম। দেইখা বলেন কার্ড কেমন হইছে?

শফিক কার্ডটা নিয়ে তাকাল। সেখানে লেখা,

মোঃ মনু মিয়া
প্রোপাইটর
মায়ের দোয়া শেষ বিদায় স্টোর।
হরিনায়ন স্টেশন বাজার।
নোয়াখালী।

এখানে মূর্দার সকল প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র অত্যন্ত সূলভ মুল্যে পাওয়া যায়। অভিজ্ঞ লোক দ্বারা কবর খোঁড়ানো হয়।
নিচে ফোন নাম্বার দেয়া।

কার্ডটা পকেটে রাখতে রাখতে শফিক জিজ্ঞেস করে, কার্ড ভালো হইছে। তবে দোকানের নাম মায়ের দোয়া দিলেন কেন?
সমস্যা কি? যে মা আমাদের জন্ম দিসে পৃথিবীতে আনছে, সেই মায়ের দোয়া নিয়াই পৃথিবী থেইকা যাইব। বুঝলেন না? একটা মিল থাকা দরকার তো!!

কবর কি এখনও আপনি খুড়েন নাকি?
নাহ! আমি আর খুড়ি না। কয়েকজন লোক রাখছি, তাদের দিয়া কবর খোড়ার কাম করাই। তয় শালাদের কাম কিচ্ছু হয় না। শুধু মাত্র বাপ দাদা গো নাম আছে দেইখা পার পাইয়া যাই।

শফিক আর কিছু বলার মত খুঁজে পেল না। কেন যেন লোকটাকে তার আর ভালো লাগছে না। এই রকম একটা লোকের সাথে পাশাপাশি দোকানে বসে ব্যবসা করতে হবে, ভাবতেই কেমন যেন লাগছে।

তয় ভাই, দুই দিন হইল দোকানটা খুল্লাম কিন্তু কোন বেচা বিক্রি নাই। এখন পর্যন্ত বনী কইত্তে পাইল্লাম না। আল্লাহ দুনিয়ায় এত মানুষ প্রতিদিন জন্মায়, সেই তুলনায় মরে কত কম। আরে মানুষ না মরলে নতুন মানুষের জায়গা কই হইব? আল্লাহপাকের এই হিসাবটা বুঝি না। সবার হায়াৎ কি বাইড়া গেছে নাকি? আমার তো প্রতিদিন দুইটা কাষ্টমার হলেই চলে, কিন্তু তাও তো পাইলাম না। মনু মিয়ার গলায় কিঞ্চিত অভিমান টের পেল শফিক। এমনে হইলে ব্যবসা বানিজ্য কেমনে হইব কন তো শফিক ভাই? সামনে বিবির বাচ্চা হইব, কিছু টাকা পয়সা না হইলে তো বিপদে পইড়া যাব।

শফিক চমকে উঠল। হঠাৎ নিজের স্ত্রীর কথা মনে পড়ল। কিছুক্ষন আগে সেও তো চিন্তিত ছিল। ব্যবসার অবস্থা তো বেশি ভালো না। সামনে টাকা পয়সা তারও দরকার। মনু মিয়া আর নিজের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য খুঁজে পেল না। ব্যবসা তো ব্যবসাই। ও চায় কিছু জীবিত মানুষের খোঁজ, যারা মোবাইলে বেশি কথা বলবে, একে অপরের সুখ দুঃখের খোঁজ নিবে, দিন শেষে বেশি ফ্লেক্সি করবে আর মনু মিয়া চায় কিছু মৃত মানুষের খোঁজ, যাদের আর এই পৃথিবীতে কোন কাজে লাগবে না, তাদের কোন খোঁজ খবর কোন কিছুই জানার প্রয়োজন নেই।

মিয়া ভাই কি ভাবেন?
না কিছু না, কিছুটা ইতস্তত করে বলে উঠল শফিক।
আমি ভাবতাছি আসলে এই যে ব্যবসা পরিবর্তন করলাম। লাভ তো হইল না। ঘুইরা ফিরা তো সবই তো এক।
মানে?
মানে হইল গিয়া যখন কবর খুড়তাম তখনও ভাবতাম, মানুষ মরে না ক্যান, আর দোকান নিয়াও ভাবি, মানুষ মরে না কেন? খালি মরন আর মরন। প্রতি মূর্দায় ভালো টাকা ইনকাম হয় হয়। মানুষ না মরলে তো আমার ইনকাম নাই। তাই অন্যের মরনের চিন্তা বাদ দিতে পারি না।

শফিক মনু মিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটা হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু হাসি আসল না। কেন যেন তার প্রচন্ড পানির পিপাসা পাচ্ছে। পানির বোতল বের করে ও পানি খেল। মনু মিয়া তার পাঞ্জাবীর পকেট থেকে পানের বাক্স বের করেছে। সুন্দর ভাবে একটা পান বের করে মুখে দিল। ইশারায় জিজ্ঞেস করল, খাবে কি না? ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে শফিক বুঝাল ও পান খাবে না।

মনু মিয়া থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল সে। চারটা বাজে। বৃষ্টি প্রায় থেমে গিয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে এখন। রাস্তায় মানুষজন বের হচ্ছে। চা খেতে ইচ্ছে করছে। মনু মিয়াকে দোকানে বসিয়ে রেখে ও টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে হোটেলে চা আনতে গেল। চা এনে দেখল মনু মিয়া আরেকটা পান মুখে ঢুকাচ্ছে। শফিক বলল, মুখে পান দিয়ে দিলেন? এখন চা না খেলে তো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
সমস্যা নাই মিয়া ভাই, আমি তিনটাই একসাথে খাইতে পারি।
তিনটা? কোন টিনটা?
চা, পান আর সিগারেট। কবর খুড়ার সময় বেশি ক্লান্তি লাগলে আমি মুখের এক পাশে পান লুকিয়ে রেখে চা খেতাম, মাঝে মইধ্যে সিগারেটও টান দিতাম।
এখন কি করবেন? তিনটাই এক সাথে খাবেন?
হে হে হে। না এখন সিগারেট খাবো না। শুধু চা আর পান খাব।

শফিক অবাক হয়ে মনু মিয়ার পান আর চা খাওয়ার দৃশ্য দেখতে লাগল। হঠাৎ বাইরে কিছুটা শোরগোল শুনতে পেল শফিক। বাইরে এসে দেখল, পুলিশের গাড়ি। ঘটনা কি তা জানার জন্য মনু মিয়াকে আবারো দোকানে বসিয়ে ও পুলিশের গাড়ির কাছে গেল। পুলিশের গাড়ী দেখে অল্প সময়ের মধ্যেই ভীড় জমে গেল। হইচই হট্টগোলের মধ্যে জানা গেল, বড় রাস্তার পাশে যে মজিদ স্টোর আছে তার মালিক মজিদ মিয়ার ছেলে আর বউ ঝড়ের মধ্যে গাছ চাপা পড়ে মারা গিয়েছে। মজিদ ভাই মাত্র সংবাদটা মাত্রই জানতে পারলেন। বেচারা হাউ মাউ করে কাঁদছে।

শফিকের খুব মন খারাপ হলো। দোকানে আসতে আসতে সিদ্ধান্ত নিল আজকে দোকান এখনই বন্ধ করে দিবে। ছেলেটাকে চিনত সে। তার দোকানে প্রায় আসত। মোবাইলে ফ্লেক্সি করত। মাস দুই হলো বিয়ে হয়েছিল। এই সেদিনও এসে বউ এর জন্য একটা মোবাইল সেট দেখে গিয়েছিল। কথা ছিল আগামী মাসে সেটটা কিনবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল শফিক। দোকানে এসে দেখল দোকান খালি। মনু মিয়া চলে গিয়েছে, ফ্যান চলছে। মনু মিয়ার চাইতে নিজের উপর বিরক্ত হলো শফিক এইভাবে দোকান খোলা রেখে চলে যাওয়ার কারনে।

এই সব ভাবতে ভাবতে শফিক যখন দোকানের সার্টার যখন নামাচ্ছিল তখনই দেখল, মনু মিয়া দৌড়ে তার দোকানের দিকে আসছে। এসেই প্রায় জড়িয়ে ধরল শফিককে। চোখে মুখে একটা চাপা আনন্দের ছটা। কিছুটা বিরক্ত হয়ে শফিক নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে? এমন করতেছেন কেন?
মনু মিয়া মুখটা শফিকের কানের কাছে এনে অনেকটা ফিস ফিস করে বলল, মিয়া ভাই, আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত। এইমাত্র দোকানের যাত্রা বনী কইরা আসলাম। মজিদ মিয়ার পোলা আর তার বউ মারা গেসে। তাদের দাফনের সব কাজ আমিই করতেছি। মজিদ সাব আগেই সব টাকা দিয়া দিসে। তবে ছোট ভাই এর একটা আবদার রাখতে হবে আপনার। সেই কারনেই কাজ ফালাইয়া আপনার কাছে আবার ছুইটা আসছি। আগামী দিন দুপুরে আপনার দাওয়াত। আমার সাথে চাইটা ভালো মন্দ খাবেন। আফনার দোকানে বইসাই আমার যাত্রা বনী হইছে। তাই আফনারে না খাওয়ানো পর্যন্ত আমার শান্তি নাই।

শফিক চমকে উঠল মনু মিয়ার কথা শুনে। তাকিয়ে দেখল দিন শেষে একজন সফল ব্যবসায়ী হবার আনন্দ মনু মিয়ার চোখে মুখে ভেসে উঠছে। আজ থেকে অনেক দিন আগে শফিকেরও এমন আনন্দ হয়েছিল, যাত্রা বনীর আনন্দই আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩২
৬৭টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×