somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

মিসির আলি এবং দেবী।

২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত পরশুদিন জুমার নামাজ পড়ে বাসায় এসে খাওয়ার টেবিলে দারুন একটা আড্ডা হলো। আড্ডার বিষয়বস্তু ছিলো প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে সরকারী অনুদান প্রাপ্ত চলচ্চিত্র 'দেবী'। হুমায়ূন আহমেদ তার নিজস্ব গুণাবলীর কারনেই এই দেশে হাজারো মানুষের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছেন। সেই কারনেই হুমায়ূন আহমেদের নাটক মানেই ভিন্ন কিছু, হুমায়ূন আহমেদের সিনেমা মানেই ভিন্ন কিছুর প্রত্যাশা।

দুই পদের ভর্তা, কুচো চিংড়ি দিয়ে পালং শাক, রুই মাছের ঝোল, জলপাইয়ের চাটনি আর ঘন মুগডাল দিয়ে গলা পর্যন্ত উদরপূর্তি করে করে যখনই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার প্ল্যান করছি, তখনই চোখ পড়ল পাশের সাইড টেবিলে দুটো টিকিট। কিসের টিকিট পরীক্ষা করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। এতো সদ্য মুক্তি পাওয়া দেবী ছবির টিকিট। আমার স্ত্রী আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এই অসামান্য আয়োজন করেছেন। আনন্দে প্রায় চিৎকার দিয়ে উঠে হলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।

হল ভর্তি দর্শক দেখে সত্যি দারুন লাগলো। সিনেমা শুরু হবার পর পিছনের এক বাচাল মেয়ের যন্ত্রনায় যখন মহা বিরক্ত, তখন মনে হয় ভদ্রতা ভুলে আমি কিছুটা জোরেই বললাম, দেবী দেখতে এসে দেখি পেত্নীর ক্ষপ্পরে পড়লাম, তাও আবার বাচাল পেত্নী। কি মুসকিল! বলাবাহুল্য, এরপর পুরো সিনেমা জুড়ে তেমন কোন ঝামেলা হয় নি।

দেবী নিয়ে কিছুটা বলার আগে দেবী চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মিসির আলি নিয়ে কিছুটা কথা বলা প্রয়োজন। মিসির আলির চরিত্রটি কেমন হবে বা কে অভিনয় করলে মিসির আলি চরিত্রকে সবচেয়ে ফুটিয়ে তুলতে পারবে এই নিয়ে দর্শকদের মধ্যে দারুন মতপার্থক্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত যত মানুষের সাথে হুমায়ূন আহমেদের 'মিসির আলি' চরিত্রটি নিয়ে কথা বলেছি তাতে দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষই উপন্যাসে বর্ণিত মিসির আলীর সাথে আমাদের দেশীয় কোন অভিনেতার মিল খুঁজে পান না। দর্শকদের সিংহভাগ মনে করেন, এই চরিত্রে সবচেয়ে ভালো করতেন শক্তিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি।



প্রথমত তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং যে কোন চরিত্রকে ধারন করার দক্ষতা দর্শকদের এই বিশ্বাস যুগিয়েছে। ফলে পর্দায় যখন আমরা হুমায়ুন ফরীদিকে মিসির আলি চরিত্রে দেখি, তখন তাঁকে একজন সফল মনোবিদ হিসেবে দেখি যিনি প্যারা সাইকোলজি বা অতীন্দ্রিয় ব্যাখ্যাতীত বিষয়ে দারুন সব যৌক্তিক বিশ্লেষন করতে পারেন। কিন্তু সমস্যাটা তৈরী হয় তখনই, যখন তাঁকে মিসির আলি হিসেবে কল্পনা করা হয়। আর এই সমস্যা সৃষ্টি করেছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ নিজেই।

হুমায়ুন আহমেদ মিসির আলির যে কাল্পনিক রুপ দিয়েছেন তাতে তাঁকে একজন প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত চোখের একজন সাধাসিধে, রোগা, বয়স্ক মানুষ হিসেবেই দেখা যায়। তাঁর কন্ঠের ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায় না, তবে সেটা যে ভরাট বা আকর্ষনীয় কোন কন্ঠস্বর নয় তা নিশ্চিত বলা যায়। মোদ্দাকথা, মিসির আলির সাথে ভেতরে গ্ল্যামার তেমন একটা যায় না। তাই হুমায়ুন ফরীদি এই চরিত্রে সার্বজনীন হতে পারেন নি।

আমার জানা মতে মিসির আলি চরিত্রটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ জন অভিনয় করেছেন। এরা হলেন যথাক্রমে, আবুল হায়াত, আবুল খায়ের, আশীষ কুমার লৌহ, হুমায়ুন ফরীদি, শতাব্দী ওয়াদুদ, আশীষ খন্দকার এবং সম্প্রতি চঞ্চল চৌধুরী। ১৯৮৭ সালে হুমায়ুন আহমেদের 'অন্য ভুবনের সে' উপন্যাস নিয়ে যে নাটক বানানো হয়, সেখানে মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেন আবুল হায়াত।


আবুল হায়াত তাঁর অনবদ্য অভিনয় দিয়ে মিসির আলি চরিত্রটিকে দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুললেও উপন্যাস বর্ণিত মিসির আলির সাথে অনেক দুরত্ব থেকে যায়। একই কথা প্রযোজ্য আবুল খায়ের ক্ষেত্রেও।


আশীষ কুমার লৌহ সেই হিসাবে অনেকটাই কাছাকাছি ছিলেন। তবে একজন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতাকে হঠাৎ করে মিসির আলির মত সিরিয়াস চরিত্রে মেনে অনেকেরই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই মিসির আলি চরিত্রের জন্য একটি দারুন নির্বাচন হতেন।



এরপর বাকি থাকে শতাব্দী ওয়াদুদ, আশীষ খন্দকার এবং বর্তমানের চঞ্চল চৌধুরী। শতাব্দী ওয়াদুদ এই চরিত্রে নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন, উপন্যাসের বর্ণনা মতে তিনি নিজেকে মিসির আলির কাছাকাছি নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।


কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাঁর নিজের সহজাত কন্ঠ বাদ দিয়ে একটা অযাচিত রহস্যময় ফিসফিসে কন্ঠ তাঁর এই প্রচেষ্টাকে ব্যহত করেছে বা বলা যায়, শতাব্দী ওয়াদুদের মত একজন ভরাট গলার অভিনেতা হয়ত মিসির আলির সাথে যায় না। এখানে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে গ্ল্যামারের ব্যাপারটি। মিসির আলির সাথে গ্ল্যামার ব্যাপারটি ঠিক যায় না।

সম্প্রতি চঞ্চল চৌধুরি যে মিসির আলির চরিত্রে কাজ করেছেন, তিনিই যদি মিসির আলি হন, তাহলে বলতে হবে, উপন্যাস বর্ণিত মিসির আলি সম্পূর্ন অন্য এক মানুষ।


একজন অনুসন্ধানী মনোবিজ্ঞানী হিসেবে, প্যারা সাইকোলজিক্যাল বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁকে চমৎকার মানিয়েছে। কিন্তু চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত চরিত্রটিই যে উপন্যাস বর্ণিত মিসির আলি কি না তা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থেকে যায়। অন্তত, শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে মিসির আলীর সাথে একটি পার্থক্য মিসির আলির একজন ভক্ত হিসেবে চোখে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখানেও কন্ঠ একটা ফ্যাক্ট ছিলো। ফলে চঞ্চল চৌধুরি মাঝে মাঝে গলার স্বরে দুই পিচ ব্যবহার করেছেন।

এরপর বাকি থাকে, আশীষ খন্দকার। দ্বিমত থাকতে পারে, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বর্তমানে কোন ব্যক্তি যদি মিসির আলিকে সবচেয়ে কাছাকাছি বর্ণনা করতে পারেন, তিনি হচ্ছেন এই আশীষ খন্দকার।



তিনি পরিচালক অনিমেষ আইচের আবিষ্কার। তাঁর অভিনীত, নিষাদ নাটকটি দেখার পর খোদ হুমায়ূণ আহমেদ অনিমেষকে ফোন দিয়ে আশীষ খন্দকারের প্রশংসা করেছেন। প্রায় ১১ মিনিট ব্যাপী সেই আলাপে বার বার আশীষের কথাই ঘুরে ফিরে এসেছে। যার এখনও দেখেন নি, তারা কষ্ট করে অনিমেষ আইচ পরিচালিত নিষাদ নাটকটি দেখে ফেলুন। যদি ব্যক্তিগত ফ্যানবেজ ধারনা থেকে মুক্ত হয়ে চিন্তা করার সুযোগ থাকে, তাহলে আশীষ খন্দকারের চেয়ে ভালো মিসির আলি এই মুহুর্তে হয়ত আমাদের কাছে নেই। আপনি যদি প্রশ্ন করেন, তাহলে মিসির আলির চরিত্রে কেন আশীষ খন্দকারকে নেয়া হলো না, যেখানে দেবীতে অনিমেষ আইচ কাজ করছেন? সরাসরি কোন উত্তর দিতে চাইছি না, তবে মনে রাখবেন জনপ্রিয়তা বানিজ্যিক চলচ্চিত্রে একটি বড় ব্যাপার।

যাইহোক, জয়া আহসান প্রযোজনায় দেবী চলচ্চিত্রটি দেখলাম। ভালো মন্দ যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাই আপনি একজন দর্শক হিসেবে তা নির্ধারন করবে। আমি ইতিবাচকভাবেই ছবিটিকে দেখছি। বিশেষ করে ছবির শুরুটা দারুন। শুরুর এই ঘটনাটা উপন্যাসের প্রায় শেষ দিকে খুব আবছাভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেই সামান্য বর্ণনাকে শুরুর দৃশ্যে আনাটা ছিলো দারুন একটা ব্যাপার। রানু চরিত্রটি বোধ করি জয়া আহসানের কথা ভেবেই লেখা হয়েছে। আবহসংগীত - জয়া ছাড়া ভালো লাগবে না, ভয়ের দৃশ্য জয়া ছাড়া ভালো লাগবে না, আধিভৌতিক পরিবেশ, চিৎকার- জয়া ছাড়া অর্থহীন। বলা যায়, এই চলচ্চিত্রটি একটি 'জয়া' ময় চলচ্চিত্র। তবে অনুগ্রহ করে এই চলচ্চিত্রে মিসির আলিকে পুঁজি করে দেখতে যাবেন না। এমন নয় যে, চঞ্চল চৌধুরী ভালো করেন নি, সমস্যা হচ্ছে রানু চরিত্রে জয়া আহসান এতই শক্তিশালী এবং ফোকাসে ছিলেন যে মিসির আলি কিছুটা হলেও আউট অব ফোকাসে পড়ে গেছেন।

সুযোগ থাকলে এই চলচ্চিত্রটি দেখে ফেলুন। অন্তত পরিচালকদের পয়সা কিছুটা উঠে গেলে তারা ভবিষ্যতে আরো সাহসী হবেন, এগিয়ে আসবেন এই ধরনের চলচ্চিত্র নির্মানে। প্রথম বাংলাদেশী প্যারা সাইকোলজিক্যাল হরর ফ্লিম দেখার সুযোগ থেকে নিশ্চয় বঞ্চিত হতে চান না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২০
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×